নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

অভিনেত্রী ও চলচ্চিত্র প্রযোজক সুমিতা দেবীর ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

০৬ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:৪৬


বাংলাদেশের প্রথিতযশা চলচ্চিত্র শিল্পী ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের জনপ্রিয় অভিনেত্রী সুমিতা দেবী। খ্যাতিমান চলচ্চিত্র পরিচালক জহির রায়হান ছিলেন তার স্বামী। বিশ শতকের ষাটের দশকে সুমিতা দেবী ঢাকা চলচ্চিত্র জগতের একজন অগ্রগণ্য ব্যক্তিত্ব ছিলেন। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের সোনালি-যুগের অভিনেত্রী সুমিতা দেবী ছিলেন চিরন্তন বাঙালি নারীর প্রতীক। প্রেয়সী, জননী, বড়বোন, ভাতৃবধূ-সব রূপেই তিনি ছিলেন অনন্যা। পর্দায় তার অভিনীত চরিত্রগুলোর মধ্য দিয়ে তিনি খুব সার্থকভাবে ধারণ করতে পারতেন বাঙালি নারীর অনুভবের ভুবন। ইতিবাচক-নেতিবাচক সব ধরনের চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে ছিলেন পারদর্শী। আসিয়া (১৯৫৭) চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তাঁর অভিনয় জীবনের শুরু। এরপর তিনি অভিনয় করেন আকাশ আর মাটি (১৯৬০) চলচ্চিত্রে। দুটি ছবিরই পরিচালক ছিলেন ফতেহ লোহানী। ১৯৬০ সালের ২৪ নভেম্বর মুক্তি পায় ছবিটি। ১৯৬০ সালের ২৪ নভেম্বর মুক্তি পায় ছবিটি। সেরা বাংলা চলচ্চিত্র হিসেবে জয় করে প্রেসিডেন্ট পদক। বাণিজ্যিক সাফল্যও পায় প্রচুর। ছবির নায়িকা সুমিতা দেবী রাতারাতি হয়ে যান তারকা। ‘আসিয়া’র মাধ্যমে চলচ্চিত্রে প্রথম সুযোগ ঘটলেও এটি তার প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি নয়। ‘আসিয়া’তে কাজ করতে করতেই অন্য তিনটি চলচ্চিত্রে সুযোগ পেয়ে যান। ১৯৫৯ সালের ১ জানুয়ারি মুক্তি পায় এহতেশাম পরিচালিত ‘এ দেশ তোমার আমার’ এবং ২৪ জুলাই মুক্তি পায় ফতেহ লোহানী পরিচালিত ‘আকাশ আর মাটি’। ১৯৫৯ সালেই মুক্তি পায় তার অভিনীত ‘মাটির পাহাড়’। তিনটি ছবিই বাণিজ্যিক সাফল্য পেয়েছিল। প্রথমটিতে নায়ক ছিলেন আনিস, দ্বিতীয়টিতে আমিন ও প্রবীর কুমার।সেরা বাংলা চলচ্চিত্র হিসেবে জয় করে প্রেসিডেন্ট পদক। বাণিজ্যিক সাফল্যও পায় প্রচুর। ছবির নায়িকা সুমিতা দেবী রাতারাতি হয়ে যান তারকা। ‘আসিয়া’র মাধ্যমে চলচ্চিত্রে প্রথম সুযোগ ঘটলেও এটি তার প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি নয়। ‘আসিয়া’তে কাজ করতে করতেই অন্য তিনটি চলচ্চিত্রে সুযোগ পেয়ে যান। ১৯৫৯ সালের ১ জানুয়ারি মুক্তি পায় এহতেশাম পরিচালিত ‘এ দেশ তোমার আমার’ এবং ২৪ জুলাই মুক্তি পায় ফতেহ লোহানী পরিচালিত ‘আকাশ আর মাটি’। ১৯৫৯ সালেই মুক্তি পায় তার অভিনীত ‘মাটির পাহাড়’। তিনটি ছবিই বাণিজ্যিক সাফল্য পেয়েছিল। প্রথমটিতে নায়ক ছিলেন আনিস, দ্বিতীয়টিতে আমিন ও প্রবীর কুমার। প্রায় চার দশক ধরে সুমিতার অভিনয় জীবন প্রসারিত ছিল। বাংলা ছবির পাশাপাশি বেশ কয়েকটি উর্দু ছবিতেও অভিনয় করেছেন তিনি। চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে সুমিতা দেবী ৫টি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছেন। সেগুলো হলো - আগুন নিয়ে খেলা, মোমের আলো, মায়ার সংসার, আদর্শ ছাপাখানা এবং নতুন প্রভাত। অভিনয় দক্ষতার স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ১৯৬২ সালে অল পাকিস্তান ক্রিটিক অ্যাওয়ার্ড এবং ১৯৬৩ সালে নিগার প্রাইজ সম্মানে ভূষিত হন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর তিনি বাচসাস পুরস্কার এবং টেলিভিশন রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও সুমিতা দেবী আগরতলা মুক্তিযোদ্ধা পুরস্কার (২০০২) এবং জনকণ্ঠ গুণিজন ও প্রতিভা সম্মাননা (২০০২) লাভ করেন। আজ জনপ্রিয় অভিনেত্রী সুমিতা দেবীর ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৪ সনের আজকের দিনে তিনি প্রয়াত হন। অভিনেত্রী ও চলচ্চিত্র প্রযোজক সুমিতা দেবীর মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

