নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

পর্বতারোহী এবং অভিযাত্রী স্যার এডমন্ড পার্সিভাল হিলারির দ্বাদশ মৃত্যুবার্ষিকিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

১১ ই জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:৫৪


স্যার এডমন্ড পার্সিভাল হিলারি। তিনি নিউজিল্যান্ডের একজন পর্বতারোহী এবং অভিযাত্রী ছিলেন। মাউন্ট এভারেস্টের নাম কে না জানে? এটি হিমালয় পর্বতমালায় অবস্থিত সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে শীর্ষবিন্দুর উচ্চতার হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে এর উচ্চতা ৮,৮৪৮ মিটার (২৯,০২৯ ফুট)। এটি হিমালয় পর্বতমালার একটি অংশ, নেপাল এবং চীনের সীমানার মধ্যে এর অবস্থান। যুগ যুগ ধরেই এই শৃঙ্গ জয় করার ইচ্ছা অনেকেরই। অনেক অভিযাত্রী জীবন পর্যন্ত উৎসর্গ করেছেন এই শৃঙ্গ জয় করতে গিয়ে। ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দের ২৯শে মে তিনি ব্রিটিশ অভিযাত্রী দলের অংশ হিসেবে নেপালী পর্বতারোহী শেরপা তেনজিং নোরগের সাথে মাউন্ট এভারেস্ট শৃঙ্গ আরোহণ করেন। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ৩০শে জানুয়ারি হ্যারি এয়ার্স ও মিক সুলিভানের নেতৃত্বে হিলারি ও রুথ অ্যাডামস নিউজিল্যান্ডের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ আওরাকি আরোহণ করেন। এছাড়া ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে এরিক শিপটনের নেতৃত্বে ব্রিটিশদের সন্ধানী এভারেস্ট অভিযানেও হিলারি অংশগ্রহণ করেন। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে এরিক শিপটনের নেতৃত্বে চো ওইয়ু শৃঙ্গ অভিযানে হিলারি অংশগ্রহণ করেন। নেপাল থেকে রাস্তা না পাওয়ার কারণে হিলারি ও জর্জ লো নুপ গিরিবর্ত্ম পেরিয়ে তিব্বত প্রবেশ করে উত্তর দিক থেকে দ্বিতীয় শিবির পৌঁছন। ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দের ব্রিটিশদের মাউন্ট এভারেস্ট অভিযানের পূর্বে তিনি ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে চো ওইয়ু শৃঙ্গে আরোহণের প্রচেষ্টা করে ব্যর্থ হন। কমনওয়েলথ ট্রান্স-অ্যাটলান্টিক অভিযানের অংশ হিসেবে তিনি ১৯৫৮ সালে দক্ষিণ মেরু পৌঁছান। পরবর্তীকালে তিনি উত্তর মেরু অভিযান করলে বিশ্বের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে পৃথিবীর দুই মেরু ও সর্বোচ্চ শৃঙ্গে পদার্পণের দুর্লভ কৃতিত্ব অর্জন করেন। আজ স্যার এডমন্ড পার্সিভাল হিলারির ১২তম মৃত্যুবার্ষিকি। স্যার এডমন্ড হিলারি ২০০৮ সালের আজকের দিনে তিনি নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড শহরে মৃত্যুবরণ করেন। পর্বত আরোহী এবং অভিযাত্রী স্যার এডমন্ড পার্সিভাল হিলারির মৃত্যুবার্ষিকিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

এডমন্ড হিলারি ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ২০শে জুলাই নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ছিল পার্সিভাল অগস্টাস হিলারি ও মাতার নাম ছিল গার্ট্রুড ক্লার্ক। হিলারির পিতামহ ও মাতামহ ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে ইংল্যান্ডের ইয়র্কশায়ার থেকে এসে নিউজিল্যান্ডের ওয়াইরোয়া নদী তীরে বসতি স্থাপন করেন। গ্যালিপলির যুদ্ধে অংশগ্রহণের কারণে পার্সিভালকে টুয়াকাউ অঞ্চলে জমিদান করা হলে তাঁরা সপরিবারে সেখানে চলে আসেন। হিলারি টুয়াকাউ প্রাথমিক বিদ্যালয় ও অকল্যান্ড গ্রামার স্কুল থেকে শিক্ষালাভ করেন। ষোল বছর বয়সে বিদ্যালয় থেকে মাউন্ট রুয়াপেহু পর্বতে ভ্রমণের সময় তিনি পর্বতারোহণের প্রতি উৎসাহিত হন। অকল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি অঙ্ক ও বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক হন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি রয়্যাল নিউজিল্যান্ড এয়ার ফোর্সে যোগদান করেন। তাঁর ভ্রাতা রেক্সের সাথে হিলারি গ্রীষ্মকালে মৌমাছি পালক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন, যার ফলে শীতকালে তিনি পর্বতারোহণের জন্য প্রয়োজনীয় সময় অতিবাহিত করতে পারেন। তাঁর মৌমাছি পালনে আগ্রহের ফলে তিনি মাইকেল অ্যারিটনকে মৌচাকের আকৃতির একটি স্বর্ণাভ ভাস্কর্য্য নির্মাণের অনুরোধ করেন, যা পরবর্তীকালে তাঁর বাগানে স্থাপন করা হলে মৌমাছিরা এই ভাস্কর্য্যটিকে মৌচাক হিসেবে ব্যবহার শুরু করে।হিলারি এই সময় রেডিয়ান্ট লিভিং ট্র্যাম্পিং ক্লাব নামক একটি সংস্থায় যোগ দেওয়ার পর এই ক্লাবের সাথে উইটাকার পর্বতমালায় ভ্রমণের আনন্দ উপভোগ করতেন। ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি দক্ষিণ আল্পস পর্বতমালার মাউন্ট অলিভিয়ার পর্বতশৃঙ্গে আরোহণ করার মাধ্যমে তাঁর জীবনের প্রথম শৃঙ্গজয় করেন

