![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সরিষা থেকে আজ ১৪ই ডিসেম্বর তারিখে যাত্রা শুরু কোরলাম । ১৩/১৪ দুদিন বাংলা বনধ ছিল।১৪ তারিখ রাত ২টায় প্লেন।বনধের জন্য টেলিফোনে খবর দিল প্লেন ছাড়বে রাত দুটোর বদলে সকাল ৯টায়। মগরিবের নামাজ পড়ে আমতলায় এলাম রাত ৮টায়। মিলি,নুরুদ্দিন এয়ারপোর্টে এসেছিল। সকাল ৯-১৫ মিঃ ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ এর বিমান লন্ডনের উদ্দেশ্যে রওনা হল। প্লেনে আমরা ভেজিটেবল লিখিয়েছিলাম।খানা ভাল ছিল। দু’ টাইম খানা আর দু’ টাইম টিফিন দিল।প্লেনের মধ্যে জোহর এবং আসর নামাজ পড়লাম।হাতের ঘড়ি দেখি মগরিবের সময় পার হোয়ে যাছ্ছে অথচ প্লেনের জানলা দিয়ে রোদ দেখা যাচ্ছে।নামাজ পড়ব কি পড়বনা ধন্ধে পড়ে গেলাম।তবু এবার প্লেন নামবে ভেবে মগরিব পড়ে নিলাম।লণ্ডনে যখন আসলাম তখন বেলা ২-৩৫ আর হাতের ঘড়িতে ভারতীয় সময় সন্ধ্যা ৭-৪৫।তিন তিনটে গেট পার হোয়ে বাইরে এলাম।এয়ার পোর্ট কর্তৃপক্ষ হোটেল হিলটনে আমাদের দুজনের থাকা খাওয়ার জন্য ডিনার ও ব্রে্ট পাশ দিল ও ২৪ ঘণ্টার জন্য ভিসা দিল এয়ারপোর্টের বাইরে হোটেলে যাবার জন্য।কোলকাতা থেকে ৭ঘণ্টা দেরিতে আসার জন্য আজকের ফ্লাইট মিস হোল।সুতরাং কাল ৯ টায় প্লেন ধরতে হবে।
বিরাট হোটেল । আমাদের জন্য একটা কামরা দিল তার দোরের চাবি হোলো একটা কার্ড।বাইরে প্রচণ্ড শীত। তায় রাতে বৃষ্টি হোয়েছিল। হোটেল দেখে থ ।এতো রাজ-রাজড়ার প্রাসাদ। ভিতরে হাল্কা গরম। আলোতে সারা ঘর ঝলমল করছে।কাচের শাওয়ার বা বাথরুম। কারুকার্য করা টেবিল সোফা। একহাত উচু গদি।দু জনের ৬টা বালিস।মিনিটের মধ্যে চা করার যাবতীয় সরঞ্জাম।বড় স্ক্রীনের টিভি চলছে ঘরের মধ্যে।তাতে মাঝেমাঝে হিথরো বিমান বন্দরের টাইম টেবল দেখা যাচ্ছে।বিমান থেকে নামার পর এতো ধকল গেছে যে বলবার নয়।আমাদের বলে দেওয়া হয়েছিল রাত ১০-৩০ এর মধ্যে ডিনার খেয়ে নিতে।কিন্তু এতো খিদে আর এতো ঘুম,কি করি।শেষে ঘুমিয়ে পড়লাম দু’জনে ।খানিক পরে ডিনার খেতে গেলাম।বুফে সিসটেম। যার যা খুশি এবং যত খুশি খেতে পার।খাবার আইটেম দেখে চক্ষু ছানাবড়া।কত রকমের খাবার।কিনতু আমাদের পছন্দ সই কোনো খাবার নেই । এই সবখাবার খেতে রুচি নেই।ভাত ডাল নেই, যত সব সামুদ্রিক মাছ, চীজ,বার্গার,স্যাণ্ডউইচ, রকমারী ফল।জানিনা আরো নানারকম খাবারের কি কি নাম।এ সব খানা আমাদের পছন্দ নয়।আবার হালাল কি না সন্দেহ হচ্ছে।টুকিটাকি খেয়ে আধপেটা অবস্হায় ফিরে এলাম ঘরে।এসে এশার নামাজ পড়ে শুয়ে পড়লাম।তখন সময় প্রায় মাঝ রাত ।
ঠাণ্ডা লাগছিল রাতে, তাই বোধহয় ভোরে তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙ্গে গেল।ফজরের নামাজ পড়ে খুব ক্ষুধা পেয়েছিল। কি খাই, কি খাই।দেখি ঘরের মধ্যে একটা আলমারী । খুলে দেখি । আসলে ওটা একটা ফ্রীজ। দরজা খুলে দেখি থরে থরে খাবার সাজানো। কাজু, কিসমিস , নাটস, মুড়ির মত চালভাজা আর ছোট ছোট আতরের শিশির মত দেখতে সাদা ও লাল রং এর এলকোহল। সীল খুলে দুজনে ভাজাভুজি খাচ্ছি আর বলাবলি করছি এরা আমাদের জন্য কতই না ব্যবস্হা কোরেছে কারণ তখনও জানতাম না এর জন্য আক্কেল সেলামী দিতে হবে।আর কত রকমের ইনষ্ট্যান্ট চা সাজানো টেবিলের উপর । চা খেয়ে আবার বাদাম-টাদাম খাচ্ছি । হঠাৎ নজরে পড়ল টেবিলের উপর একটা কাগজ,তাতে লেখা এই ফ্রীজের ভিতরের খাবার খেলে দাম দিতে হবে।