নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতির জনক ও প্রথম রাষ্ট্রপতি জর্জ ওয়াশিংটনের ২৮৮তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:২৪


জর্জ ওয়াশিংটন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি। তিনি আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধ-এ কন্টিনেন্টাল আর্মির সর্বাধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। তাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গঠনের প্রধান বলে উল্লেখ করা হয় এবং তিনি তার জীবদ্দশায় এবং এখনও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতির জনক হিসেবে পরিচিত। দুটো বিষয়ে সব সময়ই তিনি খুবই উৎসাহী ছিলেন এবং সেগুলো নিয়ে চর্চা করতেন। আর সেগুলো হলো- সামরিক কৌশল এবং পশ্চিমা সম্প্রসারণ। ১৬ বছর বয়সে তিনি শিনানডোয়াহ্ ভূমি জরিপ কাজে সাহায্য করেন। ১৭৫৪ সালে একজন লেফটেন্যান্ট কর্নেল হিসেবে কমিশন লাভ করে প্রথমেই তিনি যে লড়াইতে অংশ নেন তা পরবর্তীতে ফরাসী ও ভারতীয় যুদ্ধে রূপলাভ করে। পরের বছর ওয়াশিংটন কাজ করেন জেনারেল এডওয়ার্ড ব্র্যাডকের সহযোগী হিসেবে। সে সময় একটুর জন্য তিনি রক্ষা পান যদিও চারটি বুলেট তার কোট ছিদ্র করে ফেলেছিল এবং তার আরোহণরত অবস্থায় দুটি ঘোড়া গুলিতে নিহত হয়েছিল। ১৭৫৯ সাল থেকে আমেরিকার বিপ্লবের আগ পর্যন্ত জর্জ ওয়াশিংটন মাউন্ট ভার্নন- এর আশেপাশে তার জমিজমা দেখাশোনা করেন এবং ভার্জিনিয়া হাউজ অব বারর্জেসেজ-এ কাজ করেন। মার্থা ড্যানরিজ কাস্টিস নামে একজন বিধবাকে বিয়ে করেন জর্জ। পরবর্তীতে তিনি নিজেকে অত্যন্ত ব্যস্ত ও সুখী একটি জীবন যাপন করতে থাকেন। আজ আমেরিকার জাতির জনক বলে পরিচিত এই মহান নেতার ২৮৮তম জন্মবার্ষিকী। ১৭৩২ সালের আজকের দিনে তিনি ব্রিটিশ আমেরিকার ভার্জিনিয়া জন্মগ্রহণ করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি জর্জ ওয়াশিংটনের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।

