নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার গল্পটা হোক পৃথিবীর সেরা গল্প ।কারন আমি হতে চাই একজন সত্যিকারের জীবন শিল্পী ।

নুরুন নাহার লিলিয়ান

নুরুন নাহার লিলিয়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

রহস্য গল্প ; অদ্ভুত সুগন্ধি ।

১৭ ই জুন, ২০১৫ ভোর ৫:৫৮

হোক্কাইডো প্রথম এসেই মায়ার মনে হল জন বিচ্ছিন্ন আরেক পৃথিবী । এখানকার গভীর নীরবতা আর শক্তিশালী শীতল বাতাস যেন নিঃশ্বাস এর সাথে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায় । মায়া বড় হয়েছে জনসংখ্যায় ভরপূর বাংলাদেশে । যেখানে মানুষ ছাড়া কিছুই চিন্তা করা যায় না ।আর এখানে মানুষের যেন অভাব । এখানকার নিঃশব্দ বাড়ি ঘর গুলোর দিকে তাকালে মনে হয় ছবিতে আঁকা কোন দৃশ্য । প্রকৃতির বুকে জেগে উঠা নিঃশব্দ প্রান । প্রশান্ত মহাসাগর এবং জাপান সাগরের তীর ঘেঁষে জেগে উঠা বসতি হল হোক্কাইডো দ্বীপ ।হোক্কাইডো বিশ্ববিদ্যালয় কে কেন্দ্র করে অনেক বিদেশি গবেষক এবং ছাত্র ছাত্রীরা আসে পড়তে । বিয়ের পর তরুন বিজ্ঞানী স্বামীর গবেষণার জন্য তাঁর সাথে মায়া এখানে নতুন জীবন শুরু করল । হোক্কাইডো বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে একটু দূরে গেলে পাহাড় আর নদী । মানুষ এর শব্দ পাওয়া খুব কঠিন । দিনে দুপুরেও গা ছম ছম করে । এখানে ভাষা এবং খাবার সমস্যার কারনে বিদেশিদের জীবন একটু কঠিন মনে হয় । কিন্তু এই দুইটি সমস্যা মানিয়ে নিতে পারলে শান্তির স্বর্গ হল হোক্কাইডো ।তাই মায়ার স্বামী জাপানিজ ভাষা শেখার শিক্ষক খুঁজতে লাগলেন । একদিন দুপুরে হঠাৎমায়ার স্বামী ল্যাব থেকে ফোন করে জানালো ,
মিসেস ইয়ামাদা রাজি হয়েছেন তোমাকে জাপানিজ ভাষা শিখাতে । তবে তোমাকে ওর স্কুলে যেতে হবে । এবং ওর স্কুলটা একটু দূরে পাহাড়ের কাছা কাছি ।
মায়া বলল ,ঠিক আছে । কিন্তু আমি কিভাবে যাওয়া আসা করবো ?