হায় হায় কাগজটা আগে কেন নজরে এল না । রাস্তায় খেতে খেতে যাবো বলে কিছু বাদাম-টাদাম কাগজে মুড়ে নিয়ে ছিলাম, সে গুলি আবার শিশিতে ভরে দিলাম। এটা হল দ্বিতীয় ভুল । তখনো পর্য্যন্ত জানতাম না যে সীল খুললেই চার্জ হবে।একটু পরে গোসল সেরে ব্রেকফাস্ট কোরতে গেলাম । আবার সেই এক-ই ধরনের খাবার। অটোমেটিক টোষ্টার। এটা-সেটা না খেয়ে,টোস্ট-বাটার খেয়ে হোটেলে ফিরে এলাম। এবার ফেরার পালা।গোছগাছ করে সময় মত বেরিয়ে পড়লাম।কাউন্টারে যখন চাবি ফেরত দিতে গেছি, আমদের চার্জ করল ২১ শিলিং।মনে করি, পয়সা নেই,বলি।টুপি-দাড়ি নিয়ে কেচাল করতে কেমন লাগলো।আসার সময় অতিরিক্ত ৫০ডলার নিয়ে এসেছিলাম। কাউন্টারে হিসাব কোরে ফেরত পেলাম ৩/৪শিলিং। অর্থাৎ নেট গচ্চা গেল বাংলা দু হাজার টাকার মত ।
আফশোস হোতে লাগলো ঐজন্য যে খাবার গুলো না খেয়ে শিশিতে ফের ঢুকিয়ে রেখে এসেছি।গত রাতে বৃষ্টি হয়েছিল। বাইরে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা। নামার সময় ৪নং টার্মিনালে নেমে ছিলাম। এবার কিনতু আমেরিকা যেতে গেলে উঠতে হবে ১ নং টার্মিনাল থেকে। লোকেদের জিজ্ঞাসা করি ১নং টার্মিনাল কোন দিকে যাবো, কেউ বলতে পারে না।একজন বলল লিফট করে নিচে নেমে ট্রেনে যেতে হবে।শুনে ভয় হল ট্রেনে করে কি ভাবে কোথায় যাব। আসলে হিথরো-এয়ারপোর্টের নিজস্ব ট্রেন।৩/৪ টে ষ্টেশন পার হোয়ে ৮/১০ মিনিট পরে ১ নং টার্মিনাসে থামলাম।এখানে ওখানে গিয়ে বোর্ডিং পাশ নিয়ে বসে আছি।সময়হলে এনাউন্স কোরবে বলল, কত নং গেট দিয়ে যেতে হবে।এক এক টার্মিনালে ২০/২৫ টা কোরে গেট।এক গেট থেকে আর এক গেটের দূরত্ব প্রায় হাফ কিলোমিটার । প্লেন লন্ডন সময় সকাল ৯টায় সান ফ্রানসিসকোর উদ্দেশ্যে রওনা হোল।প্লেনের মধ্যে জোহর ও আসর পড়লাম।আমেরিকার যখন নামলাম তখনো আসর হয়নি । বেলা ৩টায় এস.এফ.ও তে নামলাম।
লন্ডনে আক্কেল সেলামির জন্য মনটা খারাপ ছিল।নেমে ব্যাগ নিতে গেলাম । দেখি লাগেজ বেল্ট ধরে সকলের ব্যাগ আসছে কিনতু আমাদের ব্যাগ আর আসে না।চিন্তায় পড়ে গেলাম।অনেক পরে ব্যাগগুলো এলো । তাড়াতাড়ি সব কাউনটার পার হোয়ে শেষ কাউনটারে হাজির হোয়েছি। ভাবছি যাক তাহলে ভালোয় ভালোয় পৌছে গেলাম। শেষ কাউনটারে সিকিউরিটি পুলিশ।সামনে আসতে হাসিমুখে বলল, নিজে নিজে ব্যাগ খুলুন।আমেরিকায় যারা চাকুরি করে সে কোনো স্টোরে হোক,ব্যাংকে হোক,হাসপাতালে হোক, ডাক্তারের কাছে হোক বা উকিল এর হোক,সরকারী বা বে-সরকারী অফিসে হোক আপনি গেলে তারা আপনার সংগে হাসিমুখে কথা বলবে। আমাদের দেশ থেকে আমেরিকা এলে এ জিনিসটা খুব ভাল লাগবে । যদিও আপনার কাজ না হয় তবু এদের প্রথম অভ্যর্থনা ভালো লাগবে । ব্যাগ খুলে দিলাম,দেখতে লাগল।পকেটের কাগজ পত্র বের কোরে দিতে বলল। মাঝে মাঝে জিজ্ঞাসা করে, এটা কি ওটা কি।শুনেছিলাম আমেরিকায় সরিষার তেল পাওয়া যায় না । তাই কিলোখানেক তেল নিয়ে ছিলাম । ব্যাগের ভিতর দেখি চাপে সরিষার তেলের শিশি থেকে তেল বের হয়ে কিছু কাপড় নষ্ট হোয়েছে । আমেরিকা আসার পর দেখেছি এখানে ইন্ডিয়ান স্টোরে যে খাঁটি সরিষার তেল পাওয়া যায়, তাতে অত ঝাঁঝ নেই। আলুভর্তাতে ঝাঁঝ তেল দেওবার জন্য কষ্টকরে আনা। এদিকে হয়েছে কি ব্যাগের ভিতর ল্যাপটপ ছিল।