নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার গল্পটা হোক পৃথিবীর সেরা গল্প ।কারন আমি হতে চাই একজন সত্যিকারের জীবন শিল্পী ।

নুরুন নাহার লিলিয়ান

নুরুন নাহার লিলিয়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

গোপনে সে আমায় ভালোবাসে- পর্ব ৬ - নুরুন নাহার লিলিয়ান

২৪ শে এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১:০৩


আগের পর্বের লিঙ্ক ঃ গোপনে সে আমায় ভালোবাসে - পর্ব ৬ - নুরুন নাহার লিলিয়ান

#গোপনে সে আমায় ভালোবাসে
#পর্ব-৬
#নুরুন নাহার লিলিয়ান
কিন্তু আসাদের সামনে তো আর হাসা যায় না৷ কতো কিছুই তো মনে পড়ে। মানুষ কী সব মনেপড়া প্রকাশ করতে পারে।সব মনেপড়া কী সব পরিস্থিতিতে প্রকাশ করা যায়?
একটা মানুষ কী তাঁর মনের মধ্যে বয়ে চলা সবটুকু কথার নদী আটকে রাখতেও পারে।
এমন করেই আজীবন একটা মানুষকে অনেকটা দ্বিধা নিয়ে চলতে হয়। সে যেমন সবটুকু প্রকাশ করতে পারে না তেমনি প্রকাশহীন ও থাকতে পারেনা।
লৌহজং থাকতে আমি পদ্মার নদীর কাছে মনের কথাদের ভাসিয়ে দিতাম। সুবিশাল পদ্মা আমার সবটুকু কষ্টের চিঠি নিস্তব্ধ ঢেউয়ের ঢেউয়ের ভাঁজে ভাঁজে জমা রাখতো।
আর এখন নাগরিক জীবনের কোলাহলে নিবার্ক আকাশের কাছে পাঠিয়ে দেই। আকাশ তা বুকের ভেতরের যতো বিষাক্ত বিষাদের গল্পের ঝুলি তা নিয়ে মেঘ হয়ে উড়ে বেড়ায়।
আমার দেহ থেকে ছিটকে যাওয়া সত্যিকারের প্রানটা ছুটে চলে মেঘেদের ভীড়ে। আমার নিস্প্রাণ দেহটা পড়ে থাকে চিরচেনা মিথ্যা সংসারে। স্বপ্ন নামক মরিচীকার খোঁজে মন বিভ্রান্ত হয়। তবুও আমৃত্যু মানুষ স্বপ্নের ভেতরেই বেঁচে থাকতে চায়। আমিও বেঁচে থাকতে চাই।
মিথ্যার আর বিভ্রান্তির পৃথিবীতে এক মুঠো স্বপ্ন নিয়ে।
আমার সংবিৎ ফিরে আসে। আমি আসাদের দিকে নীরবে তাকাই।
তবে আসাদের খাবারের স্টাইল দেখে হাসি দমিয়ে রাখা কঠিন হয়ে গেল। একটা মানুষ যতোই রাগী হোক তাঁরও পেটে ক্ষুধা লাগে৷ সে ও নত হয়। অকৃত্রিম ক্ষুধার কাছে। সবাইকে এই ক্ষুধা জিনিসটার কাছে নত হতে হয়। দিন শেষে আসাদ ও একজন মানুষ। আর এই একরোখা মানুষটাও খাদ্যের কাছে এসে সব কিছু সমপর্ন করে।
স্ত্রীর প্রতি অভিযোগ, সন্তানদের নিয়ে অনিশ্চিত হতাশা, সংসার জীবনে হেয়ালিপনা সব কিছু এক জায়গায় এসে থেমে যায়৷ সেটা হল পেটের ক্ষুধা।
একজন বিবাহিত সংসারি পুরুষের স্ত্রীর হাতের রান্না খাওয়া অভ্যাস হয়ে যায়।ইচ্ছে করলেই সে অভ্যাস ত্যাগ করতে পারে না।মনের অজান্তেই প্রতিবেলার খাবারে স্ত্রীর গন্ধ খুঁজে পায়। যে গন্ধটা পুরুষকে মানসিক শক্তি দেয়।
সংসারের সেই মানুষটা মনের গহীনে এমন নীরব গন্ধ হয়ে টিকে থাকে।
আসাদ আমার রান্নায় সে শক্তি পায় কিনা জানিনা।বিশ বছরের সংসার জীবনে তা কখনও স্বীকৃতি পায়নি। আসাদকে আত্মতৃপ্তি নিয়ে খেতে দেখেছি বহুবার। কিন্তু কোনদিন আমাকে প্রশংসা করতে দেখিনি।
আসাদ কোন দিন কোন রান্না ভাল হলে প্রশংসা করেনি। কিন্তু দুই এক সময়ে কিছু খাবারে তেল নুন এদিক সেদিক হলে চিৎকার চেঁচামিচি করে ঘরে অশান্তি ডেকে আনে।
একসাথে থাকা মানুষ গুলোর একটু প্রশংসা সামনের মানুষটাকে বেঁচে থাকতে সহায়তা করে। পারস্পারিক হৃদ্যতা বাড়ে। কিন্তু আমরা মানুষ গুলো বড্ড হীন মন মানসিকতার।
