নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের ৮১তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:২২


ষাটের দশকের ঔপন্যাসিক ও ছোট গল্পকার হাসান আজিজুল হক। তিনি বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান কথাসাহিত্যক হিসেবে পরিগণিত। হাসান আজিজুল হক তার সুঠাম গদ্য এবং মর্মস্পর্শী বর্ণনাভঙ্গির জন্য প্রসিদ্ধ। জীবনসংগ্রামে লিপ্ত মানুষের কথকতা তার গল্প-উপন্যাসের প্রধানতম অনুষঙ্গ। রাঢ়বঙ্গ তার অনেক গল্পের পটভূমি। আগুনপাখি তার রচিত শ্রেষ্ঠ উপন্যাস। আগুনপাখি তাকে নিয়ে গেছে অনন্য এক উচ্চতায়। হাসান আজিজুল হকের উল্লেখযোগ্য রচনাগুলোর মধ্যে রয়েছে আত্মজা ও একটি করবী গাছ, জীবন ঘষে আগুন, পাতালে হাসপাতালে, নামহীন গোত্রহীন, চলচিত্রের খুঁটিনাটি, মা মেয়ের সংসার, বিধবাদের কথা ও অন্যান্য গল্প, সক্রেটিস, বৃত্তায়ন, শিউলি, আগুনপাখি, ফিরে যাই ফিরে আসি, উঁকি দিয়ে দিগন্ত প্রভৃতি। তার মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বইয়ের মধ্যে রয়েছে একাত্তর: করতলে ছিন্নমাথা, লাল ঘোড়া আমি, ফুটবল থেকে সাবধান ইত্যাদি। সম্পাদিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে গোবিন্দচন্দ্র দেব রচনাবলী, একুশে ফেব্রুয়ারি গল্প সংকলন, জন্ম যদি তব বঙ্গে ইত্যাদি।এই অসামান্য গদ্যশিল্পী তার সার্বজৈবনিক সাহিত্যচর্চার স্বীকৃতি স্বরূপ ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে “সাহিত্যরত্ন” উপাধি লাভ করেন। এছাড়াও তিনি ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন এবং ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ সরকার তাকে একুশে পদকে ও ২০১৯ সালে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে। আজ তার ৮১তম জন্মবার্ষিকী। ১৯৩৯ সালের আজকের দিনে অবিভক্ত বাংলার বর্ধমানের যবগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন হাসান আজিজুল হকে। বাংলা ছোটগল্পের এই বরপুত্র হাসান আজিজুল হকের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

হাসান আজিজুল হক ১৯৩৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি অবিভক্ত বাংলার বর্ধমানের যবগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মোহাম্মদ দোয়া বখশ্‌ এবং মাতা জোহরা খাতুন। জীবনের অধিকাংশ সময় তিনি রাজশাহীতে কাটিয়েছেন। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের পড়াশোনা নিজের গ্রামেই করেছেন হাসান আজিজুল হক। ১৯৫৪ সালে যবগ্রাম মহারানী কাশীশ্বরী উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ১৯৫৬ সালে খুলনার দৌলতপুরের ব্রজলাল কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন তিনি। তিনি ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে যবগ্রাম মহারানী কাশীশ্বরী উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে খুলনার শহরের অদূরে দৌলতপুরের ব্রজলাল কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। প্রথম যৌবনেই ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি। রাজনীতি করার কারণেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে চরম নির্যাতন ভোগ করেন। ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে রাজশাহী সরকারি কলেজে থেকে দর্শন-এ সম্মানসহ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬০ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি পিএইচডি অধ্যয়নের জন্য অস্ট্রেলিয়া গিয়েছিলেন, কিন্তু বিদেশের পরিবেশ ভালো না-লাগায় অধ্যয়ন শেষ না-করেই দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। কর্মজীবনে ১৯৬০ থেকে ১৯৭৩ পর্যন্ত তিনি রাজশাহী সিটি কলেজ, সিরাজগঞ্জ কলেজ, খুলনা গার্লস কলেজ এবং দৌলতপুর ব্রজলাল কলেজে অধ্যাপনা করেছেন। ১৯৭৩ -এ তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৪ সাল পর্যন্ত একনাগাড়ে ৩১ বছর অধ্যাপনা করেন। ২০০৯-এ তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু চেয়ার পদের জন্য মনোনীত হন এবং দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ এর আগস্ট এ তিনি বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘ এর সভাপতি নির্বাচিত হন।

