নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রথিতযশা কথাসাহিত্যিক সতীনাথ ভাদুড়ীর ৫৫তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

৩০ শে মার্চ, ২০২০ সকাল ১১:২৩


কিংবদন্তি কথাশিল্পী,ও রাজনীতিবীদ সতীনাথ ভাদুড়ী। তাঁর সাহিত্যিক ছদ্মনাম ‘চিত্রগুপ্ত’। বাংলা কথাসাহিত্যের কয়েকজন লেখক আছেন, যারা সাহিত্য সমালোচকদের কাছে খুব প্রশংসা পেয়ে থাকেন তাঁদের রচনার শিল্পিত বৈশিষ্ট্যের জন্য, কিন্তু পাঠকসমাজে তেমন জনপ্রিয় নন। এই তালিকায় ওপরের দিকেই থাকবেন সতীনাথ ভাদুড়ী। তাঁর অন্তত দুটি উপন্যাসের নাম শিক্ষিত বাঙালির বেশিরভাগ জানেন, জাগরী আর ঢোঁড়াই চরিত মানস। যদিও তাঁর অন্যান্য কিছু উপন্যাস নিয়ে চর্চা সমালোচক মহলেও এমনকী খুব বেশি নয়।সতীনাথ নানা ভাষায় সুপন্ডিত ছিলেন। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় তিনি কংগ্রেসের একজন সক্রিয়কর্মী ছিলেন এবং পূর্ণিয়া জেলা কংগ্রেসের সম্পাদকের পদে আসীন ছিলেন ; কিন্তু দলের আভ্যন্তরীন কাজকর্মে অতিষ্ঠ হয়ে ১৯৪৭ সালে কংগ্রেস ত্যাগ করে সমাজতন্ত্রী দলে যোগ দেন। পার্টির দুর্নীতি আর দলাদলি তাঁর অসহ্য বোধ হয়। জনৈক্য পুরনো গ্রামীন কর্মী তাঁর কাছে কংগ্রেস ছাড়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি অকপটে জানিয়েছিলেন যে কংগ্রেসের কাজ ছিলো স্বাধীনতা লাভ করা। সে কাজ হাসিল হয়ে গেছে। এখন 'রাজকাজ' ছাড়া তার আর কোনো কাজ নেই।১৯৪৬ সালে প্রকাশিত জাগরী উপন্যাসের মাধ্যমে তিনি প্রভূত খ্যাতি অর্জন করেন। রাজনৈতিক উপন্যাস হিসেবে বাংলা সাহিত্যে এর একটি বিশেষ স্থান আছে। ১৯৪৯-৫০ সালে প্যারিস ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে ১৯৫১সালে তিনি রচনা করেন সত্যি ভ্রমণ কাহিনী। তাঁর অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে গণনায়ক, চিত্রগুপ্তের ফাইল, ঢোঁড়াই চরিতমানস, অচিন রাগিণী, অপরিচিতা, সংকট ও আলোক দৃষ্টি উল্লেখযোগ্য। 'ঢোঁড়াই চরিতমানস' তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস। বিহারের জনজীবনের চিত্র সতীনাথের রচনায় দক্ষতার সঙ্গে অঙ্কিত হয়েছে। জাগরী উপন্যাসের জন্য তিনি প্রথম 'রবীন্দ্র পুরস্কার' পান। মাত্র আটান্ন বছর বয়সে ১৯৬৫ সালের আজকের দিনে সতীনাথ ভাদুড়ীর প্রয়াণ ঘটে। আজ তার ৫৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। প্রথিতযশা কথাসাহিত্যিক সতীনাথ ভাদুড়ীরমৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