(পর্বত চূড়ায় হিলারি ও তেনজিং)
১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে জন হান্টের নেতৃত্বে ব্রিটিশদের মাউন্ট এভারেস্ট অভিযানে হিলারি অংশগ্রহণ করেন। এই অভিযানে দশ হাজার পাউন্ড মাল বহন করার জন্য ৩৬২ জন মালবাহক ও ২০ জন শেরপা সহ চার শতাধিক মানুষ অংশ গ্রহণ করেছিলেন। মার্চ মাসে বেস ক্যাম্প তৈরী করে ধীরে ধীরে দলটি ৭,৮৯০ মিটার (২৫,৮৮৬ ফু) উচ্চতায় আরোহণ করে সাউথ কলে তাঁদের অন্তিম শিবির স্থাপন করেন। ২৬শে মে টম বুর্দিলঁ ও চার্লস ইভান্স শৃঙ্গজয়ের প্রচেষ্টা করে কিন্তু ইভান্সের অক্সিজেন সরবরাহকারী ব্যবস্থায় গোলোযোগ দেখা দিলে তাঁরা শৃঙ্গ থেকে ৩০০ ফুট নিচে থেকে ফিরে আসতে বাধ্য হয়। এরপর দলপতি হান্ট তেনজিং নোরগে ও এডমন্ড হিলারিকে শৃঙ্গজয়ের চেষ্টা করতে নির্দেশ দেন। ২৮শে মে তাঁরা আং ন্যিমা, আলফ্রেড গ্রেগরি ও জর্জ লোর সহায়তায় তাঁরা ৮,৫০০ মিটার (২৭,৮৮৭ ফু) উচ্চতায় তাঁদের শিবির স্থাপন করলে ন্যিমা, গ্রেগরি ও লো নীচে ফিরে যান। হিলারির জুতো সারা রাত তাঁবুর বাইরে থাকায় পরদিন সকালে সেগুলি জমে গেলে দুই ঘন্টা ধরে দুইজনে মিলে চেষ্টা করে সেগুলিকে পূর্বাবস্থায় নিয়ে আসেন ও ত্রিশ পাউন্ড ওজনের সরঞ্জাম নিয়ে তাঁরা শৃঙ্গ আরোহণের চেষ্টা শুরু করেন। শৃঙ্গের ঠিক নিচে চল্লিশ ফুটের খাড়া একটি পাথরের দেওয়ালে একটি খাঁজ ধরে এডমন্ড হিলারি ও তাঁকে অনুসরণ করে তেনজিং আরোহণ করে সকাল ১১:৩০ মিনিটে মাউন্ট এভারেস্ট শৃঙ্গ জয় করেন। পর্বতশৃঙ্গে তাঁরা পনেরো মিনিট ছিলেন। এই সময় হিলারি তেনজিংয়ের আলোকচিত্র তোলেন। এই আলোকচিত্রে তেনজিংকে তাঁর বরফ-কুঠার তুলে ধরে থাকতে দেখা যায়। তাঁর বরফ-কুঠারে জাতিসংঘ, ইংল্যান্ড, নেপাল ও ভারতের পতাকা লাগানো ছিল। তেনজিংয়ের বর্ণনা অনুসারে হিলারি কোন কারণে নিজের আলোকচিত্র তোলাতে অস্বীকৃত হন। তাদের শৃঙ্গজয়ের প্রমাণস্বরূপ শৃঙ্গ থেকে তাঁরা নীচের পর্বতগাত্রের আলোকচিত্রও তোলেন। শৃঙ্গজয়ের ফলশ্রুতিতে পরবর্তীকালে তাঁদের দুইজনকে ঘিরে নেপাল ও ভারতে জনমানসে প্রচণ্ড উচ্ছাস তৈরী হয়। হিলারি ও হান্ট নাইট উপাধিতে ভূষিত হন এবং তেনজিংকে জর্জ পদক প্রদান করা হয়। এভারেস্ট আরোহণের পর হিলারি নেপালের শেরপাদের উন্নতিকল্পে তাঁর জীবনের অধিকাংশ সময় অতিবাহিত করেন। তিনি হিমালয়ান ট্রাস্ট নামক একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করে তাঁদের জন্য বিদ্যালয় ও হাসপাতাল নির্মাণ করেন। ২০০৮ সালের ১১ জানুয়ারি মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কসন রোগে আক্রান্ত হয়ে নিজ জন্মস্থান নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড শহরে মৃত্যুবরণ। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৮৮ বছর। আজ তার ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী। পর্বত আরোহী এবং অভিযাত্রী স্যার এডমন্ড পার্সিভাল হিলারির মৃত্যুবার্ষিকিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:১৭

রাজীব নুর বলেছেন: অনেক দিন পর নতুন লেখা পেলাম।

১১ ই জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:৫২

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

সুর্য প্রতিদিনই পূবে উদয় হয়
তবে তা নব নব রূপে।
আপনাকে ধন্যবাদ রাজীব নূর
নুতন লেখাকে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.