নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

নতুন পৃথিবীর দুর্ভাগা পথপ্রদর্শক ক্রিস্টোফার কলম্বাসের ৫১৪তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

২০ শে মে, ২০২০ বিকাল ৪:০৪


ইতালীয় অনুসন্ধানকারী ও নাবিক ক্রিস্টোফার কলম্বাস। তার আমেরিকা অভিযাত্রা ঐ অঞ্চলে ইউরোপীয়দের উপনিবেশ স্থাপনের সূচনা করেছিল। কিশোর বয়সেই তিনি সমুদ্রযাত্রা করেন। পর্তুগালের লিসবনে চলে যান ১৪৭৭ সালে। সেখানে ভূমধ্য সাগর ও আটলান্টিক মহাসাগরের বাণিজ্যিক বন্দরগুলোতে নৌ অভিযান পরিচালনা করেন। ১৪৮৫ সালে পর্তুগালের রাজা দ্বিতীয় জনের কাছে আটলান্টিক হয়ে ইন্ডিজে (এশিয়া) যাওয়ার পরিকল্পনা জমা দেন কলম্বাস। রাজা তাঁর পরিকল্পনায় রাজি না হলে তিনি স্পেনের রাজা ও রানির কাছে পরিকল্পনা পেশ করেন। স্পেনের রাজদরবার তাঁর অভিযানের অনুমোদন দেয় এবং তাঁকে ইন্ডিজ দ্বীপপুঞ্জের ভাইসরয় নিয়োগ করে। ১৪৯২ সালে তিনটি জাহাজ নিয়ে সমুদ্রযাত্রা শুরু করেন কলম্বাস। মূল জাহাজটির নাম ছিল সান্তা মারিয়া। অন্য দুটি নিনা ও পিন্টা। কলম্বাসের হাত ধরেই আমেরিকা মহাদেশের সঙ্গে ইউরোপের যোগাযোগের সূত্রপাত ঘটে। কলম্বাস মোট চারবার স্পেন থেকে আমেরিকা মহাদেশে অভিযান চালান। তিনি মহাদেশের মূল ভূখণ্ডেও পৌঁছান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি বুঝতে পারেননি নতুন এক মহাদেশে পৌঁছেছেন। সে কথাটি বের করেন আমেরিগো ভেসপুচি নামে আরেক নাবিক। তার নাম অনুসারেই হয় আমেরিকার নাম। কলম্বাস যদি জানতেন তিনি ভারতে পৌঁছাননি, এমনকি জাপানেও না, তাহলে নতুন মহাদেশের নাম আমেরিকা না হয়ে কলাম্বিয়া হতে পারত অনায়াসে। আর আমেরিকা মহাদেশের অধিবাসীরা পরিচিত হতেন কলাম্বিয়ান হিসেবে। বিভিন্ন ঘটনায় এভাবেই পাল্টে যায় ইতিহাসের ধারা। কলম্বাসও বদলে দিয়েছিলেন ইতিহাসকে। কলম্বাস সত্যিই ছিলেন দুর্ভাগা। মহাদেশের আবিষ্কারক হয়েও তার নামে এটির নামকরণ হল না। তার শেষজীবনও সুখের হয়নি। দেশের জন্য প্রচুর সম্পদ বয়ে আনার পরও শেষজীবনে রাজরোষে পড়ে জেল খাটতে হয় তাকে। জীবনও কাটে দারিদ্র্যের মধ্যে। তা ছাড়া ইতিহাসবিদরা বর্তমানে বলছেন যে আমেরিকা মহাদেশে পা রাখা প্রথম ইউরোপীয় কলম্বাস নন। তার আগে একাদশ শতকে স্ক্যান্ডিনেভিয়ার নাবিকরা আমেরিকায় যাওয়ার পথ জানতেন। যাইহোক আমেরিকা মহাদেশ আবিষ্কারের কৃতিত্ব কলম্বাসকেই দেওয়া হয় এবং তাকে বলা হয় নতুন পৃথিবীর পথপ্রদর্শক। আজ নাবিক ক্রিস্টোফার কলম্বাসের ৫১৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৫০৬ সালের আজকের দিনে তিনি স্পেনের ভালাদোলিদে মৃত্যুবরণ করেন

