নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার গল্পটা হোক পৃথিবীর সেরা গল্প ।কারন আমি হতে চাই একজন সত্যিকারের জীবন শিল্পী ।

নুরুন নাহার লিলিয়ান

নুরুন নাহার লিলিয়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ কুহুকের কান্না - নুরুন নাহার লিলিয়ান

০৩ রা মে, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:০৮


আজকে কুহুকের মৃত্যু বার্ষিকী ।আমাকে যেতে হবে মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরে । সেখানেই নিজ বাড়িতে বাবা মায়ের পাশেই কুহুক ঘুমাচ্ছে । গত সাত বছর ধরেই ঘুমাচ্ছে ।প্রতিবছরই আমি গিয়েছি কুহুকের কবরে। আমি ছাড়া কুহুকের জন্য দোয়া করার কেউ নেই। জনমদুঃখি কুহুক যতোটুকু দুঃখ নিয়ে জন্মেছিল। তারচেয়ে অনেক বেশি দুঃখ নিয়ে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছে।
সেই দুঃখের চিহ্ন হিসেবে আমি রয়ে গেছি এই পৃথিবীতে । আমার আর কুহুকের ভালোবাসাটা আজ ও আমার অনুভুতিতে রয়ে গেছে । সমগ্র অস্তিত্বে এখন ও কুহুকের স্পর্শ পাই ।দুর্ভাগা জীবন আমার কাছ থেকে শুধু কুহুককেই কেড়ে নেয়নি । আমার বেঁচে থাকার সবটুকু শক্তি নিয়ে গেছে ।

শেষ বার আমি ওকে ঘুমন্ত অবস্থায়ই হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে রেখে এসেছিলাম। মনে পড়ে ওর রুমমেট পলিন আমাকে পনেরো মিনিট অপেক্ষা করতে বলল। আমি আর আমার জুনিয়র এডভোকেট সুমন তখন প্রায় পয়তাল্লিশ মিনিট বসে ছিলাম। কুহুকের ঘুম ভাঙেনি। কি অদ্ভুত ক্লান্তির ঘুমে তলিয়ে যাচ্ছিল মেয়েটা। আমি আর সুমন বিছানার পাশে বসে রইলাম। প্রায় এক ঘন্টার মতো। ভাবলাম ডেংগু আক্রান্ত রোগী বিরক্ত করা ঠিক হবে না। আমি অনেকক্ষণ ওর ঘুমন্ত মায়াভরা চেহারাটার দিকে পলকহীন চেয়ে রইলাম ।

ডেঙ্গু জ্বরের ধাক্কায় কয়েকদিনেই মেয়েটা একদম রোগাটে হয়ে গিয়েছিল । ওর চোখ না খুললেও চোখের কোণা বেয়ে গভীর নোনা জল গড়িয়ে পড়েছিল । মানুষ যখন গভীরভাবে কষ্ট পায় , তখন ঘুমের মধ্যে ও কেঁদে উঠে । কুহুক ও গভীর কষ্টে তলিয়ে যাচ্ছিল । আমি কুহুকের পাশে বসে দেখছিলাম একটা বিশাল জলোচ্ছ্বাস কুহুককে আমার কাছ থেকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে ।

কোন এক অচেনা ঝড়ের তান্ডবে খন্ড খন্ড বিচ্ছিন্ন ভাবে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের বেঁচে থাকার স্বপ্ন গুলো ।আমি নির্মম ভাগ্যের কাছে অসহায় ছিলাম ।আমার দু'ফোটা চোখের জল মিশে যাচ্ছিল কুহুকের চোখের জলে। আমাদের দুজনের কষ্ট নোনা জলের নদী হয়ে কোন এক অজানা মোহনায় মিশে যাচ্ছিল ।দুর্ভাগ্য ছাড়া আর কেউ আমাদের আপন হতে পারেনি ।

সেই সময় কুহুক আমাকে অনেক বার বিয়ে করতে চেয়েছিল । মারা যাওয়ার আগে শুধু একবার বউ ডাক শুনতে চেয়েছিল । আমি আমার ভালোবাসার সেই শেষ চাওয়াটা পূরণ করতে পারিনি । জীবনের নানা অক্ষমতা আর সীমাবদ্ধতায় আমি ছিলাম ভীষণ অসহায় । দারিদ্রতা যাদের জীবনে ছায়ার মতো থাকে তাঁরাই কেবল অনুভব করতে পারে সেই ছায়া মাড়িয়ে যাওয়া কতোটা কষ্টের ।
আমি ছিলাম আমার বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে ।

ছোট ছোট দুটো বোন । বাবা সরকারি চাকরিজীবী হলেও স্কুলে থাকতেই পরলোকগমন করেন ।ধনী আত্মীয় স্বজনদের সহায়তায় মা আমাকে আর ছোট দুই বোনকে কোনরকমে মানুষ করেছেন ।
সব সময় সবার অবহেলা আর অনাদর পেয়েই বড় হয়েছি । সুখাদর কি তা কেবল কুহুক জীবনে আসার পরই বুঝেছিলাম ।

আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে পাশ করে বের হয়ে জজ কোর্টের সনদের জন্য পরিক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম ।
একদিন রেজিস্টার বিল্ডিং থেকে বের হয়ে মলচত্তরে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলাম । পাশ দিয়েই হেটে যাওয়ার সময় একটি মেয়ের ছোট পার্স মাটিতে পড়ে গিয়েছিল । সেই পার্স তুলে ফেরত দিতে গিয়েই পরিচয় হয় কুহুকের সাথে । আমার মনে পড়ে প্রথম পরিচয়েই কেমন অন্য এক আকর্ষণে আমি কুহুকের দিকে পলকহীন তাকিয়ে ছিলাম ।
পাঁচ ফুট উচ্চতার চাপা ফর্সা গায়ের রঙ । শত দুঃখের বিষণ্ণতা যেন তাঁর মিষ্টি চেহারাটাকে ঢেকে রেখেছে।কিন্তু চোখ দুটো যেন মেঘের মায়া । আমাকে কেমন যেন স্পর্শ করে গেল । আর সেই থেকে দুই বছর আমার জীবনটা এক অদৃশ্য ভালোবাসার শক্তিতে দ্রুত চলে যাচ্ছিল ।
কুহুক আমাদের পাশের এলাকার মেয়ে । আমার মতোই ছোট বেলায় বাবা মারা গিয়েছে। অনার্স পাশ করার পর তাঁর মা ও মারা যায় । আজিমপুরে একটা ফ্ল্যাট বাসায় দুই বান্ধবি নিয়ে থাকে । মা বাবার রেখে যাওয়া কিছু গচ্ছিত টাকা আর টিউশনি কোনরকমে চলছিল জীবন।আমরা পাশাপাশি বসে যখন গল্প বলতাম কুহুক কখনও তাঁর জীবন যুদ্ধের গল্পটা আমার কাছে বলতো না ।
যখন কোন মানুষ এতিম হয় তখন সে কেবল বুঝে মাথার ছায়া চলে গেলে জীবন কেমন খরতাপে পুড়ে ।

মন্তব্য ২২ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (২২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা মে, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:১৮

হারাধণ০২ বলেছেন: জীবনের নানা সীমাবদ্ধতায় আমরা সকলেই ভিন্ন ভিন্ন ভাবে অক্ষম । মন ছোয়া লেখা ।

০৩ রা মে, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:২৭

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: জীবনের কাছে আমরা সবাই অসহায় । আপনাকে ধন্যবাদ।

২| ০৩ রা মে, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৩৭

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন আপু। মায়াবী কুহুকের অনুভূতি নিয়েই বেঁচে থাকুন জীবন ভর।

বহুদিন পরে আপনাকে ব্লগে দেখে আনন্দিত হলাম। আবার ব্লগটি শীঘ্রই সরগরম হবে আশা করি।


০৩ রা মে, ২০১৯ রাত ৮:১২

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: আশাকরি ব্লগটা সরগরম হবে । আজকে ফণী ঝড়ের আঘাত থেকে মহান আল্লাহ বাংলাদেশ কে রক্ষা করুন ।

৩| ০৩ রা মে, ২০১৯ রাত ৮:২০

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: অনেক দিন পর আপনাকে সামুতে দেখে ভাল লাগছে।

০৩ রা মে, ২০১৯ রাত ১১:৫০

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: জি আমার ও ভাল লাগছে সামুতে লিখতে পারছি । সবার লেখা পড়তে পারছি । ভাল থাকবেন ভাই ।

৪| ০৩ রা মে, ২০১৯ রাত ৮:২৭

আহমেদ জী এস বলেছেন: নুরুন নাহার লিলিয়ান,




জীবনের ঘাটে ঘাটে কতো যে জটিলতা! তবুও জীবন থেমে থাকেনা, বয়েই চলে...................

গল্পটা মনে হয় ঝট করে শেষ হয়ে গেলো।

০৩ রা মে, ২০১৯ রাত ১১:৫০

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই ।

৫| ০৩ রা মে, ২০১৯ রাত ৮:৩৪

আকতার আর হোসাইন বলেছেন: গল্পে ভাল লাগা রেখে গেলাম... বিষাদময় গল্প পড়ে মনটা যেন বিষাদে চেয়ে গেল। লিখতে থাকুন অবিরাম....

এক আকাশ শুভকামনা....

০৩ রা মে, ২০১৯ রাত ১১:৫১

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ।

৬| ০৩ রা মে, ২০১৯ রাত ৯:২২

মাহমুদুর রহমান বলেছেন: সরল ও সুন্দর গল্প।
কেমন আছেন,বোন?

০৩ রা মে, ২০১৯ রাত ১১:৫২

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ।

৭| ০৪ ঠা মে, ২০১৯ রাত ১:০০

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



অনেকদিন পর প্রাণবন্ত উপন্যাসিককে ব্লগে পেলাম। কুহুকের জন্য শুভ কামনা। মানুষের জীবন হোক আনন্দের। কুহুকদের হাজারো গল্প এ দেশের ঘরে ঘরে আছে। কুহুকরা সুখে থাক। +++

৮| ০৪ ঠা মে, ২০১৯ রাত ২:১৪

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: আপনার মন্তব্য পেয়ে আনন্দিত হলাম।

৯| ০৪ ঠা মে, ২০১৯ দুপুর ১২:৪৮

আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: মন আকাশে বৃষ্টি ঝরালো লেখাটা......
জীবনটা একটা সুখদুখমাখা গল্প মাত্র.........

বহুদিন পরে লেখা দিলেন। আরো লেখা চাই :)

০৪ ঠা মে, ২০১৯ দুপুর ১:৩৪

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ । উৎসাহ লেখকের জন্য অনেক বড় উপহার । ভাল থাকবেন ।

১০| ০৫ ই মে, ২০১৯ দুপুর ২:৩৬

তানজীর আহমেদ সিয়াম বলেছেন: কিছু কিছু বিষাদের গল্প পড়লে নিজের বিষাদ কে ক্ষুন্ন মনে হয় :)
অন্নেক দিন পড় আপনার লেখা পড়লাম, ভালো লাগ্লো :)

১২ ই মে, ২০১৯ রাত ১২:৪৬

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ ।

১১| ০৫ ই মে, ২০১৯ রাত ১১:১৫

মেঘ প্রিয় বালক বলেছেন: গল্পটা পড়ার আগে ভাবতেও পারিনি কুহুক এতটা কষ্ট দিবে।

১২ ই মে, ২০১৯ রাত ১২:৪৬

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: আমার গল্প পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

১২| ২০ শে জুলাই, ২০১৯ সকাল ৮:৪৮

খায়রুল আহসান বলেছেন: অল্প কথায়অখুব সুন্দর একটা গল্প বলে গেলেন। গল্পের দুটো লাইন কয়েকবার করে পড়তে হলো, মনে রেখাপাত করে গেলঃ
"মানুষ যখন গভীরভাবে কষ্ট পায়, তখন ঘুমের মধ্যেও কেঁদে ওঠে" - এটি একটি অসাধারণ পর্যবেক্ষণ। আর গল্পের শেষ লাইনটার গভীরতা কেবলমাত্র ভুক্তভোগীরাই বুঝবে।
চমৎকার এ গল্পটিতে পঞ্চম প্লাস (+) রেখে গেলাম।

১৩| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১২:৫৭

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: সালাম নিবেন প্রিয় ব্লগার। খুব সুন্দর মন্তব্য। ব্লগ মুক্তি পাওয়ার পর আপনার মন্তব্য পেলাম। খুব ভাল লাগল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.