নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ভারতবর্ষের বিখ্যাত জাদুকর প্রতুলচন্দ্র সরকার। যিনি যাদুকর পি.সি. সরকার নামে সমাধিকখ্যাত। গুরু গণপতি চক্রবর্তীর সামান্য শিক্ষা নিয়ে তীব্র অধ্যবসায়ের মাধ্যমে নিজেকে অসামান্য করে তুলেছিলেন প্রতুলচন্দ্র সরকার। বিশ্বের যেখানেই গিয়েছেন, জয় তাঁর সঙ্গে। ১৯৩৩ সালে যাদু প্রদর্শনকে তিনি পেশা হিসেবে গ্রহণ করার পর থেকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত কলকাতা, জাপানসহ প্রায় ৭০টি দেশে যাদু প্রদর্শন করে প্রভূত সুনাম অর্জন ,বহু পুরস্কার এবং শ্রেষ্ঠ যাদুকরের স্বীকৃতি লাভ করেন। ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে যাদু প্রদর্শনের জন্য লন্ডন বিবিসি, টিভিতে যাদু প্রদর্শন করেন। ১৯৬২ সারে মস্কো ভ্রমণ করেন এবং লেনিনগ্রাদে যাদু দেখান। তার অন্যতম প্রদর্শনী ছিল ইন্দ্রজাল প্রদর্শনী। এই প্রদর্শনী তিনি প্রথমে মঞ্চে এবং পরে টেলিভিশনে দেখিয়েছিলেন। ১৯৭১ সালের আজকের দিনে জাপানের আশা-হিকাত্তয়ার নিকটবর্তী জিগেৎসু শহরে মৃত্যুবরন করেন বিশ্বখ্যাত এই যাদুকর। আজ তার ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। মৃত্যুৃদিবসে যাদুশিল্পী পিসি সরকারের প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।
প্রতুলচন্দ্র সরকার ১৯১৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি বর্তমান বাংলাদেশের (পূর্বে: বেঙ্গল, ব্রিটিশ ভারত) টাঙ্গাইল জেলার অাশেকপুর গ্রামে একটি দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তার পিতার নাম ভগবান চন্দ্র সরকার। পিসি সরকার শিবনাথ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক এবং ১৯৩৩ সালে টাঙ্গাইলের সা’দত কলেজ থেকে গণিতে অনার্স সহ বি. এ. পাশ করেন। পিসি সরকার পারিবারিক পরিমন্ডলে তার যাদু শিক্ষা শুরু করেন। গণপতি চক্রবর্তী ছিলেন তার যাদুবিদ্যার শিক্ষাগুরু। প্রচণ্ড দারিদ্রের মধ্যে কাটে প্রতুলের শৈশব। তিনি বলেন- আমি চিরজীবন শুধু ম্যাজিকের জগতেই বসবাস করেছি । স্বপ্নের রঙ গায়ে মেখে জীবন কাটিয়েছি । পৃথিবীর বহু দেশেই আমি গিয়েছি, সেখানকার মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করেছি । যতই তাদের নৈকট্য বেড়েছে, আমি নিজের দেশকে আরো বেশি করে শ্রদ্ধা করতে, চিনতে পেরেছি । আমি পুরোপুরিভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছি যে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ দেশ ভারত। পিসি সরকার, নিজেই বলেছেন, ম্যাজিক একটা শিল্প । এতে বিজ্ঞান, টেকনোলজি, শারীরিক দক্ষতা আর শোম্যানশিপ সব-ই লাগে । কোনো অলৌকিক কিছুই নেই । প্রতুল চন্দ্রকে অনেক সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে বিখ্যাত যাদুকর হতে হয়েছে । তিনি একটি মেস বাড়িতে থাকতেন । ম্যাজিক দেখিয়ে সংসার চালান দুঃসহ হয়ে উঠেছিল । গ্রামের বাড়িতে টাকা পাঠাতে পারতেন না তিনি । লোহালক্কড়ের এক ব্যবসায়ী বন্ধু তার দূর্দশা সহ্য করতে না পেরে গ্রামে একটি মাস্টারি চাকরির ব্যবস্থা করলেন । ঠিক সেই সময়ে আর একটি চিঠি এসে হাজির । চিঠিতে তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গের গভর্ণরের বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে অনুরোধ করা হয়েছে যাদুকর হিসেবে প্রতুলবাবুকে। আর চাকরি করা হল না তাঁর । এ সময় থেকে যাদুবিদ্যাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন।