ল্যাপটপে চাপ না পড়ে নষ্ট হোয়ে যায় এজন্য ভাল করে কাপড়ে মোড়া ছিল। সিকিউরিটি ল্যাপটপের পাশ-ওয়াড় খুলে দিতে বলল। খুলে দিলাম। সব প্রোগ্রাম খুলে খুলে দেখল।দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর বয়ান ডাউনলোড করা ছিল।সেইটা বের করে বার বার জিজ্ঞাসা কোরছে এই লোকটা কে? আর সি.এইচ.পি মানে কি ? কেননা প্রোগ্রামের শুরুতে একটা লোগো ছিল,তার নিচে সি.এইচ.পি লেখা ছিল । সে সময় তো জানতাম না আমেরিকা দেলোয়ার হোসেনকে ব্যান্ড কোরেছে।ওরা ল্যাপটপ চালিয়ে যাচছে আর আমরা বসে আছি তো বসে আছি তা’ প্রায় ঘন্টা খানেক।দু-একজন ছাড়া সবাই চলে গেছে । এরা তো ছাড়ছে না । অর্ধসঙ্গিনী একটু অসুস্হতার অভিনয় করল।পুলিশগুলো তাড়াতাড়ি করে খাবার পানি এনে দিল।তার একটু পরেই ক্লিয়ারেন্স দিল-আপনারা যেতে পারেন।
দুটো ট্রলিতে দু’জনার লাগেজ।আমারটা আমি নিলাম। অন্যটা সে-ই পুলিশ অফিসার ঠেলে ঠেলে নিয়ে যেতে লাগল।অফিসার ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে দেখে একজন কালো পুলিশ আমার ট্রলিটাও ঠেলে নিয়ে যেতে লাগলো।বাইরে এসে দেখি তখনো পর্যন্ত আমাদের নিতে কেউ আসেনি। পুলিশ দু’টো কে বললাম,আপনারা এবার আসতে পারেন। আমাদের লোক এসে নিয়ে যাবে।বাইরে ঠান্ডা, তবে লন্ডনের মত নয়। এয়ারপোর্ট থেকে ঘন্টা দেড়েক গাড়ি চালিয়ে প্রায় একশো মাইল রাস্তা অতিক্রম করে
সন্ধার পর ডাক্তার ভাই তার ঘরে নিয়ে এল । ঠাণ্ডা ক্রমশ জাঁকিয়ে বসছে। কনকনে ঠান্ডা।৭৫-৮০ থেকে কমতে কমতে ৩৫-৪০ ফারেন হাইট হচ্ছে। আমরা আছি মডেষ্টো শহরে।এতো শীত যে গাড়ী ছাড়া বের হওয়া যায় না । সারাদিন বসে বসেই কাটে। মাঝেমাঝে বৃষ্টি হচছে। সারা শীত প্রায় মেঘে ঢাকা থাকে । সন্ধার দিকে পিয়ানোর শব্দ তুলে আইসক্রিমের গাড়ি আসে। এখানে নাকি শীতকালেই আইসক্রিম খায় বেশী। রাস্তাঘাট শুনসান।মাঝে মাঝে শিয়ালের হুক্কাহুয়ার মত এম্বুলেন্স অথবা পুলিশের গাড়ির শব্দে নিস্তব্দতা খানখান করে ভেঙ্গে যায়। ৫/৭ মাইল যদি হেঁটে আসা যায় একটাও পথচারীর সংগে দেখা হবে না। ঘর গুলো থেকে কোনো কথাবার্তা বা হই-হট্টো গোলের আওয়াজ নেই। দিনে সকাল সকাল কাজে চলে যায় । জানালা দরজা সব সময় বন্ধ। রাত্রে কোনো কোনো ঘর থেকে আলো দেখে বোঝা যায় ঘরে হয়তো কেউ আছে। ঘর গুলো বাংলো ধরনের। পুরাপুরি কাঠের তৈরী। কোনোটা আবার কাঠের দোতলা।প্রত্যেক ঘরে শীতে গরম রাখার জন্য গ্যাস হিটার ও গ্রীষ্ম কালের জন্য এ.সি আছে।
আমরা যেমন সাইকেল ব্যবহার করি,সেই রকম প্রত্যেক লোকের কমপক্ষে একটা মোটর গাড়ি আছে।দু’পাঁচ মিনিটের রাস্তা হলেও লোকে গাড়িতে যায়।রাস্তায় হর্নের আওয়াজ নেই,পোঁক-পাঁক ভোঁক-ভাঁক আওয়াজ কোরে গাড়ী যায় না । বিনা কারনে হর্ন দিলে পুলিশ আছে । রাস্তা গুলো চওড়া চওড়া।চার-পাঁচ লেনের।সরু রাস্তাতেও দু লেন যাচ্ছে দু লেন আসছে।লেফটহ্যানড ড্রাইভ।গাড়ী সব রাস্তার ডান দিক দিয়ে যায়। বাসে উঠতে গেলে অভ্যাস বশতঃ আমাদের ভুল হয় । বাসে উঠবার রাস্তা ডানদিকে । ১০০-১২০ কি.মি গতিতে বাতাস কেটে কেটে সোঁ সোঁ শব্দ কোরতে কোরতে এসে সাঁক সাঁক কোরে পাশ থাকে বেরিয়ে যায়।এতো গাড়ী চলে তবু একসিডেন্ট তুলনামুলকভাবে কম।নিয়ম মেনে সবাই চলে।না মানলে পুলিশ এসে টিকিট ধরিয়ে দেবে । ঘুষখোর পুলিশ নেই । সিগন্যাল যেখানে আছে সেখানে ক্যামেরা বসানো থাকে।