সে বলল , প্রথম দিন আমি তোমাকে দিয়ে আসবো । তারপর তুমি নিজে নিজে যাবে। তোমাকে সহজ পথ দেখিয়ে দিবো ।
মাটির নিচের ট্রেন দিয়ে গেলে আধা ঘণ্টা আর হেঁটে গেলে এক ঘণ্টা পনেরো মিনিট এর মতো । ট্রেন দিয়ে গেলে দুইটা ট্রেন পাল্টাতে হবে । তবে হেঁটে গেলে সময় বেশি লাগলেও সহজ পথ । প্রতি বুধ বার মায়া মিসেস ইয়ামাদার জাপানিজ ভাষা স্কুলে যায় । মায়ার সাথে আরও কয়েক জন বিদেশি ছাত্রী আছে । আমেরিকান ,রাশিয়ান ,তাইওয়ান ,কম্বোডিয়া থেকে আসা মায়ার মতোই গবেষকদের সহধর্মিণীরা । খুব সকালে ঘুম থেকে উঠতে হয় । কারন ক্লাস শুরু হয় সকাল আট টা থেকে মায়াকে তো আরও আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে হয় । জাপানিজরা সময়ের ব্যপারে খুব সচেতন এবং দায়িত্বশীল ।মিসেস ইয়ামাদা ক্লাসে সকালের হাল্কা নাস্তার ব্যবস্থা
রাখেন । চা,কফি ,দুধ আর নানা রকমের কেক ,বিস্কুট আর জাপানিজ চকোলেট । দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে আরও একটি আমেরিকান মায়ার সমবয়সী মেয়ে এলো । সে গরম কফি হাতে নিয়ে এসে মায়াকে দিয়ে নিজের পরিচয় দিল। খুব আন্তরিক এবং চঞ্চল । মায়ার ও মনে মনে ভাল লাগলো । ওর নাম জিমি । ওর চোখ দুটো আমেরিকানদের মতো ঘোলা নয় আবার দক্ষিন এশিয়ানদের মতো গভীর কালো চোখ নয় । দেখতে সুন্দর কিন্তু চোখের দিকে তাকালে রহস্য তৈরি হয় । মনে প্রশ্ন জাগে । নানা কৌতূহল ঝাপটে ধরে । তবে ওর একটা বিষয় মায়ার ভাল লাগেনি । প্রথম পরিচয়ে মায়াকে একটু বেশি কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞেস করলো ,
তুমি কোন সুগন্ধি ব্যবহার করো ?
মায়া বলল ,আমি আসলে জানি না ?
কেন তুমি নাম জানো না ?
মায়া বললা ,আমার স্বামী কেমিক্যাল বিজ্ঞানী এই সুগন্ধিটা বাংলাদেশের নিজের ল্যাব থেকে তৈরি করে এনেছে ।
সে একটু কেমন অদ্ভুত দৃষ্টি নিয়ে মায়ার কাছ থেকে ঘ্রাণ নিলো । আর কেমন যেন অদ্ভুত আচরণ করতে লাগলো । তারপর একটা উচ্চ হাসি দিলো ।
মায়াকে বলল , তোমার অনেক মজা । তোমার সাঁজ গোঁজের কিছু কিনতে হবে না ।
মায়া বলল ,একদম ঠিক । জাপান এসে এই জিনিসটাই আমার মজা লেগেছে । কারন আমি সাঁজতে ভালোবাসি ।
জিমি আমাকে বলল ,বেশি সেজো না ।আর এই মায়াময় অদ্ভুত সুগন্ধি ব্যবহার করোনা । তোমাকে ভূতে ধরতে পারে । নীরব জায়গায় ভূত থাকে । আর বিজ্ঞানীরাও কিন্তু ভুতের মতো ! রহস্য আর আবিষ্কার নিয়ে ওদের জীবন ।আমি জানি কারন আমার স্বামী ও কেমিক্যাল নিয়ে কাজ করছে ।কথাটা বলেই কেমন যেন করে হাসল । মায়া ঠিক বুঝতে পারলো না ।
মায়া ভাবল ও মজা করেছে । দুই একটা বিষয় ছাড়া জিমি কে মায়ার কিছুটা ভালো লাগলো । একটা মজার সম্পর্ক ও তৈরি হল । ও আমেরিকান গল্প বলে মায়া বলে বাংলাদেশের ।
বাসায় এসে মায়া ওর স্বামীকে কে বলল ,জানো এই সুগন্ধিটার সুঘ্রাণ এক আমেরিকান মেয়ের ও খুব ভালো লেগেছে ?ও দেখতে চেয়েছে ?
