নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এলোমেলো ভাবনা

নূরুস সাফা

নিজের সম্বন্ধে কী আর লিখব! মোমেনশাহী ক্যাডেট কলেজ (আমরা যখন পাশ করেছি তখন ঐ নামই ছিল) থেকে বের হয়ে বুয়েট-এ ঢুকেছিলাম। ক্লাশ শুরু হবার আগেই যুদ্ধের দামামা বেজে উঠলো। বুয়েট থেকে প্রকৌশলি হয়ে বের হতে হতে ১৯৭৬। কর্মজীবন শুরু হল। চাকরী পেলাম তিতাস গ্যাস-এ। ১৯৮০ সালের শুরুর দিকে চলে গেলাম মধ্যপ্রাচ্যের এক দেশে। ৪ বছর থেকে ফিরে এলাম, যোগ দিলাম বাখরাবাদ গ্যাস-এ। দিনে দিনে হয়ে গেলাম একটা পাইপলাইন প্রকৌশলী। এখনো যদিও ঐ পেশাতেই আছি, তবে আমি আমার পেশায় কতটুকু সফল তা একমাত্র ভবিষ্যৎই বলতে পারবে।

নূরুস সাফা › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলার জনগণ বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির দাবার ছকের বোড়ে

১৫ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১০:৪৪

আমাকে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী দৈনিক সকালে ১টা ও রাতে ১টা করে JANMET 500 ট্যাবলেট খেতে হয়। যতদিন ডাক্তার ঐ ওষুধ না পাল্টায় ততদিন আমাকে খেয়ে যেতে হবে। আমি যখন ঐ ওষুধটা প্রথমবার কিনতে যাই তখন ফার্মেসী থেকে বলল ১পাতায় ৭টা ট্যাবলেট থাকে আর প্রতিটা ট্যাবলেটের দাম ১১০টাকা। আমি বললাম, “অত দাম কেন”? বলল, “বিদেশি ওষুধ, আমেরিকার”। তারপর জিজ্ঞেস করল আমি ক’পাতা নিব। ডায়াবেটিসের ওষুধ, খেতেই হবে, তাই ভাবলাম ১ পাতা নিই; আপাততঃ চলুক। এর মধ্যেতো ডাক্তারের কাছে যেতেই হবে, তখন সস্তা কোন ওষুধের নাম লিখিয়ে নিব!



তা দুই-একদিন পর ডাক্তারের (ঘনিষ্ট পরিচিত) কাছে যেয়ে বললাম, “এত দামী ওষুধ দিয়েছ! এই এক ওষুধেইতো আমাকে ফতুর করে দিবে”। শুনে ডাক্তার বলল, “কেন! আপনাকেতো কমদামী দেশি ওষুধই দিয়েছি। জ্যানমেট একমি-র ওষুধ”। আমি কোন কথা না বলে চলে আসি। বাসায় এসে দেখি আমার কেনা ওষুধটা JANMET নয়, JANUMET; আর প্রেসক্রিপশন খুলে দেখি ডাক্তার সাহেব JANMET-ই লিখেছে JANUMET নয়। যাহোক, পরে ওষুধের দোকানে গিয়ে ওদের ভুলটা ধরিয়ে দিয়ে JANMET-500 নিয়ে ফিরে এলাম। ৬টা ট্যাবলেটের ১টা প্যাকেটের দাম নিল ২৬০টাকা (এখন দাম আরো কমে গেছে। এখন ১টা ট্যাবলেটের দাম নেয় ২৫টাকা)। আমি এক এক বারে ১০-১২ প্যাকেট করে JANMET কিনি। এবার, এই দিনকয়েক আগে, আমার মজুদ যখন প্রায় শেষ, তখন একদিন গেলাম ঐ ওষুধের দোকানে। আমাকে জানানো হল ঐ ওষুধটার সরবরাহ নাই বলে ওদের মজুদ নাই। আমাকে অন্য দোকানে খুঁজে দেখতে বলল। আমি লাজ ফার্মা থেকে শুরু করে তার আশেপাশের সব ওষুধের দোকানে ঘুরে একই উত্তর পেলাম, “নাই"। এদিকে আমার সেই রাতে খাওয়ার ওষুধ থাকলেও পরদিন সকালেরটা থাকবেনা। মহা সমস্যা, কী যে করি! করারও কিছু নাই। মনখারাপ করে যখন ফিরে আসব, তখন ঐ দোকানের বিক্রয়কর্মী বলল, “আপনার GLIPITA M হলে চলবে”? আমি বললাম, “মানে”? সে বলল, “জ্যানমেট আর ওটা একই”। আমি আবার বললাম, “মানে”? ও বলল, “মানে জ্যানমেট যা গ্লিপিটা এম-ও তা। দুটোতেই সিটাগ্লিপটিন ৫০ মিঃ গ্রাঃ ও মেটফরমিন হাইড্রোক্লোরাইড ৫০০ মিঃ গ্রাঃ আছে। জ্যানমেট একমির আর গ্লিপিটা এম হচ্ছে বেক্সিমকো ফার্মার”। আমি তখন তাকে বললাম, “যদি ঐ দুই ওষুধ একই হয়, তবে আমাকে দোকানে দোকানে ঘুরালেন কেন? আমাকে বলে গ্লিপিটা দিতেই পারতেন”! সে তখন কানের গোড়া পর্যন্ত দাঁত বের করে একটা হাসি দিল। আমি ৬ প্যাকেট গ্লিপিটা এম নিয়ে এলাম (১ প্যাকেটে ১০টা বড়ি থাকে, মূল্য প্রতি প্যাকেট ২৫০টাকা)।



