নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিশ্বখ্যাত কিংবদন্তি বিজ্ঞানী স্টিফেন উইলিয়াম হকিং\'য়ের ৭৮তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

০৮ ই জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ১০:৪৯


বিশ্বখ্যাত কিংবদন্তি বিজ্ঞানী বিশিষ্ট ইংরেজ তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী ও গণিতজ্ঞ স্টিফেন উইলিয়াম হকিং। যাকে তুলনা করা হয় জগৎবিখ্যাত বিজ্ঞানী নিউটন এবং আলবার্ট আইনষ্টাইনের সাথে। বিজ্ঞানের কোয়ান্টাম থিওরি ব্ল্যাক হোলের মতবাদ -তাকে সারাবিশ্বে পরিচিতি এনে দিয়েছে, বিজ্ঞানী হিসেবে জগত জোড়া খ্যাতি দিয়েছে। হকিং কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের লুকাসিয়ান অধ্যাপক হিসেবে ১ অক্টোবর, ২০০৯ তারিখে অবসর নেন। (স্যার আইজ্যাক নিউটনও একসময় এই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন) এছাড়াও তিনি কেমব্রীজের গনভিলি এবং কেয়াস কলেজের ফেলো হিসাবে কর্মরত আছেন। শারীরিকভাবে ভীষণরকম অচল এবং এ.এল.এসের (এমায়োট্রফিক ল্যাটারাল স্ক্লেরোসিস বা লাউ গেহরিগ রোগ - যা একপ্রকার মোটর নিউরন রোগ) জন্য ক্রমাগতভাবে সম্পূর্ণ অথর্বতার দিকে ধাবিত হওয়া সত্ত্বেও বহু বছর যাবৎ তিনি তাঁর গবেষণা কার্যক্রম সাফল্যের সঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছেন। স্টিফেন উইলিয়াম হকিংকে বিশ্বের সমকালীন তাত্ত্বিক পদার্থবিদদের মধ্যে অন্যতম হিসাবে বিবেচনা করা হয়। তিনি রয়েল সোসাইটি অব আর্টসের সম্মানীয় ফেলো এবং পন্টিফিকাল একাডেমি অব সায়েন্সের আজীবন সদস্য। ১৯৪২ সালের আজকের দিনে তিনি ইংল্যান্ডে জন্ম গ্রহণ করেন বিশ্ব বিখ্যাত বিজ্ঞানী হকিং। আজ তাঁর ৭৮তম জন্মবার্ষিকী। কিংবদন্তি বিজ্ঞানী স্টিফেন উইলিয়াম হকিংয়ে'র জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা।

স্টিফেন উইলিয়াম হকিং ১৯৪২ সালের ৮ জানুয়ারী ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডে জন্মগ্রহণ করেন। হকিংয়ের বাবা ড. ফ্রাঙ্ক হকিং একজন জীববিজ্ঞান গবেষক ও মা ইসোবেল হকিং একজন রাজনৈতিক কর্মী। হকিংয়ের বাবা-মা উত্তর লন্ডনে থাকতেন, লন্ডনে তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা চলাকালীন হকিং গর্ভে আসার পর নিরাপত্তার খাতিরে তারা অক্সফোর্ডে চলে যান। হকিংয়ের জন্মের পর তারা আবার লল্ডনে ফিরে আসেন। সেখানে স্টিফেনের বাবা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর মেডিকাল রিসার্চের প্যারাসাইটোলজি বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫০ থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত হকিং সেন্ট অ্যালবার মেয়েদের স্কুলে পড়েন। সে সময় ১০ বছর বয়স পর্যন্ত ছেলেরা মেয়েদের স্কুলে পড়তে পারতো।পরে সেখান থেকে ছেলেদের স্কুলে চলে যান। স্কুলে তার রেজাল্ট ভাল ছিল বটে তবে অসাধারণ ছিল না। ছেলেবেলা থেকেই বিজ্ঞানে হকিংয়ের সহজাত আগ্রহ এবং বিজ্ঞান মনস্ক ছিলেন । হকিংয়ের বাবার ইচ্ছে ছিল হকিং যেন তার মতো ডাক্তার হয়। কিন্তু হকিং গণিত পড়ার জন্য অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিভার্সিটি কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু যেহেতু সেখানে গণিতের কোর্স পড়ানো হতো না, সেজন্য হকিং পদার্থবিজ্ঞান বিষয় নিয়ে পড়া শুরু করেন। সে সময়ে তার আগ্রহের বিষয় ছিল তাপগতিবিদ্যা, আপেক্ষিকতা এবং কোয়ান্টাম বলবিদ্যা।

