নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

শিশু সাহিত্যিক ও সমাজসেবী সুখলতা রাও (রায়) এর ৫১তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

০৯ ই জুলাই, ২০২০ রাত ৯:৩৭


বিস্মৃতির আড়ালে এক আলোকিত নারী সুখলতা রাও (রায়)। ছড়াকার সুকুমার রায়ের সহোদরা ও চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের পিসি হলেন বিশিষ্ট শিশুসাহিত্যিক ও সমাজসেবক সুখলতা রায়। পদ্য ও গদ্য উভয় প্রকার রচনাতেই দক্ষ ছিলেন সুখলতা। উঁচুমানের ছবি আঁকতেন জল ও তেলরঙে। পড়াশোনা যখন করতেন, সেটাও গভীর মনোযোগ ও নিষ্ঠার সঙ্গে। তনি বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় সাহিত্যচর্চা করেন এবং কুড়িটির মতো গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর শিশুতোষ গ্রন্থগুলি বিপুল প্রশংসা লাভ করে। তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থ হলোঃ লালিভুলির দেশে, নিজে পড়, নিজে শেখ, গল্প আর গল্প (১৯১২), খোকা এলো বেড়িয়ে (১৯১৬), নতুন পড়া (১৯২২), সোনার ময়ূর, নতুন ছড়া (১৯৫২), বিদেশী ছড়া (১৯৬২), নানান দেশের রূপকথা, পথের আলো, ঈশপের গল্প, হিতোপদেশের গল্প, New Steps, Living Lights প্রভৃতি।রবীন্দ্ররচনার বহু অনুবাদকের তালিকায় সুখলতারও একটি সম্মানযোগ্য স্থান আছে। রবীন্দ্রনাথের ‘রাজা ও রানী’ নাটক ও ‘জাপান যাত্রী’ ভ্রমণ পত্রাবলির অনুবাদ করেছিলেন তিনি যথাক্রমে ‘Devouring Love’ ও ‘A Visit to japan’ নামে। নিউইয়র্ক থেকে অনুবাদ দুটি প্রকাশ হয়েছিল রবীন্দ্রজন্মশতবার্ষিকীর (১৯৬১) লগ্নে ও ‘East -West Institute Series’-এর বই হিসেবে। সুখলতা রায়ের ‘নিজে পড়’ গ্রন্থটি শিশুসাহিত্য সংসদ কর্তৃক প্রকাশিত হয় এবং এর জন্য তিনি ‘লেখিকা’ পুরস্কার ও ভারত সরকারের ‘সাহিত্য পুরস্কার’ (১৯৫৬) লাভ করেন। এছাড়া তার আরও কয়েকটি গ্রন্থ পুরস্কৃত হয়। সমাজসেবায় অবদান রাখার জন্য তিনি স্বামীর সঙ্গে যৌথভাবে ‘কাইজার-ই-হিন্দ’ পদক লাভ করেন। আজ এই গুণী সাহিত্যিকের মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৬৯ সালের আজকের দিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। আজ তার ৫১তম মৃত্যুবার্ষিকী। শিশু সাহিত্যিক ও সমাজসেবী সুখলতা রায় এর মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি

(রায় পরিবারঃ ছয় সন্তানসহ সস্ত্রীক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। (বাঁ দিক থেকে) শান্তিলতা, বিধুমুখী (স্ত্রী), পুণ্যলতা, সুকুমার, উপেন্দ্রকিশোর, (পিছনে) সুবিনয়, সুবিমল ও (একেবারে ডান দিকে) সুখলতা)
সুখলতা রায়, ডাক নাম হাসি। ১৮৮৬ সালের ১০শে অক্টোবর, কলকাতার ১৩ নং কর্নওয়ালিস স্ট্রিটের বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন হাসি ওরফে সুখলতা। তাদের আদি বাড়ি ছিল বর্তমান বাংলাদেশের ময়মনসিংহের মসুয়ায়। সুখলতার পিতা বিখ্যাত শিশুসাহিত্যিক, সংগীতজ্ঞ, চিত্রশিল্পী ও যন্ত্রকুশলী উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। তার মা বিধুমুখী দেবী ছিলেন বিশিষ্ট সমাজ সংস্কারক, ব্রাহ্ম সমাজের অন্যতম প্রধান নেতা দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের কন্যা। শিশুসাহিত্যিক, ছড়াকার, বাংলা সাহিত্যে ননসেন্স রাইমের প্রবর্তক সুকুমার রায় তার সহদর ভ্রাতা। এ ছাড়াও তার আরও দুই ভাই ছিলেন, যাদের নাম সুবিনয় রায় ও সুকোমল রায়। তার দুই বোন প্রখ্যাত শিশুসাহিত্যিক পুণ্যলতা চক্রবর্তী ও শান্তিলতা রায়। প্রখ্যাত শিশুসাহিত্যিক লীলা মজুমদার তার খুড়তুতো বোন এবং অস্কারবিজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায় ছিলেন তার ভ্রাতুষ্পুত্র। পিতা উপেন্দ্রকিশোর সুখলতাকে ভর্তি করে দিলেন ব্রাহ্মবালিকা বিদ্যালয়ে। এখান থেকেই এন্ট্রান্স পাস করলেন তিনি। তারপর ভর্তি হলেন বিএ ক্লাসে বেথুন কলেজে। কলেজের পড়া শেষ করে কিছুদিন শিক্ষকতাও করেন সুখলতা। তারপর ২১ বছর বয়সে বিয়ে হয়ে গেল ওড়িশার ‘ভক্তকবি’ মধুসূদন রাওয়ের প্রথম সন্তান ড. জয়ন্ত রাওয়ের সঙ্গে। জয়ন্ত রাও ওড়িশা চিকিৎসা বিভাগের সঙ্গে সংযুক্ত থেকে প্রখ্যাত সিভিল সার্জন হিসেবে সুপরিচিত হন। সুখলতা রায় তখন হাসি থেকে হয়ে গেলেন সুখলতা রাও। কলকাতা থেকে কিছুকালের জন্য উঠে এলেন ওড়িশার কটকে, স্বামীর গৃহে। সেখানে স্বামীর সহযোগিতায় সুখলতা সমাজসেবায় আত্মনিয়োগ করেন এবং কটকে ‘শিশু ও মাতৃমঙ্গল কেন্দ্র’, ‘উড়িষ্যা নারী সেবা সংঘ’ প্রভৃতি সামাজিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। সমাজসেবার পাশাপাশি তিনি বাংলা ও ইংরেজিতে আলোক নামে একটি পত্রিকাও সম্পাদনা করেন।