আমাদের সাহিত্য ও সৃজনের রুচি নির্মাণে যে-কজন লেখকের রচনা নিত্য সহায়তা দিয়ে থাকেন তার ভেতরে হাসান আজিজুল হক অন্যতম, প্রধানতম বললেও অত্যুক্তি হবে না। যদিও তাঁর প্রধান পরিচয় দাঁড়িয়ে গেছে ছোটোগল্পকার হিসেবে কিন্তু প্রবন্ধ ও গদ্যরচনাও যে তাঁর ততোধিক গুরুত্বপূর্ণ জায়গা, কোনো অংশে কম উজ্জ্বল নয়হাসান আজিজুল হক প্রায় চল্লিশ বছর ধরে ছোটগল্প লিখে গেছেন। কৈশোরে-তারুণ্যে উপন্যাস লেখার চেষ্টা ছিল বটে কিন্তু প্রথম প্রকৃত উপন্যাস লিখেছেন ষাটোর্ধ্ব বয়সে। ছোটগল্পের আঙ্গিকেই তাঁর লেখকসত্তার বিকাশ ঘটেছে। বস্ত্তত তিনি সাহিত্যের আঙ্গিক পার্থক্যকে স্বীকার করেন না। তিনি গল্প-উপন্যাস লেখাকে মূলত গদ্যলেখা হিসেবেই ভাবেন। যে সময় ও সমাজে তিনি জীবনযাপন করেন, সেই সময়, সমাজ ও সমাজের মানুষকে নিয়ে তাঁর বলার কথাগুলোকেই নিজের মতো সাজিয়ে উপস্থাপন করেন গদ্যে। এছাড়া বেঁচে থাকার রসদ সরবরাহ করে যে-সমাজ, সে-সমাজের একজন ভোক্তা হিসেবে লেখকের যে-ঋণ, লেখার মধ্য দিয়ে সে-ঋণ শোধ দেওয়ার একটি দায়বোধ কাজ করে। তাই লেখাকে তাঁর সাধ্যমতো একটি শ্রেষ্ঠ ‘কাজ’ হিসেবেই মনে করেন। বাংলাদেশের প্রায় সমস্ত দিক তিনি তার প্রবন্ধে তুলে এনেছেন। এদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ, মানুষের মৌলিক অধিকারে এমন দিক নেই যা তার কলমে উঠে আসে নি। ‘কথাসাহিত্যের কথাকতা’র পরের প্রতিটি প্রবন্ধের বইতে তিনি সেই জায়গাগুলোকে খতিয়ে দেখেছেন। হাসান আজিজুল হকের ছোটোগল্পের গদ্য এবং তার প্রবন্ধের গদ্য দুয়েরই মূল বৈশিষ্ট্য স্পষ্টতা। যদিও ‘আমৃত্যু আজীবন’বা ‘জীবন ঘষে আগুনে’র মতো গল্পের গদ্যের জটিলতা তার গদ্যের ব্যতিক্রমের দৃষ্টান্ত। সব দেশের মতো বাংলাদেশের ইতিহাস ও রাজনীতির ভাঙাগড়া আছে। এর সমান্তরালে চলেছে তাঁর লেখালেখি। তাঁর জন্মের সময়ের অবিভক্ত বাংলা থেকে বর্তমান সময় অব্দি তার লেখার সীমানা ক্রমে প্রসারিত। আর তাঁর লেখার অঞ্চল মূল পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান থেকে বাংলাদেশের দক্ষিণ ও উত্তরাঞ্চল। সেই জায়গায় থেকে এসেছে তাঁর দেখা মানুষ ও মানবিক পরিস্থিতির বর্ণনা। ষাটের দশকের প্রথম দিকে নাজিম মাহমুদ, মুস্তাফিজুর রহমান, জহরলাল রায়, সাধন সরকার, খালেদ রশীদ প্রমুখ সংগ্রামী কয়েকজন তরুণের চেষ্টায় গঠিত হয়েছিল 'সন্দীপন গোষ্ঠী'। ততদিনে অবশ্য হাসান আজিজুল হক রীতিমতো বিখ্যাত। প্রথম গল্পগ্রন্থ 'সমুদ্রের স্বপ্ন শীতের অরণ্য' এর প্রথম গল্প 'শকুন' এ সুদখোর মহাজন তথা গ্রামের সমাজের তলদেশ উন্মোচিত করেছিলেন তিনি। প্রায় অর্ধশতাব্দীর গল্পচর্চায় বিষয়, চরিত্র ও নির্মাণকুশলতায় হাসান আজিজুল হক অনেক উল্লেখযোগ্য গল্পের রচয়িতা। এসবের মধ্যে রয়েছে 'শকুন', 'তৃষ্ণা', 'উত্তরবসন্তে', 'বিমর্ষ রাত্রি, প্রথম প্রহর', 'পরবাসী', 'আমৃত্যু' 'আজীবন', 'জীবন ঘষে আগুন', 'খাঁচা', 'ভূষণের একদিন', 'ফেরা', 'মন তার শঙ্খিনী', 'মাটির তলার মাটি', 'শোণিত সেতু', 'ঘরগেরস্থি', 'সরল হিংসা', 'খনন', 'সমুখে শান্তির পারাবার', 'অচিন পাখি', 'মা-মেয়ের সংসার', 'বিধবাদের কথা' 'সারা দুপুর' ও 'কেউ আসেনি'।

