নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার গল্পটা হোক পৃথিবীর সেরা গল্প ।কারন আমি হতে চাই একজন সত্যিকারের জীবন শিল্পী ।

নুরুন নাহার লিলিয়ান

নুরুন নাহার লিলিয়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

রহস্য গল্প: “সানি সাইড হাউজ”

২০ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১১:৪১




১৮ নাম্বার সাব ওয়ে স্টেশন পার হলেই মারুয়ামা পাহাড়ের দিকে মাটির নিচ দিয়ে সোজা একটা টানেল গিয়েছে। টানেলটা পার হলেই একটা টি রুম। সব সময় খোলা থাকে। আর খুব সুন্দর জাপানি ক্লাসিকেল মিউজিকের সুর ভেসে আসে। টি রুম টার কাছেই দুটো জাপানি ট্রাডিশনাল বাড়ি। লাল রংয়ের যে দুতলা বাড়িটি। সেটির নাম “সানিসাইড হাউজ”।এই বাড়িটির এমন সুন্দর নাম শুনেই নিশুতির খুব ভাল লেগে গেল।এইতো তিন মাস হয় হোক্কাইডো বিশ্ব বিদ্যালয়ে মাস্টার্স করতে এসেছে। হোক্কাইডো দ্বীপের সুপরিকল্পিত সাপ্পোরো শহরের সব কিছুতে তার মন ছুয়েঁ গেল। বাড়ির মালিকের নাম সাইতো। তার চার মেয়ে। দুই মেয়ে বিয়ে করেছে আর দুই মেয়ে চাকরি করছে। “সানিসাইড হাউজ”টি মেইন রোডের সাথে। আর সকালের সূর্যের আলোটা যেন তার হাউজেই প্রথম ধরা দেয়। তাছাড়া বাড়িটি সাধারন জাপানি বাড়ির মতো হলেও প্রযুক্তিগত দিক থেকে অসাধারন। বাড়ির মালিক রিটায়ার্ড ইঞ্জিনিয়ার। তাই প্রযুক্তি নিয়ে তার একটু বেশী জ্ঞান।তার বাড়ির দুতলায় উঠতেই একটা সেন্সর লাইট লাগানো আছে। উপরে কেউ উঠতে গেলে প্রথম সিড়িতে পাড়া দিতেই দেখা যাবে সেন্সর লাইট জলে উঠে। তাই সিকিউরিটি ভাল দেখে মনে মনে স্বস্তি খুঁজে পেল। এখানে বাংলা ভাষাভাষীর লোক সংখ্যা কম। বাঙালি কমিউনিটি যারা আছে তারা দূরে থাকে। তাছাড়া এইতো গত মাসে কমিউনিটির একটা প্রোগ্রাম হলো। নিশুতির সাথে কয়েকজন বাঙালি ভাবির সাথে পরিচয় হলো। সবাইকে ভাল লাগলেও দু একজনের দৃষ্টি আর অতি কৌতুহলী আচরন যেন নিজের মন কে বিষিয়ে দিচিছল। মনে হচিছল এমন ভয়াবহ পরিচয়টা না হলেই ভাল হতো। বিষাক্ত সঙ্গীর থেকে নিসঙগতা অনেক নিরাপদ। কেন একা একা বিদেশে পড়তে আসছে? বিয়ে কেন করেনি? তার কোন এ্যাফেয়ার আছে কিনা? এই জাতীয় প্রশ্ন গুলো করে তার জীবনের কোন সমাধান খুজেঁ দিবে না। বরং তাকে অপ্রস্তুত করে বিকৃত মজা নেওয়াই আনন্দ। যাইহোক নিজেকে প্রশ্নের থেকে দূরে রাখতেই সে নিজস্ব কমিউনিটি এড়িয়ে থাকে। বাঙালি কমিউনিটির চোখের সামনে যাওয়া মানে নিজেকে আলোচনার কোন ইস্যুতে পরিনত করা। তার চেয়ে সারা দিন ল্যাব করার পর সানিসাইড হাউজের করিডোরে দাড়িয়ে নিঃসঙগতায় ডুবে থাকাও আনন্দের । নিশুতির রুম থেকে চারটা রুম পরে একটা রুম। সে রুমটায় তালা লক করা ছিল ।প্রথমে মাসের শেষের দিকের ঘটনা। ঠিক এমন মার্চের বরফাচ্ছন্ন শহরের নিসঙগতা দেখতে দেখতে নিজের রুমের সামনের করিডোরে চা খাচিছলো। একটি অত্যন্ত সুন্দরি জাপানি মেয়ে সে রুম থেকে হাসি মুখে বের হয়ে এলো। নিশুতি তাকে নিজের রুমে নিয়ে আসে। সে টুকটাক বাংলা পারে। নিশুতিও অনেকটা জাপানিজ শিখে গিয়েছে। ভালই দিন কেটে যাচিছল। হঠাৎ একদিন স্বপ্ন দেখে ঐ মেয়েটির রুমে আগুন লেগেছে। কিন্তু সে নিজের রুম খুলে যেতে পারছে না। রাতে বেলা মারাত্মক ভয় পেয়েছিল। মেয়েটিকে রাতের স্বপ্নের গল্প টা বলার জন্য অপেক্ষা করছিল। পরের দিন থেকে সে মেয়েটিকে সে দেখতে পায় না। তার রুমের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে আরো দুই মাস কেটে যায়। কোন এক ছুটির দিন দেখে বাড়িওয়ালা একজন কে দেখানোর জন্য রুমটা খুলছে। নিশুতি এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করল,সে মেয়েটি কোথায়? যে নিয়মিতভাবে তার সাথে চা খেতো। বাড়িওয়ালা অবাক হয়ে বলল, তোমার তো তাকে দেখার কথা নয়। আয়কা নামের সে মেয়েটি তুমি আসার আগেই আগুনে পুড়ে এ রুমে আত্মহনন করে ছিল।সে আর স্বপ্নেরর কথাটা বলতে পারলো না। বুকের ভিতরটা কেমন দুক করে উঠলো। আয়কার স্মৃতি গুলো যেন জীবন্ত হয়ে ছায়ার মতো হাটতে লাগলো। এক টা তীব্র অশান্তি মনকে ছিন্নভিন্ন করে দিল। মনেহয় সেন্সর লাইট টা বুঝি জলে উঠলো। কেউ বুঝি কলিংবেল বাজালো। জীবন যেন বাস্তবতা আর কল্পনা কে এক করে চলতে লাগলো। তারপর একদিন এই “সানিসাইড হাউজ ” ত্যাগ করে বিশ্ব বিদ্যালয়ের ডরমিটরি তে উঠলো। পেছনে সানিসাইড হাউজের দিকে তাকালো না। আর মনে মনে ভাবলো যে কোন বাড়িতে প্রথম সূর্যের আলোর সরাসরি অনুপ্রবেশ কল্পনাকে ঠিক উজ্জীবিত করে। কিন্তু কিছু অন্ধকার ও লুকিয়ে থাকে যা সূর্যের আলোতেও ধরা পড়ে না।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১২:০১