কেমব্রিজে আসার পরপরই হকিং মটর নিউরন ডিজিজে আক্রান্ত হোন। এ কারণে তার প্রায় সকল মাংসপেশী ধীরে ধীরে অবশ হয়ে আসে। কেমব্রিজে প্রথম দুইবছর তাঁর কাজ তেমন বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ছিল না। কিন্তু, রোগের প্রকোপ কিছুটা থামলে, হকিং তাঁর সুপারভাইজার ডেনিশ উইলিয়াম শিয়ামার সাহায্য নিয়ে পিএইচডি অভিসন্দর্ভের কাজে এগিয়ে যান। তত্ত্বীয় কসমোলজি আর কোয়ান্টাম মধ্যাকর্ষ হকিংয়ের প্রধান গবেষণা ক্ষেত্র। ১৯৬০ এর দশকে ক্যামব্রিজের বন্ধু ও সহকর্মী রজার পেনরোজের সঙ্গে মিলে হকিং আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার তত্ত্ব থেকে একটি নতুন মডেল তৈরি করেন। সেই মডেলের ওপর ভিত্তি করে ১৯৭০ এর দশকে হকিং প্রথম তাদের (পেনরোজ-হকিং তত্ত্ব নামে পরিচিত) তত্ত্বের প্রথমটি প্রমাণ করেন। এই তত্ত্বগুলো প্রথমবারের মতো কোয়ান্টাম মহাকর্ষে এককত্বের পর্যাপ্ত শর্তসমূহ পূরণ করে। আগে যেমনটি ভাবা হতো এককত্ব কেবল একটি গাণিতিক বিষয়। এই তত্ত্বের পর প্রথম বোঝা গেল, এককত্বের বীজ লুকোনো ছিল আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্বে। শারিরীক প্রতিবন্ধকতাকে পিছনে ফেলে তার আদম্য ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে ১৯৭৪ সালে রয়াল সোসাইটির অন্যতম কনিষ্ঠ ফেলো নির্বাচিত হন।

(স্বাধীনতা পুরস্কার দেবার আগে হোয়াইট হাউসে বারাক ওবামার সাথে সাক্ষাত, সাথে আছেন নোবেল বিজয়ী ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস)
বিজ্ঞানে অসামান্য অবদানের জন্য হকিং অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হনঃ তাঁর প্রাপ্ত উল্লেখযোগ্য পুরস্কারঃ ১। ১৯৭৫ সালে এডিংটন পদক, ২। ১৯৭৬ সালে হিউ পদক, ৩। ১৯৭৯ সালে আলবার্ট আইনস্টাইন পদক, ৪। ১৯৮৮ সালে উলফ পুরস্কার, ৫। ১৯৮৯ সালে প্রিন্স অফ অস্ট্রিয়ানস পুরস্কার, ৬। ১৯৯৯ সালে জুলিয়াস এডগার লিলিয়েনফেল্ড পুরস্কার ৭। ২০০৬ সালে কোপলি পদক এবং আমেরিকার জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন। এ ছাড়াও ২০০৭ সালের ১৯ ডিসেম্বর কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বীয় কসমোলজি কেন্দ্রে হকিংয়ের একটি মূর্তি স্থাপন করা হয়। ২০০৮ সালের মে মাসে হকিংয়ের আর একটি আবক্ষ মুর্তি উন্মোচন করা হয় দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাউনে অবস্থিত আপ্রিকান ইনস্টিটিউট অব ম্যাথমেটিক্যাল সায়েন্সের সামনে। মধ্য আমেরিকার দেশ এল সালভাদর তাদের রাজধানী সান সালভাদরে বিজ্ঞান জাদুঘরটির নাম হকিংয়ের নামে রেখেছে।

