নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

নাট্য ব্যক্তিত্ব খালেদ চৌধুরীর ৭ম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

৩০ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:০৩


নাট্যমঞ্চের অনন্য স্থপতি নাট্য ব্যক্তিত্ব খালেদ চৌধুরী। তিনি ছিলেন একাধারে মঞ্চপরিকল্পক, প্রচ্ছদশিল্পী, সংগীতজ্ঞ, লোকশিল্প সংগ্রাহক ও লেখক। বড়োমাপের এ প্রতিভাবান শিল্পী নাট্য ও চিত্রকলার সঙ্গে যুক্ত থেকে কলকাতায় প্রতিষ্ঠা পেয়ে সেলিব্রিটি হয়েছেন। খালেদ চৌধুরী বাংলা নাট্যমঞ্চকে আধুনিকতার ছোঁয়ায় এবং দেশীয় নাটকের ঐতিহ্যিক ভাবনা নিয়ে যে-উচ্চতায় স্থাপন করেছিলেন তা ইতিহাসের অন্তর্গত হয়ে আছে। একশোটির ওপর নাটকের মঞ্চ স্থাপত্য সৃজিত হয়েছিল তাঁর। এবং দর্শকদের কাছে তা তুমুল অভিনন্দিত হয়েছিল, আর নাট্যসমালোচক, নাট্যবেত্তাদের কাছে এ জন্য তিনি সমসাময়িক নাট্যকার-নাট্য অভিনেতাদের পাশাপাশি সম্ভ্রান্ত অবস্থানে গুরুত্ব পান। কিংবদন্তিপ্রতিম মঞ্চস্থপতি খালেদ চৌধুরী সুদীর্ঘ ষাট বছর ধরে নাটমঞ্চের শিল্পরূপকার রূপে তাঁর অনুপম কারুবাসনাকে বাঙ্ময়, ঋদ্ধ, নান্দনিক, বহুমাত্রিক আর সৌন্দর্যায়িত করে গেছেন। বাংলার পাশাপাশি হিন্দি নাটকেও সমানভাবে কাজ করেছেন খালেদ চৌধুরী। স্টেজ, সেট এবং কসটিউম ডিজাইনিং থেকে শুরু করে পরবর্তী সময়ে নাটকে সঙ্গীত পরিচালক হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি। শম্ভু মিত্র, তৃপ্তি মিত্র, শ্যামানন্দ জালানের মতো নাট্য জগতের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেছেন খালেদ চৌধুরী। ভারতের নাট্য জগতে তাঁর অসামন্য অবদানের জন্যে ২০১২ সালে তাঁকে পদ্মভূষণ-এ ভূষিত করা হয়। মঞ্চস্থাপত্যের বাইরেও তাঁর তৈজস ও কৌতূহলকর পদচারণা ছিল নৃত্য, সংগীত, গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা অলংকরণ, এমনকি অভিনেতার ভূমিকাতেও। তিনি ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ কর্মী। এই কর্মে যুক্ত থাকায়, চিত্রাঙ্কনে সহজাত পারদর্শিতা অর্জন করায় এবং পঠন-পাঠনের অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ হওয়ায় তিনি সাংস্কৃতিক কর্মকে নবীন আলোকে দীপ্তিময় করেছিলেন। আজ নাট্য ব্যক্তিত্ব খালেদ চৌধুরীর ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৩ সালের আজকের দিনে তিনি ভারতের কলিকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। নাট্যমঞ্চের অনন্য স্থপতি নাট্য ব্যক্তিত্ব খালেদ চৌধুরী মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