কিনতু যেখানে কোনো সিগন্যাল নেই,পুলিশ নেই,রাস্তায় পারাপার হবার জন্য আশপাশে কোনো জনমানব নেই বা অন্য কোনো গাড়ি চলাচল করছে না, কেবল স্টপ সাইন আছে, তবুও সেখানে প্রত্যেক গাড়ি থামবে তারপর চলতে থাকবে।বে-নিয়ম হোলে পুলিশ কোথা যে হাজির হবে কেউ জানেনা । পুলিশ কোথায় আছে নজরে আসবে না । রাস্তায় বা মোড়ে পুলিশ নেই । ফুটপাথ আছে,কিন্তূ চলার লোক নেই।ফুটপাথের নাম এখানে বাইক রোড। সাইকেলকে বলে বাইক।ফুটপাথে সাইকেল চলে, আর আমাদের মত কেউ কেউ কখনো সখোনো পায়ে হেঁটে চলে।রাস্তা পার হলে আগে পথচারী যাবে তারপর গাড়ী যাবে।আমরা যখন এই পায়জামা পানজাবী পরে হাঁটি, এদেশের পক্ষে আজব জিনিস। অনেকসময় গাড়িচালকরা আমাদের দিকে তাকিয়ে হেঁকে হেঁকে কি বলে বুঝতে পারিনা।আনেকে আবার হর্ন বাজিয়ে পাশ দিয়ে চলে যায়।
এই শহরে বাসগুলো বেশ সুন্দর । ম্যাক্স কোম্পানির এ.সি লাগানো লাক্সারী বাস। ৩৮ টা সিট। দু’পাঁচ জন চড়ে। যারা চড়ে বেশীর ভাগ বিকলাঙ্গ, পাগলা-আধপাগলা ,ভবঘুরে অথবা বৃদ্ধ আর আমাদের মত যাদের গাড়ি নেই । রাস্তা-ঘাটে বিকলাঙ্গের সংখ্যা প্রচুর । বিকলাঙ্গদের জন্য বাসে উঠবার সুন্দর ব্যবস্থা। পিক-পিক করতে করতে বাস নিচু হয়ে যাবে , অথর্ব লোকেদের উঠবার জন্য বা স্বয়ংচালিত বিকলাঙ্গদের গাড়ি গুলি বাসের মধ্যে উঠাবার জন্য। রাস্তাঘাটে লোক নেই শুধু গাড়ি।
max buses in stanislous county,Modesto
ডিসেম্বর পার হোতে চলল। সারা আমেরিকায় নভেম্বরের প্রথম রবিবার থেকে ডিটিএস অর্থাৎ ডে টাইম সেভিং শুরু হয়েছে।সহজ কথায় ঘড়ির কাঁটা এক ঘন্টা এগিয়ে দেওয়া হয়েছে। শীতকালে রাত বাড়তে বাড়তে প্রায় ১৪ ঘন্টা। আর দিন ১০ ঘন্টা । সকাল শুরু ৭-৩০ সন্ধা ৫-০০। আবার মার্চএর দ্বিতীয় রবিবার থেকে শুরু হবে ডিটিএস।এক ঘন্টা ঘড়ি পিছিয়ে দিতে হবে। তখন দিন ১৪/১৫ ঘন্টা।এদিকে সকাল হবে ৫-৪৫ , ও দিকে সন্ধা ৮-৪৫ । শুনেছি আমাদের থেকে উত্তরে আলাস্কায় সন্ধা হয় ১১টার সময়। সকাল ঐ ৬টায়। কাজের সময় ৮টা থেকে ৫টা । কাজের সময়ের কোনো নড়চড় হবে না । এখানে সূর্যকে মাথার উপর দিয়ে যেতে দেখিনি। শীত কালে সূর্য উঠে দক্ষিন-পূর্ব কোনে, ডোবে দক্ষিন পশ্চিম কোনে। গ্রীষ্মে উঠে ঊত্তর-পূর্ব কো্নে, ডোবে উত্তর-পশ্চিম কোনে। আমাদের দেশে বেলা ১০/১১টার সময় সূর্য যে যায়গায় থাকে অতদূর পর্যন্ত সূর্য বা চন্দ্র গিয়ে তারপর আকাশের গা ধরে ধরে যায়। ঠাণ্ডা ক্রমশ বাড়ছে।খুব প্রয়োজন ছাড়া বের হতে পারা যায় না।সকাল বেলা উঠে বাইরে গিয়ে দেখি রাস্তার ধারে ধারে কাচের মত চকচক কোরছে।তাহলে কি তেল পড়েছে না কাচ ভাঙ্গা পড়ে আছে । দেখিতো গিয়ে। না, ড্রেনের পানি জমে বরফ হোয়ে গিয়েছে। ঊত্তর-পশ্চিম দিক থেকে হাওয়া বইছে হু-হু করে। উফ্ কাঁটার মতো গায়ে বিঁধছে । তাপমাত্রা ১০ডিগ্রী ফারেনহাইট। এখনে এখনো ফারেনহাইট,ফুট,গজ,মাইল,ওজনে পাউন্ড ইত্যাদি চলে।ক্যালিফোর্নিয়া সবুজ বনভুমির জায়গা। কিন্তু এখন দেখে মনে হচ্ছে গাছগুলো সব ন্যাড়া হয়ে ভুতের মত দাঁড়িয়ে। মনে হবে বড় বড় গাছপালা,আখরোট বাগান,আঙুর বাগান সব মরে গেল নাকি ? শীত বলতে ডিসেম্বর থেকে মার্চ। শীতে যেমন,জুন-জুলাই এর গরমেও তেমনি রাস্তায় হেঁটে চলা খুব কষ্ট। শীত হোক আর গরম হোক কম্বল কিন্তু সারা বছর আপনার সংগ ছাড়বে না।গরমে দিনের বেলা ৯০-১০০ ডিগ্রী আর ভোরের বেলা ৬০-৬৫ ডিগ্রী ফারেনহাইট।