কলম্বাসের জন্ম ঠিক কোন সালে সেটা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবে এটা ঠিক যে, ১৪৫১ সালের ৩১ অক্টোবরের আগেই তার জন্ম হয়। তার পুরো নাম ছিল ল্যাটিন ভাষায়-- ক্রিস্টোফোরাস কলোম্বাস। আর জেনোয়ার স্থানীয় ভাষায় তার নাম ছিল ক্রিস্টোফ্ফা করোম্বো। ইংরেজিতে ক্রিস্টোফার কলম্বাস হিসেবেই তিনি পরিচিত। তার বাবার নাম ডোমেনিকো কলম্বো আর মায়ের নাম ছিল সুজানা ফনটানারোজা। বাবা ছিলেন মধ্যবিত্ত উল ব্যবসায়ী। তার একটা পনিরের দোকানও ছিল, যেখানে বালক কলম্বাস কাজ করতেন। দশ বছর বয়সে তিনি প্রথম সমুদ্রযাত্রায় যান তার ভাইয়ের সঙ্গে। ১৪৭৩ সালে যোগ দেন এক বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানে। এই প্রতিষ্ঠানের কাজে বিভিন্ন সময় সমুদ্রযাত্রায় যান তিনি। এর মাধ্যমেই সমুদ্রের নেশায় পড়ে যান তিনি। সে সময় পৃথিবী গোল না চ্যাপ্টা তা নিয়ে বিতর্ক ছিল বিজ্ঞানী ও ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে। তবে পৃথিবী যে গোল সে সম্পর্কে বিভিন্ন আবিষ্কারের মাধ্যমে সমর্থন জোরালো হচ্ছিল। বিভিন্ন পণ্ডিতের মতবাদ নিয়ে কলম্বাস নিজে চিন্তাভাবনা করতেন। তার ধারণা হল যে আটলান্টিক মহাসাগর দিয়ে ক্রমাগত জাহাজ চালিয়ে গেলে ভারতের পশ্চিম উপকূল বা জাপানের কাছাকাছি কোথাও পৌঁছানো যাবে। কোনপথে, কখন, কীভাবে যাত্রা করতে হবে সে সম্পর্কে তিনি একটা নিজস্ব প্রকল্প বা তত্ত্ব দাঁড় করালেন। কিন্তু এই পরিকল্পনা অনুযায়ী অভিযান চালাতে যথেষ্ট পরিমাণ টাকা দরকার। অত টাকা তো তার ছিল না। তিনি তাই তার অভিযানের পৃষ্ঠপোষকতা করার জন্য ইউরোপের বিভিন্ন রাজদরবারে আর্জি জানালেন। পর্তুগাল, ইতালি, ইংল্যান্ডের রাজদরবার তার আবেদন নাকচ করে দেয়। স্পেনের রাজদম্পতি আরাগনের দ্বিতীয় ফার্ডিনান্ড এবং ক্যাস্টিলের রানি প্রথম ইসাবেলা তাকে অর্থায়ন করতে রাজি হলেন। বিশেষ করে কলম্বাসের পক্ষে ছিলেন ইসাবেলা। ১৪৮৬ সালের ১ মে তিনি অনুমতি পেলেন। আর ১৪৯২ এর জানুয়ারিতে পেলেন চূড়ান্ত অনুমোদন।