ল. জে. এরশাদ-কে আমরা যতই গালাগাল দেইনা কেন, তার আমলে প্রণীত জাতীয় ঔষধ নীতি কিন্তু ভাল ছিল। ঐ নীতিতে সব ওষুধ জেনেরিক নামেই বাজারজাত করার বিধান ছিল। ঐ বিধান যদি এখনো বলবৎ থাকত, তবে আমার এই ভোগান্তি হতোনা। আমাকে ৪৮ টাকার বড়ি ১১০ টাকায় কিনতে হতনা বা ঐ দোকানে আমার প্রয়োজনীয় ওষুধ অন্য কোম্পানির তৈরি অন্য ব্র্যান্ড নামে থাকা সত্বেও আমাকে অন্যান্য দোকানে তা ঢুঁড়ে বেড়াতে হতোনা। জানেন, কারা লে. জে. এরশাদ-এর ঔষধ নীতির বিরোধী? প্রধান বিরোধী হচ্ছে আমাদের দেশের ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলো। তারা তাদের ব্যবসায়ীক স্বার্থে চায়না যেন বাজারে ওষুধ জেনেরিক নামে বিক্রি হয়।



গত শতকের অষ্টম দশকের মাঝামাঝি দিকে শরীরের বিভিন্ন ব্যথার, তা হাড়েই হোক কিংবা ঘাড়ে, মহৌষধ হিসাবে পরিচিত ছিল সুইজারল্যান্ডের কোম্পানি সিবা-গেইগীর তৈরি VOLTAREN নামের ওষুধ, যার এক একটা ৫০ মিঃ গ্রাঃ বড়ির দাম ছিল, যতদূর মনে পড়ে, ১২টাকা। ঐটার জেনেরিক নাম ডাইক্লোফেনাক সোডিয়াম। এখন ঐ ওষুধ দেশের অনেক নামী-দামী অনামী-কমদামী প্রায় সব কোম্পানিই তৈরি করছে। জেনে আশ্চর্য হবেন, বাংলাদেশে ৭৭টি ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি বিভিন্ন নামে ডাইক্লোফেনাক সোডিয়াম ওষুধ তৈরি করে ও বিভিন্ন দামে বিক্রি করে। সি-ফেনাক নামে বাজারজাত করা কেমিস্ট ল্যাবরেটরিজ-এর তৈরি ১টা ৫০ মিঃ গ্রাঃ ডাইক্লোফেনাক সোডিয়াম বড়ির সর্বোচ্চ বিক্রয় মূল্য (MRP) ৩০ পয়সা আর এস-ফেনাক নামে বাজারজাত করা সীমা ফার্মাসিউটিক্যালস-এর তৈরি ১টা ৫০ মিঃ গ্রাঃ ডাইক্লোফেনাক সোডিয়াম বড়ির সর্বোচ্চ বিক্রয় মূল্য (MRP) ৮৯ পয়সা। অর্থাৎ বাংলাদেশের বাজারে ১টা ৫০ মিঃ গ্রাঃ ডাইক্লোফেনাক সোডিয়াম বড়ির সর্বোচ্চ মূল্য সর্বনিম্ন মূল্যের চেয়ে প্রায় ৩ গুণ বেশি। আর নোভার্টিস বাংলাদেশের ১টা ভোল্টালিন ফোর্ট ৫০ মিঃ গ্রাঃ ট্যাবলেটের দাম ৬টাকা, যার মূল উপাদান ঐ সেই ৫০ মিঃ গ্রাঃ ডাইক্লোফেনাক সোডিয়াম।