মায়ার স্বামী স্বল্প ভাষী ,ভদ্র আর বিচক্ষণ । সে কোন উত্তর দিল না । কিছুটা সময় যাওয়ার পর বলল, তুমি এই সুগন্ধি স্কুলে যাওয়ার সময় ব্যবহার করোনা আর জিমি কে এড়িয়ে যেয়ো ।
কথা গুলো বলেই সে ল্যাব এ চলে গেল । মায়া কিছুই বুঝল না । এই সামান্য একটা সুগন্ধি আর ওই আমেরিকান মেয়ের সাথে কি সম্পর্ক । মায়া যেন আরেক রহস্য খুঁজতে লাগলো । ঠিক সেদিন থেকেই সে অনুভব করলো তার চারপাশের অনেক কিছু কেমন যেন অন্য রকম । একটু যেন কোথাও আলাদা । হোক্কাইডোর ভয়ংকর নিরবতা আর স্বামীর ব্যস্ততা মায়ার বুকের ভিতর দুর্বিষহ হাহাকার তৈরি করলো । মানুষের সঙ্গ ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না । তারপরের প্রতি ক্লাসে জিমি যেন মায়ার জন্যই অপেক্ষা করে । কয়েক মাস জিমির সাথে অনেক জায়গা ঘুরে দেখা হল । তারপর এক দিন ক্লাস শেষে জিমি বলল ,মায়া চল এই মারুয়ামা পাহাড় টা
দেখি ।উপরে যাবে ?
মায়া বলল ,উপরে যেতে কতক্ষণ লাগবে ? বাসায় ফিরতে হবে ।
জিমি বলল ,বাসায় একা কি করবে ? পাহাড়টা অনেক সুন্দর । আসো যাই ।
অনেকটা পথ দুজনে গল্প করতে করতে উপরে উঠে গেল । মায়া ক্লান্ত হয়ে গেল । জিমি আন্তরিক ভাবে মায়ার ব্যাগ টা নিজের কাছে নিল । যেন মায়া সহজে হাঁটতে পারে । তেমন কোন বাড়ি ঘর নেই । সুনসান নিরবতা । তবে কোথাও থেকে একটা অচেনা সুর ভেসে আসছে । কেউ কোন বাদ্য যন্ত্র বাজাচ্ছে । আরও কয়েক ধাপ যাওয়ার পর বুঝা গেল কাছেই কোন এক বাড়িতে লোকজন আছে । কাছে যেতেই একজন খুব বয়স্ক মহিলা বের হয়ে এলো । তার মুখে এতো গুলো চামড়ার ভাজ দেখলেই বুঝা যায় বয়স নিজেই ক্লান্ত। একশ বছর ছুয়ে গেছে হয়তো অনেক আগে । বাড়ির ভিতর উঁকি দিয়ে দেখা গেলো । আরও দুই তিন বৃদ্ধা জাপানিজ ঐতিহ্যবাহী সামিসেন বাজাচ্ছে ।তাদের সামনে অসুস্থ কেউ একজন চেয়ারে আধ শোয়া অবস্থায় আছে । সেই অসুস্থ লোকটা তাকাতেই মায়া আঁতকে উঠলো । আগুনে ঝলসে যাওয়ার পর যেমন বীভৎস হয়ে উঠে মানুষ । তার চেহারায় ভয়ংকর চোখ দুটো ছাড়া আর কিছুই বুঝা গেল না । লোকটার চাহনিতে মায়া প্রচণ্ড ভয় পেল ।মনে হচ্ছে এখনি অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাবে । মাথার ভিতরটায় ওই আওয়াজে কেমন যেন করতে লাগলো । অদ্ভুত মায়াচ্ছন্ন ! রহস্য ! আর আতংক ! হঠাৎ মায়া দেখে জিমি ওর সাথে নেই । জিমির কাছে ওর ব্যাগ । একটা ভয়ংকর শিহরণ মায়ার উপর দিয়ে গেল । জিমি হয়তো সুগন্ধি টা চুরি করার জন্য ব্যাগ টা কৌশলে নিয়ে গেছে । মায়া কিছুই বুঝল না ।হঠাৎ পিছনের ঘর টা তে তাকাতেই মায়া আঁতকে উঠলো । জিমি আরও কয়েকজন বুড়ির সাথে মৃত মানুষের মাথার ভিতর থেকে দুই আঙ্গুলে কাঠি ঢুকিয়ে দিয়ে মগজ খাচ্ছে। মায়ার পেট পাকিয়ে বমি আসতে লাগলো । নিজের উপর নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলল । নিজের ব্যাগ নিয়ে খুব দ্রুত মায়া বেড়িয়ে এলো । অনেক টা পথ চলে আসার পর হঠাৎ জিমি মায়াকে পিছন থেকে ডাকল । মায়া থামল না । সেদিন থেকে মায়ার ভীষণ জ্বর । বাসায় ফিরেই ঘুম । হঠাৎ চোখ খুলে দেখে জিমি ছুড়ি নিয়ে ওর বুকের উপর ঝুকে আছে ।
