নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার গল্পটা হোক পৃথিবীর সেরা গল্প ।কারন আমি হতে চাই একজন সত্যিকারের জীবন শিল্পী ।

নুরুন নাহার লিলিয়ান

নুরুন নাহার লিলিয়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

উপন্যাস" মারিজুয়ানা" পর্ব ২১ - নুরুন নাহার লিলিয়ান ।

২৮ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ১:৪২




#উপন্যাস' মারিজুয়ানা " পর্ব ২১
#নুরুন নাহার লিলিয়ান
শফিক ব্যবসার কাজে সাভার যাচ্ছিল ।ড্রাইভার সিদ্দিক গাড়ি চালাচ্ছিল । রাস্তায় অনেক ট্র্যাফিক জ্যাম ।হঠাৎ করে মোবাইলে খবর এল শফিকের মায়ের অবস্থা ভাল না । প্রচণ্ড রকম ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন । ময়মনসিংহ একটা লোকাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে । শফিক তার ভাইকে জানাল আর্জেন্ট ঢাকায় নিয়ে আসার জন্য ।তারপর ড্রাইভার সিদ্দিক কে গাড়ি ঘুরাতে বলল ।
শফিকের বাবা কয়েক বছর আগেই মারা গিয়েছেন ।শফিক বাসায় ফিরে এল । প্রচণ্ড রকম অস্থিরতায় দিনটা কেটে গেল । মারিজুয়ানা বেশি বেশি করে রান্না করে রাখল । কারন শফিকের মায়ের সাথে বেশ কিছু আত্মীয় ঢাকায় আসছে । রাত নয়টার দিকে এ্যাম্বুলেন্সে করে শফিকের মা কে ঢাকায় আনা হল ।অবস্থা খুব খারাপ । তাই ধানমন্ডির ল্যাব এইড হাসপাতালে ভর্তি করা হল । আইসিউতে রাখা হয়েছে । আট চল্লিশ ঘন্টা না গেলে শফিকের মায়ের অবস্থার কোন পরিবর্তন বুঝা যাবে না ।
এদিকে এতো সিরিয়াস অবস্থার মধ্যে ও নাতালি তার স্বার্থপর আচরনের বহিঃপ্রকাশ করতে অব্যাহত রাখল । শফিকের মায়ের সাথে তাঁর ছোট ভাই শহীদ এবং তাঁর স্ত্রী , শফিকের খালা , চাচী সহ অনেকেই এসেছে । ময়মনসিংহ থেকে আসা সবার সাথেই নাতালি কেমন যেন বিরক্তি প্রকাশ করছে । সে তার নিজের প্রয়োজনটা কড়ায় গন্ডায় শফিকের কাছ থেকে বুঝে নিচ্ছে ।
নিজের আপন দাদি হাসপাতালে । অথচ সামান্য সহানুভূতি কারও প্রতি তার নেই । সে নিজের রুমেই সারাক্ষন তার জাপানি বয়ফ্রেন্ড ওয়াকিতার সাথে মোবাইলে কথা বলতে থাকে । বাকি সময় বাংলাদেশি নতুন বন্ধুদের সাথে মেতে থাকে । খাবারের সময় হলে সে নিজের খাবার খেয়ে আবার নিজের রুমে চলে যায় । এদিকে পুরো পরিবারে কি ঘটছে কোন কিছুই যেন নাতালিকে স্পর্শ করে না ।ভীষণ রকম শীতল স্বার্থপর । একটু এদিক সেদিক হলেই শফিকের সাথে খারাপ ব্যবহার করছে । শফিক তাঁর অন্যায় আহ্লাদের কোন প্রতিবাদই করতে পারছে না । কারন নাতালি তাঁর মা কে উল্টা পাল্টা বুঝাবে ।
জাপানি একটি বেসরকারি কোম্পানিতে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করছে ওয়াকিতা। সে একজন ব্যাংকারের একমাত্র ছেলে । মা একজন ডাক্তার । জাপান সমাজে বেশ সম্ভ্রান্ত । ওয়াকিতার এটি দ্বিতীয় প্রেম হলেও নাতালির এই নিয়ে পাঁচ বার প্রেমের সম্পর্কে জড়াতে হয়েছে ।আগের চারটি সম্পর্ক তার নিজের কারনেই অতীত হয়েছে । কারন নাতালির বেশিদিন কাউকে ভাল লাগে না । শফিক অনেক বুঝিয়েছে । এই ভাবে প্রেম কে তুচ্ছ করোনা । সম্পর্কের অমর্যাদা করোনা ।জীবন থেকে মূল্যবান সময় গুলো নষ্ট করোনা । জীবনটা সংক্ষিপ্ত সময়ের আয়োজন ।
শফিক যতোই নাতালিকে বুঝাক কিন্তু জীবন সম্পর্কে তাঁর বোধ ভীষণ রকম হেঁয়ালিতে পূর্ণ ।
তাঁর প্রেমের সম্পর্ক গুলো যেসব কারনে ভেঙ্গেছে তা শুনলে যে কেউ অবাক হবে । মানুষের মন আসলেই কতো দিকে বাক নেয় । প্রথম বয় ফ্রেন্ডটা বেশি ঘুমাতো তাই সে তিন মাসের মাথায় ছেলেটিকে বিদায় জানায় । তারপর দ্বিতীয় সম্পর্কের ছেলেটি শুধু মোবাইলে গেমস খেলতো । ডেটিংয়ে গেলে নাতালির কথায় মনোযোগ কম দিত । তারপরের তৃতীয় বয় ফ্রেন্ড জব নিয়ে অনেক বেশি ব্যস্ত ছিল । নাতালি যখন সময় চাইত তখন সেই বয় ফ্রেন্ড সময় দিতে পারতো না ।
