নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভারত সম্রাজ্ঞী এবং ইংল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের রানী ভিক্টোরিয়ার ১১৯তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

২২ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১১:০৩


যুক্তরাজ্য ও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের রানী ভিক্টোরিয়া। তার প্রকৃত নাম আলেকজান্ড্রিনা ভিক্টোরিয়া। তার পিতামহ ও ইংল্যান্ডের রাজা তৃতীয় জর্জের সাত ছেলে ও পাঁচ মেয়ের কারোরই কোনো সন্তান ছিল না। তাই রাজসিংহাসনের উত্তরাধিকারী নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়। এদিকে ভিক্টোরিয়া ছিলেন রাজা জর্জের চতুর্থ সন্তান এডওয়ার্ডের কন্যা। ১৮৩৭ সালের জুন মাসে রাজা চতুর্থ উইলিয়াম মারা যাওয়ার পর খুব সকালে ভিক্টোরিয়াকে বলা হয় তিনি এখন ব্রিটেনের রানী। ১৮৩৭ সালের ২০ জুন তিনি রানী হিসেবে অভিষিক্ত হন। ১৮৫৭ সালে ভারতে সিপাহী বিদ্রোহে বহু ইউরোপীয় মারা যাওয়ার প্রেক্ষাপটে ব্রিটিশ সরকার ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছ থেকে সরাসরি ভারতের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। ১৮৭৭ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে রয়েল টাইটেল অ্যাক্ট পাশের মাধ্যমে ভারতের সম্রাজ্ঞী হন রানী ভিক্টোরিয়া। ভিক্টোরিয়া ৬৪ বছর ইংল্যান্ড শাসন করেছেন। ১৯০১ সালের আজকের দিনে স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে রানী ভিক্টোরিয়া মারা যান। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত নিজের আভিজাত্য ও রাজকীয় রীতিনীতি মেনে চলেছেন এই মহারানী। আজ তার ১১৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। ভারত সম্রাজ্ঞী এবং ইংল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের রানী ভিক্টোরিয়ার মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

(মহারানী ভিক্টোরিয়া ও তার স্বামী অ্যালবার্ট)
১৮১৯ সালের ২৪ মে লন্ডনের কেনসিংটন (Kensington) প্রাসাদে রাণী ভিক্টোরিয়া জন্মগ্রহণ করেন। পুরো নাম আলেকজান্দ্রিনা ভিক্টোরিয়া, মা ডাকতেন দ্রিনা বলে। তিনি ছিলেন ডিউক অব কেন্ট এডওয়ার্ডের একমাত্র সন্তান। ১৮২০ সালে ভিক্টোরিয়ার বয়স যখন একবছরও পূর্ণ হয়নি তখন বাবা এডওয়ার্ড মারা যান। এরপর মা একাই তাকে বড় করে তোলেন। ভিক্টোরিয়া কখনো স্কুলে যাননি। তার জন্য একজন জার্মান গৃহশিক্ষিকা রাখা হয়েছিল। ছোট থেকেই জার্মান এবং ইংরেজি দু’ভাষাতেই পারদর্শী হয়ে ওঠেন তিনি। ভিক্টোরিয়াকে কখনোই একা থাকতে হয়নি। কিন্তু তবু তিনি ছিলেন একা, সমবয়সী কারো সাথে মেশার সুযোগ তার কখনো হয়নি। প্রাসাদে কঠোর নিয়ন্ত্রণের মধ্যে বেড়ে ওঠা রানীর একান্ত সময় বলে কিছু ছিল না। ১৮৩৭ সালে ভিক্টোরিয়ার শপথ গ্রহণের তিন বছর পর ১৮৪০ সালে তিনি মামাতো ভাই অ্যালবার্টকে বিয়ে করেন। তথ্য অনুযায়ী, ভিক্টোরিয়া ও আলবার্ট প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন। ইতিহাস লেখক জেন রিডলি তাঁর বের্টি: অ্যা লাইফ অব এডওয়ার্ড দ্য সেভেন্থ বইয়ে এমনটাই দাবি করেছেন। ১৮৪১ সালে রানীর প্রথম সন্তান ভিকির জন্ম হয়। পাঁচ মেয়ে ও চার ছেলে মোট নয় সন্তানের ছেলেমেয়ের জন্ম হয়েছিল তাদের ঘরে। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দোর্দণ্ড প্রতাপশালী মহারানি ভিক্টোরিয়া ও তাঁর স্বামী প্রিন্স আলবার্টের পরিবার অত্যন্ত সুখী সংসার হিসেবে বাইরের দুনিয়ায় পরিচিত হলেও বাস্তবতা ছিল অন্য রকম। আসলে সে সংসারেও গৃহদাহ ছিল। পরস্পরের প্রতি তীব্র আকর্ষণ সত্ত্বেও ওই তরুণ দম্পতির মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ছিল। রানি হিসেবে ভিক্টোরিয়া তাঁর দায়িত্ব পালনে বিভিন্ন বাধার মুখে পড়েন। এ জন্য তিনি স্বামীকেই পরোক্ষভাবে দায়ী মনে করতেন। ক্ষমতার দ্বন্দ্ব এতটাই চরমে পৌঁছেছিল যে ভিক্টোরিয়া নিজের সন্তানদের পেছনে চর লাগিয়েছিলেন। তবে সন্তানদের সবার ওপর তাঁর কঠোর নিয়ন্ত্রণ ছিল সব সময়। ভিক্টোরিয়া তাঁর ‘অপ্রিয় সন্তান’ বের্টিকে কখনো সরকারি কাজকর্মে যুক্ত হতে দেননি। বড় ছেলের সঙ্গে ভিক্টোরিয়া ‘নিজের অনেক মিল’ খুঁজে পেয়েছিলেন। আর সেটিই ছিল তাঁর সঙ্গে বের্টির বিরোধের কারণ। তার পরও মায়ের সঙ্গে কখনো সম্পর্ক ছিন্ন করেননি বের্টি।

