নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলার কিংবদন্তি মণীষী হযরত নূর কুতুবে আলম (রঃ) এর ৬০৫তম ওফাত দিবসে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি

০৭ ই জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:৫৮


(হযরত নূর কুতুবে আলম (রঃ) মসজিদ)
প্রতিটা দিনের পরিবর্তন ঘটে ২৪ঘন্টা/১৪৪০ মিনিট /৮৬ হাজার ৪০০ সেকেন্ড পেরিয়ে একটি দিন পৃথিবী সৃষ্টির জন্য অনেক সময়, মানুষের জীবনে একটি ঘটনার জন্যতো অবশ্যই। আর একটা দিনে অনেক ঘটনাই ঘটতে পারে। যা হতে পারে কালের স্বাক্ষি হিসেবে। একটু কি ভেবে দেখেছি? এক মুহুর্ত সময় কতটা গুরুত্ববহন করে মানুষের জীবনে? আর সেই মুহুর্তের ঘটনাই রুপ নেয় ইতিহাসের পাতায়। আমরা বলি আজকের দিনে কি ঘটেছিল! এই আজকের দিনটা কেন গুরুত্ব তা খুঁজতে থাকি ইতিহাসের পাতায়। তাই ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। যার জন্য বলা হয় ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাসের কারণেই আমরা অতীতের কথা, বিষয় বা ঘটনা জানতে পারি। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায় যা কিছু ভালো, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। গৌরবময় জীবন শেষে বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে গেছেন কত মনীষী! যাদের কথা আমাদের জানা নেই। এদের অবদানে ধন্য এই বাংলার মাটি। বাংলার আধাঁর ছাওয়া অঞ্চলে আলো জ্বালানোর সংগ্রামে তাদের জীবনে নেমে এসেছে নানা ঘাত-প্রতিঘাত। সবকিছু বরণ করে নিয়েই তারা মগ্ন থেকেছেন আলো জ্বালানোর সংগ্রামে। ঈমানের আলো জ্বালিয়েছেন মানুষের হৃদয়ে। চেতনার পরিমণ্ডলে পরিশুদ্ধির বিপ্লব সাধন করেছেন। পাল্টে দিয়েছেন মানুষের জীবনবোধ। সেই নাম না জানা মহান মনীষীদের একজন হযরত নূরুদ্দীন নুরুল হক রহঃ। তিনি হযরত নূর কুতুবে আলম নামে বিখ্যাত। নূর কুতুব আলম (রঃ) মধ্যযুগে বাংলার একজন দরবেশ। সুলতানী আমলের কিংবদন্তি ইসলামী মনীষী হযরত নুর কুতুবে আলম রহঃ বহুমুখী প্রতিভা ও যোগ্যতার অধিকারী এই আলেমেদ্বীন যেমন ছিলেন আধ্যাত্মিকতার চূড়ান্ত পর্যায়ের সাধক, তেমনি ছিলেন সমাজ সংস্কারক, দেশপ্রেমিক, দেশের শীর্ষস্থানীয় মেধাবী দ্বীনের খাদেম। তিনি রাজা গণেষের অত্যাচার থেকে বাংলার মানুষকে মুক্ত করেন। পান্ডুয়ার পীর আউলিয়াদের মধ্যে তিনি সবচেয়ে বেশি মর্যাদার অধিকারী ছিলেন। তার পিতা শেখ আলাউল হকও একজন পীর ছিলেন। পিতার মত নূর কুতুব আলম ছিলেন চিশতিয়া তরিকার পীর। শেখ নূর কুতুব আলমের মৃত্যুর তারিখ সঠিকভাবে জানা না গেলেও সে তারিখটি ৮১৮ হিজরি বা ১৪১৫ খ্রিস্টাব্দের ৭ তারিখ বলে সম্ভাবনা ব্যক্ত করা হয়েছে। সে মতে আজ তার ৬০৫তম ওফাত দিবস। কিংবদন্তি মণীষী হযরত নূর কুতুবে আলম (রঃ) এর ৬০৫তম ওফাত দিবসে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