জর্জ ওয়াশিংটন ১৭৩২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি সে সময়ের ব্রিটিশ আমেরিকার ভার্জিনিয়ায় এক কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি অগাস্টিন ওয়াশিংটন ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী ম্যারি বল ওয়াশিংটনের প্রথম সন্তান। ওয়াশিংটন মূলত ইংরেজ বংশোদ্ভূত। তার পূর্বপুরুষরা ইংল্যান্ডের সালগ্রে থেকে আমেরিকায় যান। তার পরিবার তামাক চাষ এবং দাস ব্যবসায়ের সাথে জড়িত ছিল। তিনি পরবর্তীতে উত্তরাধিকার সূত্রে তা লাভ করেন। জর্জ ওয়াশিংটনের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সম্পর্কে তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। তবে তার সময়ে ঘরে বসে প্রাইভেট টিউটরের কাছেই পড়াশোনা চলত। আবার কেউ কেউ বড়জোর স্থানীয় প্রাইমারি স্কুলে পড়াশোনার সুযোগ পেত। তবে জর্জের বাবার মৃত্যুর পর তার পড়াশোনার সুযোগ আরও হারিয়ে যায়। প্রথাগত শিক্ষার ইতি ঘটে ১৫ বছর বয়সেই। তার যৌবনে তিনি উপনিবেশিক মিলিশিয়ার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন এবং ফরাসি ও ভারতীয় যুদ্ধের প্রথম ভাগ পর্যন্ত এই পদে ছিলেন। ১৭৭৫ সালে দ্বিতীয় কন্টিনেন্টাল কংগ্রেস মার্কিন বিপ্লবের সময় তাকে কন্টিনেন্টাল আর্মির সর্বাধিনায়ক পদে পদোন্নতি প্রদান করেন। ওয়াশিংটন ১৭৭৬ সালে ব্রিটিশদের বোস্টন থেকে বিতাড়িত হতে বাধ্য করে, কিন্তু পরের বছর তিনি ব্রিটিশদের কাছে পরাজিত হন এবং নিউ ইয়র্ক সিটিতে প্রায় ধরা পড়ে যান। শীতকালের মাঝামাঝিতে ডিলাওয়্যার নদী পাড় হয়ে তিনি ট্রেন্টন এবং প্রিন্সটনের যুদ্ধে ব্রিটিশদের পরাজিত করেন এবং নিউ জার্সি পুনঃদখল করেন। তার কৌশলে কন্টিনেন্টাল সৈন্যদল ১৭৭৭ সালে সারাটোগায় এবং ১৭৮১ সালে ইয়র্কটাউনে দুটি প্রধান ব্রিটিশ সৈন্যদলকে বন্দী করতে সমর্থ হয়। ইতিহাসবেত্তাগণ ওয়াশিংটনকে তার জেনারেল নির্বাচন এবং তত্ত্বাবধান; সেনাদের নির্দেশ প্রদান; কংগ্রেস, রাজ্য সরকার ও তাদের মিলিশিয়ার সাথে সমন্বয়; এবং যুদ্ধের রসদ, সরঞ্জামাদি ও প্রশিক্ষণের জন্য তার উচ্চ-প্রশংসা করেন। তার প্রপিতামহ জন ওয়াশিংটন ১৬৫৬ সালে ভার্জিনিয়ায় যান এবং জমি ও ক্রীতদাসদের একত্রিত করেন। একই কাজ করেন তার পুত্র লরেন্স ওয়াশিংটন এবং তার নাতি, জর্জের বাবা অগাস্টিন ওয়াশিংটন। অগাস্টিন ছিলেন একজন তামাক চাষী এবং তিনি তার জমিতে লোহা উৎপাদনে বিনিয়োগ করেন। জর্জ ওয়াশিংটনের বাবা ১৭৪৩ সালে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মারা যান। তখন জর্জের বয়স মাত্র এগার বছর। অল্প বয়সে বাবাকে হারিয়ে জর্জের জায়গা হয় ভার্জিনিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি লর্ড ফেয়ারফ্যাক্সের বাড়িতে। এ ধনী ব্যক্তি ছিলেন জর্জ ওয়াশিংটনের সৎভাই লরেন্সের শ্বশুর। ওখানেই জর্জ নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও নিজের বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে বড় হতে থাকেন। শুরু হল তার একাকী জীবন। একসময় ভাই-ভাবির মৃত্যুর পর সব সম্পত্তির মালিক হন জর্জ ওয়াশিংটন। এ সম্পত্তির মালিক হয়েই ভেরন উপত্যকার বন্ধুর অঞ্চলে গড়ে তোলেন একটি খামার। অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এ খামারের আট হাজার একর জায়গার মধ্যে তিন হাজার একর কৃষির অন্তর্ভুক্ত করে নিজেই এর দেখাশোনা শুরু করেন। আস্তে আস্তে এটি হয়ে ওঠে একটি আদর্শ খামার। ঘুরে যেতে থাকে জর্জের জীবনের গতি।

