নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিশিষ্ট বাঙালি সাহিত্যিক, রসায়নবিদ ও অভিধান প্রণেতা রাজশেখর বসু ৬০তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

২৭ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:২৬


বিংশ শতকের সর্বাপেক্ষা সন্মানীয় ব্যক্তিবর্গের মধ্যে অন্যতম ভারতীয় বাঙালি সাহিত্যিক রাজশেখর বসু। তিনি ছিলেন একাধারে রসায়নবিদ্, যন্ত্র বিজ্ঞানী, ভাষাতাত্ত্বিক, অভিধান-রচয়িতা, ধর্মগ্রন্থ রচয়িতা, কৌতুক কাহিনীর রচয়িতা, কুটির শিল্পের প্রতিভাসম্পন্ন এক সৃষ্টিশীল লেখক। বাংলা সাহিত্যে রস রচনার জন্য তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। পশুরাম ছদ্মনামে রঙ্গ-ব্যঙ্গ ও হাস্যরসের গল্প লিখে প্রভূত খ্যাতি অর্জন করেন। বিচিত্র অভিজ্ঞতা, মননশীল তীক্ষ্ম দৃষ্টিভঙ্গি এবং গভীর পর্যবেক্ষণ শক্তি তার সৃষ্টির প্রধান সম্পদ। গল্পরচনা ছাড়াও স্বনামে প্রকাশিত কালিদাসের মেঘদূত, বাল্মীকি রামায়ণ (সারানুবাদ), কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাসকৃত মহাভারত (সারানুবাদ), শ্রীমদ্‌ভগবদ্‌গীতা ইত্যাদি ধ্রুপদি ভারতীয় সাহিত্যের অনুবাদগ্রন্থগুলিও ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। প্রখ্যাত এই বাঙ্গালি সাহিত্যিক ১৯৬০ সালের আজকের দিনে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় পরলোকগমন করেন। আজ তার ৬০তম মৃত্যুৃবার্ষিকী। বিশিষ্ট ভারতীয় বাঙালি সাহিত্যিক, অনুবাদক, রসায়নবিদ ও অভিধান প্রণেতা রাজশেখর বসুর মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

রাজশেখর বসু ১৮৮০ সালের ১৬ই মার্চ ভারতের বর্ধমান জেলার বামুনপাড়া গ্রামে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা দার্শনিক চন্দ্রশেখর বসু এবং লক্ষ্মীমণি দেবী। তাদের আদি নিবাস নদীয়া জেলার উনা গ্রামে। রাজশেখরের পিতা চন্দ্রশেখর বসু ছিলেন দ্বারভাঙ্গা-রাজ-এস্টেটের ম্যানেজার। রাজশেখর বসু ছিলেন তাঁদের ৬ সন্তানের মধ্যে ২য়। তার শৈশবকাল কাটে পিতার কর্মস্থল দ্বারভাঙ্গায়। রাজশেখর ১৮৯৫ সালে দ্বারভাঙ্গা রাজস্কুল থেকে এন্ট্রাস পাশ করেন এবং এরপর পাটনা কলেজে ভর্তি হন ফার্স্ট আর্টস পড়ার জন্য। ১৮৯৭ সালে ফার্স্ট আর্টস পাশ করার পর শ্যামাচরণ দে'র পৌত্রী মৃণালিনী দেবীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এরপর ১৮৯৯ সালে কলকাতা প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে রসায়ন ও পদার্থবিজ্ঞানে অনার্স নিয়ে বি.এ পাশ করেন এবং ১৯০০ সালে রসায়নে এম.এ পরীক্ষা দিয়ে প্রথম স্থান লাভ করেন। এর দুই বছর পরে ১৯০২ সালে রিপন কলেজ থেকে বি.এল পাশ করে মাত্র তিন দিন আইন ব্যবসা করেই বুঝেছিলেন আইনের থেকে বিজ্ঞান চর্চাই তাঁর কাছে আকর্ষনীয়। তাই বিজ্ঞান চর্চায় সাফল্য লাভের উদ্দেশ্যে আচার্য স্যার প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের সাথে যোগাযোগ করেন।