সম্রাটের কাছ থেকে অর্থ পেয়ে তিনখানা জাহাজ নির্মাণ করলেন কলম্বাস। সবচেয়ে বড় ১০০ টনের সান্তামারিয়া, পিন্টা ৫০ টন, নিনা ৪০ টন। জাহাজ তৈরির সময় কোনো বিঘ্ন দেখা গেল না। সমস্যা সৃষ্টি হলো নাবিক সংগ্রহের সময়। কলম্বাসের সাহায্যে এগিয়ে এলো পিনজন ভাইরা। তাদের সাথে আরো কিছু বিশিষ্ট লোকের চেষ্টায় সর্বমোট ৮৭ জন নাবিক পাওয়া গেল। অবশেষে ৩ আগস্ট, ১৪৯২ কলম্বাস তার তিনটি জাহাজ নিয়ে পাড়ি দিলেন অজানা সমুদ্রে। সেদিন বন্দরে যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের অধিকাংশই ভেবেছিলেন কেউই আর সেই অজানা দেশ থেকে ফিরে আসবে না। ভেসে চললেন কলম্বাস। চারদিকে শুধু পানি আর পানি। দিনের পর দিন অতিক্রান্ত হয়। কোথাও স্থলের দেখা নেই, অধৈর্য হয়ে ওঠে নাবিকরা। সকলকে সান্ত্বনা দেন, উৎসাহ দেন কলম্বাস কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর ধৈর্য রাখতে পারে না নাবিকরা। সকলে একসাথে বিদ্রোহ করে, জাহাজ ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। কলম্বাসের চোখে পড়ে ভাঙা গাছের ডাল। সবুজ পাতা। অনুমান করতে অসুবিধা হয় না তারা স্থলের কাছাকাছি এসে পৌঁছেছেন। নাবিকদের কাছে শুধু একটি দিনের প্রার্থনা করেন। দিনটি ছিল ১২ অক্টোবর। একজন নাবিক, নাম রোডারিপো প্রথম দেখলেন স্থলের চিহ্ন। আনন্দে উল্লাসে মেতে উঠলেন সকলে। পরদিন কলম্বাস নামলেন বাহমা দ্বীপপুঞ্জের এক অজানা দ্বীপে। পরবর্তীকালে তিনি সেই দ্বীপের নাম রাখেন সান সালভাদর। (বর্তমান নাম ওয়েস্টলিং আইল্যান্ড)। এই দিনটি আজও উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকায় কলম্বাস দিবস হিসেবে উদযাপন হয়। কলম্বাস ভেবেছিলেন সমুদ্রপথে তিনি এশিয়ায় এসে পৌঁছেছেন। যেখানে অফুরন্ত সোনাদানা ছড়ানো আছে। কিন্তু কোথায় আছে সেই সম্পদ…? দিনের পর দিন চারদিক তন্ন তন্ন করে খুঁজেও পাওয়া গেল না ধনসম্পদের কোনো চিহ্ন। কলম্বাস গেলেন কিউবা এবং হিস্পানিওয়ালা দ্বীপে। স্থির করলেন এখানে সাময়িক আস্তানা স্থাপন করে ফিরে যাবেন স্পেনে। এরপর আরো বিরাট সংখ্যক লোক এনে অনুসন্ধান করবেন ধনরত্বের। হিস্পানিওয়ালাতে সাময়িক আস্তানা গড়ে তুললেন। সেখানে ৪২ জন নাবিকের থাকার ব্যবস্থা করে রওনা হলেন স্বদেশভূমির পথে। নতুন দ্বীপে পৌঁছবার প্রমাণস্বরূপ কিছু স্থানীয় আদিবাসীকে সঙ্গে নিয়ে গেলেন। শূন্য হাতে ফিরে এলেও দেশে অভূতপূর্ব সম্মান পেলেন কলম্বাস। তার সম্মানে রাজা-রানি বিরাট ভোজের আয়োজন করলেন। স্বয়ং পোপ কলম্বাসকে আশীর্বাদ জানিয়ে ঘোষণা করলেন, নতুন আবিষকৃত সমস্ত দেশ স্পেনের অন্তর্ভুক্ত হবে। ট ফার্দিনান্দ নতুন অভিযানের আয়োজন করলেন। বিরাট নৌবহর, অসংখ্য লোকজন নিয়ে ১৪৯৩ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর কলম্বাস আটলান্টিক পার হয়ে দ্বিতীয় সমুদ্র অভিযানে যাত্রা করলেন। দীর্ঘ সমুদ্রযাত্রার পর কলম্বাস গিয়ে পৌঁছলেন হিস্পানিওয়ালাতে। সেখানে গিয়ে দেখলেন তার সঙ্গী-সাথীদের একজনও আর জীবিত নেই। কিছু মানুষ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের জন্য মারা গেছে। অবশিষ্ট সকলে স্থানীয় আদিবাসীদের হাতে মারা পড়েছে।

