নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার গল্পটা হোক পৃথিবীর সেরা গল্প ।কারন আমি হতে চাই একজন সত্যিকারের জীবন শিল্পী ।

নুরুন নাহার লিলিয়ান

নুরুন নাহার লিলিয়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

রহস্য গল্প :ড.ভূইয়া

১৯ শে আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৫:৫৮




জাপানের হোক্কাইডো বিশ্ববিদ্যালয়ে উড এনড কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টের পিএইচডির নতুন ছাত্র বাংলাদেশের এম. এন ভূইয়া।গত দুই বছর একই ডিপার্টমেন্টে মাস্টার্স ও করেছে। মাস্টার্সে রেজাল্ট ভাল হওয়ায় মুনোগাকুবসু বৃত্তিটা আরো তিন বছরের জন্য বাড়ানো হলো।দিন রাত পরিশ্রম করছে এম. এন ভূইয়া। তবুও কাংক্ষিত ফলাফলের ক্যামিক্যালটা খুজেঁ পাচেছ না। পিএইচডি তে ও ছয় মাস চলে গেছে। যে বিষয়টা নিয়ে এম.এন ভূইয়া কাজ করছে সেটা তার আগে আরো তিনজন কাজ করেছে।কিন্তু তারা অর্ধেক কাজ করে রেজাল্ট না পেয়ে ব্যর্থ হয়ে চলে গেছে। বাংলাদেশের এম.এন ভূইয়া কে ব্যর্থ হলে চলবে না। জাপান সরকারের দামি বৃত্তি। নিরাপদ পরিবেশ এবং জীবনব্যবস্থা । গবেষনার জন্য এমন সূযোগ আর কোথায় পাবে। বাংলাদেশে সরকারী বৈজ্ঞানিক পদের চাকরির পদোন্নয়নে ভাল রেজাল্ট নিয়েই দেশে ফিরতে হবে। নিজের ভিতরে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা তাকে পিএইচডি ডিগ্রী নিয়ে ড.ভূইয়া হতেই হবে।দিন রাত ভূতের মতো ল্যাবে কাজ করে। বাইরের সমাজ কিংবা পৃথিবীর কোন কিছুতে তার আগ্রহ নেই। কিছু দিন যাবৎ তার মন ভাল নেই। খুব কাছের কেউ তার বিশ্বাসের জগৎ ধোয়াটে করেছে। দুই সপ্তাহ ধরে মধ্য রাত অবধি ল্যাবে মেশিনের সামনে বসে থাকে। টনে টনে পানি তাকে বাষ্পীয়ভাবে উড়াতে হয়।সেই পানির মধ্যেই আছে হয়তো তার আকাংক্ষিত ক্যামিক্যাল। পানি বাষ্প করতে গিয়ে মাঝে মাঝে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তখন ফেসবুকটাই আপন হয়ে ধরা দেয়। কিংবা জাপানি সংস্কৃতি অনুষ্ঠান উপভোগ করে। প্রতি মঙ্গলবার বিশ্ব বিদ্যালয়ের করিডোরে বিদেশী ছাত্রছাত্রীদের জন্য ইকেবানা দেখানোর আয়োজন হয়। প্রফেসরদের স্ত্রীরা সেচ্ছাসেবী হিসেবে বিনামূল্যে ফুল সাজানো শেখায়। জাপানে ফুল সাজানোর শিল্পকেই ইকেবানা বলে। ছাত্রছাত্রীদের শেখানোর পর কিছু ফুল দিয়ে বিশ্ব বিদ্যালয়ের বিভিন্ন জায়গা সাজিয়ে রাখা হয়। নিজের রুমের কাছেই সুন্দর একটা ইকেবানা। ভেঙেগ যাওয়া ধুসর মনটাকে সবুজ আর লালে রঙিন করে দিল। কাঁচা ফুল গুলো থেকে অদ্ভুত ঘ্রান। সেদিন মধ্যরাতে নিজের অফিস রুম থেকে ল্যাবের দিকে যাচিছল। হঠাৎ মনে হল সাদা এপ্রোন পড়া কোন জাপানি মেয়ে মাথা নিচু করে ভূইয়ার পিছনে পিছনে হাটছে। কয়েক মিনিট নিজের মনে ল্যাবের দিকেই হাটছিল। কিছুদূর যাওয়ার পর মনে হল কেউ নেই। আশে পাশে ঢোকার মতো কোন রুম নেই। সাদা এপ্রোন পড়া মেয়েটি তাহলে কোথায় গেল।বিজ্ঞানী বলে কথা। বিজ্ঞান চিন্তা মাথায় নিয়ে তো ভূতের কথা ভাবা যায় না। সেদিনের পর থেকে ল্যাবের সুনসান নিরবতার মাঝে ও কোন এক সুঘ্রাণ বহন করা অস্তিত্বের টের পায়। পানি বাষ্প করার মেশিনটা হঠাৎ করে কেপে উঠে। সামনে নানা রকম ক্যামিক্যাল রাখার কাঁচের ছোট ছোট ক্লনিকেল ফ্লাস্ক গুলো হালকা কাপতেঁ থাকে। এম. এন ভূইয়া মনেকরে মৃদু ভূমিকম্পে জাপান দেশটা বুঝি কাঁপছে। গভীর রাতের ঘুমে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। ঠিক সে সময় দুই ফুট উচ্চতার প্রায় অষ্টাদশী কোন মেয়ে যেন তার সামনের ডেস্কে বসে পা দুলাচ্ছে। তার দুই হাতে ছোট ছোট দুটো ক্লনিকেল ফ্লাস্ক। একটিতে গাড়ো সবুজ রংয়ের ক্যামিক্যাল আর অন্যটিতে মেরুন রংয়ের। তারপর কাছে এসে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে নাকি সুরে বলে,”ভূইয়া ও ভূইয়া ঘুমিয়ে গেছো! কি ক্লান্ত! রিসার্চ নিয়ে চিন্তা হচ্ছে! সব ঠিক হয়ে যাবে। যেকোন কষ্টের ফলাফল আছে। এই নাও ফ্লাস্ক দুটো রাখোতো। ”
এমন করে প্রায় প্রতি গভীর রাতে ল্যাবে সেই প্রিয়দর্শিনীর সাথে কথা হয়। সারাদিনের চেনা জীবন থেকে এম.এন ভূইয়া অন্যকোন জগতে চলে যায়। আলো আধারির সেই প্রিয়দর্শিনীর সাথে জীবনের অনুক্ত দু:খ সুখ গুলো এম.এন ভূইয়া কোন দ্বন্দ্ব ছাড়াই প্রকাশ করতে পারে। চেনা প্রিয় মানুষরাও মাঝে মাঝে ঈর্ষা কাতর হয়ে মনের অজান্তে ব্যথা দেয়। কিন্তু অদৃশ্য অস্তিত্বরা তা করে না । কারন মানব মনের মতো কোন স্বার্থপর মন তাদের থাকে না। এই চেনা পৃথিবীর থেকে অচেনা এক জগৎ নিয়ে এম.এন ভূইয়ার অদ্ভুত জীবনটা ভালই কাটছিল। একদিন ভোর রাতে ল্যাবেই ঘুমিয়ে পড়েছিল।তখন রাত সাড়ে তিনটায় ঘুম ভেঙেগ যায়।তিন ঘনটা সময় পার্থক্য হওয়ায় বাংলাদেশে তখন রাত সাড়ে বারোটা। কি মনেকরে ফেসবুকে হোম পেজে ঢুকতেই দেখে সেই অদৃশ্য প্রিয়দর্শিনীর মতো কোন মানবী। ঘুম ঘোরে কিছুই বিশ্বাস হচেছে না। অনেকটা সময় ধরে তাকিয়ে থাকার পরও যেন নিজের চোখকে বিশ্বাস হয়না। তারপর থেকে এম.এন ভূইয়া সেই প্রিয়দর্শিনীর দেখা পায়না।জীবনে আসা সেই মানবীর মাঝেই যেন সেই অষ্টাদশী প্রিয়দর্শিনীর অদ্ভুত অবয়বের ছায়া। জীবনের অদ্ভুত খেলায় সব যেন নিজের নিয়মের মধ্যেই চলছে। তারপর একদিন অজস্র পানির বাষ্প কনা থেকে সেই ক্যামিক্যালটি পাওয়া গেল। দুর্ভেদ্য অসম্ভব সফলতা সহজ পথে হাটতে লাগলো। রহস্যময় বিজ্ঞানের ইতিহাসে নিজের নামটিও যুক্ত হলো। তবুও কোথাও যেন জীবনের রহস্যভেদ হলো না। সাথে আসা সেই অজানা পারফিউমের সুঘ্রাণটা মস্তিষ্কের কোথাও একান্ত গভীরে জায়গা করে নিল। একদিন ফেসবুকের টাইম লাইনে ভাসা সেই মানবী ও জাপান সাগর অতিক্রম করে সহস্র মেঘ ছুয়েঁ ছুয়েঁ এম.এন ভূইয়ার জীবনে সত্যি হয়ে এলো। জীবনের সব মেঘজাল কেটে গিয়ে সাফল্যের সূর্যের হাসি দেখা দিল। তবুও প্রাত্যহিক জীবনের নানা জটিলতা আর সুখ দু:খের মাঝে সেই নিরবে আসা অদৃশ্য প্রিয়দর্শিনীর আধারি অবয়ব ভেসে উঠে। কখনও পাশে থাকা মানবীর মাঝে আবার কখনও ক্লান্ত বিকেলের একান্ত নিঃসঙগ ভাবনায়।