সতীনাথ ভাদুড়ী ১৯০৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ভারতের তৎকালীন বিহারের পূর্ণিয়ার ভাট্টাবাজারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস নদীয়ার কৃষ্ণনগরে। সতীনাথ ভাদুড়ীর পিতা ইন্দুভূষণ ভাদুড়ী ও মাতা রাজবালা দেবী। তার শিক্ষাজীবন শুরু পূর্ণিয়ার জেলা স্কুলে, পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এমএ ও বিএল পাস করেন। পরে পেশা হিসেবে পাটনায় ওকালতি করেন। এই সময় নানাবিধ সমাজসেবামূলক কাজেও জড়িয়ে পড়েন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল বলিপ্রথা ও মদের দোকানে পিকেটিং আন্দোলন। সাহিত্যচর্চা শুরু হয় এই সময়েই। বাড়ি বাড়ি বই সংগ্রহ করে পূর্ণিয়া গ্রন্থাগার স্থাপনে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেন। পরবর্তীকালে পিতা ইন্দুভূষণের নামে গ্রন্থাগারটির নাম হয় 'ইন্দুভূষণ সাধারণ পাঠাগার'। বলা যায় প্রায় তাঁর একক উদ্যমে বাংলা ম্যাগাজিন ক্লাব গঠন, সাহিত্যপাঠ, স্মরণশক্তি প্রতিযোগিতা, সাহিত্য আড্ডা প্রভৃতির প্রচলন হয়। এই কাজের সূত্রেই তিনি স্বনামধন্য সাহিত্যিক কেদারনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্নেহ সান্নিধ্য লাভ করেন। পাশাপাশি তাঁর রাজনৈতিক জীবনেরও সূচনা ঘটে। তিনি কংগ্রেসের রাজনীতিতে যোগ দেন। কংগ্রেসের রাজনীতিতে যোগ দিয়ে তিনি পূর্ণিয়ার জেলা কংগ্রেসের সেক্রেটারি হন। গান্ধীজীর অহিংস অসহযোগ আন্দোলন তাঁকে আকৃষ্ট করে এবং গান্ধিবাদী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। পুলিশের চোখ এড়িয়ে গভীর রাতে বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে স্বাধীনতা আন্দোলনের বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন ঘরে ঘরে। চল্লিশ দশকের গোড়ায় দু’ দফায় রাজনৈতিক বন্দি হিসেবে তিনি ভাগলপুর জেলে আটক ছিলেন। ১৯৪০ সালের জানুয়ারি মাসে সতীনাথ ভাদুড়ী প্রথমবারের জন্য কারারুদ্ধ হন। ১৯৪২ সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় তিনি দ্বিতীয়বার কারাবাসকালে জেল ভেঙে পালানোর চেষ্টা করেন এর ফলে তাঁকে ভাগলপুর সেন্ট্রাল জেলে বদলি করা হয়।

১৯৪৪ সালে তিনি তৃতীয়বার কারাবরণ করেন। পরবর্তী সময়ে পার্টির দুর্নীতি আর দলাদলি তাঁর অসহ্য বোধ হয়। দলের আভ্যন্তরীন কাজকর্মে অতিষ্ঠ হয়ে ১৯৪৭ সালে কংগ্রেস ত্যাগ করে সমাজতন্ত্রী দলে যোগ দেন। জনৈক্ পুরনো গ্রামীন কর্মী তাঁর কাছে কংগ্রেস ছাড়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি অকপটে জানিয়েছিলেন যে কংগ্রেসের কাজ ছিলো স্বাধীনতা লাভ করা। সে কাজ হাসিল হয়ে গেছে। এখন 'রাজকাজ' ছাড়া তার আর কোনো কাজ নেই। কংগ্রেসের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার পর সতীনাথ পূর্ণিয়ার কিশোর আর তরুণদের জন্য ব্যায়ামাগার গঠন ও শনিবারের সাহিত্যবাসর পরিচালনা করতে থাকেন। ১৯৪৯ সালে তিনি বিদেশ যাত্রা করেন। বিদেশে থাকাকালীন সময়েই তিনি তাঁর গ্রন্থ 'জাগরী'র জন্য বাংলাভাষায় প্রথম রবীন্দ্র পুরস্কার (১৯৫০) প্রাপ্তির সংবাদ পান।