দ্বিতীয় অভিযানের সময় কলম্বাস চারদিকে ব্যাপক অনুসন্ধান করেও কোনো ধনসম্পদের সামান্য মাত্র চিহ্ন খুঁজে পেলেন না। শুধুমাত্র নতুন কিছু দ্বীপ আবিষ্কার করলেন। কোনো অর্থ সম্পদ না পেয়ে জাহাজ ভর্তি করে স্থানীয় আদিবাসীদের দাস হিসেবে বন্দি করে স্পেনে পাঠালেন। তখনো ইউরোপের বুকে দাস ব্যবসায়ের ব্যাপক প্রচলন ঘটেনি। কলম্বাসের এই কাজকে অনেকে আন্তরিকভাবে সমর্থন করতে পারল না। তাছাড়া আদিবাসীদের বিরাট অংশই নতুন পরিবেশে গিয়ে অল্পদিনের মধ্যে মারা পড়ল। ইসাবেলা কলম্বাসের এই আচরণকে অন্তর থেকে সমর্থন করতে পারলেন না। এই সংবাদ কলম্বাসের কাছে পৌঁছতে বিলম্ব হলো না। তিনি আর মুহূর্ত মাত্র বিলম্ব করলেন না। আড়াই বছর পর ১৪৯৬ সালের ১১ জুন ফিরে এলেন স্পেনে। কিন্তু প্রথমবারের মতো এবারে কোনো সংবর্ধনা পেলেন না। কিন্তু অজেয় মনোবল কলম্বাসের। নতুন অভিযানের জন্য আবেদন জানালেন কলম্বাস। প্রথমে দ্বিধাগ্রস্ত থাকলেও শেষ পর্যন্ত সম্মতি দিলেন সম্রাট।
১৪৯৮, ৩০ মে তৃতীয়বারের জন্য অভিযান শুরু করলেন কলম্বাস। এবার তার সঙ্গী হলো তার পুত্র এবং ভাই। কলম্বাসের জীবনের সৌভাগ্যের দিন ক্রমশই অস্তমিত হয়ে এসেছিল। হিস্পানিওয়ালার স্থানীয় মানুষরা ইউরোপিয়ানদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করল। মানসিক দিক থেকে বিপর্যস্ত কলম্বাস অত্যাচারী শাসকের মতো কঠোর হাতে বিদ্রোহ দমন করলেন। শত শত মানুষকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হলো। কলম্বাসের সহযোগীরাও তার কাজে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল। সম্রাটের কাছে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠল, তিনি স্বাধীন রাজ্য গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন। তিনি ফ্রান্সিসকো দ্যা বোবদিলা নামে একজন রাজকর্মচারীকে সৈন্যসামান্ত দিয়ে পাঠালেন কলম্বাসের বিরুদ্ধে তদন্ত করার জন্য। কয়েক দিন ধরে অনুসন্ধান করে রাজ্য স্থাপনের কোনো অভিযোগ না পেলেও কলম্বাসের বিরুদ্ধে নির্বুদ্ধিতার অভিযোগ আনা হলো। কারণ কলম্বাস কোনো সম্পদশালী দেশ আবিষ্কার করার পরিবর্তে সম্পদহীন দেশ আবিষ্কার করেছেন। যার জন্য সম্রাটের বিরাট পরিমাণ অর্থের অপচয় হয়েছে। এই অভিযোগে প্রথমে বন্দি করা হলো কলম্বাসের ভাই ও পুত্রকে। তারপর কলম্বাসকে। কলম্বাসকে শৃঙ্খলিত করে নিয়ে আসা হলো স্পেনে। তাকে রাখা হলো নির্জন কারাগারে। সেখান থেকেই রানি ইসাবেলাকে চিঠি লিখলেন কলম্বাস। রানি ইসাবেলা ছিলেন দয়ালু প্রকৃতির। তাছাড়া কলম্বাসের প্রতি বরাবরই ছিল তার সহানুভূতিবোধ। তার চিঠি পড়ে তিনি মার্জনার আদেশ দিলেন। পঞ্চাশ বছরে পা দিলেন তিনি। শরীরে তেমন জোর নেই কিন্তু মনের অদম্য সাহসে ভর দিয়ে চতুর্থ বারের জন্য সমুদ্রযাত্রার আবেদন করলেন। সম্রাট সম্মতি দিলেন, শুধু হিস্পানিওয়ালাতে প্রবেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেন। ১৫০২ সালের ১৯ মে কলম্বাস শুরু করলেন তার চতুর্থ সমুদ্রযাত্রা। তার ইচ্ছা ছিল আরো পশ্চিমে যাবেন। পথে তুমুল ঝড় উঠল। নিরুপায় কলম্বাস আশ্রয় নিলেন এক অজানা দ্বীপে।