হ্যাঁ,শীতে কি আর গরমে কি রাস্তায় ধোঁয়াশা বা ধুলো নেই। ৫-১০ মাইল পর্যন্ত নজর যতদুর যাবে সব পরিস্কার। রাস্তায় কোনো নোংরা, থুতু,ছেঁড়া কাগজ বা খালি সিগারেটপ্যাকেট,পানির বোতল ফেলা যাবে না।মাঝেমাঝে রাস্তার উপর ডাষ্টবিন বসানো। আমাদের দেশের মত এদেশের গরীব লোকেরা রাস্তার পাশের ঐ ডাষ্টবিন থেকে পেপসীর ক্যান,খালি পানির বোতল বা পুরাতন
ইলেকট্রনিকস, রেডিও টেপ ইত্যাদি সাইকেলএ চড়ে চড়ে সংগ্রহ কোরে, রেলিস এর দোকানে গিয়ে বিক্রি করে। নগন্য সংখ্যক লোক ভিক্ষা ও করে। তবে হাত পেতে চাইতে পারবে না।রাস্তার উপর দোকানের আশেপাশে দাঁড়িবে থাকে অথবা হেলপ লিখে কোনো ফাঁকা জায়গায় বসে থাকে ।
একজন ভিখারির কাহিনী শুনুন । সে আমাদের এক বন্ধুর বাড়ির সামনে ফুটপাথে বসে ভিক্ষে করত। বন্ধুটি থাকতো San Jose তে।এরা বলে স্যান হোজে ।ক্যালিফোর্নিয়া এক সময় নাকি স্প্যানিস দের দখলে ছিল। ওদের লেখা একরকম আর উচ্চারণ আরেক রকম । তা সেই ভিখারীকে কেউ একটা কিছু দিত না । আমাদের সেই বন্ধুটি মাঝেমধ্যে খাবার টাবার দিত।সেই ভিখারীটি একদিন শোনালো -“আমি এই রকম ছিলাম না। আমার বাড়ি গাড়ি সবই ছিল। এক সময় আমার এক মারাত্মক অসুখ হল । কিন্তু ইনস্যুরেন্স কে টাকা দিতে দিতে আমি আজ ভিখারী।“ আমাদের দেশে রোগ হলে একজন মুটে মজুরও যে কোনো হাসপাতালে চিকিত্সার সুযোগ পায়। এখানে হাসপাতালে ভর্তির আগে তোমার ইনস্যুরেন্স আছে কি-না দেখবে, নয়তো কেটে পড়। ইন্সুরেন্স থাকলে তারা তখনি ভর্তি কোরবে । পরে কিনতু মোটা অংকের বিল বাড়িতে পাঠাবে । অবশ্য ৬৫ বছরের উপর হলে চিকিত্সা ফ্রী। বাসে হাফ ফ্রী।
ঘরের বাইরে মানুষজনের চলাচল নেই । মানুষ দেখা যাবে অফিস, কারখানা, স্টোর,হোটেল আর বাস স্ট্যানড বা রেল স্টেশন গুলোতে। অফিস এবং স্টোরে কাজ করে প্রায় ৮০ ভাগ মেয়েছেলে। অফিসে যারা কাজ করে আপনি কোনো কাজে গেলে “মে আই হেল্প ইউ” বলে হাসিমুখে জিজ্ঞাসা কোরবে। যদি হাসিমুখে আপনার সাথে কথা না বলে আপনি কমপ্লেন কোরলে ওর চাকরি চলে যেতে পারে। অফিসে যারা কাজ করে তাদের দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাজ কোরতে হয় অথবা চাকা লাগানো চেয়ারে, বসে বসেই ঘুরে কাজ করে। এ টেবিল থেকে ও টেবিল নিয়ে যাবার জন্য পিয়ন নেই । নিজেই উঠে গিয়ে অন্য যায়গায় দিয়ে দেবে ।বে-সরকারী প্রতিষ্ঠানে অল্প সময়েই আপনার কাজ কোরে দেবে। কিন্তু সরকারী দফ্তর আমাদের দেশের মত খুব ঢিলে । আমাদের দেশে তবু যায়গা মত পয়সা দিলে তাড়াতাড়ি কাজ হয় । ওখানে ঘুষ-ঘাস লেনদেন ভীষণ অপরাধ । আমি যা দেখছি যে স্বরাষ্ট্র বিভাগ ছাড়া সব জায়গায় বে-সরকারী। ব্যাংকে আমাদের দেশে দেখেছি কতো কাউন্টার। এক এক রকম কাজের জন্য এক একটা কাউন্টার । এখানে আপনি যে কোনো ব্যাংকে, যে কোন ধরনের কাজেই যান,লাইনে দাঁড়ান। ম্যাক্সিমাম পাঁচ-সাত মিনিটের মধ্যে যে কোনো উইন্ডো থেকে ডাক আসবে। দশ-পনেরো মিনিটের মধ্যে কাজ ফিনিশ। এখানে কাজের ভাগাভাগি নেই। প্রত্যেক উইনডোতে যারা বসে তারা সব ধরনের কাজ কোরতে পারে।আবার ধরুন সিটি ব্যাংকে আপনার একাউন্ট আছে।আপনি সিটি ব্যাংকের যে কোনো ব্রাঞ্চে গিয়ে লেন দেন কোরতে পারবেন । স্টোরগুলোতে বা ব্যাংকে যারা কাজ করে বেশীর ভাগ মহিলা । ষ্টোরে এক-ই কর্মচারী মাল টানছে,সাজাচ্ছে আবার কাউন্টারে বসে সেল করছে , ক্যাশ নিচ্ছে। অফিস বা স্টোরে যারা ইনডোর ওয়ার্ক করে তাদের বেতন ঘন্টায় ১০-১২ ডলার । কিন্তু যারা কায়িক পরিশ্রমের কাজ করে তারা পায় ঘন্টায় ২০-২৫ ডলার । পোয়া বারো ডাক্তার আর উকিল দের । রূগী পিছু কমপক্ষে ১০০ ডলার । ৪-৫ জনের সংসারে মাসিক খাই খরচ খুব বেশি হলে ৪০০-৬০০ ডলার । নিজের ঘর না থাকলে ভাড়া গুনতে হবে ১০০০ ধেকে ১৬-১৮ শো ডলার ।