(স্বামী সন্তানসহ মহারানী ভিক্টোরিয়া)
বড় ছেলে বের্টি ওরফে সপ্তম এডওয়ার্ডকে অপছন্দ করতেন ভিক্টোরিয়া। মায়ের দৃষ্টিতে বের্টি ছিলেন ‘অসুন্দর’ ও ‘অসম্পূর্ণ’। তিনি ১৯ বছর বয়সে আয়ারল্যান্ডে সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণকালে নেলি ক্লিফডেন নামের এক যৌনকর্মীর সঙ্গে কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েন। ছেলের এমন ‘অধঃপতনে’ ভেঙে পড়েছিলেন প্রিন্স আলবার্ট। ১৮৬১ সালে তিনি বের্টির সঙ্গে কেমব্রিজে দেখা করে অসুস্থ অবস্থায় উইন্ডসরে ফিরে আসেন এবং কয়েক দিন পরই মারা যান। সম্ভবত টাইফয়েড বা অন্য কোনো রোগে তাঁর মৃত্যু হয়েছিল। স্বামী অ্যালবার্টের মৃত্যুর জন্য ছেলে বের্টিকেই দায়ী মনে করতেন ভিক্টোরিয়া। এরপর নিজেকে একরকম গুটিয়ে নেন ভিক্টোরিয়া। অ্যালবার্টের মৃত্যুর পর সরকারি দায়িত্ব থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন রানি। এমনকি সংসদ অধিবেশন ডাকতেও অস্বীকৃতি জানান। পরবর্তী ৪০ বছর তাঁকে জনসমক্ষে খুব কমই দেখা গেছে। পত্রপত্রিকা রসিকতা করে লিখতে শুরু করে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে টু-লেট ঝুলছে। পরে অবশ্য রানী সরকারি দায়িত্ব পালন শুরুর মাধ্যমে আবার মানুষের আস্থা অর্জন করেন। অবশেষে ১৯০১ সালে স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে ৯৪ বছর বয়সে রানী ভিক্টোরিয়া মারা যান। এরপর তার বড় ছেলে এডওয়ার্ড সিংহাসনে বসেন। ৫৯ বছর বয়সে রাজার দায়িত্ব নিয়ে তিনি বেশ সফল হন এবং মায়ের যোগ্য সন্তান হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেন।

(ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল ভবন)
মহারানী ভিক্টোরিয়া মারা যাওয়ার পর তাঁর স্মৃতির উদ্দেশ্যে কলকাতার বিখ্যাত গড়ের মাঠের দক্ষিণ প্রান্তে সাদা মার্বেল পাথরের ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল ভবনটি নির্মিত হয় । লর্ড কার্জন এই স্মৃতিসৌধটি নির্মাণের পরিকল্পনা করেন। ১৯০৬ সালের ৪ জানুয়ারি এই ভবনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন প্রিন্স অফ ওয়েলস হিসেবে ভারত সফরে আসা পরবর্তীকালের রাজা পঞ্চম জর্জ এবং ১৯২১ সালের ২৮ ডিসেম্বর এটি উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রিন্স অফ ওয়েলস ও পরবর্তীকালের রাজা অষ্টম এডওয়ার্ড। ৬৪ একর জমির উপর লন, পুকুর, গুল্মরাজি ও লতাপাতায় ঘেরা বিশাল উন্মুক্ত অঙ্গনে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল সংস্থাপিত। কলকাতায় সম্ভবত এরূপ মনোরম ও উন্মুক্ত অঙ্গন দ্বিতীয়টি নেই। ভবনটির দৈর্ঘ্য ১০৩.০২ মিটার, প্রস্থ ৬৯.৪৯ মিটার এবং ‘অ্যাঞ্জেল অব ভিক্টরি’ মূর্তি পর্যন্ত এর উচ্চতা ৫৬.০৮ মিটার। মূর্তিটি আরও ৪.৮৮ মিটার উঁচু। মেমোরিয়াল নির্মাণে ব্যয়িত মোট ১,০৫,০০,০০০ টাকার সবটাই সংগৃহীত হয়েছে ব্যবসায়ী সম্প্রদায় ও ভারতের দেশীয় রাজন্যবর্গের স্বেচ্ছাপ্রদত্ত অর্থ থেকে। বলা হয়ে থাকে যে, ভবনের সম্পূর্ণ নির্মাণ সামগ্রী বহনের জন্য প্রয়োজন ছিল একটি ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ট্রেনের। ভবনের সর্বমোট ওজন হিসাব করা হয়েছে ৮০,৩০০ টন এবং ব্যবহূত মার্বেলের মোট পরিমাপ ৪৫০.২৪ ঘন মিটার। মার্বেল সংগ্রহ করা হয়েছিল রাজস্থানের মাকরানা থেকে। এখান থেকেই সম্রাট শাহজাহান তাজমহলের জন্য মার্বেল সংগ্রহ করেছিলেন। প্রাথমিক পর্যায়ে পরিবহণ খরচসহ মার্বেলের মোট মূল্য হিসাব করা হয়েছিল ২৫ লক্ষ টাকা। পরে অবশ্য ভারতীয় রেলবিভাগ পরিবহণ চার্জ দাবি না করলে মার্বেল বাবদ ব্যয় ২ লক্ষ টাকা কমে যায়। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল বর্তমানে বহু চিত্রকর্ম, প্রাচীন পোশাক-পরিচ্ছদ ও ভারতে ব্রিটিশ শাসনামলের বহু স্মৃতি বহন করে চলেছে। সব মিলিয়ে এখানে প্রায় ৩,৫০০টি নিদর্শন সংরক্ষিত আছে। বর্তমানে কলকাতায় পর্যটকদের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল। আজ মহা রানীর ১১৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। ভারত সম্রাজ্ঞী এবং ইংল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের রানী ভিক্টোরিয়ার মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল
ফেসবুক লিংক
[email protected]

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১১:০৪

চাঁদগাজী বলেছেন:



আমাদেরও ভিক্টোরিয়া আছে; ভিক্টোরিয়ার পর, পাক ভারতে শেখ হাসিনাই রেকর্ড করেছে।

২৩ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ১১:০৫

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ভিক্টোরিয়ারা কখনোই মরে না।
যুগে যুগে ভিক্টোরিয়ারা বেঁচে
থাকে তাতের কর্মে ।

২| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১:৫৩

জাহিদুল ইসলাম ২৭ বলেছেন: দ্বিতীয় প্যারার শেষ ৩/৪ লাইন আর তৃতীয় প্যারার প্রথম লাইনের মধ্যে তথ্য বিভ্রাট আছে।রাণীর ইতিহাস জেনে ভালো লাগলো।

২৩ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ১১:১১

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
দ্বিতীয় প্যারার শেষ ৩/৪ লাইন উল্লেথ করা হয়েছে
বের্টি তার অপ্রিয় সন্তান
আর তৃতীয় প্যারার প্রথম লাইনে বলা হয়েছে
"বড় ছেলে বের্টি ওরফে সপ্তম এডওয়ার্ডকে
অপছন্দ করতেন ভিক্টোরিয়া।

অমিল কোথায়?

৩| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:১৩

রাজীব নুর বলেছেন: কোলকাতায় ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল দেখেছি। চমৎকার নির্দশন। মুগ্ধ করার মতো। তাজমহলের চেয়ে বেশি সুন্দর।

২৩ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ১১:২২

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকে ধন্যবাদ খান সাহেব
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল দেখার
সৌভাগ্য হয়েছে আপনার।
আপনার জীবন ধন্য।

৪| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ১১:২৩

জাহিদুল ইসলাম ২৭ বলেছেন: বড় ছেলের সঙ্গে নিজের অনেক মিল খুজে পেয়েছিলেন ভিক্টোরিয়া।মিল পেলে তো পছন্দ হওয়ার কথা।হয়তো আমার বোঝার ভুল।

২৩ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ১১:৪৪

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
মিল থাকাটাই ছিলো বের্টিকে অপছন্দের বড় কারন।
তার গুনাবলী অন্যের মাঝে প্রকাশিত হোক
অর্থাৎ তার সমকক্ষ কেউ হোক তা তার ছেলেই
হোকনা কেন সহ্য করা কঠিন ছিলো তার
কাছে। র্হিংসা বলে যাকে !!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.