নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুক্তিযুদ্ধ-গানের গীতিকার গোবিন্দ হালদারের ৯০তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:৩৩


একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বন্ধু কবি গোবিন্দ হালদার। তিনি ভারতের আকাশবাণী বেতারের তালিকাভুক্ত গীতিকার ছিলেন। তাঁর রচিত প্রথম কবিতা ছিল ‘আর কতদিন’। তিনি কলকাতায় আয়কর বিভাগে চাকরি করতেন। আর অবসরে লিখতেন কবিতা আর গান। তিনি প্রায় সাড়ে তিন হাজার কবিতা ও গান লিখেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ দূর দিগন্ত। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় কলকাতার কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীরাও তখন মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে কলম ধরেছিলেন। সেই সময়ে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন কলকাতার গীতিকবি গোবিন্দ হালদার। তখন তাঁর বয়স ছিল ৪১ বছর। স্বাধীন বাংলা বেতারে সম্প্রচারিত তার লেখা গানসমূহ মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করতো।
‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি,
মোরা একটি মুখের হাসির জন্য অস্ত্র ধরি।’

পূর্ব বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষের প্রবল প্রাণের উচ্ছ্বাসে গর্জে ওঠা প্রতিরোধ সংগ্রমের চূড়ান্ত পর্যায়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয় রচনার একটি অমোঘ অস্ত্র- এ গানটির রচয়িতা গোবিন্দ হালদার। এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের সময় তার রচিত গানের মধ্যে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে, পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে, লেফট রাইট লেফট রাইট, হুঁশিয়ার হুঁশিয়ার, পদ্মা মেঘনা যমুনা, চলো বীর সৈনিক, হুঁশিয়ার, হুঁশিয়ার বাংলার মাটি অন্যতম। মুক্তিযুদ্ধের উদ্দীপক প্রাণশক্তি হিসেবে এই গানগুলোর অবদান অসীম। আজও আমরা এসব গান শুনে দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হই। দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের উদ্দীপনা সৃষ্টিকারী এই মানবতাবাদী বাঙালি কবি গীতিকার, সুরকার গোবিন্দ হালদারের আজ ৯০তম জন্মবার্ষিকী। ১৯৩০ সালের আজকের দিনে তিনি পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁয়ে জন্মগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধ-গানের গীতিকার গোবিন্দ হালদারের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।

গোবিন্দ হালদার ১৯৩০ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি অবিভক্ত বাংলার পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁয়ে জন্মগ্রহণ করেন। চাকরিসূত্রে প্রায় ৫০ বছর আগে কলকাতায় পাড়ি জমান তিনি। গোবিন্দ হালদার একজন বাঙালি। তিনি ছিলেন আপাদমস্তক একজন বাঙালি গীতিকার। ভৌগোলিকভাবে পশ্চিম বঙ্গের অধিবাসী কিন্তু তাঁর রক্তে রয়েছে বাংলাদেশের ঋণ । তাঁর পূর্ব পুরুষরা ছিলেন বাংলাদেশের অধিবাসী। তাছাড়া, আমরা তো ভৌগোলিক কারণে কাঁটাতারের বেড়ায় আলাদা হয়ে গেছি; কিন্তু মনে প্রাণে সংস্কৃতিতে একই মায়ের পুত্রকন্যা। তাই তিনি মনে ধারণ করেছিলেনে একইভাবে আমাদের হয়ে স্বাধীনতা ও মুক্তির আবেগ, দেশপ্রেমের উচ্ছ্বাস। ফলে তাঁর হৃদয়-উৎস-ধারা-জল বেয়ে বেরিয়ে এসেছে স্বাধীনতা-মুক্তিযুদ্ধ-দেশপ্রেমের কথা-গান; যা আমাদের বাঙালির প্রাণে উদ্দীপক হয়ে বেজেছে মুক্তিযুদ্ধের সময়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের পর তৎক্ষনাৎ একটি গান রচনা করে সুরারোপ করা হয়। এরপর রেকর্ড করে বাজানো হয় রেডিওতে। গোবিন্দ হালদারের লেখা সেই গানটি হলো- “এক সাগর রক্তের বিনিময়ে, বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা- আমরা তোমাদের ভুলবোনা..” আসলে আমরা ভুলে গিয়েছি! গোবিন্দ হালদারকেতো বটেই, এমনকি গানটি প্রথম যিনি গেয়েছেন সেই স্বপ্না রায়কে! তিনি এখন কোথায় আছেন কেমন আছেন, সেটা আরেক গবেষণার বিষয় হয়ে দাঁড়াবে! ২০০৬ সালের মার্চ মাস জুড়ে বিবিসি বাংলার শ্রোতারা তাঁদের বিচারে সেরা যে পাঁচটি গান মনোনয়ন করেছেন, তার ভিত্তিতে বিবিসি বাংলা তৈরি করেছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ২০টি বাংলা গানের তালিকা। এর মধ্যে দুটি গান গোবিন্দ হালদারের লেখা। “এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা’’ গানটি ২০ সেরা গানের মধ্যে ৫ম অবস্থানে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল এবং “মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি…” সুরকার ও শিল্পী – আপেল মাহমুদ’র এই গানটি ৭ম অবস্থানে অন্তভূক্ত হয়েছিল।

দীর্ঘ রোগভোগের পর ২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারি কলকাতার জিএন রায় হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু বরণ করেন গোবিন্দ হালদার। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। মৃতকালে তিনি তিনি স্ত্রী, একমাত্র মেয়ে, জামাইসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। মৃত্যুর কিছদিন আগে লেখালেখি হওয়ায় শেখ হাসিনা উনার চিকিৎসার সমস্ত ভার নিয়েছিলেন। এককালীন পনের লাখ টাকা অনুদান দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি ভারত সফরের সময় উনাকে দেখতে গিয়েছিলেন। তখন উনি আইসিইউতে। তার সপ্তাহখানেক পরই উনি মারা যান। এসব যুদ্ধবন্ধুদেরকে আমরা কয়েকবছর আগে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দিয়েছি। সম্মাননার সার্টিফিকেট-ক্রেস্টের সাথে একটা গোল্ড মেডেলও ছিল। মেডেলে এক ভরি করে স্বর্ণ থাকার কথা। কিছুদিন পর দেশের একটা শীর্ষস্থানীয় পত্রিকার অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে এক ভরি স্বর্ণ থেকে কর্তাব্যক্তিরা বারো আনাই মেরে দিয়েছেন! স্বর্ণ ছিল মোটে চার আনা! মানবতাবাদী বাঙালি কবি গীতিকার, সুরকার গোবিন্দ হালদারের আজ ৯০তম জন্মবার্ষিকী। গোবিন্দ হালদার পৃথিবীর জাগতিক নিয়মে চলে গিয়েছেন পরপারে কিন্তু রেখে গেছেন এমন কিছু গান যা আজীবন মানুষ শুনবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের মতোই তাঁর গানের ইতিহাসও আজীবন স্মরণ করবে বাঙালি জাতি। তিনি বেঁচে থাকবেন তার সৃষ্টির মাঝে, তার কর্মের মাঝে। মুক্তিযুদ্ধ-গানের গীতিকার গোবিন্দ হালদার: ভুলিনি তোমাকে, ভুলব না। মুক্তিযুদ্ধ-গানের গীতিকার গোবিন্দ হালদারের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক লিংক
[email protected]

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১১:২৯

রাজীব নুর বলেছেন: শ্রদ্ধা।

২| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ১০:৩৪

নেওয়াজ আলি বলেছেন: শ্রদ্ধা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.