কলম্বাস পৌঁছেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের এক দ্বীপে। সেখান থেকে ফিরে যান জ্যামাইকা দ্বীপে। ক্রমশই তার দেহ ভেঙে পড়ছিল। অজানা রোগে তার সঙ্গীদের অনেকেই মারা গিয়েছিল। দু বছর পর নিরুৎসাহিত মনে স্পেনে ফিরে এলেন। এরপর আর মাত্র দু বছর বেঁচে ছিলেন। যদিও অর্থ ছিল কিন্তু মনের শান্তি ছিল না। রাজ অনুগ্রহ থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত হয়েছিলেন। তার আবিষ্কারের গুরুত্ব উপলব্ধি করার ক্ষমতা দেশবাসীর ছিল না। ১৫০৬ সালের ২০ মে ভ্যাসাডোলিড শহরে এক সাধারণ কুটিরে সকলের অগোচরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন কলম্বাস। সেখান থেকে তার মৃতদেহ নিয়ে গিয়ে ডেমিঙ্গোতে সমাধি দেয়া হয়। আজ নাবিক ক্রিস্টোফার কলম্বাসের ৫১৪তম মৃত্যুবার্ষিকী।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক
[email protected]

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে মে, ২০২০ বিকাল ৪:২৪

নতুন বলেছেন: কলোম্বাসের এই আবিস্কারের ফলে স্পানিসরা প্রায় ১২-১৫ মিলিওন আদীবাসি মানুষকে হত্যার জন্য দায়ী।

২৩ শে মে, ২০২০ রাত ৯:০১

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আমাদের কাছে ছোটবেলা থেকেই কলম্বাস যুক্তরাষ্ট্রের আবিষ্কর্তা হিসেবে পরিচিত।
কিন্তু কী ছিল ক্রিস্টোফার কলম্বাসের আসল পরিচয়? তিনি কি শুধুই একজন অকুতোভয়
অভিযাত্রী ছিলেন যিনি আমেরিকাকে গোটা বিশ্বের সঙ্গে একত্র করেন? না-কি ছিলেন
একজন নির্দয় শোষক যিনি যুক্তরাষ্ট্রে উপনিবেশবাদ ও দাস প্রথার অভিশাপ নিয়ে
হাজির হন? সত্যিই কি কলম্বাসকে যুক্তরাষ্ট্রের আবিষ্কারক বলা যায়?
নাকি এটি শুধুই জনশ্রুতি?

২| ২০ শে মে, ২০২০ বিকাল ৪:৪৩

রাজীব নুর বলেছেন: কলম বাসের আবিস্কারের আগে কি আমেরকা ছিলো না??

২৩ শে মে, ২০২০ রাত ৯:১৪

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন: কলম্বাস যুক্তরাষ্ট্র 'আবিষ্কার' করেছেন বললে ভুল হবে কারণ সেখানে
সহস্র বছর ধরেই স্থানীয় আদিবাসীদের বাস ছিল। ভাইকিংরা নিউফাউন্ডল্যান্ডে
বসতি গেড়েছে কলম্বাসেরও ৫০০ বছর আগে! কিন্তু ভাইকিংরা বেশি দিন সেখানে
স্থায়ী হতে পারেনি, কলম্বাস পেরেছেন। কলম্বাসের "নতুন ভূমি" আবিষ্কারের কথা
পুরো ইউরোপে বাতাসের বেগে ছড়িয়ে পড়ে যা আগে কখনো হয়নি। মূলত
কলম্বাসের অভিযানের কথা ছড়িয়ে পড়লে ইউরোপিয়ান অভিযাত্রী ও বসতি
স্থাপনকারীরা দলে দলে আমেরিকায় পাড়ি জমাতে থাকে।