সুমিতা দেবী ১৯২৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি বর্তমান বাংলাদেশের (তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের) মানিকগঞ্জ জেলার একসম্ভ্রান্ত ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তখন তার নাম ছিলো হেনা ভট্টাচার্য্য। ১৯৪৪ সালে পরিবারের সঙ্গে তিনি ঢাকায় চলে আসেন। পুরানো ঢাকার বাংলাবাজার স্কুলে ভর্তি হন তিনি। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি তখন উত্তাল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে। সারাদেশে দুর্ভিক্ষ। ১৯৪৫-এ যুদ্ধ থামতে না থামতেই হলো দেশভাগ। ১৯৫০ সালে ঢাকায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে ঢাকা ছেড়ে পরিবারের সঙ্গে তাকে চলে যেতে হয় কলকাতায়। উদ্বাস্তু হিসেবে আশ্রয় নেন বর্ধমানে। কিন্তু পূর্ববঙ্গ থেকে পশ্চিমবঙ্গে পাড়ি জমানো মানুষদের জীবন ছিল প্রচণ্ড সংগ্রামের। বর্ধমান থেকে ভট্টাচার্য পরিবার আবার কলকাতায় ফিরে আসেন। সেখানে হেনার বিয়ে হয়ে যায় অমূল্য লাহিড়ি নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে। কিন্তু তাদের মধ্যে বোঝাপড়া না হওয়ায় বিচ্ছেদ ঘটে। ১৯৫৭ সালে হেনা ফিরে আসেন ঢাকায়। সেখানে তার সুযোগ ঘটে চলচ্চিত্রে প্রবেশের। বাংলা চলচ্চিত্রে তখন ‘সু’কন্যাদের যুগ চলছে। ফতেহ লোহানী পরিচালিত ‘আসিয়া’ এবং ‘আকাশ আর মাটি’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে শুরু হয় রূপালি ভুবনে হেনার যাত্রা। রমা দেবীর সুচিত্রা, বেণু চৌধুরীর সুপ্রিয়া হয়ে ওঠার মতো হেনাও হয়ে গেলেন সুমিতা। নামটি দেন বিখ্যাত চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব ফতেহ লোহানী। তার ছবিতেই প্রথম সুযোগ পেলেন সুমিতা দেবী। ফতেহ লোহানী কর্তৃক আসিয়া ছবিতে নাম পাল্টিয়ে সুমিতা দেবী রাখা হয়েছিল। বিয়ের পরও চলচ্চিত্র শিল্পে পূর্বের সুমিতা দেবী নাম নিয়েই পরিচিত ছিলেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতের অন্যতম পথিকৃৎ ও প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবি জহির রায়হানের সাথে পরিচিত হন। জহির রায়হান পরিচালিত ‘কখনো আসেনি’ ছবিতে অভিনয় করার সময় জহির রায়হান এবং সুমিতা পরষ্পরের প্রেমে পড়েন। ১৯৬১ সালে বিয়ে করেন তারা। সুমিতা দেবী পরবর্তীকালে ধর্মান্তরিত হন ও তার নতুন নামকরণ হয় নিলুফার বেগম। যদিও তার পর্দা-নাম সুমিতা দেবীই বহাল থাকে। এ দম্পতির দুই ছেলে অনল রায়হান এবং বিপুল রায়হান। দুজনেই চলচ্চিত্র জগতের মানুষ।