সতীনাথ ভাদুড়ীকে আমরা প্রথম চিনি ‘জাগরী’ উপন্যাসে। তারপর ‘ঢোঁড়াই চরিত মানসে’। এই কারাবাসকালীন সময়ই তাঁর 'জাগরী' উপন্যাস রচনার প্রস্তুতিকাল। সতীনাথের ‘জাগরী’ উপন্যাসে নিজের জীবনের ছায়া আছে। উত্তর বিহারের ওই অঞ্চলের অচ্ছুৎ ধাঙড় সম্প্রদায়ের জীবন কথা, তাৎমাটুলীর কাহিনী ‘ঢোঁড়াই চরিত মানস’ আমাদের ভাষার শ্রেষ্ঠ কয়েকটি উপন্যাসের একটি। ভারতীয় সাহিত্যে ‘ঢোঁড়াই চরিত মানস’ একটি বড় জায়গা নিয়ে আছে। নিম্নবর্গের মানুষ বোধ হয় এমন ভাবে আগে আর আসেনি। হ্যাঁ, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ে এর সূচনা হয়েছিল সত্য, সতীনাথ তাকে দিয়েছেন মহাকাব্যিক ব্যাপ্তি।তার জনপ্রিয় উপন্যাস ‘অচিন রাগিনী’। সতীনাথ থাকতেন বিহারের পূরণিয়া জেলায়। স্বাধীনতা আন্দোলনে জড়িয়েছেন, জেল খেটেছেন। হিন্দি ভাষার বড় লেখক ফনীশ্বরনাথ রেনুর সঙ্গে তাঁর দেখা হয়েছে জেলেই। ফনিশ্বরনাথ রেনুজির সংস্পর্শে এসে তাঁর সাহিত্য সাধনার সূত্রপাত। বিখ্যাত সাহিত্যিক ফণীশ্বরনাথ রেণু তার জীবনী মূলক স্মৃতিকথা 'ভাদুড়িজি' রচনা করেন, যা হিন্দি সাহিত্যের অন্যতম সম্পদ। ১৯৬৫ সালের ৩০ মার্চ পূর্ণিয়ায় সতীনাথ ভাদুড়ীর প্রয়াণ ঘটে। আজ তার ৫৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। প্রথিতযশা কথাসাহিত্যিক সতীনাথ ভাদুড়ীর মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক লিংক
[email protected]

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে মার্চ, ২০২০ দুপুর ১:০০

রাজীব নুর বলেছেন: আমার ধারনা ছিলো সথীনাথ একজন গায়ক।

৩০ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:২৫

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
সথীনাথ্ আবার কেঠা !!!
ওই যেঠ্যায় গান গায় !
ধুর মর জালা ওইঠাতো
সতীনাথ মুখোপাধ্যায় !!

২| ৩০ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:৫৩

রাজীব নুর বলেছেন: ভুলে গেছেন নাকি??

বিশিষ্ট সাহিত্যিক শরদিন্দু বন্দোপাধ্যায়-এর ১২০ তম জন্মবার্ষিকী আজ।
বাংলা সাহিত্যে 'ব্যোমকেশ বক্সী' ও 'বরদা'-এর চরিত্রের সৃষ্টিকর্তা তিনি। ঐতিহাসিক উপন্যাস, ছোটগল্প ও শিশুসাহিত্য রচনাতেও তাঁর জুড়ি মেলা ভার।
'রবীন্দ্র পুরস্কার', 'শরৎস্মৃতি পুরস্কার' ও 'মতিলাল পুরস্কার'-এ ভূষিত হয়েছেন।

৩০ শে মার্চ, ২০২০ রাত ৮:১৯

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আমার বিড়াল আমাকে বলে ম্যাও !!
আপনার গুরুর নাহয় চোখে সমস্যা
আপনাকেও কি সেই রোগে ধরেছে?

যা হোক এখানে ক্লিক করে শরদিন্দুকে খুজুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.