বাসে উঠলে এক ডলার । চাইলে অবশ্য ট্রান্সফার টিকিট একটা পাবেন । ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিচ্ছি । আমাদের দেশে মনে করুন আপনি বেহালা থেকে শ্যামবাজার অথবা গড়িয়াহাট যাচ্ছেন কিন্তু সব বাস শেষ পর্যন্ত ধর্মতলা যাবে। বেহালা থেকে কোনো বাসে ট্রান্সফার স্লিপ নিয়ে ধর্মতলায় নেমে গেলেন তারপর ধর্মতলা থেকে শ্যাম্বাজার গামী বাসে উঠে ঐ স্লিপ দেখালে আর পয়সা দিতে হবে না। ঠিক এই রকম ঐ স্লিপ দিলেই যেতে পারবে।দুর পাল্লার বাসে ভাড়া ১৮ ডলার। কিন্তু ট্রেনে ৩৭ ডলার। লাক্সারী দু’তলা ট্রেন, এজন্য ভাড়া বেশী।ক্যালিফোর্নিয়ায় অনেক শহর আছে যেখানে বাস ৫-১০ মিনিট ছাড়া ছাড়া ট্রেন যায়।ভাড়া ৫ ডলার। সানফ্রান্সিসকো শহরের কাছাকাছি শহরগুলিতে বার্ট ট্রেন চলে। শহরের বাইরের লোকজন নিজস্ব গাড়িতে এসে পার্কিং কোরে বার্ট ট্রেনে যাতায়াত করে। এই ট্রেন পানির ভিতর দিয়ে টানেলের মাধ্যমে অন্য শহর থেকে সানফ্রানসিসকোতে যাচ্ছে । বাস-ট্রেন সব ফাঁকাফাঁকা চলে। আজব ব্যাপার।বাস-ট্রেন ধরতে গেলে নিজের মোটর গাড়িতে কোরে স্টেশনে যেতে হবে।এদেশে ড্রাইভার কেউ রাখে না অথবা রাখার ক্ষমতা কারো নেই। নিজে নিজেই ড্রাইভিং কোরতে হবে।আমেরিকাতে সবার কেন মোটর গাড়ি ? ট্রান্সপোর্টেশনের পেছনে আছে বিরাট পুঁজিপতিদের কারসাজি। নতুন নতুন গাড়ি,পেট্রোল,পুলিস, লাইসেন্স,রাস্তাঘাট,ট্যাক্স ইত্যাদির স্বার্থে ব্যবসা কায়েম রাখতে সরকার পাবলিক ট্রান্সপোর্টেশন ব্যবস্থা করেনি। আমাদের যে হাসপাতাল আছে তার সামনে একটা বাস স্টপ ছিল।একদিন দেখি মোটরগাড়ী পার্কিং করার স্বার্থে বাস ষ্টপ হাফ কিলো মিটার দুরে সরে গেল। জনগনের মুখে কোনো রা-নেই, আসলে এখানে আমাদের দেশের মতো জনগন নেই
সকাল থেকে সন্ধা, সোম থেকে শুক্র, মাসের পর মাস আমেরিকার জন-জীবন চলছে সমান গতিতে। অন্য কোনো চিন্তার সময় কোথায় ? সপ্তাহান্তে শুক্রবার রাত্রে এবং শনিবার হ-ই হুল্লোড় করে কাটায়। গতকাল(৩০/৭/০৭)গিয়েছিলাম সরকারী হাসপাতালে চোখের পাওয়ার বেড়ে গেছে ,চশমা কাজ কোরছে না। মাথা ধরে । ১২-৩০টায় ফর্ম ফিল-আপ কোরলাম। ১৫ মিনিট পরে ডাক এল । কি করি কোথায় থাকি ইত্যাদি জেনেশুনে নামরেজিষ্ট্রি করার পর বোসতে বলল। ১-৩০ মিনিটে নাম ধরে ডেকে এক যায়গায় নিয়ে গিয়ে জিভের তলায় থার্মোমিটার দিল। মনে আছে, গিয়েছি চোখ দেখাতে । প্রেশার মাপল, আর কি হয় নাহয় জিজ্ঞাসা কোরলো।তারপর বোসতে বলল। এক ঘন্টা পরে আবার ডাক এলো।আমার মতো মোট জনা দশেক লোক আমার মতই বসে আছে।তাদের ধৈর্য আমাকে অবাক করল । ভদ্রতার খাতিরে অথবা আইনের কারনে জানিনা কারো মুখে রা নেই । ভিতরে যখন গেলাম আড়াইটা বাজে।ভিতরে গিয়ে বসে আছি,ভাবলাম এবার দেখবে। আধঘন্টা পরে একজন এসে গাউন দিয়ে গেল, বলল পরে বসে থাকুন ।চোখ দেখবে তা’ গাউন পরে কি হবে? আবার আধঘন্টা কেটে গেল। শেষমেষ সব ছেড়ে ছুড়ে, চোখ না দেখি্য়ে চলে এলাম।আমি ছাড়া সবাই কিন্তু বসে আছে।কেউ আমাদের দেশের মতো বলতে পারছে না “দাদা আর কতক্ষণ বসব ?‘’অর্থাৎ জনগণ নেই ।
