![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সময়টা তখন মার্চের শেষ সপ্তাহ। জাপান সাগর তার উচ্ছল তরঙ্গ ধীরে ধীরে ভাঁজ করে নিচেছ আকাশ থেকে নেমে আসা সাদা বরফ কন্যার জন্যে। তুলোর মতো নরম তুষাড়ে ছেয়ে গেছে হোক্কাইডো দ্বীপ। সারাক্ষন তুষারশুভ্রতায় সিক্ত হয়ে থাকে মানুষের মন। সকাল থেকে রাত সিটি সাপ্পোরো থেকে চলে শহর পরিষ্কারের কাজ। প্রায় দুই সপ্তাহ হলো লিরিক সাপ্পেরো শহরে এসেছে। প্রথম কয়েকটা দিন জীবন যুদ্ধের জটিলতা আর মনের গভীরের একাকিত্ত টা ভীষন ভাবে ঝেঁকে বসেছিল। কিন্তু হোক্কাইডো দ্বীপের সৌন্দর্যময় প্রকৃতির বিশালতা লিরিকের চোখকে প্রসারিত করে। এই নিরাপদ শহরে লিরিক যেন স্বর্গ খুজেঁ পেল। বরফ ঢাকা পথে হাঁটে আর ভাবে যদি যদি এই পথে কেউ হঠাৎ এসে হাতটা ধরে। কি করবে তখন। আবার মনে মনে লজ্জায় লাল হয়ে উঠে। এমন করে কখনও বাস সেটশন কখনও পার্কে বসে জীবনের সৌন্দর্য খুজেঁ। এমন কোন এক তুষাড়পাতের সময় বাস সেটশন একাকি নিভৃতে বসে মানুষ দেখছিল। খুব অদ্ভুতভাবে সাদা তুষাড়ের ছোয়াঁ যেন লিরিক কে অন্যরকম করে দেয়। মেইন রোডে দুই একটা গাড়ি ছাড়া সারা শহরে মানুষের সংখ্যা একেবারেই কম। কিছুটা সময় খুব থমথমে কাটে। মনে হল পেছনে কোন সাইকেলে করে কেউ এলো। লিরিক ঘাড় ঘুরালো না। বেশ কিছু সময় যাওয়ার পর মনে হল কোন গানের সুর পেছন থেকে ভেসে আসছে। এবার সে ঘাড় ঘুরালো আচমকা বুকের ভিতরটা কেপে উঠলো। দুজন জাপানি টিনেজার ছেলে মেয়ে খুব কাছাকাছি বসে আছে। আবার কিছুক্ষণ পর দেখে মেয়েটি জাপানি গান গাইছে। আর ছেলেটি বরফ দিয়ে স্নো ম্যান বানাচ্ছে। তাদের পরস্পরের সম্বোধন থেকে বুঝা গেল ছেলেটির নাম আওই মানে নীল রং আর মেয়েটির নাম শিরোই মানে সাদা রং। তাদের দুজনের রংয়ের নামে নাম। তাদের খেলা দেখে লিরিকের ভীষন ভাল লাগলো। ছেলেটির তৈরী করা স্নো ম্যানের সামনে মেয়েটি ছবি তুলতে চাইলো। কিন্তু স্নো ম্যানের সামনে দুজন ছবি তুলবে। তাই লিরিক কে বাংলায় অনুরোধ করলো। সে হতভম্ব হয়ে গেল। তারপর শিরোই নামের মেয়েটি বলল,”তুষাড়পাতের এই সময়টায় আকাশের নীল আর সাদা তুষাড়ের ভাব বিনিময় হয়। পৃথিবীর সকল প্রেমিক প্রেমিকাদের জন্য শুভক্ষন। আমরা সারাদিন তুষাড়পাতের সাথে খেলবো। বিকাল তিনটায় তুষাড়পাত কমে যাবে। তখন আমরা আত্মহত্যা করবো। ”
লিরিক ভয়ে পেয়ে গেল। আচমকা ভৌতিক আতংকে গায়ের রক্ত হীম হয়ে এলো। বাইরের পুরো চেনা শহর যেন অচেনা অন্ধকারে ঢাকা। তবুও আতংকিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো, “তোমরা আত্মহত্যা করবে কেন? ”
আওই নামের ছেলেটি বলল,” আমরা দুজন দেরশ বছর আগে এইখানে আত্মহত্যা করেছিলাম।বছরের নির্দিষ্ট সময়ে পৃথিবীতে আসি। আবার আত্মহনন করে ফিরে যাই। ”
লিরিক বলল, এমনি ফিরে যাও আত্মহত্যা করতে হবে কেন?
শিরোই বলল,আমরা যে ভাবে পৃথিবীর মায়া ছেড়ে ছিলাম ঠিক সেভাবেই ফিরতে হবে স্বর্গে। ”
লিরিকের হাত পা কাপছিল।ধর ধর ভঙ্গিতেই জানতে চাইলো, “আত্মহত্যা কেন করেছিল”
শিরোই বলল, ” আমাদের পরিবার দুই জায়গায় বসতি গড়তে যাচিছল। আমরা আমাদের মধ্যের দূরত্ব মেনে নিতে পারছিলাম না। আমাদের ভালবাসাটা মৃত্যুর মধ্য দিয়ে টিকে থাকুক।কোন বাস্তবতায় যেন না হারায়।”
এরপর কথা বলতে বলতে দুজন দুজনের পেটে ছুড়ি ঢুকিয়ে দিল। মানব দেহের রক্তক্ষরনে সাদা বরফে ঢাকা রাস্তা ভেসে রক্তাক্ত হয়ে উঠলো। তারা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লো। লিরিক কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেল। তাদের জীবন আছে কিনা বুঝতে যেতেই তারা একসাথে রক্তাক্ত শরীরে দাড়িয়ে গেল। কেমন অদ্ভুতভাবে দুজনে হাত ধরে গান গাইতে গাইতে আর সাইকেল চালাতে চালাতে সামনের ঘন তুষাড়পাতের হাওয়ায় হারিয়ে গেল। কয়েক মুহুর্তে
যেন কতো কিছুই ঘটে গেল। লিরিক দেখলো তার মোবাইলে যে ছবি তুলেছিল তা নেই। সে বুঝতে পারলো তার শরীর অবশ হতে শুরু করেছে। সে মূর্ছা গেল।
২২ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১২:০৩
নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: আত্মহনন প্রবনতা হয়তো এদের প্রকৃতিগত। এই সময়ে ও এমন একটি উন্নত দেশের মানুষ সংবেদনশীল। আপনাকে ধন্যবাদ।
২| ২২ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ৮:০১
অরুনি মায়া অনু বলেছেন: ভাল লাগল। চোখের সামনে যেন সব দেখতে পেলাম। সাদা বরফে ভেসে যাওয়া লাল রক্ত।
২২ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ৮:৪০
নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: অরুনি মায়া অনু।।।। আপনাকে ধন্যবাদ।
৩| ২২ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১০:৫৭
আহমেদ জী এস বলেছেন: নুরুন নাহার লিলিয়ান,
ভালো লাগলো ।
দুরত্ব যখন বেড়ে যায় তখন তা আত্মহননের চেয়েও বিদারক ।
২২ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১১:২২
নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: কিছু দূরত্ব সত্যি ভয়ংকর। ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
২১ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১১:৫২
জুন বলেছেন: কি ভয়ানক
জাপানীদের মধ্যে আত্নহত্যার প্রবনতাটি খুব বেশি। ভালোলাগলো অল্প স্বল্প গল্প।
+