আমরা অন্যকে প্রশংসা করলে মনেকরি নিজেদের গচ্ছিত সম্পদের কিছু অংশ কমে যাবে। পৃথিবীতে আমরা সবাই সবার বেঁচে থাকার অবলম্বন অথচ কতোটা নিষ্ঠুর ও অমানবিক ভাবে তা অস্বীকার করে চলি।
আসাদ সব সময় শাসন, ধমক অথবা নীরব মুনিবের ভুমিকায় নিজেকে উপস্থাপন করে। মনেকরে এমন করলেই হয়তো আমি তাঁকে ভয় পাবো। তাঁর অধিনস্ত হয়ে থাকব।এটা সত্যি আমি মনে মনে তীব্র বিদ্রোহী হলেও আমার বাইরের মানুষটা তাঁর অধিনস্ত থাকার অভিনয় করেই চলে।
তবে অভিনন্দন আমার রান্না পছন্দ করতো। খুব বেশি সুযোগ হয়নি আমার নিজ হাতে অভিনন্দনকে খাওয়ানোর। যতোটুকু সুযোগ হয়েছে সে ভালোবেসেছে আমার রান্না। আমার খুবই সামান্য কিছুকেও অনেক সুন্দর করে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতো।
এত বছর পর এভাবে আমাকে অসুস্থ অবস্থায় দেখবে অভিনন্দন নিজেও ভাবেনি৷আমি দেখছিলাম ও কেমন অস্বস্তিবোধ করছিল। তবে চোখে মুখে ভাল লাগার ঝিলিক লেগে ছিল।
আমাকে দেখতে পেয়ে যে ওর মনের ভেতরেও আনন্দ হচ্ছিল স্পষ্ট বোঝা যেত। খুব পুরোনো প্রচলিত কথা আছে গর্ভের সন্তান আর মনের প্রেম লুকিয়ে রাখা যায় না৷অভিনন্দনের থাকার ব্যবস্থা হল।
আমি ভয়ে ভয়ে আসাদকে জিজ্ঞেস করলাম," নতুন ইঞ্জিনিয়ার কতদিন থাকবেন?"
-- কম পক্ষে দুই এক বছর তো থাকতেই হব। এরচেয়ে বেশিও হতে পারে। গ্রামে কেউ থাকতে চায় না। উপরে লোকজন থাকলে ঢাকায় বদলি হয়ে যেতে পারে।
আমি যে মা হতে যাচ্ছি সেটা আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। কেমন নির্লজ্জ এক গভীর বেদনা আমাকে ঘিরে ধরল৷ মনে হতে লাগল অভিনন্দনের সাথে ফের না দেখা হলেই ভাল হতো। সব কাজের মাঝে অভিনন্দনকে দেখার আর কথা বলার অভিপ্রায় আমাকে কিছুটা অগুছালো করে রাখতো।
বিয়ের পর পড়াশুনা ও সংসার গুছাতে গিয়ে আমার আর আসাদের সংসারে নতুন অতিথি আসতে দেরি হচ্ছিল।
আমার শ্বশুর শাশুড়ির সাথে বড় ননাশ প্রচুর কথা শোনাত৷ মা বাবা নিয়ে ও গালি গালাজ করতো।
বিয়ের দুই এক মাস পর থেকেই বুঝলাম আমার শ্বশুর শাশুড়ির সাথে আরও কিছু অভিবাবক আছেন। ননাশ,ননাশের জামাই, ভাসুর, ভাসুরের বউ সহ অনেকে৷ তাঁরা যে যার মতো আমার সংসার নিয়ে মাতব্বরি করে।
এই বিষয় গুলোতে আমি যতোটা বিরক্ত হই আসাদ ততোই আহ্লাদী হয়। আসাদ নিজের পরিবারের লোকজনের ব্যাপারে খুবই সংবেদনশীল। কাউকে নিয়ে কিছু বলা যায়৷ পৃথিবীর সব দোষ ঘরের বউয়ের। পরিবারের অন্যান্য লোকজন ভুল বললেও, কেউ ভুল কাজ করলেও আসাদ খুব স্মার্টলি তা হ্যান্ডেল করে।
আমি সামান্য ভুল করলেও সেটা অনেক বড় হয়ে যেতো কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে।
আমি মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যাই ভালোবাসাহীন নিরুত্তাপ উদাসীনতায় টিকে থাকা একটা সম্পর্ক আমাকে কতোখানি ধৈর্য্যশীল করেছে।
আমি আসলে শুরু থেকেই সম্পর্ক থেকে বের হতে চাইনি। যখন অভিনন্দনের সাথে হঠাৎ করেই আমার সম্পর্কের দূরত্ব তৈরি হল। কোন রকম পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়া। অন্য দিকে আমার বাবা আমাকে বিয়ে ও দিয়ে দিলেন। তখনই বুঝে নিয়েছি জীবনের সত্য এটাই যে একটি অপরিচিত এবং অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবেশে আমার বাকী জীবন কাটাতে হবে।
