নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভারতীয় বাঙালি লেখক ও সমাজসেবক কালীপ্রসন্ন সিংহের ১৭৯তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:০৪


কালীপ্রসন্ন সিংহ একাধারে সংগঠক, সাংবাদিক, লেখক, সমাজকর্মী। সমসাময়িকদের মধ্যে কালীপ্রসন্ন শিল্পসংস্কৃতির একজন মহান পৃষ্ঠপোষক, বিধবাবিবাহের একনিষ্ঠ প্রবক্তা, অনন্যসাধারণ সমাজনীতিবিদ ও দেশপ্রেমিক সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। নাটক, প্রহসন, উপন্যাস, নকশা, প্রবন্ধ ও অনুবাদ মিলে তার গ্রন্থসংখ্যা নয়। ইংরেজিতে দি ক্যালকাটা পুলিশ অ্যাক্ট-ও তার রচনা। তিনি তার অসাধারণ সাহিত্যকর্ম হুতোম প্যাঁচার নকশা এবং পুরাণসংগ্রহ (মহাভারত থেকে পৌরাণিক গল্পের সংগ্রহ) এর জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। হুতোম প্যাঁচার নকশা তার শ্রেষ্ঠ মৌলিক রচনা। এতে কলকাতার সামাজিক ব্যঙ্গচিত্র অঙ্কন করা হয়েছে এবং কলকাতার কথ্য ভাষাকে প্রথম সাহিত্যে স্থান দেয়া হয়েছে। বাংলা গদ্যের উন্নয়নে হুতোম প্যাঁচার নকশা মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত। সতেরো খণ্ডে সংস্কৃত মহাভারতের বাংলা গদ্যানুবাদও তার অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাহিত্যকীর্তি। এটি বাংলা সাহিত্যেরও একটি অনন্য দৃষ্টান্ত। শুধু তাই নয়, এক বাদ্যযন্ত্রের আবিষ্কর্তাও ছিলেন তিনি। প্রাণ দিয়ে ভালবাসতেন হিন্দুস্থানী উচ্চাঙ্গসংগীতকে। সংগীত সম্পর্কে জ্ঞানও ছিল গভীর।
সেই সময়ের প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ হিতেন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা থেকেই জানা যায়, কালীপ্রসন্ন কাগজ দিয়ে এক ধরনের কলাবতী বীণা তৈরি করেছিলেন,আর সেই বীণা সেই সময়কার সঙ্গীত মহলে বিশেষ ভাবে আদৃত হয়েছিল। বাংলায় সঙ্গীতচর্চ্চার উন্নতির জন্য নিজের প্রাসাদোপম বাড়িতে সঙ্গীতসমাজ নামে একটি সভারও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি। অজস্র গান লিখেছেন নিজে। আর নিজে যে সব নাটক লিখতেন সে সব নাটকের গানে সুরও বসাতেন নিজেই। বিস্ময়ের ব্যাপার যে, কালীপ্রসন্ন মাত্র ত্রিশ বছরের জীবনে তার এসব কৃতিত্ব অর্জন করেন। আজ লেখক ও দানবীর মহাত্মা কালীপ্রসন্ন সিংহের ১৭৯তম জন্মবার্ষিকী। ১৮৪১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি তিনি ভারতের পিশ্চিবঙ্গে জন্মগ্রহণ করেন। ভারতীয় বাঙালি লেখক ও সমাজসেবক কালীপ্রসন্ন সিংহের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