১৭৮৯ সালের ৩০ এপ্রিল নিউইয়র্কের ওয়াল স্ট্রীট-এর ফেডারেল হলের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে জর্জ ওয়াশিংটন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। জেমস ম্যাডিসনকে পরবর্তীতে তিনি লিখেছেন ‘আমাদের এই বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা সবার আগে দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য কাজ করবো। আমার দিক থেকে আমি আন্তরিকভাবে প্রত্যাশা করতে পারি যে, এসকল দৃষ্টান্ত সত্য নীতিমালার ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে।’ ১৭৮৩ সালে বিজয় নিশ্চিত হওয়ার পর, ওয়াশিংটন ক্ষমতা দখল না করে সর্বাধিনায়ক পদ থেকে অব্যহতি নেন, যা মার্কিন গনপ্রজাতন্ত্র প্রণয়নে তার অঙ্গীকারের প্রমাণ।[৩] ১৭৮৭ সালে তিনি ফিলাডেলফিয়ায় অনুষ্ঠিত সাংবিধানিক সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। এই সম্মেলনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নতুন সরকার ব্যবস্থা প্রণয়ন করা হয়। ওয়াশিংটন তার নেতৃত্বের গুণাবলির জন্য প্রশংসিত ছিলেন এবং ইলেকটোরাল কলেজের প্রথম দুটি নির্বাচনে সর্বসম্মতভাবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।[৪] ১৭৮৯ সালে নির্বাচন পরবর্তী সময়ে তিনি বিদ্রোহী অংশসমূহ একত্রিত করার কাজ করেন। তিনি সকল ফেডারেল এবং রাজ্যের সকল ঋণ পরিশোধের জন্য আলেকজান্ডার হ্যামিলটনের অনুষ্ঠানের সমর্থন দেন, সরকারের একটি স্থায়ী আসন প্রতিষ্ঠা করেন, একটি কার্যকর করব্যবস্থা চালু করেন এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন।[৫] দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি থাকার পর তিনি অবসরে যান। দুই মেয়াদে এই অবসরের রীতি ১৯৪০ সালের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট তৃতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত চলে।

ব্যক্তিগত জীবনে ১৭৫৯ সালের ১৬ জানুয়ারি ওয়াশিংটন বিয়ে করেন ভার্জিনিয়ার সুন্দরী মার্থা ড্যান্ড্রিজ কাস্টিসকে। যদিও সেসময় মার্থা জ্যাকি ও প্যাটসি নামের দুই সন্তানের জননী। তার মানে, মার্থার এটি দ্বিতীয় বিয়ে। কিন্তু জর্জের ছিল প্রথম। তবে প্রচুর সম্পদের মালিক ছিলেন মার্থা। ১৭৯৯ সালের ১৪ই ডিসেম্বর গলায় রোগসংক্রমণের কারণে স্ত্রী, বন্ধুবান্ধব ও গুণগ্রাহীদের মাঝ থেকে চলে গেলেন চিরতরে জর্জ ওয়াশিংটন। জাতি কয়েক মাস যাবৎ তার জন্য শোক পালন করে। তার মৃত্যুর পর ভার্জিনিয়ার তৃতীয় হেনরি লি ওয়াশিংটনের প্রশংসা করে বলেন, "যুদ্ধে প্রথম, শান্তিতে প্রথম এবং তার জনগণের হৃদয়ে প্রথম।" তিনি জীবিত অবস্থায় এবং মৃত্যুর পরও পরম পূজনীয়। সমালোচকদের এবং জনগণের উপর করা জরিপে ফলাফলে তিনি সবসময় যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের সেরা তিন রাষ্ট্রপতির একজন হিসেবে স্থান অধিকার করেছেন। জর্জ ওয়াশিংটনের কয়েকটি উক্তিঃ
১। খারাপ সঙ্গী থাকার চেয়ে নিঃসঙ্গ থাকা অনেক ভালো।
২। সত্যিকারের বন্ধুত্ব ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে।
৩। সুখ এবং নৈতিক দায়িত্ব অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।
৪। শেখার কিছু না থাকলে অতীতের দিকে তাকাতে নেই।
৫। সুখ হচ্ছে বেদনা থেকে অর্জিত ফসল।
আজ এই মহান নেতার ২৮৮তম জন্মবার্ষিকী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি জর্জ ওয়াশিংটনের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক লিংক
[email protected]

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩০

চাঁদগাজী বলেছেন:


আপনি উনাকে দেখেছেন?

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১১:০৩

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনি তার দেশে থাকেন,
তাকেতো আপনার দেখার কথা !!
সাক্ষাৎ পেয়েছেন কি?

২| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:৪০

রাজীব নুর বলেছেন: একদিন আমি আপানকে নিয়ে এরকম পোস্ট দিব।

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১১:০৪

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আমার সৌভাগ্য!!
তবে সে জন্য আপনাকে
আরো পড়াশুনা করতে হবে।

৩| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১১:২৩

নিভৃতা বলেছেন: জর্জ ওয়াশিংটনেের জন্মদিনে শুভেচ্ছা।

কত কী যে জানার বাকি রয়ে গেছে। আপনার সৌজন্যে অনেক কিছু জানতে পারছি। অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.