তাই সে জীবন ও জীবনের মানুষ গুলোর সাথে কোন রকম যুদ্ধে জড়াতে চাইনি। কিন্তু যুদ্ধই যে আমার জীবনের সত্য। জীবনের সবটুকু যুদ্ধ আমারই করতে হচ্ছে। অভিনন্দনের বুয়েটে চান্স হয়ে গেল। আমাদের হরগঙা কলেজের একজন কমন ফ্রেন্ড তমালের কাছে অভিনন্দন একটা চিরকুট দিয়ে যায়৷ যে চিরকুটটা শেষ অবধি আমার হাতে পৌঁছাতে পারেনি। সে সুযোগ তখন ছিল না। এখনকার মতো মোবাইল, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ছিল না। বাসায় ল্যান্ড ফোনের নাম্বার দেওয়া নিষেধ ছিল। কোন ছেলে বন্ধু বাসায় আসা তো কল্পনাই করা যায় না।হয়তো অভিনন্দন ও চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আমার সাথে যোগাযোগ করার কোন পথ পায়নি।
একবার অভিনন্দনের সাথে দেখা করার, একটু শেষ বারের মতো কথা বলার জন্য আমি কেমন পাগল হয়ে গিয়েছিলাম। হঠাৎ করে আমার আর অভিনন্দনের মধ্যে দূরত্ব তৈরি৷ চোখের পলকে কিছুদিনের মধ্যেই আমরা দুই শহরের মানুষ হয়ে যাই৷
আর আমাদের ভালোবাসা ক্রমশ অস্পষ্ট হতে থাকে। তখন মনেহতো একজনমে বোধহয় আর চোখের দেখা হবে না।
একবার ভালোবাসার মানুষটাকে না দেখতে পারার কষ্টটা যে কত ভয়াবহ যে ভালোবাসে সেই বুঝতে পারে। যে কোনদিন মন লেনদেন করেনি। যে কোনদিন ভালোবাসা নামক গোলকধাঁধায় আটকে যায়নি সে কোনদিন বুঝতে পারবে না ভালোবাসা হারানোর কষ্ট কতো নির্মম।
নিদারুণ কষ্টকে মেনে নিয়ে যখন জীবন তপ্ত মরুভূমিতে জীবনের সত্য লালন করে যাচ্ছিল। হঠাৎ যেন জীবন প্রকৃতির চারপাশে কী যেন পাল্টে যেতে দেখে। প্রকৃতির নিয়ম এমনই! মানুষের কল্পনা ও হয়তো সে সীমা আবিষ্কার করতে পারে না। জীবনে হঠাৎ যা ঘটিয়ে দেয়।
কী অদ্ভুত! আবার এখন অভিনন্দন আমার চোখের সামনে। আমরা প্রায়ই পাশাপাশি সময় কাটাই। অথচ কেউ একবার মন খুলে জিজ্ঞেস করতে পারিনা। কে কেমন আছি। আমাদের মনের ভেতর বয়ে যাওয়া জীবনের গল্প বলা হয়না৷
আমাদের ভালোবাসা হয়তো পুরনো হয়ে গেছে যাপিত জীবনের বাস্তবতায়। কিন্তু ভালোবাসাটা তো ফুরিয়ে যায়নি। আমি মনে মনে অভিনন্দনের সাথে এতো কথা বলতাম যে ও সামনে এলে আমি গভীর নিস্তব্ধতায় তলিয়ে যেতাম।
অভিনন্দনের লৌহজংয়ে পোস্টিংয়ের বিষয়টি একদম নাটকীয়তায় ভরপুর ছিল। আজ এতো গুলো বছর পরও আমার বিশ্বাস হয় না। সে সময় গুলোতে ও আমার চোখের সামনে ছিল।আমাকে দেখাশোনা করার জন্যই হয়তো ওকে পাঠিয়েছিল কেউ।
কেমন নীরব গন্ধ বুকে নিয়ে বেঁচে থাকা। আসাদ ও ওকে ভাল জানতো৷ মুন্সিগঞ্জের নিজ এলাকার মানুষ হওয়ায় কেমন অল্প কিছুদিনের মধ্যে পরিবারের মানুষ হয়ে উঠেছিল।
কিন্তু আসাদ কী জানতে পেরেছিল কী না অভিনন্দনের সাথে আমার আজন্ম এক সম্পর্ক আছে৷
আসাদকে আমার প্রায়ই জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করতো। কিন্তু এই ধরনের মনোবৃত্তি সংসার নামক নৌকাকে নিজের ইচ্ছায় সমুদ্রে দিকে টেনে নেওয়া ছাড়া কিছুই না।
তবুও মনে মনে আসা হাজার ও ইচ্ছের জন্মকে অস্বীকার ও করা যায় না।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১:২৫

