নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
বাংলাদেশের খ্যাতনামা শিশুসাহিত্যিক মোহাম্মদ নাসির আলী।আমাদের শিশুসাহিত্যের ভাণ্ডারকে ভরে তোলার জন্য এবং সাহিত্যের এ বিভাগটিকে একটি পরিপূর্ণ চেহারা দেওয়ার জন্য যেসব শিশুসাহিত্যিক আজীবন কাজ করে গেছেন মোহাম্মদ নাসির আলী ছিলেন তাদের অন্যতম। তিনি সাধারনত ছোটদের জন্য লিখেছেন এবং শিশুসাহিত্যিক হিসেবে সাহিত্যচর্চায় প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। ছোটদের উপযোগী করে লেখাকে অন্যতম দায়িত্ব মনে করতেন মোহাম্মদ নাসির আলী। এজন্য নিরলস পরিশ্রম করে গেছেন তিনি। চাকরি করতেন সুপ্রিম কোর্টে। সেখান থেকে বের হয়ে সোজা চলে যেতেন তার প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান নওরোজ কিতাবিস্থানে। রাত ন’টার সময় বাসায় ফিরে এসে সাততাড়াতাড়ি কিছু খেয়ে লিখতে বসতেন। মাঝরাত পর্যন্ত একটানা লিখতেন তিনি। আর তার ফাঁকে ফাঁকে পড়তেন অন্যদের লেখা। বিশেষ করে বিশ্বসাহিত্যের কিশোর ক্ল্যাসিকগুলো খুবই প্রিয় ছিল তার। ছোটদের জন্য শিক্ষামূলক গল্প, প্রবন্ধ ও জীবনকথা রচনায় দক্ষতার পরিচয় প্রদান করেন। শিশুতোষ বইয়ের লেখক হিসেবেই নাসির আলী বেশি পরিচিত। শিশু-কিশোরদের জন্য মজার মজার গল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধ লিখেছেন মোহাম্মদ নাসির আলী। অনুবাদ করেছেন বিশ্ব সাহিত্যের অনেক সেরা গল্প।তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৫১টি। তিনি অনেক শিক্ষামূলক গল্প, প্রবন্ধ ও জীবনী লিখেছেন।হাস্যরস সৃষ্টিতে তিনি যথেষ্ট দক্ষ ছিলেন। তার সবচেয়ে সেরা কাজ লেবুমামার সপ্তকাণ্ড । তার উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে ‘লেবু মামার সপ্তকাণ্ড’, ‘বোকা বকাই’, ‘বোবারা সব কালা’, ‘তিমির পেটে কয়েক ঘণ্টা’, ‘সাতপাঁচ গল্প’, ‘সোনার চরকা’, ‘বুমেরাং’, ‘মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা’, ‘শাহীদিনের কাহিনী’ আর ‘যোগাযোগ’-এর মতো সুখপাঠ্য বই লিখে মোহাম্মদ নাসির আলী পাঠকদের কাছে শুধু প্রিয় লেখক হিসেবে সম্মান কুড়িয়ে নেননি, বাংলা শিশুসাহিত্যের সম্পদকেও সমৃদ্ধ করেছেন। তিনি ১৯৭৫ সালের আজকের দিনে মৃত্যুবরণ করেন। আজ স্বনামধন্য এ লেখকের ৭৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। শিশুসাহিত্যিক মোহাম্মদ নাসির আলীর মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
মোহাম্মদ নাসির আলী ১৯১০ সালের ১০ জানুয়ারি ঢাকা জেলার বিক্রমপুরের দাহদা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। দাহদা লোকমুখে উচ্চারণ হয় ধাইদা। এই ধাইদা গ্রামের এক মধ্যবিত্ত পরিবারের কর্তা মোহাম্মদ ইজ্জত আলীর এক পুত্র হায়দার আলী। তিনি ব্যবসা উপলক্ষে গোয়ালন্দের রাজবাড়ী শহরে বাস করতেন। সেখানে তার একটি জুতার দোকান ছিলো। হায়দার আলীর স্ত্রীর নাম কসিমুন্নেসা। তাদের দুই মেয়েসহ এগারটি সন্তান ছিলো। কিন্তু পুত্র সন্তানদের দু’জন ছাড়া বাকিরা অকালে মৃত্যুবরণ করে।