বিশ্ব কবি রবি ঠাকুরের সঙ্গে একটা স্নেহ ও সংস্কৃতির সম্পর্ক গড়ে ওঠে সুখলতার। মনসামঙ্গলের বিখ্যাত বেহুলা-লখিন্দর উপাখ্যান নিয়ে ইংরেজিতে ১২টি গল্প লিখে ১২টা রঙিন ছবি নিজে হাতে এঁকে সুখলতা ‘BEHULA’ নাম দিয়ে একটা বই প্রকাশ করেছিলেন। এ বইয়ের জন্য রবীন্দ্রনাথ এক চমৎকার ভূমিকা লিখে দিয়েছিলেন। আসলে রবীন্দ্রনাথের ভালো লেগেছিল বেহুলার ছবি। সুখলতা রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে লিখেছেন, “তিনি ইচ্ছা করাতে ‘সন্দেশ’ কাগজে প্রকাশিত তার একটি কবিতার ছবি এঁকে দিয়েছিলাম।” মডার্ন রিভিউয়ে সাবিত্রী-সত্যবানের গল্পকে ভিত্তি করে আঁকা সুখলতার একটি ছবি ‘In Quest of the Beloved’ ছাপা হয়েছিল। সেটি দেখে জনৈক উচ্চপদস্থ ইংরেজ কর্মচারী রবীন্দ্রনাথকে ছবিটি তার কাছে ভালোলাগার ও সেটি কেনার ইচ্ছার কথা জানান। রবীন্দ্রনাথ চিঠি লিখে সুখলতাকে একথা জানান এবং ছবিখানি তাকে পাঠিয়ে দেন। ১৯৬৯ সালের ৯ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন সুখলতা রাও। রায় পরিবারের এ গুণী মেয়েটিকে সবাই তেমন করে মনে রাখেননি। আজ তাঁর ৫১তম মৃত্যুবার্ষিকী। শিশু সাহিত্যিক ও সমাজসেবী সুখলতা রাও (রায়) এর মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
পাঠকের জন্য সুখলতা রাও এর একটি তাঁর লেখা একটা খুব জনপ্রিয় ছড়া !

দিগনগরের বুড়ি এল,
তিনটি মেয়ে মুঠোয় ধরে;
একটি সেঁকে, একটি বাড়ে,
একটি ভাল রান্না করে,
মিহি সুতো কাটতে পারে,
ঘরের কাজও করতে পারে;
ও গিন্নীমা, কিনবে নাকি
একটি মেয়ে, আদর করে?


নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক
[email protected]

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই জুলাই, ২০২০ রাত ৯:৪৭

রাজীব নুর বলেছেন: তার নামটা খুব সুন্দর সুখলতা।
শ্রদ্ধা জানাই।

১০ ই জুলাই, ২০২০ রাত ১০:৪৬

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

আপনাকে ধন্যবাদ খানসা্ব
সুখ সুখ অনুভব করার জন্য।

২| ০৯ ই জুলাই, ২০২০ রাত ১১:৪১

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: ভাইয়ের নামের শেষে রায় কিন্তু ওনার নামের শেষে রাও কেন? রাও মনে হয় রায় এর স্ত্রীলিঙ্গ। এবার বুঝেছি।

১০ ই জুলাই, ২০২০ রাত ১০:৪৭

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

বোঝার জন্য ধন্যবাদ সাড়ে চুয়া্ত্তর ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.