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

আপু গোপনে ভালোবাসার দরকারটা কি?
তাকে বলে দেন প্রকাশ্যে ভালোবাসতে!
উপন্যাসের পর্বগুলো খুব ভালো লেগেছে
চমৎকার লেখার হাত আপনার। গতবছর
মেলায় আপনার খোঁজ করেছিলাম ব্যার্থ
হয়েছিলাম। তাই এবার আর মেলায়
যাইনি।

২৪ শে এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ২:৩৮

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: আমার বইটি ঘরে বসেই সংগ্রহ করতে পারেন । এখন বাইরে না যাওয়া ভাল । ধন্যবাদ ।
পাওয়া যাবে ঘরে বসে যেকোন অনলাইন বুক শপে
রকমারী ডট কম - 09609-616297
Durbiin.com -01307-452110
Book Express- 01614-321421
Book mark - 01775-619592
Book line - 01717 418226
Book Fiesta - 01674-919250
Book Hut -01839-061857

২| ২৪ শে এপ্রিল, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:১৭

অক্পটে বলেছেন: বরাবরের মতো খুব দক্ষতার সাথে জীবনের গল্প গুলো প্রকাশ করেছেন। সাবলীল এবং সুন্দর। বইগুলো সংগ্রহ করব অবশ্যই।

২৪ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১০:১৮

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: আন্তরিক ধন্যবাদ। উৎসাহ পেলাম ।

৩| ২৪ শে এপ্রিল, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৫৩

বিনয় বাবু বলেছেন: অসাধারন

২৪ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১০:১৯

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: আন্তরিক ধন্যবাদ

৪| ০৫ ই মে, ২০২১ রাত ৩:১৯

রাজীব নুর বলেছেন: খুবই ভালো লাগছে পড়তে।

০৮ ই মে, ২০২১ রাত ৩:০১

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.