তবে অনেকে দাবি করেন কলম্বাস নয়, মুসলমানরাই আমেরিকা আবিস্কার করেছিলেন।
তুরস্কের রাজধানী ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত লাতিন আমেরিকার ধর্মীয় নেতাদের এক সম্মেলনে
দেয়া বক্তৃতায় এমন দাবি করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান।
বক্তৃতায় তুর্কি প্রেসিডেন্ট দাবি করেন,কলম্বাস আমেরিকার খোজ পায় পনেরো শতাব্দিতে
কিন্তু মুসলিম নাবিকরা সে দেশে পৌঁছেছিলেন এর ও ৩০০ বৎসর আগে।
এরদোগান বলেন,“কলম্বাস নিজেই আমেরিকা আবিস্কারের সময় কিউবা উপকূলে একটি
পাহাড়ের ওপর মসজিদের অস্তিত্বের কথা উল্লেখ করেছিলেন যা প্রমান করে ইসলাম ও লাতিন
আমেরিকার মধ্যে পরিচয় হয়েছে কলম্বাস আমেরিকা আবিস্কারের ঘটনার পূর্বেই আর সেই
কাজটি করেছিল মুসলিম নাবিকেরাকা পৌঁছেছিলেন ১১৭৮ সালেই। তবে অনেক বিশেষজ্ঞ
মনে করেন, মসজিদের মতো দেখতে একটি প্রস্তরখণ্ডকে উপাসনালয় হিসেবে উল্লেখ
করেছিলেন ওই নাবিক।

৩| ২০ শে মে, ২০২০ বিকাল ৫:০২

রাকিব আর পি এম সি বলেছেন: কলম্বাসের আবিষ্কার সেখানকার আদিবাসীদের জন্য বিপর্যয় ডেকে এনেছিল।

২৩ শে মে, ২০২০ রাত ৯:০৫

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
কলম্বাসের এসব কুকীর্তির কথা মাথায় রেখে লাতিন আমেরিকা ও যুক্তরাষ্ট্রের
বেশ কিছু প্রদেশে কলম্বাস দিবস পালন না করে ওই একই দিনে নেটিভ
আমেরিকান দিবস পালন করা হয়।

৪| ২০ শে মে, ২০২০ বিকাল ৫:৫০

শের শায়রী বলেছেন: এই ব্যাটাকে না জেনে সন্মান করছি এক সময়, যখন এর ইতিহাস জানছি এর মত ঘৃনিত জীব ইতিহাসে কম পেয়েছি।

২৩ শে মে, ২০২০ রাত ৯:০৪

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

আধুনিক মার্কিনীরা সকলেই প্রায় ইউরোপিয়ান বংশোদ্ভূত। কিন্তু মুদ্রার ওপিঠটাকেও
তো দেখতে হবে! বিশ্লেষকদের মতে, কলম্বাস এর জন্যই তখনকার সময় লাখ লাখ
মার্কিন অধিবাসী; যারা নেটিভ আমেরিকান নামে পরিচিত তাদের বিলুপ্তি ঘটে। কলম্বাস
আমেরিকায় গিয়ে সেখানকার স্থানীয় আদিবাসীদের বন্দী করতে থাকেন। তিনি নিজের
দিনলিপিতেও সহাস্যে লিখে গেছেন, কত সহজে তিনি নেটিভদের কারাবন্দি করতেন।
তারপর তাদেরকে দাস বানানো হতো।