১৯৬০ সালে বৃত্তায়ন নামের একটি উপন্যাস লিখলেও তিনি নিজেই এটির বড় সমালোচক। এ রচনাকে তিনি নিজেই উপন্যাস হিসেবে অস্বীকার করে থাকেন। তবে আগুনপাখি নামে একটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে ২০০৬ সালে। উপন্যাসটি প্রথম আলো বর্ষসেরা বইয়ের স্বীকৃতি লাভ করে। এ উপন্যাসের জন্য তিনি ২০০৮ সালে কলকাতা থেকে ‘আনন্দ সাহিত্য পুরস্কার’ লাভ করেন। তার দ্বিতীয় উপন্যাস ‌‌'সাবিত্রী উপাখ্যান' ২০১৩ সালে প্রকাশিত হয়। 'শিউলি' নামে আরও একটি ছোট উপন্যাস তিনি লিখেছেন। আপাতত ‘সাবিত্রী উপাখ্যান’তাঁর এখন পর্যন্ত শেষ গ্রন্থ। এছাড়াও তার বেশ কিছু লেখা, বক্তৃতা এখনো গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়নি। কোনো কোনোটা নিয়ে একটা দুটো বই প্রকাশের অপেক্ষায়। তিনি যেহেতু এখানো ক্রিয়াশীল এবং পত্রপত্রিকার কিছুদিন পর পর তার নানান লেখা প্রকাশিত হয়ে চলেছে ফলে তার সম্পর্কে তো শেষ কথা বলার সময় আসেনি। আর তাঁর মতো লেখক সম্পর্কে শেষ কথা বলার কোনো সুযোগ বোধ করি মিলবেও না। কিন্তু তাঁর মূল প্রবণতাটি বোধ করি ওই আমরা যা বলে আসছি তা-ই রয়ে গেছে, এবং সেটি দিনে দিনে তীক্ষ্ণ তীব্র এক সরলতার আকার পেয়ে চলেছে। ব্যক্তিগত জীবনে হাসান আজিজুল হকের স্ত্রী শামসুন নাহার। তারা তিন কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের জনক-জননী। তার নিজস্ব বাসভবন ‘উজান’রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ব দিকে ‘বিহাস’-এ।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল
ফেসবুক লিংক
[email protected]

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫৭

নেওয়াজ আলি বলেছেন:

২| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৮:৪৯

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

৩| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:২৬

রাজীব নুর বলেছেন: একজন অতি ভালো লেখক।
একবার তার আমি অনেক গুলো ছবি তোলার সুযোগ পেয়েছিলাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.