আমাদের দেশের মতো এখানে পেটের রোগ হয় না । রোগ যা আছে, তা’ মুটিয়ে যাবার রোগ। প্রায় লোকের বেঢপ্ চেহারা।এক একজন তো কুইন্টল এর উপর । উপর থেকে পাছা পর্যন্ত মোটা। পায়ের দিক সরু।মেয়েরা খুব শীত ছাড়া অন্য সময় পরে হাফ-হাতা বা হাত-কাটা গেঞ্জী, নিচে শর্টস বা হাফপ্যান্ট অথবা স্নানের পর কোমরে তোয়ালে উচু কোরে জড়ালে যেমন লাগে তেমনি জিনসের চট জড়ানো। আমাদের দেশে পয়সা দিয়ে A মার্কা ছবি দেখে । এখনে রাস্তা ঘাটে ঐ ছবি । কিন্তু কেউ কারো দিকে তকিয়েও দেখে না । মেয়েরা কেউ কেউ হাঁটু পর্য্যন্ত প্যান্ট পরে, পুরুষরা পরে ফুলপ্যান্ট গোড়ালির নিচ পর্য্যন্ত । যুবকরা সেই সংগে কিছু বড়রাও এমন ভাবে প্যান্ট পরে, যেন এক্ষুনি পাছা থেকে খুলে পড়বে কিন্তু খুলছে না, আর ভিতরের জাঙ্গিয়া বা আনডারপ্যান্ট দেখা যাচ্ছে।এইটাই ফ্যাশান । এখানে দর্জি নেই। রেডিমেড মেশিনে সেলাই করা জামা কাপড়। নিয়মের বালাই নেই যার যা খুশি যেমন খুশি পরতে পারে।আমরা জামার নিচে গেঞ্জি পরি এরা কেউ কেউ ফুলহাতা জামার উপর রঙিন গেঞ্জী পরে। কেউ করো দিকে তাকিয়েও দেখে না এই সব অদ্ভুত পোষাকের দিকে। ছেলে ধেকে বুড়ো সব ন্যাড়া। নয়তো ছোটো ছোটো কোরে চুল ছাঁটা।কারো বাটি ছাঁট। মাথার উপরে মরুদ্যানের মত খানিকটা চুল আছে, বাকি সব চাঁচা। কারো কারো মেয়েদের মতো বড় বড় চুল।কেউবা বিনুনি করে, কারোর বা রোলান্ডহোর মত চুল। ছোটো চুলে কেউবা ক্রিম লাগিয়ে কদম ফুলের মতো খাড়া কোরে রেখেছে।মেশিনে চুল কাটে,লাগে ১০ ডলার । মেক্সিকান মেয়েরা ঠোঁটে, ভ্রুতে,চিবুকে,কানে,নাভিতে এমনকি জিভের তলায় চামড়া ফুটো কোরে নাক-কড়াই এর মতো অলংকার পরে। অনেক পুরুষের কানে রিং। মেয়ে-পুরুষ উভয়ের গায়ে, বুকে, বাহুতে, কোমরের নিচে পাছায় উল্কি কাটা।বলা বাহুল্য উল্কি দেখাবার জন্য ঐ জায়গাগুলো খোলা। বাসের ভিতর, বাসষ্ট্যান্ডে,ষ্টেশনে প্রকাশ্যেই হাম্ খাচ্ছে।এ সব দেখলে মনে হবে ‘এ’ মারকা মেক্সিকান ফিল্ম দেখছি । হ্যাঁ, যে কথা বলছিলাম এদের যে সব রোগ হয় প্রধানত তা’ হোলো দাঁতের, ব্রেনের আর মুটিয়ে যাওয়া। বেশীরভাগ লোকের দাঁত হলদে । হাটে-ঘাটে হাফ পাগলাদের দেখা যায় প্রচুর । এদের হেঁটে চলার বালাই নেই।সামান্য রাস্তা তাও গাড়ী।সকালে যখন আমরা মর্ণিং ওয়াক করি, তখন যে সমস্ত লোকেরা কাজ করে তারা কেউ রাস্তায় থাকে না, কিছু বয়স্ক ভদ্রলোক বা ভদ্র মহিলার সাক্ষাৎ পাই।দেখা হোলে হাত নেড়ে বলবে,হা-ই। আমরাও বলি হা...ই । কেউ কেউ আবার কুকুর সঙ্গে নিয়ে প্রাতঃভ্রমন করেন। এদের প্রত্যেকেরই বাড়িতে ভাল ভাল জাতের কুকুর আছে। কুকুরের সংগে সংগে প্রায় বাড়িতে বেশ মোটা তাজা বিকট চেহারার বিড়াল আছে । হাস্যকর ব্যাপার হল, ওরা কুকুর নিয়ে যখন রাস্তায় অথবা পার্কে হাঁটে, দেখি ভদ্রমহিলাদের ট্যাঁকে প্লাসটিকের প্যাকেট থাকে। রাস্তায় বা ঘাসের উপর কুকুর মলত্যাগ কোরলে সংগে সংগে প্লাসটিকের কাগজে মুড়ে ট্যাঁকে গুঁজে রাখবে। আশ্চর্য । কারণ রাস্তা বা ঘাস নোংরা করা বে-আইনি। রাস্তা ঘাটে,বাড়ী বা দোকানের গায় পোষ্টার নেই । এমনকি ভোট চলে গেল ,রাস্তাঘাটে খুব ভাল করে লক্ষ্য না করলে বোঝা যায় না যে ভোট হয়েছে। অ্যাড এর জন্য পোষ্টার নিয়ে এখানে মোড়ের মাথায় লোকেরা হাত দিয়ে ধরে এদিক-ওদিক নাড়ায় ।