কালীপ্রসন্ন সিংহ ১৮৪১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ভারতের জোড়াসাঁকোর সুবিখ্যাত কায়স্থ ‛সিংহ’পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম নন্দলাল সিংহ। তাঁর পিতামহ জয়কৃষ্ণ সিংহ ছিলেন হিন্দু কলেজের একজন পরিচালক। দেওয়ান শান্তিরাম সিংহ ছিলেন উত্তর কলকাতার জোড়াসাঁকোর জমিদার। তাঁরই বংশোদ্ভূত ছিলেন বাবু কালীপ্রসন্ন। কালিপ্রসন্নের মাত্র ছয় বছর বয়সে তাঁর পিতা মারা যান। কালিপ্রসন্ন পড়াশোনা শুরু করেন হিন্দু কলেজে (আজকের প্রেসিডেন্সি বিশববিদ্যালয়), কিন্তু বাঁধাধরা পড়ায় বেশিদিন মন টেঁকে নি প্রতিভাবান কিশোরের। তাই বাড়িতেই পড়া ইংরেজি, সংস্কৃত। বাবু হরচন্দ্র ঘোষ, যিনি নিম্ন আদালতের বিচারক ছিলেন, পিতার মৃত্যুর পর কালীপ্রসন্নর অভিভাবক হিসাবে নিযুক্ত হন। ধনী ও অভিজাত পরিবারের মতো কালীপ্রসন্নও ইংরেজ শিক্ষক এবং দেশীয় খ্যাতনামা পন্ডিতদের নিকট শিক্ষালাভ করেন। বাংলা সাহিত্যে তাঁর বিভিন্ন লেখার মধ্যে দুই অমর অবদানের জন্য চিরস্মরনীয় হয়ে আছেন। যেমন, বৃহত্তম মহাকাব্য ‛মহাভারতের’ বাংলা অনুবাদ এবং ‛হুতোম প্যাঁচার নক্‌শা’। তিনি ঊনবিংশ শতকের একজন বাংলা-সাহিত্য আন্দোলনে অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। কালীপ্রসন্নের খুব অল্প বয়সেই বহুগুণে গুণান্বিত বুদ্ধিমত্তা ও সাংগঠনিক ক্ষমতার বিকাশ ঘটে। মাত্র তেরো বছর বয়সে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘বিদ্যোৎসাহিনী সভা’। এখানে সদস্যরা প্রতি সপ্তাহে মিলিত হয়ে নিয়মিত প্রবন্ধ উপস্থাপন ও আলোচনা করতেন। এই সভাতে বিধবাবিবাহ এবং অন্যান্য সংস্কার আন্দোলনের কাজ কর্ম চলতো। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কর্তৃক অনুপ্রাণিত হয়ে বিধবা র্বিবাহ প্রবর্তনের লক্ষ্যে বেঙ্গল কাউন্সিলে আবেদনপত্র পেশ করার জন্য কালীপ্রসন্ন তিন হাজারেরও বেশি স্বাক্ষর সংগ্রহ করেন। বিধবাবিবাহ আইন পাস হলে তিনি বিধবা-বিবাহকারী প্রত্যেক ব্যক্তিকে নিজ তহবিল থেকে এক হাজার টাকা পুরস্কার প্রদানের ঘোষণা করেন।

১৮৬২ সালে, ২১ বছরের যুবক কালীপ্রসন্ন সিংহ লিখলেন ‘হুতোম পেঁচার নকশা’, আধুনিক কলকেতার বাবুসমাজ এবং শহরের গড়ে ওঠার নানা খন্ডচিত্র নিয়ে ধারালো ব্যঙ্গরচনা। এই প্রথম চলিত কথ্য বাংলা (কলকাতার তৎকালীন ভাষাভঙ্গি) উঠে এল সরাসরি সাহিত্যের পাতায়। তরুণ লেখকের তির্যক দৃষ্টি এড়িয়ে যায় না কিছুই, ফাঁপা বাবুগিরি থেকে ধনীদের দলাদলি, শহুরে আমোদ ও হুজুগ প্রবণতা, ভন্ডামি, কুসংস্কার সবই তাঁর উপজীব্য। ঝরঝরে শাণিত গদ্যের চিত্রগুণ অনবদ্য। ছবির মত ফুটে ওঠে গাজন, নববর্ষ, দোল, ভোরের, ভরদুপুরের, সন্ধ্যার আর মধ্যরাতের শহর আর তার বর্ণিল মানুষেরা। এক ধাক্কায় বাংলা ভাষাকে তিনি এগিয়ে দিলেন এক যুগ। আজ ভাবলে বিস্মিত হতে হয় এই একই লেখক বিপুল পরিশ্রমে অনুবাদ ও সম্পাদনা করেছেন সম্পূর্ণ মহাভারত, যা আজও মূলানুগ হিসাবে স্বীকৃত। বিদ্যাসাগরের বিশেষ স্নেহভাজন ছিলেন কালীপ্রসন্ন, তিনিও এই অনুবাদের তত্ত্বাবধানে বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিলেন। কালীপ্রসন্ন বিভিন্ন সময়ে কলকাতার অনারারি ম্যাজিস্ট্রেট, চিফ প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট ও মিউনিসিপাল কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেছেন। বিনামূল্যে মহাভারত বিতরণ এবং অকাতর দানখয়রাতির ফলে জীবনের শেষে তাঁকে অর্থকষ্ট ভোগ করতে হয়। জমিদারির প্রজাদের খাজনা মাপ করায় আয় কমে আসে, ঋণ মেটাতে বিক্রি করতে হয় অনেকগুলি জমিদারি।