পরে তাদের কোল জুড়ে আসে এক পুত্র সন্তান। পুত্রের দিক থেকে তিনি তৃতীয়। বাবা-মা আদর করে নাম রাখলেন মোহাম্মদ নাসির আলী। জন্মের সময় তার গায়ের রং ছিলো খুব ফর্সা। এ জন্য বাবা-মা আদর করে ডাকতেন কফুর অর্থাৎ কর্পূর। জন্ম ধাইদায় হলেও নাসির আলীর শৈশব কেটেছে বাবার বাসস্থান রাজবাড়ী শহরে। তার শিক্ষাজীবনের শুরুও সেখানেই। তবে কিছুদিন পর তিনি চলে আসেন গ্রামের বাড়ি বিক্রমপুরে। সেখানে থেকে পড়াশোনা করতে থাকেন। তিনি বিখ্যাত তেলিরবাগ কালীমোহন দুর্গামোহন ইনস্টিটিউট হতে ১৯২৬ সালে স্বর্নপদক সহ এন্ট্রান্স পাস করেন। পরে ১৯২৮ সালে তিনি জগন্নাথ কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে আইএ পাস করেন এবং ১৯৩১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিকম. পাস করেন। মোহাম্মদ নাসির আলী ১৯৬৯ সালে প্রকাশনা সম্পর্কে করাচি থেকে ইউনেস্কো ট্রেনিং গ্রহণ করেন। তাছাড়া তিনি ভাল ছবি আঁকতে পারতেন। ফটোগ্রাফিতেও তার প্রশংসনীয় দক্ষতা ছিল।
কর্মজীবনে মোহাম্মদ নাসির আলী ১৯৩৩ সালে কলকাতা হাইকোর্টে অনুবাদক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি ১৯৫২ সালে অধুনা লুপ্ত দৈনিক আজাদের শিশু-কিশোর বিভাগে মুকুল মাহফিল পরিচালনা করেন এবং বাগবান ছদ্মনামে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তী কালে তিনি একটি পত্রিকার শিশুবিভাগের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ঢাকায় এসে হাইকোর্টের চাকরিতে যোগদান করেন এবং ১৯৬৭ সালে অবসরগ্রহণ করেন। তবে এর আগেই তিনি ১৯৪৯ সালে বন্ধু আইনুল হক খানের সঙ্গে যৌথভাবে নওরোজ কিতাবিস্তান নামে প্রকাশনা সংস্থা গড়ে তোলেন, যা এখনো পুস্তক প্রকাশনার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। শিশুসাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য নাসির আলী বেশ কয়েকটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারে সম্মানিত হন। তিনি ১৯৬৭ সালে শিশুসাহিত্যে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ১৯৬৮ সালে ইউনেস্কো এবং একই বছর ইউনাইটেড ব্যাংক অব পাকিস্তান পুরস্কার লাভ করেন। বই প্রকাশনার ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ১৯৭৮ সালে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র ও ১৯৮৫ সালে ইসলামিক ফাউন্ডেশন তাকে স্বর্ণপদকে (মরণোত্তর) ভূষিত করে।
মোহাম্মদ নাসির আলী ১৯৭৫ সালের ৩০শে জানুয়ারি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরন করেন। মোহাম্মদ নাসির আলী আজ আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু তার ৫১টি প্রকাশিত বইয়ের মাঝে সাজানো রয়েছে সারাজীবনের অমূল্যধন শিশু-কিশোর উপযোগী তার লেখাগুলো সেই মূল্যবান সৃষ্টিই চিরদিন বাঁচিয়ে রাখবে তাকে। আজ স্বনামধন্য এ লেখকের ৭৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। শিশুসাহিত্যিক মোহাম্মদ নাসির আলীর মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল
ফেসবুক লিংক
[email protected]
৩০ শে জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:৩৩
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপু আপনাকে ধন্যবাদ
খ্যাতনাম শিশুসাহিত্যিক মোহাম্মদ নাসির আলীর
মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের জন্য।
২| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:৪২
রাজীব নুর বলেছেন: আজই তার সম্পর্কে প্রথম জানলাম।
৩০ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৮:৩৭
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আজই তো পোস্ট দিলাম
সুতরাং আগে জানার সুযোগ নাই।
©somewhere in net ltd.
১| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ১১:৪৩
কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: শ্রদ্ধা রইলো