গত শতকের ষাটের দশকে ঢাকার চলচ্চিত্র জগতের ব্যস্ততম অভিনেত্রী সুমিতা দেবী পঞ্চাশের অধিক চলচ্চিত্রে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন এবং পার্শ্ব-অভিনেত্রী হিসেবে অভিনয় করেন শতাধিক চলচ্চিত্রে। তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হচ্ছে কখনো আসেনি (১৯৬১), সোনার কাজল (১৯৬২), কাঁচের দেয়াল (১৯৬৩), এই তো জীবন (১৯৬৪), দুই দিগন্ত (১৯৬৪), আগুন নিয়ে খেলা (১৯৬৭) ও অভিশাপ (১৯৬৭), এ দেশ তোমার আমার, বেহুলা, ওরা ১১ জন ও আমার জন্মভূমি। তিনি পশ্চিম পাকিস্তানে তৈরি ধূপছায়া এবং পূর্ব পাকিস্তানে তৈরি একাধিক উর্দু চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেন। ‘কাঁচের দেয়াল’ ছবিতে আনোয়ার হোসেনের বিপরীতে তার অভিনয় দারুণ প্রশংসিত হয়। এ ছবিতেই খান আতার কণ্ঠে শোনা যায় ‘শ্যামলা বরণ মেয়েটি’। ছবিতে সংলাপের মাধ্যমে যতটা নয়, তার চেয়েও ডাগর কালো আঁখির মাধ্যমেই আবেগ ও ভালোবাসা ফুটিয়ে তোলেন সুমিতা দেবী। ছবিটি পাকিস্তানের নিগার পুরস্কার পেয়েছিল।সুমিতা দেবী বেতার, টেলিভিশন ও মঞ্চ নাটকেও সফলতার সঙ্গে অভিনয় করেন। চলচ্চিত্র প্রযোজক হিসেবে তিনি পাঁচটি চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেন। সেগুলি হচ্ছে আগুন নিয়ে খেলা, মোমের আলো, মায়ার সংসার, আদর্শ ছাপাখানা ও নতুন প্রভাত। স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের একজন সক্রিয় শব্দসৈনিক হয়ে ওঠেন। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের একজন সক্রীয় কর্মী ছিলেন সুমিতা দেবী।স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রে তার অবদান ছিল ব্যাপক।

জহির রায়হান অভিনেত্রী সুচন্দাকে বিয়ে করলে সন্তানদের নিয়ে পৃথকভাবে বসবাস করতে থাকেন সুমিতা দেবী। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বহুকষ্টে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে সন্তানদের নিয়ে কলকাতায় পৌঁছান তিনি। জহির রায়হান শহীদ হওয়ার পর ঢাকায় সন্তানদের নিয়ে সুমিতা দেবীকে যথেষ্ট সংগ্রাম করতে হয়েছিল। অবশ্য চলচ্চিত্রজগতে তিনি ছিলেন ব্যস্ত শিল্পী। ‘ওরা এগারো জন’, ‘সুজন সখী’, ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’, ‘আমার জন্মভূমি’, ‘চিত্রা নদীর পারে’সহ অসংখ্য ছবিতে তিনি অভিনয় করেন। কমেডি অভিনয়েও তিনি ছিলেন দারুণ সফল।‘নাতবউ’ ছবিতে একটি মাত্র দৃশ্যে দুর্দান্ত অভিনয় করে বুঝিয়ে দেন তিনি জাত-শিল্পী। বিস্মৃতির আড়ালে চলে গেছেন ষাটের দশকের ব্যস্ততম অভিনেত্রী-সুমিতা দেবীর আজ ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৪ সালের ৬ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন সুমিতা দেবী। মৃত্যুর পর তাঁকে মীরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। অসামান্য প্রতিভার অধিকারী এই শিল্পী বাংলাদেশের চলচ্চিত্র-দর্শকের স্মৃতিতে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। অভিনেত্রী ও চলচ্চিত্র প্রযোজক সুমিতা দেবীর ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:১৪

রাজীব নুর বলেছেন: সুমিতা দেবীকে শ্রদ্ধা জানাই।

০৭ ই জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ১১:৪৪

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ রাজীব ভাই
অভিনেত্রী ও চলচ্চিত্র প্রযোজক সুমিতা দেবীর
মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.