নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

মার্ক্সবাদী আন্দোলনকারী ও সুসাহিত্যিক সোমেন চন্দ\'র ৭৮তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

০৮ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:০৭


প্রগতিশীল কথাসাহিত্যিক এবং মার্কসবাদী আন্দোলনের একনিষ্ঠ কর্মী সোমেন চন্দ। ঢাকার প্রগতি লেখক সংঘের সাথে যুক্ত ছিলেন তিনি। সোমেন চন্দের রাজনৈতিক জীবনের সঙ্গে সাহিত্যিক জীবন ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল। তিনি রাজনৈতিক মতাদর্শের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে গল্পগুলিতে গণচেতনা ও অস্তিত্বের সংগ্রামের কথা বলেছেন। তাঁর গল্পের মৌলিক আবেদন ছিল গণসচেতনতা। প্রগতি সাহিত্য আন্দোলন বিকাশে তাঁর ভূমিকা ছিল উজ্জ্বল। ১৯৪১ সালে নাৎসি জার্মানি সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমন করলে ভারতবর্ষের প্রগতিশীল সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে গঠিত ‘সোভিয়েত সুহ্নদ সমিতি হিটলার এর বিরুদ্ধে জনযুদ্ধ ঘোষণা করে । "ফ্যাসীবাদ বিরোধী আন্দোলন বাংলার সব জেলা শহরে ছড়িয়ে পড়ে যার মধ্যে ঢাকা শহর ছিলো অন্যতম শক্তিশালী কেন্দ্র। ১৯৪২ সালের ৮ই মার্চ ঢাকার বুদ্ধিজীবি, লেখক প্রভৃতি শহরে এক ফ্যাসীবাদ বিরোধী সম্মেলন আহবান করেন। স্থানীয় জেলা পার্টির অনুরোধে কমরেড বঙ্কিম মুখার্জি ও জ্যোতি বসু সেখানে বক্তা হিসেবে যান। সম্মেলন উপলক্ষে শহরে খুবই উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এবং রাজনৈতিক মহল প্রায় তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। প্রথম যারা সম্মেলনের পক্ষে, দ্বিতীয় যারা সরাসরি বিপক্ষে, তৃতীয় যারা মোটামোটিভাবে তুষ্ণীভাব অবলম্বন করে নিরপেক্ষতার আবরণ নিয়েছিলেন।শেষোক্তদের মধ্যে প্রধানত কংগ্রেস মতবাদের অনুসারীরা ও দ্বিতীয় দলে ছিলেন জাতীয় বিপ্লবী, বিশেষত শ্রীসংঘ ও বিভির লোকেরা। যাই হক, সম্মেলনের দিন সকালে উদ্যোক্তাদের অন্যতম তরুণ সাহিত্যিক সোমেন চন্দ আততায়ীর হাতে নিহত হন। তিনিই বাংলার ফ্যাসীবাদী বিরোধী আন্দোলনের প্রথম শহীদ। কিন্তু এই হত্যাকান্ডের পরও যথারীতি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় এবং আমাদের প্রতি আরও লোক আকৃষ্ট হয়।" শ্রেণির উর্ধ্বে সর্বমানবের মর্যাদায় আস্থাবান মেধাবী তরুণ সোমেন চন্দ মাত্র ২২ বছর বয়সে ১৯৪২ সালের আজকের দিনে আততায়ীর হাতে নিহত হন। আজ তাঁর ৭৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। প্রগতি চেতনায় সমুজ্জ্বল সত্তা, মার্ক্সবাদী আন্দোলনকারী ও সুসাহিত্যিক সোমেন চন্দ'র মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

