নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুক্তিবুদ্ধি সাহিত্যশিল্পী আবুল ফজলের ৩৭তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

০৪ ঠা মে, ২০২০ দুপুর ২:০৫


বাংলাদেশের প্রখ্যাত মুক্তিবুদ্ধি সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ আবুল ফজল। ১৯২৬ সালে ঢাকা সূচিত 'বুদ্ধির মুক্তি' আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন তিনি। এ আন্দোলন চলেছিল ১৯৩১ সাল পর্যন্ত। আবুল ফজল এ আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্তই শুধু থাকেননি, তিনি নিজেও আবুল হুসেন, কাজী আবদুল ওদুদ, কাজী মোতাহার হোসেনের স্নেহধন্য হয়ে বুদ্ধিবৃত্তির স্বাতন্ত্রিক প্রয়াস চালিয়ছিলেন। কর্ম জীবনে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং রাষ্ট্রপতির শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন। আবুল ফজল সমাজসচেতন লেখক হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন। তার লেখায় উঠে এসেছে স্বদেশপ্রেম, অসাম্প্রদায়িকতা, সত্যনিষ্ঠা এবং মানবতাবোধ। তিনি মূলত একজন চিন্তাশীল ও সমাজমনস্ক প্রবন্ধকার। তাঁর প্রবন্ধে সমাজ, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও রাষ্ট্র সম্পর্কে গভীর ও স্বচ্ছ দৃষ্টিসম্পন্ন মনোভাবের পরিচয় পাওয়া যায়। বাংলা ভাষা ও সাহিত্য, বাঙালি সংস্কৃতি এবং বাঙালি জাতির প্রতি তার ছিল গভীর অনুরাগ ও মমত্ববোধ। ১৯৬৭ সালে তত্কালীন পাকিস্তান সরকার যখন রাষ্ট্রীয় প্রচার মাধ্যমে রবীন্দ্রসঙ্গীত প্রচার বন্ধের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন, তখন তিনি তার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। বাংলাদেশের এই সাহিত্য প্রতিভা ১৯৮৩ সালের আজকের দিনে চট্টগ্রামে মৃত্যুবরণ করেন। আজ তাঁর ৩৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। মুক্তিবুদ্ধি সাহিত্যিক আবুল ফজলের মৃত্যু দিনে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

