নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার গল্পটা হোক পৃথিবীর সেরা গল্প ।কারন আমি হতে চাই একজন সত্যিকারের জীবন শিল্পী ।

নুরুন নাহার লিলিয়ান

নুরুন নাহার লিলিয়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প : "ইতি" [প্রয়াত প্রিয় বান্ধবী ফাতেমা তুজ জোহরা ইতি স্মরনে ]

২২ শে আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৫:০৪



ইতি কে হয়তো অনেকেই ভুলে গেছে। পাচঁ তলার সিড়ির পাশের একটা রুম। হয়তো ৫০৮ অথবা ৫০৯। বিল্ডিং এর যে অংশটা গোরস্থানের পাশে।আমি তখন নতুন। দেশের নানা জায়গা আসা মেয়েদের সাথে পরিচিত হতে খুব ভাল লাগতো। প্রতিদিন একটা মেয়ের সাথে পরিচিত হওয়া মানে নতুন একটা ফ্রেন্ড। আমার রুম মেট বাংলায় পড়তো। আমাদের তিন তলার "সি"ব্লকে আরো কয়েকটা মেয়ে বাংলায় পড়তো সীমা শারমিন,সাজেদা আরো ওদের কারো মাধ্যমেই ইতির সাথে পরিচয় আমার।
আমি ছিলাম অর্থনীতির মেয়ে। কিন্তু যতো কঠিন পরীক্ষা আর ব্যস্ততা থাকুক। আমার ভ্রু প্লাগ আর ফেসিয়াল করতেই হবে। ইতি পারতো ভ্রু প্লাগ করতে।শুধু ভ্রু প্লাগ নয় বিউটি পার্লারের সব কাজই সে পারতো। হলের অনেক মেয়েই ইতির কাছে ভ্রু প্লাগ করতো। আমি ও যেতাম ইতির কাছে ভ্রু প্লাগ করতে। ও আমাকে খুব যত্ন করে ভ্রু প্লাগ করে দিতো। ভ্রু প্লাগ করতে করতে কতোইনা গল্প হতো। এইতো বয় ফ্রেন্ড ভিক্টর কে নিয়ে হতো বেশী গল্প। ভিক্টর কি রঙের শাড়ি ভালবাসে, কোথায় ঘুরতে নিয়ে যেতে ভালবাসে। আরো একান্ত কতো কিছু। ভ্রু প্লাগ করার পর ও অনেক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থাকতো। তারপর বলতো, তোমার ভ্রু প্লাগ করে শান্তি পাওয়া যায়। কি সুন্দর কালো গভীর জোড়া ভ্রু তোমার! তুমি কবে বিয়ে করবে? আমি তোমাকে নিজ হাতে বউ সাজাবো। বিশ্বাস করো ফ্রেন্ড হিসেবেই সাজাবো। কোন পয়সা নিবো না। তোমাকে সাজিয়ে আরাম আছে। আমি ওর ছেলে মানুষী কথায় হেসে কুটপাট। আমি বলতাম, এতো কষ্ট করে ঢাকা বিশ্ব বিদদ্যালয় এ চান্স পেয়েছি। পাশ করি। চাকরি পাই। বর যোগার হোক। তারপর...।
এভাবে কতো কথা, কতো গল্প আর কতো হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি । আমরা হলের সামনে বিকেল হলেই সব অর্থনীতির মেয়েরা চা খেতে নামতাম। মাঝে মাঝে দেখতাম খুব সুন্দর সবুজ রঙের শাড়ি পড়ে ইতি রিকশা করে হলে ফিরছে। সাথে ওর বয় ফ্রেন্ড । ভিক্টর আগে রিকশা থেকে নামে পরে হাত ধরে ইতিকে রিকশা থেকে নামায়। এক জোড়া কপোত কপোতীর কি সুন্দর অদ্ভুত ভালবাসার দৃশ্য। তারপর দিন যায়। বছর যায়। জীবনের নিয়মে আমরা ঢাবির বিএফএম হল ত্যাগ করি। কোন একদিন পত্রিকায় এলো যৌতুকের কারনে ঢাবির ছাত্রী নির্যাতন। গলায় ফাসি দিয়ে মৃত্যু। ঘাতক স্বামী ভিক্টর । সব পত্রিকার খবর। কেস হয়েছে শশুর বাড়ির সবার বিরুদ্ধে। ইতির বাবার পেনসনের টাকার প্রতি শশুর বাড়ির লোকজনের লোভ ছিল। ভিক্টর নাকি আবার ব্যাংক অফিসার ছিল।সব খবর টিভি পত্রিকা আর মোবাইলে বান্ধবীদের কাছ থেকে জানলাম । তারপর অনেক বছর পর একদিন আমার ও বিয়ে হয়। তবে বউ সাজায় অন্য কেউ। কখনও আয়নায় ভ্রু দুটোর দিকে তাকালে আমার অযথাই কান্না পায়। দুফোটা নিভৃত অশ্রুজল নেমে আসে গাল বেয়ে। সব সত্য গুলো সামনে দিয়ে ঘটে গেল। সবচেয়ে বড় সত্য ইতি আর কোনদিন আমাকে বউ সাজাবে না। কাউকেই সাজাবে না।পৃথিবীর সব কিছুর হিসেবের ইতি টেনে চলে গেছে না ফেরার দেশে।ইতি এখন সবার ধূসর স্মৃতিতে একটা পূরনো গল্প।ধীরে ধীরে এই পুরনো গল্পটা আরো ও পুরোনো হয়ে যাবে। হয়তো এটাই পৃথিবী।আমার খুব ভিক্টরের বর্তমান জীবন জানতে ইচ্ছে করে। ইতির গাল দুটোকে ধরে বলতে ইচ্ছে করে এতো পড়াশুনা করেও কেনো নিজেকে বাচাতেঁ শিখলে না।কোন উত্তর আসে না। নিশ্চুপ ইতির হাতের স্পর্শ টা দিনে দিনে হালকা হয়ে আসতে থাকে।সেই সাথে ইতির গল্প টা ও।

মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ৯:৪৪

এডওয়ার্ড মায়া বলেছেন: যারা যাবার কথা তারা যায় না।ইতিরা চলে যায় ।
দুঃখজনক ।

২২ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১১:২০

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: দু:খজনক এমন করে কারও চলে যাওয়া কাম্য নয়। ধন্যবাদ

২| ২২ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১০:৪১

সামিয়া বলেছেন: আহারে:(

২২ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১০:৪৭

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: আহারে।।। আমাদের এই নিয়তি।

৩| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১:৫৫

প্রামানিক বলেছেন: ইতির ঘটনাটি দুঃখজনক।

২৩ শে আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৩:৪৭

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: প্রতিদিনই কোন না কোন ইতি এভাবেই শেষ হয়ে যাচেছ। তবুও সমাজটা পরিবর্তন হচেছ না।

৪| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ৮:৪৪

মনিরা সুলতানা বলেছেন: এটা কি সত্যি ঘটনা?
বি এফ এম মানে ফয়জুন্নেসা হল নাকি?

২৯ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১১:২৫

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: সত্যি ঘটনা। কয়েক বছর আগের ঘটনা। বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হল। নিউ মাকের্টের কাছে। আজিম পুর গোরস্থান আর তিন নাম্বার বিডিআর গেটের বাম দিকে।
ধন্যবাদ

৫| ৩০ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১২:৩৪

মনিরা সুলতানা বলেছেন: আমি বিশ্ব বিদ্যালয় ছেড়ে আসবার পর এই হল তৈরী, কখন যাওয়া হয় নাই।

৩০ শে আগস্ট, ২০১৬ ভোর ৬:৫৭

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: আমাদের সময়ে নতুন হল। খুব সুন্দর একটা হল। আপনি কোন হলে এটাচ ছিলেন? এই হলটা নতুন হওয়ায় অনেকেই চিনেনা।

৬| ৩০ শে আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৫

মনিরা সুলতানা বলেছেন: হুম সেটাই :)
আমি ছিলাম বেগম রোকেয়া হল এ ।
শুভ কামনা :)

৭| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩৫

আল আমিন ২০১৬ বলেছেন: ভালো লিখেছেন।

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:৩১

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: এই সত্যি গল্পটা পড়ার জন্য ধন্যবাদ। দেশটা যৌতুক মুক্ত হোক। শশুড় বাড়ি নিরাপদ হোক।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.