সোমেন চন্দ ১৯২০ সালের ২৪ মে ততকালীন ঢাকা জেলার টঙ্গি থানার আশুলিয়া গ্রামে তাঁর মাতুতালয়ে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার আদি নিবাস ছিল বর্তমান নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলার চরসিন্দুর ইউনিয়নের বালিয়া গ্রামে। তাঁর পিতার নাম নরেন্দ্রকুমার, মাতা হীরণবালা। মাত্র চার বছর বয়সে সোমেন তার জন্মদায়ী মাকে হারায়। পরবর্তীতে তাঁর পিতা ছোট্ট সোমেনের প্রতিপালন করার জন্য দ্বিতীয় বিয়ে টঙ্গির নিকটবর্তী ধউর গ্রামের ডাক্তার শরতচন্দ্র বিশ্বাসের মেয়ে সরযূবালাকে। প্রকৃতপক্ষে এই সরযূবালাই সোমেনকে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিশাল ভূমিকা পালন করেন। ১৯৩৬ সালে তিনি পগোজ স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষার উত্তীর্ণ হন। তিনি ঢাকা মিটফোর্ড মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন, কিন্তু খারাপ স্বাস্থ্যের কারণে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারেন নি। সে সময় হিটলারের ফ্যাসিবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিশ্বের দেশে দেশে প্রগতিশীল লেখক, সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবীরা দৃঢ় অবস্থান নিচ্ছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৩৯ সালে ঢাকায় মানবতাবাদী লেখকদের উদ্যোগে গড়ে ওঠে প্রগতি লেখক ও শিল্পী সংঘ। তিনি "প্রগতি লেখক সংঘে" যোগদান করেন এবং মার্ক্সবাদী রাজনীতি ও সাহিত্য আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয়ে যান। এই সংঘের সর্বকনিষ্ঠ অথচ অন্যতম প্রধান উদ্যোগী ছিলেন সোমেন চন্দ। তিনিই বাংলা সাহিত্যে প্রথম গণসাহিত্যের উপর কাজ করেন। সংঘের প্রথম আনুষ্ঠানিক সম্মেলনে রণেশ দাশগুপ্তকে সম্পাদক এবং সোমেন চন্দকে সহ-সম্পাদক করে কমিটি গঠিত হয়। সংঘের পক্ষ থেকে ১৯৪০ সালে প্রকাশিত হয় ‘ক্রান্তি’ নামে একটি সাহিত্য সংকলন। সোমেন চন্দ ছিলেন এর প্রকাশক। পূর্ব বাংলায় এটিই প্রথম সাহিত্য সংকলন। এই সংকলনটিতে সোমেন চন্দের বিখ্যাত গল্প ‘বনষ্পতি’ প্রকাশিত হয়। ‘বন্যা’ উপন্যাসটি তাঁর সতেরো বছর বয়সে লেখা। সোমেন চন্দের ‘ইঁদুর’ গল্পটি পৃথিবীর বেশ কিছু ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তাঁর মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয় ‘সংকেত ও অন্যান্য গল্প’ নামে একটি গ্রন্থ। এতে কুড়িটি গল্প, দুটি নাটক ও একটি কবিতা সংকলিত রয়েছে। ১৯৪১ সালে সোমেন চন্দ প্রগতি লেখক সংঘের সম্পাদক নির্বাচিত হন। প্রচন্ড মেধাবী সোমেন চন্দের লেখা সাধারণত প্রগতি লেখক সংঘের সাপ্তাহিক বা পাক্ষিক সভাসমূহতে পাঠ করা হত। মাত্র ১৭ বছর বয়েসে তার লেখা উপন্যাস 'বন্যা'। ১৯৪০ সালে তার "বনস্পতি" গল্পটি "ক্রান্তি" পত্রিকায় ছাপা হয়। তার মৃত্যুর পর তার বিভিন্ন গল্প সংকলন ছাপা হয়। ১৯৭৩ সালে রণেশ দাশগুপ্ত তার গল্পসমূহের একটি সঙ্কলন সম্পাদনা করেন। তার উল্লেখযোগ্য গল্প সঙ্কলনঃ ১। বনস্পতি ও অন্যান্য গল্প ২। সংকেত ও অন্যান্য গল্প। তার বিভিন্ন গল্পঃ স্বপ্ন, সংকেত, রায়ট ইত্যাদি। তার "ইঁদুর" গল্পটি বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়। সোমেন চন্দ পুরস্কারের প্রবর্তন করে কলকাতা বাংলা একাডেমী।

১৯৪২ সালের ৮ মার্চ ঢাকায় ফ্যাসিস্ট বাহিনির ভাড়াটে গুণ্ডাদের হামলায় মর্মান্তিকভাবে নিহত হন প্রতিশ্রুতিশীল লেখক ও রাজনৈতিক কর্মী সোমেন চন্দ। ঢাকার সূত্রাপুরে সেবাশ্রমের কাছে বিপ্লবী সমাজতান্ত্রিক পার্টির (আর এস পি) গুন্ডারা তার উপর হামলা চালায় বলে ধারণা করা হয়। তখন তিনি সোভিয়েত সুহৃদ সমিতির উদ্যোগে রেলওয়ে কর্মীদের একটি মিছিলের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। রাস্তার ওপরেই নিহত হন এই তরুন শ্রমিক নেতা। তার মৃত্যুর পর প্রগতি লেখক সংঘ "প্রতিরোধ" নামে একটি বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করে। সোমেন চন্দের আত্মত্যাগ, তাঁর সাংগঠনিক ক্ষমতা এবং প্রগতিশীল লেখা আজও আমাদের মনে, শ্রমজীবী মানুষের মনে প্রেরণার উৎস। সেই উৎসকে জাগরুক রাখার দায়িত্ব সমাজের প্রিিতটি সচেতন মানুষের”। আজ সোমেন চন্দ'র ৭৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। প্রগতি চেতনায় সমুজ্জ্বল সত্তা, মার্ক্সবাদী আন্দোলনকারী ও সুসাহিত্যিক সোমেন চন্দ'র মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক লিংক
[email protected]

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:১১

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: মার্ক্সবাদী আন্দোলনকারী ও সুসাহিত্যিক সোমেন চন্দ'র ৭৮তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

০৮ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৫:০১

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

আপনাকে ধন্যবাত দেশ প্রেমিক বাঙালী
মার্ক্সবাদী আন্দোলনকারী ও সুসাহিত্যিক
সোমেন চন্দ'র মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি
নিবেদনের জন্য।

২| ০৮ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৫:০৮

রাজীব নুর বলেছেন: সোমেন চন্দ লেখা কখনও পোরি নি। তবে তার নাম শুনেছি।

০৮ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৫:১২

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
অন্তত নাম শুনেছেন সে জন্য কৃতজ্ঞতা থাকা উচিত।
অনেকেই তার নাম জানেনা, সম্ভবত আপনার গুরুও
জানেনা তার নাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.