আমাকে ওই সুগন্ধিটা দাও । আমি চারশো বছর পর ফিরে এসেছি । ওইটা আমার । আমার বাগানের অচেনা ফুল দিয়ে তৈরি হয়েছে ওই সুগন্ধি । কোথায় আছে বল?জিমি কয়েকটা কোপ বসিয়ে দেয় । কিন্তু মায়া সরে
যায় ।ওদের মধ্যে মারামারি শুরু হয় । মায়া কিচেন থেকে একটা সবজি কাটার ছুরি দিয়ে কয়েক ঘা বসিয়ে দেয় জিমির বুকে । মায়া এক চিৎকারে লাফ দিয়ে উঠে ।নিজের হাতে ছুরি । আরেক হাত কেটে রক্ত বের হচ্ছে । কিন্তু বুঝতে পারে স্বপ্ন । কিচেনে গিয়ে দেখে লকারে রাখা সব গুলো ছুরি সুন্দর করে উপরে সাজানো আছে । বাসার সব আসবাব পত্র গুলো একটু অন্য রকম । মায়ার ভিতর ভীষণ ভয় আর দ্বন্দ্ব কাজ করতে লাগলো । হঠাৎ কলিং বেল বাজল । স্বামী কে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগল। কিছুই বলল না । দুই দিন পর । মায়া তার স্বামীকে জিজ্ঞেস করল , জিমি কে তুমি সুগন্ধি সম্পর্কে বলতে না করেছ কেন ?
মায়ার স্বামী একটু সময় নিয়ে বলল , রহস্য আর আবিস্কার সমান্তরাল ভাবে চলে ।একটি নতুন আবিস্কারের পিছনে অনেক গল্প আর গোপনীয়তা থাকে ।কারন অনুন্নত দেশের কেউ নতুন কিছু আবিস্কার করলে উন্নত দেশের বিজ্ঞানিরা তথ্য চুরি করে স্বীকৃতিটা নিজেদের নামে নিয়ে নেয় । শুধু তাই নয় আরও অনেক অসৎ উদ্দেশ্য থাকে । একটা সুগন্ধি দিয়ে মানুষকে অজ্ঞান করা যায় , মতি ভ্রম করা যায় , মেরে ও ফেলা যায় । কেমিক্যালের অনেক শক্তি । বিজ্ঞান মানব কল্যাণের জন্য। তাই আবিস্কারের তথ্য গোপনীয়তা রক্ষা সম্পদের রক্ষার মতো । সব সময় আগলে রাখতে হয় ।বিজ্ঞানের রহস্য যাপিত রহস্য থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী যা কখনও কখনও মানুষের চেনা বিশ্বাস কে ও দ্বন্দ্ব মুখর করে তুলে ।
তারপরের ঘটনা আরও ভয়াবহ । মায়া মোবাইল ,ইমেল, আর ফেসবুক ঢুকে দেখে জিমি নামের কেউ নেই । এই কয় মাস যে ইমেল,মোবাইলের এবং ফেসবুকের কথা হয়েছে তার কোন চিহ্ন পাওয়া গেল না । পরের সপ্তাহে ক্লাসে গিয়ে দেখে জিমি নেই । মিসেস ইয়ামাদাকে জিজ্ঞেস করাতে বলল , কে জিমি ?এই নামে যে কেউ ছিল সে শুনে অবাক হল ।মায়া আরও ভয় পেয়ে গেল । কিন্তু নিজেকে বুঝাল রহস্যময় পৃথিবীর সব রহস্য নিয়ে ভাবতে নেই । কিছু রহস্য কেবল রহস্য হয়েই থাক ।


মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.