নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার গল্পটা হোক পৃথিবীর সেরা গল্প ।কারন আমি হতে চাই একজন সত্যিকারের জীবন শিল্পী ।

নুরুন নাহার লিলিয়ান

নুরুন নাহার লিলিয়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

পুরনো প্রথম বইয়ের লুকানো স্মৃতি !

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৪৩


ছবিঃ সুনায়না ইসলাম ।

যে বইটি দেখলেই আমার শুধু কান্না আসে । বুকের ভেতর থেকে অদ্ভুত কিছু একটা হতে থাকে।শক্ত হয়ে এক জায়গায় বসে পড়ি ।বুকের ভেতরের প্রবাহিত নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের নিস্তব্ধতা শুনতে পাই । তারপর জটিল সমঝোতার ভিড়ে শুধু বেঁচে থাকা বা জীবন নামের কিছু নিয়ে বেড়িয়ে আসি । নিজেকে একটু একটু করে বুঝাই । এক মহাযুদ্ধ নিয়েই আমাদের জীবন । প্রতি মুহূর্তের লড়াইয়ে হেরে যেতে নেই । আমার অকাল প্রয়াত বান্ধবি নিপু কে ভীষণ মনে পড়ে । কাগজে লেখা প্রায় ছয়শ পৃষ্ঠার পান্ডুলিপির কথা মনে পড়ে । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলের ৩২৭ নাম্বার রুমটার কথা মনে পড়ে । অর্থনীতি বিভাগের দশ বারোটা কাছের সহ পাঠীদের মনেপড়ে । যে গল্প বা কাহিনি গুলো আমি নিজেই ভুলে গিয়েছি । বার বছর আগের প্রকাশ আমার প্রথম উপন্যাস । বার বছর! অনেক গুলো বছর , মাস আর দিন । অনেক কিছু মস্তিস্কে নেই । অনেক কিছুই ভুলে গিয়েছিলাম । প্রথম বই প্রথম আবেগ । বাংলাদেশের শক্তিশালী প্রকাশনা আগামী প্রকাশনী প্রকাশ করেছিল । প্রচ্ছদ করেছিল প্রথম সারির প্রচ্ছদশিল্পী ধ্রুব এষ । বইটির প্রুফ রিডার ছিলেন ফরিদপুরের একজন প্রফেশনাল ভদ্রলোক ।সেই দীর্ঘ পান্ডূলিপি অনেক সম্পাদনা করে ছোট করা হয়। কারন নতুন লেখকের প্রথম বই ছয়শ পৃষ্ঠা হলে কেউ কি কিনবে ।তাছাড়া অনেক ব্যয় বহুল ও । যাইহোক আমার পান্ডুলিপি নিয়ে যার দেওয়া রিপোর্টের ভিত্তিতে আমার বইটি প্রকাশ হয়েছিল । আর বইটি প্রকাশ হয়েছিল বলে আমি লেখক হওয়ার স্বপ্ন দেখেছি । সেই কাগজের পান্ডুলিপি গুলো খুব মিস করি ।সেই রাত জেগে থাকা । কাছের বান্ধবিদের মিস করি । এই পাণ্ডুলিপিটি লেখার সময় রাত আড়াইটা তিনটায় আমার পাশের রুমের বান্ধবী নিপু চা বানিয়ে সামনে জানালার পর্দা নাড়া চাড়া করতো । দরজায় নক করলে যদি অন্য রুম মেটরা জেগে যায় । ৩২৪ নাম্বারে থাকতো লীনা ,৩২১ নাম্বারে কানিজ , ৩২৩ নাম্বারে নিশাত । সকাল হলেই ক্যান্টিনে নাস্তার টেবিলে জিজ্ঞেস করত কোন চরিত্র কে কি করলাম । লীনার রুম মেট সীমা বাংলার মেয়ে । লেখালেখি জগতের অনেক কে চেনে । কারন তার প্রেমিক বর লেখক এবং কবি জাহিদ হাসান তখন হুমায়ুন আজাদ স্যারের খুব প্রিয় ছাত্র । হুমায়ুন আজাদ স্যারের বই প্রকাশ হয় আগামী প্রকাশনী থেকে । জাহিদের ও বই প্রকাশ হয় । সীমার আন্তরিক উৎসাহে আমার সাহস হল প্রকাশকের সাথে দেখা করা । আহা! জীবন ! আমার চেয়ে আমার বান্ধবীদের উৎসাহ ছিল সবচেয়ে বেশী । পান্ডুলিপি এক পৃষ্ঠা শেষ না হতেই ওরা পড়ে ফেলে । এটা কে এই কর । ওই চরিত্র সেই কর । দোস্ত ওই মেয়ে চরিত্র টাকে আরও হাসির কর । দোস্ত ওই চরিত্র কে আরও খারাপ বানিয়ে দেয় । দোস্ত অই চরিত্র কে মহৎ কর । দোস্ত ভাল চরিত্রের মধ্যে আমার নাম দিয়ে দেয় । সত্যি সত্যি লীনা নামের এক মহৎ চরিত্রের নাম আমার বান্ধবির কথা রাখতে সুরভী কেটে লীনা দিয়ে দিলাম । আমার বান্ধবি জেবিন তাহমিনা হক লীনার আবদার ছিল । কতো বাচ্চা ছিলাম ! কতো