৫| ২০ শে মে, ২০২০ রাত ৯:২৪

সোহানী বলেছেন: নুরু ভাই, উপরের প্রত্যেকের মন্তব্যেই সত্য প্রতিফলিত হয়েছে। আমরা ছোট থেকেই কলম্বাসকে সন্মান জানিয়ে আসছিলাম। কিন্তু আসল সত্য জানার পর ঘৃনায় থুথু দিয়েছি। মিলিয়ন আদীবাসি থেকে কয়েক শ'তে এসেছিল তার অত্যাচারে। এমন কি মারা সন্তানদেরকে মেরে ফেলতে কলম্বাস ও তার দোসরদের সামনে যাবার আগে। তার জাহাজে নাবিক নয় ছিল জেলবন্দী দস্যুরা। কারন সাধারনদের পাঠিয়ে কোন রিস্ক নিতে চায়নি রাজা। এটা নিয়মই ছিল যেকোন রিস্কি কাজে জেলবন্দী দস্যুদের পাঠানো হতো সে সময়। আর তারা ছিল দয়ামায়াহীন।

আমার ছেলের সাথে ইতিহাস পড়তে যেয়ে পদে পদে অবাক হয়েছি। এখানে বা আমেরিকায় কলম্বাসের নাম সবাই ঘৃনাভরে উচ্চারন করে।

২৩ শে মে, ২০২০ রাত ৮:৫৯

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

কলম্বাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ এখানেই শেষ নয়। প্রচলিত বর্ণনা অনুযায়ী, হিস্পানিওলা শাসনের সময় যদি নেটিভরা তাকে পর্যাপ্ত পরিমাণ সোনার সরবরাহ দিতে ব্যর্থ হত তবে তিনি তাদের ওপর নির্মম নিপীড়ন চালাতেন। এছাড়া তিনি নেটিভদের ৯-১০ বছর বয়সী কন্যাশিশুদের খুঁজে বেড়াতেন যাতে তাদের যৌন দাসী বানানো যায়। হিস্পানিওলা ছাড়াও অন্যান্য উপনিবেশ শাসনের সময়ও তিনি তার নির্মমতা বজায় রাখেন। এজন্য কলম্বাসকে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়। ওই সময়ে আমেরিকায় ভ্রমণরত এক পাদ্রী বারতোলমে দে লাস ক্যাসাস এর ভাষ্য অনুযায়ী, ১৪৯৪ থেকে ১৫০৮ সাল পর্যন্ত প্রায় ত্রিশ লাখ স্থানীয় বাসিন্দা যুদ্ধ ও দাসত্বের বলি হয়। তাই আজকের যুগে সাধারণের কাছে বীরের জয়মাল্য পাওয়া কলম্বাস আসলে কতটা মহৎ ছিলেন?

৬| ২০ শে মে, ২০২০ রাত ৯:৩৫

কালো যাদুকর বলেছেন: এখানে আমেরিকায় অনেকেই আজকাল সোচ্চার হচ্ছেন এইদিন টি আর না পালন করার জন্য। এর পরিবর্তে "ইন্দিজিনিয়াস পিপল ডে" , যেটাতে মূলত নেটিভ আমেরিকান ডে হিসাবেও পরিচিত। হয়ত একদিন আমেরিকান সরকার তাদের তালিকা থেকে কলম্বাস ডে বাদ দিয়ে নেটিভ আমেরিকান ডে যুক্ত করবেন।

২৩ শে মে, ২০২০ রাত ৯:১০

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
১৭৯২ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অংশে ১২ অক্টোবরকে কলম্বাস ডে হিসেবে
পালন করা হয়। ১৯৩৪ সালে কলম্বাস দিবসকে যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি ছুটির দিন
হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। যদিও সব অঙ্গরাজ্যই এই নিয়মটি মেনে চলে
এমনটা যুক্তরাষ্ট্রের মাত্র ২৩টি অঙ্গরাজ্য কলম্বাস দিবস পালন করে তাও
আংশিকভাবে। বাকি অঙ্গরাজ্যগুলো পুরোপুরিভাবেই কলম্বাস দিবস পালন
থেকে সরে এসেছে। যদিও কলম্বাস দিবসকে জনপ্রিয় করার পেছনে চেষ্টার
কোনো কমতি ছিল না। সত্তরের দশকে এই দিবসকে ১২ই অক্টোবর থেকে
সরিয়ে অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় সোমবারে নিয়ে যাওয়া হয় যাতে মার্কিনীরা
পরপর তিন দিন কর্মবিরতি বা ছুটি ভোগ করতে পারে, তবে এ চেষ্টাও বৃথা যায়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.