ব্যক্তিগত জীবনে কালিপ্রসন্ন ১৮৫৪ সালে বাগবাজারের লোকনাথ বসুর কন্যার সঙ্গে বিবাহ করেন, কিন্তু কয়েক বছর পর তাঁর স্ত্রী বিয়োগ হয়। কিছুদিন পরে, কালিপ্রসন্ন রাজা প্রসন্ন নারায়ণ দেবের নাতনী এবং চন্দ্রনাথ বসুর কন্যা শরত্‍কুমারী দেবীকে বিবাহ করেন। কালিপ্রসন্নের অসংযত ব‍্যয় সমাজের কল্যাণে নিবেদিত ছিল, যার জন্য তাঁর শেষ দিন তাকে মাশুল দিতে হয়েছিল। এটা বলা হয়ে থাকে যে এক মহাভারতের কতিপয় প্রতিলিপি বিতরণের জন্যেই ঐ সময়ে তাঁকে আড়াই লাখ টাকার বিপুল আর্থিক ধাক্কা মেনে নিতে হয়েছিল। এটি জানা সত্বেও যে জমিদার পরিবারের প্রধান আয়ের উত্‍স কৃষকদের দেওয়া রাজস্ব থেকে আসে, কালিপ্রসন্ন একজন জমিদার হয়েও, কৃষকদের মঙ্গলের জন্য এর বিরোধিতা করেছিলেন এবং বেশ কিছু কৃষককে রাজস্ব বোঝা থেকে মুক্তি প্রদান করেছিলেন। তাঁর শেষের দিনগুলিতে, তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে কী বিশাল ঋণে পতিত হয়েছেন, এবং ফলস্বরূপ উড়িষ্যার বড় জমিদারি ও কলকাতার বেঙ্গল ক্লাব বিক্রি হয়ে যায়। তিনি বন্ধু ও আত্মীয়দের দ্বারাও প্রতারিত হন। তবে কালিপ্রসন্ন কোন সমস্যা হওয়ার আগেই মারা যান। ১৮৭০ সালের ২৪ জুলাই মাত্র ২৯ বছর বয়সে তিনি তাঁর বিশাল অবদান ও ভূসম্পত্তি পিছনে ফেলে রেখে পরলোক গমন করেন। তাঁর মৃত্যুর পর, তাঁর স্ত্রী বিজয় চন্দ্র সিংহ-কে দত্তক নেন, যিনি হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকাটি অধিগ্রহণ করেন। আজ লেখক ও দানবীর মহাত্মা কালীপ্রসন্ন সিংহের ১৭৯তম জন্মবার্ষিকী। ভারতীয় বাঙালি লেখক ও সমাজসেবক কালীপ্রসন্ন সিংহের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক লিংক
[email protected]

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:৫০

রাজীব নুর বলেছেন: কালীপ্রসন্ন সিংহকে জানাই শ্রদ্ধা।

২| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:৫২

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: ভারতীয় বাঙালি লেখক ও সমাজসেবক কালীপ্রসন্ন সিংহের ১৭৯তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।

৩| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:৫৬

নেওয়াজ আলি বলেছেন: শুভেচ্ছা সতত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.