প্রথমকথা বলেছেন: যে মেয়েটি পুড়ে গেছে তার জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে, তার না বলা স্বপ্ন স্বপ্নতে রয়ে গেলো।

২| ২০ শে আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৪

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: কিছু পোড়া গল্প।।।। কিছু পোড়া কষ্ট এমনই নিভৃতে রয়। ধন্যবাদ

৩| ২০ শে আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৯

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: ১৮ নাম্বার সাব ওয়ে সেটশন পার হলেই মাটির নিচ দিয়ে মারুয়ামা পাহাড়ের দিকে একটা সোজা টানেল গিয়েছে।
লাইন টা আমি আমার মত সাজালাম । :D
তবে গল্প ভাল হইছে ।

২০ শে আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১২:৪১

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: হা হা হা ভাই ধন্যবাদ। টাইপ আর চিন্তা এক সাথে এক্কতু কঠিন।

৪| ২০ শে আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১:২৭

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: প্রতি শুক্রবার রাতে ভূত এফএম শুনি । ভূতুড়ে গল্প ভালোই লাগে! আপনার গল্পটাও ভালো লেগেছে!

৫| ২০ শে আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ২:০৯

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: সাধু আমারও ভূত ভালো লাগে। অদ্ভুত একটা ভালোবাসা ও কাজ করে।

৬| ২১ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১:০৯

টাইম টিউনার বলেছেন: ভালো লাগলো, আরেক টু বড় গল্প চাই ।+++

২১ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১:৪১

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: উৎসাহ পেলাম।।।। মনে থাকবে। ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.