(স্বনামধন্য যাদুকর পিসি সরকর জুনিয়র)
ব্যাক্তিগত জীবনে প্রতুলচন্দ্র সরকার কলকাতার বাসন্তী দেবীকে বিয়ে করেন। দাম্পত্য জীবনে তাদের তিন পুত্র সন্তান। যথাঃ মানিক সরকার, পি.সি. সরকার জুনিয়র ও পি.সি. সরকার ইয়ং। পিসি সকরার যাদু নিয়ে গবেষণামূলক অনেক গ্রন্থের রচনা এবং বহু প্রাচীন যাদুর মূলসূত্র তিনি আবিষ্কার করেছেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা ১৬টি। যাদুশিল্পে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি বহু পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন। যথাঃ ১৯৪৬ ও ১৯৫৪ সালে জাদুর অস্কার নামে পরিচিত “দ্য ফিনিক্স” (আমেরিকা) পুরস্কার লাভ করেন। জার্মান মেজিক সার্কেল থেকে “দ্য রয়াল মেডিলিয়ন” পুরস্কার পান এবং ১৯৬৪ সালে ভারত সরকার তাকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করে। এছাড়াও ভারত সরকার “জাদু সম্রাট পি.সি সরকার” নামে কলকাতাতে একটি সড়কের নামকরন করেছেন। ২০১০ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ভারত সরকার তার প্রতি সম্মান জানিয়ে একটি ৫ রুপির স্ট্যাম্প চালু করে।
যাদুকর পি সি সরকার সম্পর্কে একটি মজার ঘটনাঃ যাদুকর পি সি সরকার একবার স্টিমারে করে যাচ্ছিলেন। স্টিমারের কিছু যাত্রী তাঁকে চিনে ফেলে একটা যাদু দেখানোর আবদার করল। পি সি সরকার প্রথমে রাজি হলেন না। পরে যাত্রীদের চাপাচাপিতে রাজি হয়ে বললেন, ঠিক আছে, আমি যাদু করে স্টিমারটা থামিয়ে দিচ্ছি। কিছুক্ষণ পর সত্যি সত্যি স্টিমার থেমে গেল। সবাই যখন তাঁর যাদু দেখে মোহিত, তখন এক যাত্রী এসে বলল, আরে আপনি এখানে, একটু আগে না আপনাকে সারেঙের সঙ্গে কথা বলতে দেখলাম !!
১৯৭১ সালের ৬ জানুয়ারি জাপানের আশা-হিকাত্তয়ার নিকটবর্তী জিগেৎসু শহরে মৃত্যুবরন করেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই যাদুকর। আজ তার ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। মৃত্যুদিনে বিশ্ববিখ্যাত যাদুশিল্পীর প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]
০৬ ই জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:২৬
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ আপনাকে হাবিব ভাই
টাঙ্গাইলের কৃতি সন্তান বিশ্বখ্যাত যাদুশিল্পী
পিসি সরকারের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলী
নিবেদনের জন্য।
২| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:২০
রাজীব নুর বলেছেন: একজন গ্রেট মেজিসিয়ান।
০৬ ই জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:২৭
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
জ্বি জনাব
বিশ্বখ্যাত যাদুশিল্পী
পিসি সরকার।
আপনাকে ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ৮:০৬
হাবিব বলেছেন: টাঙ্গাইলের কৃতি সন্তান পিসি সরকারের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলী