নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার গল্পটা হোক পৃথিবীর সেরা গল্প ।কারন আমি হতে চাই একজন সত্যিকারের জীবন শিল্পী ।

নুরুন নাহার লিলিয়ান

নুরুন নাহার লিলিয়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

গোপনে সে আমায় ভালোবাসে- পর্ব ৫ - নুরুন নাহার লিলিয়ান

২৪ শে এপ্রিল, ২০২১ সকাল ১০:২৬


আগের পর্বের লিঙ্ক গোপনে সে আমায় ভালোবাসে পর্ব ৪ - নুরুন নাহার লিলিয়ান

সংসারে স্বামীর অবহেলা একজন স্ত্রীকে মৃত পঁচা লাশে পরিনত করে। সে লাশটা নিয়ে স্বামীর নিজের ও ভালো লাগে না সংসার করতে। অথচ একজন জীবন্ত মানুষকে তিলে তিলে সে মনের অজান্তে লাশে পরিনত করে। সে নিজেও জানতে পারে না স্ত্রী তাঁর নিজের জীবনের কতোটুকু অংশ জুড়ে। কিন্তু বেশিরভাগ সময়েই পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় পুরুষেরা নারীর মন ছুঁয়ে দেখতে চায় না, মন বুঝতে চায় না। কিন্তু পুরুষের মন ভাল রাখতে নারীকে সর্বদা মন ভাল রাখার অভিনয় করে যেতে হয়।
কোন সময়েই দাম্পত্যে ফাঁকি দিয়ে সুখি হওয়া যায় না। কোন রকম শান্তি পাওয়া যায় না। দাম্পত্যকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হয়। সঙ্গীর প্রতি আস্থা, ভালোবাসা ও মানবিক থাকা অত্যাবশ্যক।
স্বামী স্ত্রী সম্পর্কটা এতোটা গভীর আর একে অন্যের সাথে সম্পর্কযুক্ত যে একজন ভাল না থাকলে অন্যজন ও ভাল থাকতে পারে না। সংসারে শান্তি বজায় রাখতে হলে দু'জনকেই দু'জনের ভাল থাকায় মনোযোগি হওয়া উচিত।
একতরফা একজনের মানসিক বিনিয়োগ অন্যজনকে সমৃদ্ধ করে ঠিকই কিন্তু যে মানুষটা ভালোবাসা বিনিয়োগ করে সে অসীম শূণ্যতায় তলিয়ে যায়। দিকশূন্য অতলান্তে হারিয়ে যায়।
আসাদ বাসায় ফিরেই সরাসরি বেডরুমে গেল। হাতে কিসের যেন কাগজপত্র। আঁড়চোখে তাকিয়ে দেখি বড় কাঠের আলমারি খুলছে।কিছুটা একটা খুব সিরিয়াস মুডে রাখছে।
আমি, নুশমা আর নিশো কেউই তাঁর সাথে কথা বলছি না। সে এসি অন করে বেডে এলিয়ে দিল।
এমন করে অনেকটা সময় চলে গেল।
আমার বাচ্চাদের স্কুলের হোমওয়ার্ক ঠিক, পরের দিন স্কুলের যাবতীয় প্রয়োজন ঠিক করা। ওদেরকে রাতে খাইয়ে ঘুমাতে পাঠিয়ে আমি ডাইনিং টেবিলে বসে রইলাম।
কিন্তু আসাদের ঘুম ভাঙে না।আমি আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করি। তারপর উঠে এশার নামাজ পড়তে বেড রুমে যাই। আর আসাদ বিভোরে ঘুম।
নামাজ শেষে আমি জায়নামাজেই বসে থাকি। মোনাজাত শেষে দুই হাতে মুখ ঢেকে রাখি কিছুটা মানসিক শান্তি খুঁজতে।
আমার মন ছুটে যায় লৌহজংয়ের ঘোড়দৌড়।
নতুন সংসার জীবনে। লৌহজং এলজিইডিতে আসাদের পোস্টিং। আসাদ এর আগে ফরিদপুর ছিল। নতুন জায়গায় কাউকে তেমন না চিনলেও অবারিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর পদ্মা নদীর ঢেউ আমার সঙ্গী হয়ে উঠে।।
পদ্মা নদীর কোল ঘেষে লৌহজং এলজিইডির কোয়ার্টার এরিয়া খুবই সুন্দর করে সাজানো গুছানো। কোয়ার্টার এরিয়ার সাথে মসজিদ, স্কুল আর গ্রামীণ বাজার।
অভিনন্দন কলেজ পর্যন্ত ওর বাবার কারনে মুন্সিগঞ্জ হরগঙা কলেজে পড়ে। বুয়েটে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে চান্স পাওয়ার পর পুরো পরিবার ঢাকায় চলে আসে।
আমার তো বিয়ে হয়ে যায়। তারপরও হরগঙা কলেজেই অর্নাসে ভর্তি হই।
খুব একটা ক্লাস করতে পারতাম না। পরিক্ষার সময়ে এসে পরিক্ষা দিতাম। তখন আসাদ এতো খারাপ ছিল না। একজন নব বিবাহিতা স্ত্রীর প্রতি একজন পুরুষের যেমন শারিরীক ও মানসিক কৌতুহল থাকে। নতুন মানুষ ও মনের কাছে যেতে সবারই একটা আকর্ষণ কাজ করে। নতুন জীবনে একটা উদ্যোম সবারই থাকে।
ঠিক আসাদের ও ছিল।
নতুন জায়গা নতুন সংসারে আমার যেন কষ্ট না হয় সেদিকে নজর রাখতো। আসাদ আগে থেকেই কথা কম বলতো। কিন্তু সে আমার ব্যাপারে সচেতন ছিল। আমায় ভালবাসতো কিনা জানা নেই। তবে একসাথে বসবাস করতে একজন মানুষের প্রতি আরেকটা মানুষের যতোটুকু মায়া মমতা বিবেক বিবেচনা থাকা দরকার সেটা ছিল।এখনকার মতো অমানবিক ও উদাসীন ছিল না।
ঢাকার এই নাগরিক জীবনে যখন প্রাণ ফুরিয়ে যেতে চায় তখন আমার মন লৌহজং পদ্মার পাড়ে ছুটে যায় জীবন খুঁজতে।
পদ্মার সব ভেঙে চুরে আসা সেই ঢেউয়ের গর্জন এখনও কান দু'টোকে স্তব্ধ করে দেয়। একই সাথে অবারিত পদ্মার সৌন্দর্য এখনও মনকে আসক্ত করে। বিকেল হলেই পাল্টে যেতো নদী তীরের দৃশ্য।
পরিশ্রমী মানুষ আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে চোখ ভেজানো ভ্রমণ প্রিয় মানুষেরা তীর ঘেঁষে দাড়িয়ে পদ্মার রহস্য দেখতো।
বিকেল হলেই গগন জুড়ে অদ্ভুত আলো আঁধারের খেলা শুরু হতো। আমার মনে হতো অভিনন্দনের হাত ধরে চোখ পুড়ে যাওয়া অপার প্রকৃতি আর নৈসর্গিক নদীর পবিত্র সৌন্দর্য দেখতে দেখতে পদ্মায় ডুবে যাই। দু'জনকে জড়িয়ে ধরে মরে গিয়ে বেঁচে থাকি।
হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে উৎপন্ন গঙ্গা নদী ভিন্ন নাম নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। গঙ্গার নাম হয়ে যায় পদ্মা। এই গঙ্গা নদীর আরও একটি শাখা ভাগীরথী নামে ভারতের হুগলির দিকে প্রবাহিত হয়। সেটাই আবার যমুনার সাথে মিলিত হয়ে পদ্মা নামে প্রবাহিত হয়। এই পদ্মাই পূর্ব দিকে বাংলাদেশের চাঁদপুরে মেঘনার সাথে মিলিত হয়৷
আমি যেন ঠিক এই পদ্মা নদী। বাবার সংসারে এক রকম কষ্টের জলে ভেসেছি। এরপর অভিনন্দন এলো জীবনে। একটু সুখ আসতে না আসতেই জীবন ভেসে গেল আসাদের সংসারে।
চোখের জলে ভেসে যেতে যেতে জীবনে নিজেকে কত রূপেই দেখলাম।
আসাদের সাথে প্রথম কয় বছর মোটামুটি ভালই চলছিল৷ অভিনন্দনকে মনে পড়লেও পড়াশুনা আর সংসার সামলাতে সামলাতে জীবন চলে যাচ্ছিল। কিন্তু আসাদের বাবা মা আর বড় বোনেরা বাচ্চা নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিল। নিয়মিতই মন কষাকষি লেগে থাকতো। তারপরও বহু কষ্টে মাস্টার্স পাস করেছি।
মাস্টার্স পরিক্ষা দেওয়ার এগারো মাস পর একদিন ছাদে কাপড় রোদে দিয়ে পদ্মা নদীর নিস্তব্ধতা দেখছিলাম।
আমার ছাদে তখন প্রচুর কবুতর আসতো। কবুতরেরা দল ধরে ছাদ দখল করে রাখতো। আমার মনেহয় আমি ছাদে গেলেই কোথা থেকে এক ঝাঁক কবুতর এক এক করে আসতো।
একদিকে পদ্মার গভীর নিস্তব্ধ সৌন্দর্য। অন্যদিকে অচেনা কবুতরদের বাকবাকুম শব্দের ছন্দ।
আমি হারিয়ে যেতাম অন্যরকম এক ভাল লাগায়। সেদিনও এমন এক ভাল লাগায় আচ্ছন্ন হয়ে ছিলাম। হঠাৎ মাথাটা চক্কর দিল। ছাদেই বসে পড়লাম।
তখন তো আর মোবাইল ছিল না। সাথে সাথে আসাদকে জানানোর কোন উপায় ছিল না।
বমি করে ছাদেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিলাম। কেমন করে কেটেছে পরের সময় গুলো জানি না।
চোখ খুলে যা দেখলাম তা আমার চিন্তার ও বাইরে ছিল। যে মুখটা একবার দেখলে আমি বার বার বেঁচে উঠি। সে মানুষটা আমার চোখের সামনে। কিন্তু কিভাবে! আমি ভীষণ দূর্বল ও অসুস্থ থাকলেও বোধ ছিল। নয়তো কেলেঙ্কারি হয়ে যেতো। অভিনন্দন ও আসাদ পরস্পরের সাথে কথা বলছে৷ আমার দু-চোখ ভিজে যায় অভিনন্দনকে দেখে। বুকের নিঃশ্বাস আরও দূরন্ত বেগে ছুটে চলে।
আসাদ আমার মাথায় হাত রেখে জিজ্ঞেস করে, " এখন কেমন লাগছে?"
-- ভাল। তুমি কখন এলে?
--পাশের ফ্ল্যাটের ভাবি ছাদ থেকে কাপড় তুলতে গিয়ে তোমাকে অজ্ঞান দেখতে পায়।
-- আমি নিজেও জানিনা কখন কিভাবে পড়ে গেছি।
-- তুমি শুয়ে থাকো। ডাক্তার খবর দিয়েছি। কিছুক্ষণের মধ্যে চলে আসবে।
-- তুমি ফ্রেশ হও।
অভিনন্দন ও অবাক বিস্ময়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ও লজ্জায় তাকাতে পারছিলাম না। তাই মাথা বাম দিকে রেখে মুখ লুকিয়ে রাখছিলাম।
আসাদ ওর ঘাড়ে হাত রেখে বলল," অভি তোমার কোন অসুবিধা না হলে আমার বাসায় ও থাকতে পারো৷
-- ঠিক আছে স্যার। আমি গেস্ট হাউজেই থাকব।
-- আমি থাকতে গেস্ট হাউজে থাকবে কেন।কুন্তল একটু অসুস্থ ঠিক হয়ে যাবে। তুমি অস্বস্তিবোধ করো না।
--আরে না না স্যার! কী বলছেন! আমি কী যাব ডাক্তারের খবর জানতে।
-- এখনই চলে আসবে।
বাসায় ডাক্তার এলো। আমাকে দেখল। তারপর ওষুধ ও কিছু টেস্ট করতে দিল। আমি তো শুয়ে আছি।
পাশের ড্রয়িং রুমে আসাদ আর অভিনন্দন গল্প করছে।
গল্প থেকেই বুঝলাম অভিনন্দনের ও নতুন চাকরি হয়েছে। আসাদের সাথেই তাঁর প্রথম কর্ম জীবন শুরু। কী অদ্ভুত!
আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম।অন্য দিকে বুকের মধ্যে গোপন আনন্দ। একবার হলেও ওর মুখটা তো দেখতে পাবো। এই আশায় কতদিন রাত অপেক্ষা করেছি। আর সে কী না আমার ঘরে। কী ভয়াবহ স্বপ্ন। তা ও আবার সত্যি হয়ে জীবনে এসেছে৷
একটা গোপনীয়তা আমাকে ছায়ার মতো অনুসরণ করতে লাগল।কখনও যদি আসাদ জেনে যায়।
কিছুটা ভয় ও কাজ করতো।
তারপর থেকে আমার পদ্মার নদীর মতো আরেক জীবন শুরু হয়। নাহ সেদিন গুলো আর মনে করতে চাই না। আমার অতীত মনে করার ঘোর কাটে। সম্বিত ফিরে পাই।
নামাজ শেষে সালাম ফিরিয়ে দেখি আসাদ উঠে ওয়াস রুমে গেল।হয়তো ক্ষুধা লেগেছে। আমি দ্রুত উঠে টেবিলে খাবার গুলো ঠিকঠাক করে পাশের চেয়ারে বসে রইলাম। আসাদ আমার পাশের চেয়ারে এসে বসল। সব খাবারের ঢাকনা খুলে দেখল।
তারপর নিজের মতো খেয়ে বেড রুমে চলে গেলো।
আমি সব কিছু গুছিয়ে বেডে রুমে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলাম।
আর একটা কথা মনে পড়ে এতো দুঃখের ভেতরেও ভীষণ হাসি পেলো।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে এপ্রিল, ২০২১ সকাল ১০:৫৫

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: Great!

২৪ শে এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ২:৩৪

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

২| ২৪ শে এপ্রিল, ২০২১ সকাল ১১:০৩

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
আপনি খুবই চমৎকার লেখেন

২৪ শে এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ২:৩৫

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ

৩| ২৪ শে এপ্রিল, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৪০

অক্পটে বলেছেন: খুবই ভালো লাগছে, একটা ফ্যামেলী মেটারের ভেতরে ঢুকে গেলাম।

২৪ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১০:১৯

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: আন্তরিক ধন্যবাদ

৪| ২৬ শে এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১২:৩৭

শেহজাদী১৯ বলেছেন: লেখাটা পড়তে গিয়ে সেই লাইন মনে পড়লো। লাইনটা একটা গানের......
এখানে রমনীগুলো নদীর মত
নদীও নারীর মত কথা কয়.....

আসলেই নারী জীবন যেন এক বহমান নদী। ক্ষনে ক্ষনে বাঁক বদল করে.... ভিন্ন নাম ভিন্ন স্রোতে চলে।

নদী যেমন নির্বাক ভাষায় বয়ে চলে তার জীবন পথের নানা গান। রমনীকেও থাকতে হয় বাকরুদ্ধ, নির্বাক। সেই নির্বাক অকথনের আড়ালে রয়ে যায় শত কথন......

২৭ শে এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৩:০৫

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: আন্তরিক ধন্যবাদ

৫| ০৫ ই মে, ২০২১ রাত ৩:২১

রাজীব নুর বলেছেন: খুব সুন্দর লাগলো।

০৮ ই মে, ২০২১ রাত ৩:০১

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.