১৩৫০ খ্রিষ্টাব্দ শেখ আলাউল হক (রহঃ) এর ঘরে জন্ম নেন হযরত নুর কুতুব উল আলম (রহঃ)। বাংলার বিখ্যাত পীর এবং অন্যতম আলেমেদ্বীন হযরত শায়েখ আলাউল হক ছিলেন নূর কুতুবে আলম (রঃ) এর পিতা। তিনি হযরত খাজা নিযামুদ্দীন আওলিয়ার বিশিষ্ট খলীফা হযরত সিরাজুদ্দীন আলী উসমানের ছিলেন শীর্ষ শিষ্য। হযরত খালেদ বিন ওয়ালিদ রা:-এর বংশের এই গৌরব নিজ সন্তানকে গড়ে তুলেন বিচিত্রগুণ ও যোগ্যতার মধ্য দিয়ে। হযরত নূর কুতুবে আলমের ভাই ছিলেন বাংলার কিংবদন্তি মুসলিম শাসক গিয়াস উদ্দীন আযম শাহ রহ.-এর উযিরে আযম। বিনয় আয়ত্ত করার উদ্দেশ্য নিয়ে নূর কুতুব আলম তাঁর পিতার আমল থেকে সব ধরনের কায়িক শ্রম অভ্যাস করতেন। দরগায় আগত ফকিরদের কাপড় ধোয়া, লাকড়ি ও পানি বহন, শীতকালে মুরশীদের অজু করার জন্য সর্বদা পানি গরম রাখা, এমন কি খানকাহ সংলগ্ন শৌচাগার পরিষ্কার করা প্রভৃতি কাজে তিনি নিজেকে নিয়োজিত রাখতেন। তিনি তাঁর দুই পুত্র শেখ রাফকাতউদ্দীন এবং শেখ আনোয়ারকে আধ্যাত্মিক শিক্ষা দেন। পূর্বোক্ত জনের ছেলে শেখ জাহিদ পিতামহের মৃত্যুর পর দরবেশ হিসেবে বেশ খ্যাতি অর্জন করেন। খুব সম্ভবত পিতার জীবদ্দশায় শেখ আনোয়ার রাজা গণেশের হাতে সোনারগাঁওয়ে শহীদ হন। শেখ নূর কুতুব আলমের অন্য আর একজন প্রধান মুরিদ ছিলেন শেখ হুসামুদ্দীন মানিকপুরী। বাংলার মুসলিম রাজ্যকে এক ভয়াবহ ধ্বংসলীলা থেকে রক্ষা করার জন্য শেখ নূর কুতব আলম তাঁর পিতার চেয়েও বেশি প্রসিদ্ধি লাভ করেন। যখন রাজা গণেশ পান্ডুয়ায় ক্ষমতা দখল করে শেখ, উলেমাসহ মুসলমান জনগণের উপর নির্বিচারে অত্যাচার শুরু করেন, তখন তিনি হস্তক্ষেপ করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি জৌনপুরের সুলতান ইবরাহিম শর্কিকে বাংলার মুসলমানদের সহায়তায় এগিয়ে আসার অনুরোধ জানিয়ে পত্র দেন। ইবরাহিম শর্কিকে অনুরূপ আহবান জানানোর জন্য তিনি মীর সৈয়দ আশরাফ জাহাঙ্গীর সিমনানিকেও অপর একটি পত্রে অনুরোধ জানান। উভয়ের আহবানে সাড়া দিয়ে সুলতান ইবরাহিম বিরাট বাহিনী নিয়ে বাংলা অভিমুখে যাত্রা করেন। এতে গণেশ ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে শেখ নূরের নিকট আত্মসমর্পণ করেন এবং দরবেশের নিকট প্রার্থনা করেন যাতে তিনি সুলতান ইবরাহিমকে ফিরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ জানান। নূর কুতুব আলম এতে সম্মত হন নি, বরং পূর্বশর্ত হিসেবে তিনি রাজা গণেশকে মুসলমান হতে আদেশ দেন, কেননা কোন অমুসলমানের পক্ষ নিয়ে একজন মুসলিম নৃপতিকে অনুরোধ জানাতে তিনি অপারগ বলে জানান। গণেশ তাতে সম্মত হন কিন্তু বিস্তারিত শুনে তাঁর রানী এতে বাধা দেন। গণেশ তখন তাঁর ১২ বছরের ছেলে যদুকে নিয়ে শেখের নিকট আসেন। যদুকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করে জালালুদ্দীন নাম দেওয়া হয় এবং গণেশ তাঁর পক্ষে সিংহাসন ত্যাগ করেন। শেখের মৃত্যুর পর গণেশ অবশ্য যদুকে হিন্দু ধর্মে পুনরায় দীক্ষিত করে নিজে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন। কিন্তু শীঘ্রই গণেশের মৃত্যু হলে যদু জালালুদ্দীন মুহাম্মদ শাহ উপাধি নিয়ে সিংহাসনে আরোহণ করেন

হযরত নূর কুতুবে আলম (রঃ) এর জীবনের আলোচনা স্থান পেয়ছে অনেক ঐতিহাসিক গ্রন্থে। সুফি জীবনী লেখক এবং উপমহাদেশের ইতিহাস বিশ্লেষকরা তাঁকে স্বরণ করেন শ্রদ্ধাভরে। তারীখে ফারিশতা ও আইনে আকবরিসহ অনেক গ্রন্থে আলোচিত তিনি। তাঁর জীবনের উপর কলম ধরেছেন শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী ভাষাবিদ ড: মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ রহ.। নূর কুতুব আলম সব ধরনের কায়িক শ্রম করতেন। দরগায় আগত ফকিরদের সেবা তিনি ব্যক্তিগতভাবে করতেন। তার পুত্র শেখ রাফকাতউদ্দিন ও শেখ আনোয়ার তার কাছে আধ্যাত্মিক শিক্ষা লাভ করেছিলেন। শেখ রাফকাতউদ্দিনের পুত্র শেখ জাহিদও দরবেশ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। শেখ হুসামউদ্দিন মানিকপুরী ছিলেন নূর কুতুব আলমের অন্যতম প্রধান মুরিদ। আজ কিংবদন্তি মণীষী হযরত নূর কুতুবে আলম (রঃ) এর ৬০৫তম ওফাত দিবস। আনুমানিক ৮১৮ হিজরি বা ১৪১৫ খ্রিষ্টাব্দে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর পর তাকে পান্ডুয়ার শাশ হাজারি দরগায় দাফন করা হয়। তার পিতাকেও এখানে দাফন করা হয়েছিল। নূর কুতুব আলমের অনুসারীরা কয়েক শতাব্দী ধরে বাংলার মুসলিমদের জীবনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে গিয়েছেন। কিংবদন্তি মণীষী হযরত নূর কুতুবে আলম (রঃ) এর ৬০৫তম ওফাত দিবসে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মেহাম্মাদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:৪৬

রাজীব নুর বলেছেন: আপনি বলুন এই পোষ্ট পড়ে কি কি উপকার আসবে?

০৭ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৮:৪০

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ইতিহাস জানা থাকা কি ক্ষতির কারণ হয় ?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.