যদি ওষুধের মান ঠিক থাকে, তবে নাম যাই হোকনা কেন, সব ৫০ মিঃ গ্রাঃ ডাইক্লোফেনাক সোডিয়াম বড়ির কার্যকারিতা একই হবে। সব বড়িতেই যদি ৫০ মিঃ গ্রাঃ ডাইক্লোফেনাক সোডিয়াম থাকে, তবে দামের অত পার্থক্য হবে কেন তা আমি বুঝতে পারছিনা! আমি বুঝতে পারছিনা, বাংলাদেশের ঔষধ প্রশাসন কোন ফর্মুলায় হিসাব কশে ওষুধের বাজারমূল্য নির্ধারণ করে! আমিতো শুধুমাত্র সিটাগ্লিপটিন ৫০ মিঃ গ্রাঃ + মেটফরমিন হাইড্রোক্লোরাইড ৫০০ মিঃ গ্রাঃ এবং ডাইক্লোফেনাক সোডিয়াম ৫০ মিঃ গ্রাঃ বড়ি সম্বন্ধে আলোচনা করলাম। মনে হয় বাজারের আর সব ওষুধের বেলায়ও একই কথা প্রযোজ্য। হাজার হাজার কোটি টাকার ওষুধ-বানিজ্যের বাজারে আমরা সবাই দাবার ছকের বোড়ে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১০:৫৪

তিক্তভাষী বলেছেন: অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় তুলে এনেছেন। যদি ওষুধের মান ঠিক থাকে তাহলে অন্তত দেশীগুলোর দামে পার্থক্য হওয়ার কারণ নেই। আর মান খারাপের কারণে কোনোটার দাম কম হলে সেটাতো আরো খারাপ ব্যাপার। মানহীন ওষুধ বাজারজাত করা হবে কেন?

২| ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১১:০১

আহলান বলেছেন: মান খারাপ খুব একটা হয়তো না। তবে চাকরীর বাজারে ব্র্যান্ড অনেক বড় একটা বিষয়। অপেক্ষাকৃত কম নামি দামি কোম্পানীর অষুধ কোম্পানীর অষুধ এর দাম অপেক্ষাকৃত কম হয়, কারণ তাদের কর্মকর্তাদের বেতন ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধাও কম, তাছাড়া মার্কেটে টিকে থাকতে হলে কম লাভে মাল ছাড়তে হবে ....

৩| ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১১:৩৬

বিশ্বাস করি 1971-এ বলেছেন: ভাইজান পুরাই সঠিক। এরশাদ কাগু কিছু কাজ ভাল করছিল যে যাই কউক।

৪| ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১১:৫০

শিব্বির আহমেদ বলেছেন: আমার যত দূর মনে পড়ে , এই ইস্যু নিয়া ২/৩ বছর পর পর কচলা কচলি শুরু হয় সরকারী পর্যায় থেকে , তারপর কিভাবে জানি ঠাণ্ডা হয়ে যায় সব । শেষ বার যখন পত্রিকায় স্কয়ারের এক উপরস্থ পাব্লিকের ডায়ালগ দেখেছিলাম , সেখানে তিনি এমপ্লয়ীদের স্যালারি , ঔষধের মান , টেকনোলজি এইসব কারনে তাদের প্রোডাক্টের মুল্য বেশী হয় বলে দাবি করেছিলেন । বাট পাগলেও বোঝে , উন্নত প্রযুক্তিতে কম ব্যায়ে বেশী উৎপাদন করা যায় ।

পোস্টে প্লাস ।

জনগুরুত্বপূর্ণ এই পোস্টটি স্টিকি করার দাবি জানাচ্ছি ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.