পাকু ছিলাম ! কতো স্বপ্নময়ী ছিলাম ! আমার আরেক বান্ধবী কানিজ ফাতেমা । বর্তমানে চাঁদপুরের এসিল্যান্ড আপা । তিনি বরাবর পরিমিতিতে বিশ্বাসী । তিনি বলতো দোস্ত এই চরিত্র টা কে বেশী ডুবাস না । ওই চরিত্রের ওই দিকটা আরও পরিমার্জন দরকার । এমন করে তামান্না , সুমনা , শাকিলা , হলের আর ও অনেকেই আমার পান্ডুলিপি পড়ে ফেলতো । বেগম ফজিলাতুন্নেসার বান্ধবিরা পড়া শেষে কুয়েত মৈত্রী হলের বান্ধবি সুমনা কে পাঠাত । ভীষণ লক্ষ্মী মেয়ে আর লাজুক মেয়ে সুমনা । ও বলত লজ্জা পেয়ে দোস্ত তুমি ওই চরিত্র টাকে যা করেছ । থাক আর ওরে কিছু করিস না । চরিত্র গুলো নিয়ে আমরা বাস্তবেই মজা করতাম ।এখন পান্ডুলিপি লিখি সেই বান্ধবিদের মত পান্ডুলিপি নিয়ে মজা করার কেউ নেই । তাই সুখ পেতে ফেসবুকে একটা সাহিত্য গ্রুপ ওপেন করেছি । প্রাইমারি ফেসবুকে পান্ডুলিপিতে অনেকেই অনেক ধরনের মজা করে । দুঃখ পায় । সুখ পায় । তবে সেই বান্ধবিদের মত কাঁচা পান্ডূলিপির মজাটা কেউ দিতে পারে না । আর তা কখনও সম্ভব না ।প্রযুক্তি আমাদের জীবন কে সহজ করেছে । তবে কিছু আবেগ অনুভূতি সাথে চুরি করে নিয়ে গেছে ।
আজকে আমরা সবাই বাস্তব জীবনে ব্যস্ত পাখির মতো হয়ত রঙ্গিন আকাশে উড়ছি । কখন ও ঝড় তুফানে আহত হচ্ছি । আবার ঠিক জীবনের নিয়মেই ফিরছি । হয়ত সবাই সুখি জীবনের পান্ডুলিপিই লিখছি । সবাই সবাইকে এতো ভালবাসতাম ! বাড়ি গেলে চিঠি দিতাম , কার ও উপর অভিমান হলে মুখে না বলে চিঠি লিখতাম , জন্মদিন বা বিশেষ দিনে ও চিঠি লিখতাম । কখনও চিঠি চেয়ে ও নিতাম । বান্ধবি গুলোকে খুব মিস করি । যখন জিনিস গুলো নাড়াচাড়া করি । নাড়াচাড়া করলেই পুরনো সুখ কিংবা দুঃখ স্মৃতি গুলো নড়ে চড়ে উঠে । আমার জীবনে থাকা সেই মেয়ে গুলোর ভালোবাসা অমলিন । আজ হয়ত একটি নয় দুটি নয় অনেক গুলো পান্ডুলিপি লিখেছি । অনেক গুলো বইয়ের লেখক হয়েছি । কিন্তু জীবনের প্রথম প্রহরে থাকা বান্ধবিদের মতো এতো নিস্পাপ বন্ধুত্ব পাইনি ।যাদের দেওয়া স্মৃতি গুলো ও সম্পদ । যাদের সব সময় এই মন ভালবাসবে । সব গুলো স্মৃতিতে জড়িয়ে থাকবে ।
মানুষের সব জীবনেই কিছু ভালোবাসার মানুষ থাকে । সব পথেই কিছু সুন্দর গল্প থাকে । ভেবেছিলাম ২০০৬ থেকে ২০১৮ সাল মানে ১২ বছরে হয়ত বইটি আর মার্কেটে নেই । প্রায়ই অনেকে আমাকে আগের বই গুলো পড়ার আগ্রহ জানাত ।আমার নিজের সংগ্রহেই ছিলনা । কিন্তু গত পরশু এক জুনিয়র অনলাইন শপ রকমারিতে অর্ডার করে বইয়ের অস্তিত্ব খুঁজে পেল । সুনায়না নামের এক জুনিয়র বই পাগল মিষ্টি পাঠক বই সংগ্রহ করে খুব সুন্দর করে ফটোগ্রাফি করে ইনবক্স করল । সত্যি অসাধারন সারপ্রাইজ ! হঠাৎ যেন সুখ দুঃখের অতীতটা ফিরে পেলাম ।অদ্ভুত চক্রাকারে জীবন চলে আড়ালে ভাগ্য হাসে । জীবনটা রিয়েলি ফুল অফ সারপ্রাইজ !

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫১

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: জীবনটা রিয়েলি ফুল অফ সারপ্রাইজ ! সুন্দর বলেছেন।
এবার মেলায় আপনার কোন বই আসছে ?

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫৯

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: জি ভাই একক দুটি দুই রকম গল্প গ্রন্থ আসছে। শিখা প্রকাশনী থেকে ভালোবাসার গল্প গ্রন্থ " অহর্নিশ "
আর এক রঙ্গা এক ঘুড়ি প্রকাশনী থেকে " জাপানি ভূতের গল্প " ।আর আগের বই গুলো ও আছে সাথে । অনেক ধন্যবাদ ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.