(বিজ্ঞানী আচার্য স্যার প্রফুল্লচন্দ্র রায়)
১৯০৩ সালে আচার্য স্যার প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রতিষ্ঠিত বেঙ্গল কেমিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কস কোম্পানীতে রসায়নবিদ হিসাবে সামান্য বেতনে নিজের চাকুরিজীবন শুরু করেন রাজশেখর বসু। স্বীয় দক্ষতায় অল্পদিনেই তিনি আচার্য স্যার প্রফুল্লচন্দ্র রায় ও তৎকালীন ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডাঃ কার্তিক বসুর প্রিয়পাত্র হন। ১৯০৪ সালে তিনি ঐ কোম্পানীর পরিচালক পদে উন্নীত হন। একদিকে গবেষণার কাজ, অন্যদিকে ব্যবসা পরিচালনা - উভয়ক্ষেত্রেই তিনি অসাধারণ দক্ষতার পরিচয় দেন। কেমিস্ট্রি ও ফিজিওলজির মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করে তিনি এক নতুন পদ্ধতির উদ্ভাবন করেন। রাজশেখর বসুর তত্ত্বাবধানে বেঙ্গল কেমিক্যাল সমৃদ্ধশালী গবেষণা ও উদ্ভাবন কেন্দ্রে পরিণত হয়। দীর্ঘ তিরিশ বছর তিনি এই কোম্পানির কর্মী ছিলেন এবং অবসর গ্রহনের পরেও তিনি আজীবন এই কোম্পানির সাথে যুক্ত ছিলেন। এছাড়াও ১৯০৬ সালে জাতীয় শিক্ষা পরিষদ গঠিত হলে তিনি তাতে সক্রিয় অংশ নিয়েছিলেন। স্বাস্থ্যহানির দরুণ ১৯৩২ সালে এখান থেকে অবসর নিলেও উপদেষ্টা এবং ডিরেক্টররূপে আমৃত্যু এই কোম্পানীর সাথে যুক্ত ছিলেন। নিয়মানুবর্তিতা ও সুশৃঙ্খল অভ্যাসের জন্য তাঁর জীবন-যাপন-পদ্ধতি কিংবদন্তীতে পরিণত হয়েছিল। রাজশেখর তাঁর সাহিত্যিক জীবন শুরু করেন ১৯২০ সালে। ১৯২২ সালে তিনি ছদ্মনাম নেন ‘পরশুরাম’ এবং একটি মাসিক পত্রিকায় 'শ্রীশ্রীসিদ্ধেশ্বরী লিমিটেড' নামে ব্যঙ্গ রচনা লেখেন। তাঁর সাহিত্যসৃষ্টি বাংলা তথা দেশের এক বিরাট সম্পদ ভান্ডার।

রাজশেখর বসুর প্রকাশিত গ্রন্থ মোট ২১টি। যার মধ্যেঃ গল্পগ্রন্থ ১। গড্ডলিকা, ২। কজ্জলী, ৩। হনুমানের স্বপ্ন, প্রবন্ধ সংগ্রহঃ লঘুগুরু, অভিধানঃ চলন্তিকিা, জ্ঞান-বিজ্ঞান সংক্রান্ত গ্রন্থঃ ১। ভারতের খনিজ, ২। কুটিরশিল্প, জ্ঞানবিজ্ঞানসংক্রান্ত গ্রন্থঃ বিশ্বভারতী গ্রন্থনবিভাগ (বিশ্ববিদ্যাসংগ্রহ - ২), অনুবাদ গ্রন্থঃ কালিদাসের মেঘদূত উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়াও ১। গল্পকল্প, ২। কৃষ্ণকলি, ৩। আনন্দী, ৪। নীল তারা, ৫। চমৎকুমারী, ৬ হিতোপদেশের গল্প এবং পরশুরামের কবিতার বই। বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় রাজশেখর বসু'র দু'টি ছোটগল্প নিয়ে-পরশ পাথর এবং 'বিরিঞ্চি বাবা' অবলম্বনে মহাপুরুষ নামে দুটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ কাব্যজগতের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময়ে তিনি বিভিন্ন সন্মান লাভ করেন। তার প্রাপ্ত উল্লেখযোগ্য পুরস্কার ও সম্মাননাঃ
১। ১৯৪০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রদত্ত জগত্তারিণী পদক
২। ১৯৪৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যাল কর্তক সরোজিনী পদক
৩। ১৯৫৫ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রদত্ত রবীন্দ্র পুরস্কার
৪। ১৯৫৬ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রদত্ত সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার
৫। ১৯৫৬ সালে ভারত সরকার পদত্ত পদ্মভূষণ উপাধি
৬। ১৯৫৭-০৫৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ডি.লিট উপাধি প্রদান
৭। ১৯৫৮ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ডক্টরেট উপাধি প্রদান


এত পুরস্কার ও সম্মাননা পেলেও রাজশেখর বসুর পারিবারিক জীবন বিশেষ সুখের ছিল না। তাঁর মেয়ে ও জামাই খুব অল্প বয়সে মারা যান। ১৯৪২ সালে স্ত্রীও মারা যান। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনের দুঃখের কথা তাঁর লেখনীতে কখনোই ধরা পড়ে নি। ১৯৫৯ সালে একবার স্ট্রোকে আক্রান্ত হন, কিন্তু লেখা একভাবেই চলতে থাকে। শেষ পর্যন্ত ১৯৬০ সালের ২৭ এপ্রিল আর একবার স্ট্রোক হয়ে ঘুমন্ত অবস্থাতেই মৃত্যু হয় এই সনামধন্য লেখকের। আজ তাঁর ৬০তম মৃত্যুৃবার্ষিকী। বিশিষ্ট ভারতীয় বাঙালি সাহিত্যিক, অনুবাদক, রসায়নবিদ ও অভিধান প্রণেতা রাজশেখর বসুর মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক লিংক
[email protected]

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:৩১

রাজীব নুর বলেছেন: মুরুব্বী আমার হজ্ব করতে ইচ্ছা হয়েছে।

২৮ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১২:১১

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আলহামদুলিল্লাহ ।
অবশ্যই হজ্ব করবেন।
আল্লাহ আপনার মনোবাসনা পূর্ণ করুন।
মনের কালিমা দূরভীত হোক, স্বর্গীয় আলোয়
উদ্ভাসিত হোক আপনার জীবন।

২| ২৮ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১২:৩২

রাজীব নুর বলেছেন: ওকে।
ভালো থাকুন।

২৮ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১২:৫৩

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনার ঈশ্বরের খোঁজে
লেখার অপ্রসাঙ্গিক ও বাজে
মন্তব্য গুলো মুছে দিন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.