২১ বছর বয়স থেকেই দূরারোগ্য মটর নিউরন রোগে ভুগছেন হকিং। ওই বয়সে তাকে জানানো হয়েছিল আর মাত্র দুই কি তিন বছর বাঁচবেন তিনি। কিন্তু সব ভবিষ্যদ্বাণীকে ভুল প্রমাণ করে বছরের পর বছর ধরে তিনি বেঁচে আছেন। পক্ষঘাতগ্রস্ত শরীর নিয়ে তার জীবন কাটে হুইল চেয়ারে। কথাও বলতে পারেন না তিনি। মুখের পেশির নড়াচড়ার মাধ্যমে কম্পিউটারে তৈরি করা স্বরে কথা বলেন হকিং। একটি চোখের অর্থপূর্ণ নড়াচড়া সেই কথাকে তাৎপর্যপূর্ণ করে তোলে। দীর্ঘকাল ধরেই মানুষ মৃত্যুপরবর্তী জীবন রয়েছে বলে বিশ্বাস করে আসছে। বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থও মানুষের এই ধারণায় উৎসাহ জুগিয়েছে। কিন্তু সেই ধারণাকে অস্বীকার করেছেন বর্তমান সময়ের অন্যতম প্রধান বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং। তিনি পরকালকে রূপকথা বলেই মনে করেন। হকিংয়ের ধর্ম বিশ্বাস নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। কেউ কেউ তাকে নাস্তিক বললেও হকিং তার নিজের বই বা বক্তৃতায় নানা প্রসঙ্গে ঈশ্বর শব্দটি ব্যবহার করেছেন। তার স্ত্রীসহ অনেকে তাকে একজন নাস্তিক হিসাবে বর্ণনা করলেও হকিং নিজে মনে করেন তিনি সাধারণ অর্থে ধার্মিক নন এবং তিনি বিশ্বাস করেন, দুনিয়া বিজ্ঞানের নিয়ম মেনেই চলে। তিনি বলেন অন্ধকারকে ভয় পায় এমন মানুষদের বানানো রূপকথা হল পরকাল। আমি মনে করি মস্তিষ্ক কম্পিউটারের মতোই মনের একটি কর্মসূচি (প্রোগাম), তাই তাত্ত্বিকভাবে কম্পিউটারে মস্তিষ্কের প্রতিলিপি তৈরি করা সম্ভব, আর এভাবে মৃত্যুর পরেও একটি জীবনকে ধরে রাখা যায়। তবে এখনও পর্যন্ত এটি আমাদের আয়ুষ্কাল ও সামর্থ্যের বাইরে আছে। এমন হতে পারে নিয়মগুলো ঈশ্বর সৃষ্টি করেছেন কিন্তু তিনি নিয়মের ব্যত্যয় ঘটানোর জন্য কখনো হস্তক্ষেপ করেন না। ২০১৮ সালের ১৪ই মার্চ, স্টিফেন হকিং ইংল্যান্ডের কেম্ব্রিজে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি জন্মেছিলেন গ্যালিলিওর মৃত্যুবার্ষিকীতে। আর মৃত্যুবরণ করলেন আইনস্টাইনের জন্মবার্ষিকীতে।

বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং এর ৭৮তম জন্মবার্ষিকী আজ। কিংবদন্তি বিজ্ঞানী স্টিফেন উইলিয়াম হকিংয়ে'র জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:৪৪

বাকপ্রবাস বলেছেন: পরকাল বিশ্বাস করুক আর না করুক, ভাল থাকুক ওখানে

০৮ ই জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:৪১

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকে ধন্যবাদ বাকপ্রবাস
কিংবদন্তি বিজ্ঞানী স্টিফেন উইলিয়াম
হকিং'য়ের জন্মবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা
শুভেচ্ছা জানানোর জন্য।

২| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:৫১

আকতার আর হোসাইন বলেছেন: কিংবদন্তি বিজ্ঞানী স্টিফেন উইলিয়াম হকিংয়ে'র জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা।কিংবদন্তি বিজ্ঞানী স্টিফেন উইলিয়াম হকিংয়ে'র জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা।

০৮ ই জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:৪২

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আকতার ভাই আপনাকেও
অসংখ্য ধন্যবাদ কিংবদন্তি বিজ্ঞানী
স্টিফেন উইলিয়াম হকিং'য়ের
জন্মবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা
জানানোর জন্য।

৩| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:০০

রাজীব নুর বলেছেন: আল্লাহর লোকটার মাথায় মেধা দিয়েছেন দারুন।

১১ ই জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:১৮

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
জ্বি, আল্লাহ যাকে দেন
তাকে ছাপ্পর ফাইরা দেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.