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০৯

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: তবুও প্রাত্যহিক জীবনের নানা জটিলতা আর সুখ দু:খের মাঝে সেই নিরবে আসা অদৃশ্য প্রিয়দর্শিনীর আধারি অবয়ব ভেসে উঠে। কখনও পাশে থাকা মানবীর মাঝে আবার কখনও ক্লান্ত বিকেলের একান্ত নিঃসঙগ ভাবনায়।
সুন্দর ! সুন্দর !!
পুরো লিখাটাই ভাল লাগলো ।
(বেয়াদ্দপি না নিলে একখান কথা বলি - প্যারা করে লিখলে পড়তে আরাম হয়।)

১৯ শে আগস্ট, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২০

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: ভাই ধন্যবাদ। আমার প্রযুক্তিগত জ্ঞান খুব কম। আপনার পরামর্শ আমি চেষ্টা করবো। কোন কোন জায়গায় প্যারা করলে ভালো হতো জানাবেন।

২| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১৮

eBooks Head বলেছেন: ভাল লাগল ধন্যবাদ

১৯ শে আগস্ট, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২৩

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: আমার লেখা পড়ার জন্য ধন্যবাদ। আপনাদের উৎসাহ আমাকে লেখায় মনোযোগী হতে সহায়তা করে।

৩| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫০

প্রামানিক বলেছেন: ভালো লাগল। ধন্যবাদ

৪| ২০ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ২:৫২

টাইম টিউনার বলেছেন: ভালো লাগলো , এইটা হতেই পারে, হ্যালুসিনেশন। তবে টাইম লাইন সেই মানবীর সাথে পরিচয়, টা রহস্যজনক না হলেও কাকতালীয় বলার কোন উপায় নেই। সুন্দর লিখেছেন। ছোট গল্পের পাশা পাশি , রহস্য উপন্যাস আশা করতেই পারি আপনার কাছ থেকে।

২০ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ৯:৫২

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: ২০০৬ সালে আগামী প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত আমার প্রথম বই "ইন্দিরা রোড" প্রকাশ হয়। সেটা কিছুটা জীবনধর্মী এবং রহস্য নিয়ে ছিলো। আপনার কথায় উৎসাহ পেলাম। রহস্য অল্পতেই থাক। রহস্য নিয়ে বেশি দূর ভাবতে গেলে যদি নিজেই হারিয়ে যাই!! আমি ভীতু!!!!ধন্যবাদ

৫| ২০ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১০:২৫

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: গল্প ভালো হয়েছে। ধন্যবাদ নুরুন নাহার লিলিয়ান।

২০ শে আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৭

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: আপনার মন্তব্য আমাকে উৎসাহ দিল। ধন্যবাদ

৬| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ভোর ৬:২২

Foe বলেছেন: রহস্যময় সুন্দরের অপরূপ মিলন

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৭:৪৭

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.