আবুল ফজল ১৯০৩ সালের ১লা জুলাই, চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় বত্রিশ মাইল দক্ষিণে এক অখ্যাত অজপাড়াগাঁ কেঁওচিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবা তাঁর নাম রেখেছিলেন মোহাম্মদ আবুল ফজল। কিন্তু আবুল ফজল নামেই তিনি লেখালেখি করেছেন। তার বাবার নাম মৌলবি ফজলর রহমান ও মা গুলশান আরা। পিতা মৌলভি ফজলুর রহমান ছিলেন চট্টগ্রাম জুমা মসজিদের ইমাম। আবুল ফজলের লেখাপড়ার শুরু গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। কিছুকাল পরে বাবার সঙ্গে চলে আসেন চট্টগ্রাম শহরে এবং চট্টগ্রাম সরকারি মাদ্রাসায় দ্বিতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হন। ১৯২৩ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন। ঢাকা ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন ১৯২৫ সালে। ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯২৮ সালে বি.এ. এব ১৯৪০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এম.এ. পাশ করেন। বাবার ইচ্ছা অনুযায়ী শিক্ষক হওয়ার সংকল্প করেন আবুল ফজল। আর এ জন্য ১৯২৯ সালে বি.টি. পড়ার জন্য ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজে ভর্তি হন। ১৯৩১ সালে ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে বি. টি. পাস করার পর তিনি চট্টগ্রাম ফিরে আসেন। এর পর আবুল ফজল বিভিন্ন সময় স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কৃঞ্চনগর কলেজ ও চট্টগ্রাম কলেজিয়েট কলেজে অধ্যাপনা করেছেন। ১৯৫৬ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে অধ্যাপক হিসেবে অবসর নেন। দীর্ঘকাল পরে, ১৯৭৩ সালে তিনিচট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবেযোগ দেন। ১৯৭৫ সালের নভেম্বরে তিনি বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টাপরিষদের সদস্য হিসেবে শিক্ষা ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেন এবং ১৯৭৭ সালের ২৩শে জুন সে-পদ ত্যাগ করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে ঢাকার 'মুসলিম সাহিত্য সমাজ' প্রতিষ্ঠার সাথে যুক্ত ছিলেন আবুল ফজল। পরে তিনি এর সম্পাদকও হয়েছিলেন। মুসলিম সাহিত্য সমাজের উদ্দেশ্য ছিল সামাজিক কুসংস্কার থেকে মানুষকে মুক্ত করা। তাদের সামাজিক আন্দোলনের মূলকথা ছিল: 'জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব'। ১৯২৬ সালে তারা প্রকাশ করেন মুসলিম সাহিত্য সমাজের মুখপত্র শিখা। মুসলিম সাহিত্য সমাজ ও শিখার সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন তারা ‘শিখাগোষ্ঠী’ নামে পরিচিত ছিলেন। এ গোষ্ঠী ঢাকায় বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন শুরু করে। আবুল ফজল সমাজসচেতন লেখক হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন। তিনি উপন্যাস, ছোটগল্প, নাটক, আত্মকথা, ধর্ম, ভ্রমণকাহিনী ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখেছেন। তার প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থ হচ্ছেঃ চৌচির, প্রদীপ ও পতঙ্গ, মাটির পৃথিবী, বিচিত্র কথা, রাঙ্গা প্রভাত, রেখাচিত্র, দুর্দিনের দিনলিপি, সফরনামা, আয়েশা, আবুল ফজলের শ্রেষ্ঠ গল্প, সাহিত্য সংস্কৃতি ও জীবন, সমকালীন চিন্তা ইত্যাদি। ১৯৪৮-৪৯ সালে তিনি 'সাহিত্য চয়নিকা' নামে সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণীর উপযোগী দুটি সাহিত্য বই সংকলন করেছিলেন। পাঠ্যবই হিসেবে ঐ দুটি বই টেক্সট্ বুক কমিটি কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছিল। তাঁর এ দু'টা সংকলন পাঠ্য বই হিসেবে খুব জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। ১৯৫৭ সালে তাঁর 'রাঙ্গা প্রভাত' প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বইটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সে পাঠ্য হয়। বইটি ছয় বছর ধরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ক্লাসে পড়ানো হয়। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে অবদানের জন্য বহু পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন আবুল ফজল। ১৯৬২ সালে তিনি বাংলা একাডেমী পুরস্কার, ১৯৬৩ সালে প্রেসিডেন্টের সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৬৬ সালে আদমজী সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৮০ সালে নাসিরুদ্দীন স্বর্ণপদক, ১৯৮১ সালে মুক্তধারা সাহিত্য পুরস্কার এবং ১৯৮২ সালে আবদুল হাই সাহিত্য পদকে ভূষিত হন। ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে। এ ছাড়া, বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ২০১২ সালের মরনোত্তর স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করে।

বাংলাদেশের প্রখ্যাত এই সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ ১৯৮৩ সালের ৪ঠা মে ৮০ বছর বয়সে চট্টগ্রামে মৃত্যুবরণ করেন। আজ তাঁর ৩৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। আবুল ফজলের অনেক রচনা সাময়িকতা-খচিত হলেও এবং তার ভাষাশৈলীর গদ্যবোধের মধ্যে নিপাট সংশ্লেষণশীল নান্দনিকতা না থাকলেও; তার সমাজবোধের মধ্যে যুক্তিবোধ, মনুষ্যত্ববোধ, উদার ধর্মচিত্ততা, প্রাজ্ঞতা ও মানবপ্রেম থাকার কারণে তাকে অবশ্যই বাঙালিদের চিরদিন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। বাংলাদেশের প্রখ্যাত সাহিত্যিক, চিন্তাশীল ও সমাজমনস্ক প্রবন্ধকার আবুল ফজলের মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক লিংক
[email protected]

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা মে, ২০২০ বিকাল ৩:০৯

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: উনি কি আস্তিক ছিলেন নাকি নাস্তিক?