খালেদ চৌধুরী ১৯১৯ সালের ২০শে ডিসেম্বর ব্রিটিশ ভারতের শ্রীহট্ট জেলার করিমগঞ্জে, যা তখন অবিভক্ত আসাম রাজ্যে (এখন যা বাংলাদেশের অন্তর্গত) জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা চন্দ্রনাথ দত্ত চৌধুরী এবং তাঁর মা হেম নলিনী। জন্মসূত্রে খালেদ নামে পরিচিত ছিলেন না। তাঁর ঠাকুমার ভাই, গুরুসদয় দত্ত তাঁর নাম রেখেছিলেন চিরকুমার, কিন্তু তাঁর পিতা পরে নামটি চিররঞ্জন দত্ত চৌধুরীতে পরিবর্তিত করেন। যৌবনেই বাড়িতে হিন্দুধর্মের গোঁড়ামিতে বীতশ্রদ্ধ হয়ে গৃহত্যাগ করেন। পিতার অত্যাচারে ঘর ছেড়ে তার সাথে সম্পর্কের টানাপোড়েনের পরিণতি হিসাবে মুসলমান পরিবারে আশ্রয় নিয়ে তিনি, নিজের নাম পরিবর্তন করে রাখেন খালেদ চৌধুরী (যদিও তিনি তাঁর ধর্ম পরিবর্তন করেননি)। ১৯৪৩ সালে কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যোগাযোগ ও ভারতীয় গণনাট্য সংঘের সক্রিয় সদস্য হিসেবে দেশের বিভিন্ন জায়গায় নানা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৪৫ সালে মাত্র সতেরো বছর বয়সে অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় খালেদ বাড়ি থেকে পালিয়ে কলকাতা এসে ভারতীয় গণনাট্য সংঘে যোগ দেন (ভারতীয় গণনাট্য সংঘ)। অঙ্কন, চিত্রকলা এবং সঙ্গীতের (লোকসঙ্গীত এবং পাশ্চাত্য উভয়েই) ক্ষেত্রে তাঁর শৈল্পিক প্রতিভা সম্পন্ন অবদানের জন্য। অল্প বয়স থেকেই ছবি আঁকার প্রবণতা ছিল তাঁর। পঞ্চাশের মন্বন্তর তখন, কিশোর খালেদ ছবি আঁকছেন দুর্ভিক্ষ নিয়ে। পার্টি তাঁকে দিয়ে প্রথমদিকে পোস্টার আঁকাতে শুরু করে। হেমাঙ্গ বিশ্বাসের উৎসাহে তিনি তাঁদের গণসংগীতের দলে যোগ দেন। কলকাতায় কিছুদিন থেকে আবার সিলেটে ফিরে গিয়েছিলেন। দু-বছর পর ছবি আঁকার অভীপ্সা নিয়ে আবার তাঁর কলকাতায় আসা। ১৯৪৭ সালে তাঁকে শহীদের ডাক নামক একটি ছায়া থিয়েটারে জড়িত করা হয়েছিল। এবারে খালেদ ঠাঁই পেলেন কমিউনে। ১৯৫৩ সালে তিনি বহরূপীতে যোগদান করেছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি হয়ে ওঠেন মঞ্চস্থাপত্যে অগ্রণী ব্যক্তিত্ব। তিনি যেসব মঞ্চনাটক পরিকল্পনা করেন সেগুলো হলো : পুতুলখেলা, গুড়িয়া ঘর, শুতুরমুর্গ, এবং ইন্দ্রজিৎ, আধে আধুরে, ডাকঘর, কালের যাত্রা, পাগলা ঘোড়া, আকরিক, তখন বিকেল, জন্মদিন, দুই তরঙ্গ, সুন্দর, কর্ণাবতী, চিলেকোঠার সেপাই, অন্তর যাত্রা প্রভৃতি। তিনি একই সঙ্গে মঞ্চ ও পোশাক পরিকল্পনা করেন অমর ভারত, দ্বন্দ্বসমাস, দেবতার গ্রাস, আন্না থেকে মিনা এবং অতি সম্প্রতিকালের গুপী গায়েন বাঘা বায়েন।