আর চার নাম্বার বয় ফ্রেন্ড চিপস চকোলেট বেশি খেতো। ডেটিং টাইমে চিপস চকোলেট কেনা আর খাওয়া নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যেতো । এই বিষয় গুলো নাতালি মেনে নিতে পারত না । তাই স্বেচ্ছায় সমঝোতায় সম্পর্কের অবসান । আর ওয়াকিতার সাথে বাংলাদেশে আসার দুই মাস আগে একটা মেট্রো ষ্টেশনে পরিচয় এবং তারপর প্রেম হয় । শফিক স্পষ্ট দেখতে পায় তাঁর মেয়ের এই সম্পর্কটা ও শেষ হবে অজানা কারনে । মাঝে মাঝে শফিক অবাক হয়ে যায় তার মেয়ে কেমনে এতো গুলো সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার পর স্বাভাবিক আছে ।
নাতালির মা ও অনেকটা এমনই ছিল । নিজ প্রেমে মুগ্ধ । আর বহু সম্পর্কে আসক্ত । ভীষণ এক পাগলাটে নারী । শফিকের সাথে সম্পর্কে থাকাকালীন সময়ে প্রচুর মদ পান করত আর শফিক কে গালিগালাজ করত ।ঘরে বাইরে সব জায়গায় শফিক কে দিয়ে কাজ করাতো । আর ব্যতিক্রম হলেই শফিকের সাথে খারাপ আচরন করত । কখন ও অসময়ে ঘর থেকে ও বের করে দিত ।বাংলাদেশের মানুষ আর দেশকে গরীব বলে গালি দিত ।
নাহ! এসব বিষাক্ত অতীত কে সে মনে করতে চায় না ।
কিন্তু শফিকের প্রথম স্ত্রী ছিল একদম ভিন্ন এক নারী ।শফিকের জাপান জীবনে কাছে আসা প্রথম কেউ । এক সাথে পড়াশুনা আর কাজ করত । তিন বছর লিভটুগেদার করার পর তাদের ছেলে হিরাও আসে ।শফিক হিরাও কে নিয়েই বিয়ে করে তার প্রথম স্ত্রীকে ।কোন এক অদ্ভুত কারনে কেন জানি শফিকের সাথে হিরাও এর মায়ের ডিভোর্স হয়ে যায় । আজ ও হিরাও এর মায়ের সাথে সাধারন বন্ধুত্ব আছে । হিরা ও এর মা অন্য কোন পুরুষকে বেছে নেয়নি । একাকী কাটিয়ে দিচ্ছে সামাজিক নানা কাজে নিজেকে ব্যস্ত রেখে ।
এরই মধ্যে হাসপাতালে শফিকের মা কে নিয়ে নানা ঝামেলায় একটা সপ্তাহ কেটে গেল। আজকে বিকেলে শফিকের মাকে বাসায় আনা হয়েছে । তাই একে একে অনেক আত্মীয় স্বজন বাসায় আসছে। কিছু কিছু গ্রামের আত্মীয় নাতালিকে দেখে অনেক বেশি কৌতূহলী হয়ে উঠছে ।
শফিকের মমতাজ খালা এই প্রথম নাতালিকে দেখল। সে নাতালির পা থেকে মাথা পর্যন্ত শফিকের অবয়বের সাথে মেলানোর চেষ্টা করছে । আর বার বার মারিজুয়ানাকে জিজ্ঞেস করছে সে এই মেয়ের জাপানি কথা বুঝে নাকি । আবার নাতালির মুখের সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করতে থাকে মারজান কি তার সাথে ভাল ব্যবহার করে নাকি । সৎ মা ঠিক মতো খাবার দেয় নাকি ।
নাতালি পুরোটা ময়মনসিংহের ভাষা না বুঝলে ও মমতাজ খালার কথা বলার স্টাইলে সে ভীষণ বিরক্ত । তাছাড়া নাতালি টুকটাক ভাল বাংলা বলতে এবং বুঝতে পারে । রুম থেকে বের হলেই মমতাজ খালার নানা রকম কৌতূহলী প্রশ্নের অত্যাচার । এদিকে নাতালি গ্রাম থেকে আসা আত্মীয়দের আচরনের নানা রকম অভিযোগ দিয়ে মাথা গরম করে দিয়েছে । তাই আজকে নাতালির রুমের দরজায় কাগজে লিখে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে ," ডোন্ট ডিস্টার্ব হার " ।
গ্রামের খালা চাচিরা তো আর ইংরেজি বুঝে না । নাতালি রুমে গেলেই সবাই কৌতূহলী হয়ে দরজা ধাক্কাতে থাকে ।গ্রামের আত্মীয়দের নাতালিকে নিয়ে অনেক কৌতূহল আর জিজ্ঞাসা । নাতালি কি খায় ? ভাত খায় নাকি কাঁচা মাছ খায় । কি ড্রেস পড়ে ?জাপানি কিমনো নাকি সালোয়ার কামিজ , কেমন করে ঘুমায়? পা তুলে ঘুমায় নাকি কুঁজো হয়ে বালিশ মুখে নিয়ে ঘুমায় । কি করে খাবার খায়? সে কি করে খায় ?হাত দিয়ে নাকি চপস্টিক দিয়ে খায়।নাতালি তাদের আচরনে ভীষণ বিরক্ত । গ্রামের আত্মীয় স্বজনদের অনেক বার বুঝানোর পর ও তাঁরা নাতালিকে বিরক্ত করতে থাকে ।
এক সময় শফিক ধৈর্য হারা হয়ে আত্মীয়দের সাথে খারাপ ব্যবহার করে । এমন তিক্ত অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে আরও তিন দিন চলে গেল । শফিকের মায়ের অবস্থা কিছুটা ভাল হয়েছে ।কিন্তু সংসারে জটিলতা এবং কলহ বেড়েছে।মানুষ গুলোর ভেতরের বিষাক্ত শ্বাস প্রশ্বাসে পুরো বাসাটার বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে ।একজন মানুষের অসুস্থতাকে ঘিরে বাসার সব কয়টা মানুষ ও কেমন অসুস্থ হয়ে গেছে ।
চলবে ……...।


আগের পর্ব
http://www.somewhereinblog.net/blog/nurunnaharlilian/30245778

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ২:০৪

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: Click This Link

২| ২৮ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ২:৩১

ইব্‌রাহীম আই কে বলেছেন: যদিও আগের কোন পর্বই পড়া হয়নি। তবে এই পর্বটা পড়লাম। ভাল লাগলো। লেখাটা সম্পূর্ণ শেষ হলে এক সাথেই সবগুলো পড়ে নিব।

২৮ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ২:৪২

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: আগের সব পর্ব ব্লগে আছে । অনেক ধন্যবাদ ।

৩| ২৮ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ৩:৫০

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



আপনার লেখাগুলো ভাল; প্রাণবন্ত ও সাবলীল। অন্য ব্লগারদের ব্লগে হয়তো কম যান, অথবা তাদের ব্লগ কম পড়েন এজন্য আপনার লেখার পাঠক কম; কমেন্টও কম হয়। হয়তো ব্যস্ততার কারণে এমনটি হয়; শুভ কামনা রইলো।

২৮ শে জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১:১১

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: জি ভাইয়া আপনা্র কথা সত্য । চিন্তা করার ও সময় পাই না ।

৪| ২৮ শে জুলাই, ২০১৮ সকাল ১০:১৬

রাজীব নুর বলেছেন: আশা করি মারিজুয়ানা সামনের বইমেলাতে বের হবে।
তখন শুয়ে বসে আরাম করে আরেকবার পড়বো।

২৮ শে জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১:১২

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: শিখা প্রকাশনী থেকে প্রকাশ হবে । অনেক ধন্যবাদ।

৫| ২৮ শে জুলাই, ২০১৮ সকাল ১১:৩১

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: আজকের পর্ব - সফিকের মায়ের চিকিৎসা ও নাতালির অসহিষ্ঞু আচরণ । গ্রাম থেকে শহরে আসা আটপৌরে গ্রাম্য মানুষ গুলির ম্যানার না জানা, তার মধ্যে সফিকের একটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতি, সবমিলিয়ে বেশ লাগলো।

শুভেচ্চা আপু আপনাকে।

২৮ শে জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১:১৫

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: আপনি একজন খুব ভাল পাঠক । অনেক ধন্যবাদ ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.