০৪ ঠা মে, ২০২০ বিকাল ৩:৫৬

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
সাড়ে চুয়াত্তর ভাই
তার বাবা ছিলেন একজন মৌলভী
তার মুখে কত চমৎকার দাঁড়ি তার
পরেও আপনার মনে সব বাদ দিয়ে
তিনি আস্তিক না নাস্তিক সেই প্রশ্ন করলেন!!
আফসোস এখন ব্লগে থাকাই দায় হয়ে পড়েছে।
ভালো থা্কবেন।

২| ০৪ ঠা মে, ২০২০ বিকাল ৪:১৯

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: ওনার নামের আগে মোহাম্মাদ ছিল উনি পরে বাদ দিয়েছিলেন কেন?

০৪ ঠা মে, ২০২০ বিকাল ৫:৩৭

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আমার ঠিক জানা নাই
আপনার জানা থাকলে আমাদের
জানাতে পারেন।

৩| ০৪ ঠা মে, ২০২০ বিকাল ৪:৩১

রাজীব নুর বলেছেন: শ্রদ্ধা জানাই।

০৫ ই মে, ২০২০ রাত ৮:০৫

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:


ধন্যবাদ আপনাকে
শ্রদ্ধা জানানোর জন্য।

৪| ০৪ ঠা মে, ২০২০ বিকাল ৫:২৬

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: আহমদ ছফা তার একটা বইয়ে ওনাকে নাস্তিক বলে উল্লেখ করেছেন। হয়ত পরে ওনার মন বদলাতে পারে সেটা জানি না। আবুল ফজল সাহেব বঙ্গবন্ধুর প্রশংসা করে বই লিখেছিলেন। আবার ১৯৭৫ এর পরে জিয়াউর রহমান সরকারের উপদেষ্টা হয়েছিলেন। তাই ওনাদের মন বোঝা দায়। আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরেরও বড় দাড়ি ছিল।

০৪ ঠা মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০৪

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
জ্বি আল্লাহ ভালো জানেন
আপনাকে ধন্যবাদ।

৫| ০৪ ঠা মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:১০

রিদওয়ান হাসান বলেছেন: আবুল ফজলের প্রতি শ্রদ্ধা।

০৫ ই মে, ২০২০ রাত ৮:০৭

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

ধন্যবাদ আপনাকে রিদওয়ান হাসান
আবুল ফজলের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য।

৬| ০৫ ই মে, ২০২০ রাত ৩:২৩

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: বাংলাদেশর অনেক বুদ্ধিজীবী জীবনের প্রথমদিকে ছিলেন বামপন্থী শেষদিকে ডানপন্থী।আবুল ফজলও তাদের মধ্যে একজন।ওদুদ সাহেব ফরিদ পুরের লোক,কলকাতায় থাকতেন।৪৭এর পর এদেশে এসেছিলেন,আবার কিছুদিন পর চলেযান। যাবার সময় বলেযান,জিন্না এদেশটাকে কবর বানিয়েছে,নিঃশ্বাস ফেলার ছিদ্র রাখেনাই,এইজন্য চলে যাচ্ছি।যাক এসব এখন ইতিহাস।
এদেশে অনেক নাস্তিক আছে মৌলভীর ছেলে।যশোরের খড়কির পীরসাহেবের ছেলে আব্দুল হক।
ইউটিউবে দেখাযায় মুফতিই এখন বড় নাস্তিক।
উনি একজন গুনীলোক ছিলেন।কিন্তু যারা এক জীবনেই দুই রকম কথা বলে তারা আর গুনী থাকে না।আপনি আজকে যেই সুরে কথা বলছেন,কালকেই অন্য সুরে কথা বললে আপনার কথার গ্রহনযোগ্যতা থাকবে না।অনেক তথ্য জানতে পারলাম,এই জন্য ধন্যবাদ।

০৫ ই মে, ২০২০ রাত ৮:১১

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
নুরুলইসলা০৬০৪ ভাই
রাজনীতির কুট কৌশল
আমার বুঝবার ক্ষমতার
বাইরে। অনেকেই দল
বদল করে নিজের স্বার্থ
সিদ্ধির জন্য। ইনিও হয়তো
তার ব্যতিক্রম নন। ধন্যবাদ
আপনাকে মন্তব্য প্রদানের জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.