বহু গুণের অধিকারী খালেদ চৌধুরীর তিনটি অসামান্য গ্রন্থও রয়েছে। প্রথম গ্রন্থ, থিয়েটারে শিল্প ভাবনা প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৯৭ সালের জানুয়ারিতে প্রতিক্ষণ পাবলিকেশন থেকে। গ্রন্থটিতে থিয়েটার-সম্পর্কিত ভাবনার সঙ্গে উঠে এসেছে তাঁর শৈশবের স্মৃতি। অজানা তথ্য ও নব্য ভাবনায় সমৃদ্ধ এ-গ্রন্থ। কৈশোরোত্তীর্ণকালে প্রকৃতি, মানুষের জীবনাচরণ ও লোকসংগীত তাঁকে জীবন ও সমাজ সম্পর্কে অনুসন্ধিৎসু করে তুলেছিল এবং এই আগ্রহ থেকেই তিনি জীবন ও শিল্প সম্পর্কে এক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলেন। এই গ্রন্থের প্রবন্ধের শিরোনাম থেকে নাটক বিষয়ে খালেদ চৌধুরীর ভাবনা সম্পর্কে সম্যক ধারণা করা যায়। এ গ্রন্থের সতেরোটি প্রবন্ধ হলো : শিল্পের সন্ধানে, মঞ্চবেদির বিবর্তন ও প্রতিষ্ঠা, মঞ্চচিত্রণ, মঞ্চসজ্জা : প্রাথমিক দায়িত্ব, শিল্পের শর্ত, নাটক-নেপথ্য-সময়, থিয়েটারে মঞ্চচিত্রণ, নাটকে সংগীত প্রয়োগের সমস্যা, থিয়েটারে আবহ, থিয়েটারে সার্বিকতা, রবীন্দ্রনৃত্যনাট্যে দৃশ্যপট, রবীন্দ্রনাটকে দৃশ্যকল্প ও আবহভাবনা, অভিনেত্রী তৃপ্তি মিত্র, কিছু ধাঁধা কিছু প্রশ্ন, গঙ্গাদা, তৃপ্তি মিত্র : দেখেছি একটি প্রতিভার স্ফুরণ এবং নির্দেশক ও অভিনেতা শম্ভু মিত্র। এসব শিরোনাম থেকে খুব সহজেই উপলব্ধি করা যায় মূলত নাটক ও নাটকের মঞ্চের স্থাপত্য ও আবহসংগীত নিয়ে সে-সময়ে তাঁর যে-ভাবনা গুঞ্জরিত হয়েছিল হৃদয় ও মনে তা বিস্তৃত পরিসর নিয়ে আলোচিত হয়েছে। খালেদ চৌধুরীর জীবনে এবং বাংলা নাটকের ইতিহাসে ১৯৫৪ সালে রক্তকরবীর আবির্ভাব যুগান্তর এনে দেয়। শম্ভু মিত্র নির্দেশিত নাটকটি প্রযোজনার ক্ষেত্রে যেমন চূড়ান্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষী, তেমনি নাটকটির মঞ্চ পরিকল্পনায় অভাবিত অভিনবত্ব ও চমৎকৃতি নিয়ে এলেন খালেদ চৌধুরী। এর আগে রবীন্দ্রনাটক যেমন অভিনীত হয়েছে সাধারণ রঙ্গালয়ে, তেমনি স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ তাঁর বহু নাটক নিজস্ব পরিচালনায় মঞ্চস্থ করেছেন। তাছাড়া এই রক্তকরবী-ই যখন ১৯৪৯-এ পরিচালনা করেছিলেন দেবব্রত বিশ্বাস, আমরা আগেই জানিয়েছি, তার মঞ্চপরিকল্পনার দায়িত্বেও ছিলেন খালেদ। এ কাজে সূর্য রায় তাঁর সহযোগী ছিলেন। রক্তকরবীর শম্ভু মিত্র অধ্যায় শুরু হবার আগে ‘বহুরূপী’ যখন ধর্মঘট মঞ্চস্থ করে, সে নাটকের সেট নির্মাণেও খালেদ অবদান রাখেন। আমাদের দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্পী কামরুল হাসানের সঙ্গে খালেদ চৌধুরীর সখ্য গড়ে উঠেছিল চল্লিশের দশকের মধ্য পর্যায়ে। কলকাতা আর্ট স্কুলে অধ্যয়ন ও চিত্রশিল্পে উচ্চতর জ্ঞান আহরণ করবার বাসনা তাঁর ছিল। যদিও তাঁর এ-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়িত হয়নি। প্রথম দিন পরিচয়ের পর থেকেই কামরুল হাসানের সঙ্গে নিবিড় বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন খালেদ চৌধুরী। এই বন্ধুত্ব কামরুল হাসানের মৃত্যুকাল অবধি অটুট ছিল। ১৯৪৮ সালে খালেদ চৌধুরী এই বন্ধুর সঙ্গে কিছুদিন কাটাবার জন্য ঢাকায় আসেন। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন কামরুল হাসান তাঁর পরম নির্ভরবন্ধু খালেদ চৌধুরীর কলকাতার পার্ক সার্কাস সংলগ্ন বেনিয়াপুকুর লেনের বাড়িতে ওঠেন। জীবিতকালে রাষ্ট্রপক্ষ এবং কয়েকটি প্রতিষ্ঠান তাঁকে সম্মানিত করেছিল। কোনো সম্মান বা সংবর্ধনার প্রসঙ্গ উঠলেই তিনি তা এড়িয়ে যেতেন। খালেদ চৌধুরী ৯৪ বছর বয়সে ২০১৩ সালের ৩০ এপ্রিল কলকাতায় পরলোকগমন করেন। দীর্ঘদিন ধরে কিডনির অসুখে ভুগছিলেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর। তাঁর মৃত্যুতে শেষ হল নাটকের স্বর্ণযুগের। খালেদ চৌধুরী বাংলা নাটকের মঞ্চস্থাপত্যে ও প্রচ্ছদশিল্পে যে-অবদান রেখে গেছেন তা দীর্ঘদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আজ নাট্য ব্যক্তিত্ব খালেদ চৌধুরীর ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী। নাট্যমঞ্চের অনন্য স্থপতি নাট্য ব্যক্তিত্ব খালেদ চৌধুরী মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক লিংক
[email protected]

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:১১

রাজীব নুর বলেছেন: শ্রদ্ধা জানাই।

৩০ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:১৮

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আবার ২ শব্দের মন্তব্যে ফিরে আসা !!
একটু বড় হলে ক্ষতি কি !!

২| ০১ লা মে, ২০২০ রাত ১২:১২

নেওয়াজ আলি বলেছেন: উনার অনেক নাটক দেখেছি । সাত বছর হয়ে গেল মরণের ।

০১ লা মে, ২০২০ রাত ২:৩৫

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
২০১৩ সালে মৃত্যুবরণ করলে
হিসেবে তাই হয়।

মঞ্চপরিকল্পক খালেদ চৌধুরী কিন্তু বাংলাদেশের
অভিনেতা যুবরাজ খালেদ খান নন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.