এক একটা দোকান বিরাট বড়। দোকান বা ষ্টোরগুলোতে ষ্টেশনারী থেকে শুরু করে সর্ব রকমের জিনিস- তরিতরকারি,শাকসব্জী,মাছ,মাংস, ঔষধ,হার্ড-অয়ার,ইলেকট্রিক,ইলেকট্রনিকস, পোষাক-পরিচ্ছদ,শীতের পোষাক, বেডিংস,জুতো ইত্যাদি সব পাওয়া যাবে। বড় বড় দোকানে যেমন ওয়ালমার্ট,সেভমার্ট,সেফওয়ে,টারগেট প্রভৃতিতে প্রচুর খরিদ্দার। নিজের পছন্দ মত ট্রলিতে করে মাল কিনে দোকান থেকে বের হবার মুখে কাউন্টারে আছে, স্বল্প সংখ্যক কর্মচারী মেশিনের সামনে মাল রেখে ফটাফট হিসাব করে ছেড়ে দিচ্ছে । কোনো কোনো দোকানে কপি মেশিন থাকে।আমরা যেটাকে জেরক্স বলি।আলাদা লোক নেই। মেশিনের ঢাকনার নিচে কাগজ দিয়েগর্তে ১০ সেন্ট ঢুকিয়ে বোতাম টিপলেই কপি হবে। প্রত্যেক দোকানের বাহিরে বিরাট ফাঁকা জায়গা। সেখানে অন্তত বিশ-পঞ্চাশটা গাড়ী পার্কিং কোরতে পারবে। দোকান থেকে কোনোকিছু কেনার পর অপছন্দ হোলে একমাসের মধ্যে ফেরত দেওয়া যাবে।বিনা বাক্যব্যায়ে দাম ফেরত দেবে। এর জন্য দোকানে আলাদা কাউন্টার করে রেখেছে । অনেক লোক এই সুযোগ নিজের স্বার্থে কাজে লাগায়।কেউ হয়তো ক্যামেরা,হিটার বা এ.সি মেশিন নিয়ে দরকার মত ব্যবহার কোরে আবার সময় মত ফেরত দিয়ে দেয়।তবে খাঁটি আমেরিকানরা এ রকম করে বলে মনে হয় না। খবরের কাগজের দাম ৫০-৭৫সেন্ট।দোকানের বাহিরে একধারে বিভিন্ন কাগজের জন্য বিভিন্ন বাক্স বসানো থাকে । লক করা । কাচের ভিতর দিয়ে দেখা যায় কি কাগজ।গর্তে নির্দিষ্ট পরিমান পয়সা দিলে পুরো ঢাকনা খুলে যাবে ।এবার একটা কাগজ বের কোরে নিন। কেউ দেখছে না ,একাধিক কাগজ নিতে পারেন,কিন্তু এদেশে বিবেকে বাধবে।
আমাদের দেশ থেকে বহু লোক উচ্চ শিক্ষার জন্য আমেরিকা আসেন। ইউনিভার্সিটিতে যারা পড়ান তাঁরা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আমদানি করা। আমাদের ভারত বাংলাদেশ উপ-মহাদেশের লোক ও আছেন যাদের মধ্যে কারো কারোর সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। এ কথা বলছি এই কারণে যে এ দেশে ৭০ ভাগ লোক হাই স্কুল পড়ার পর ছেড়ে দেয়। প্রাইমারীতে আছে ওয়ান থেকে সিক্স গ্রেড পর্য্যন্ত। হাই স্কুলে সেভেন থেকে টুয়েলভ ক্লাশ পর্য্যন্ত।স্কুলের পড়াশুনার ব্যাপারে অনেক মজার দিক আছে। আঠারো বছর বয়স পর্য্যন্ত ছেলে মেয়েকে স্কুলে পড়াতেই হবে নয়তো বাপ-মায়ের জেল হতে পারে। এই বয়সে বিনা অনুমতিতে কোনো কাজ (job)কোরতে পারবে না।ঐ বাচ্চা বাচ্চা ছেলেরা টীচার দের আংকল বা আন্টি বলে ডাকতে পারবে না । ছাত্র শিক্ষক পরস্পর নাম ধরে ডাকে যেমন হা..ই, মিস্ ডুকার্ট । হা..ই , ফিটার(এরা প-কে ফ-উচ্চারণ করে)।আবার বয়স অনুযায়ী ক্লাশে ভর্তি করা হয় । যেমন আমার এক আত্মীয় ইন্ডিয়া থেকে থ্রী-ফোর পর্য্যন্ত পড়ে আমেরিকা এসেছে। বয়স এখন হবে প্রায় ১৬ বছর।ব্রেন ডেফিসিয়েনসি। এ-বি-সি-ডি কোনো রকমে পড়তে পারে,লিখতে পারে না ।বাংলা বা ইংরাজী বই ভালভাবে পড়তে পারে না। ঘড়িতে কটা বেজেছে টাইম বলতে পারে না । যোগ-বিয়োগ তো দুরের কথা এক থেকে একশো পর্য্যন্ত গুনতে পারে না। আমদের দেশে ক্লাশ ওয়ানের স্ট্যান্ডার্ড হলেও হতে পারে, সে এখানে বয়স অনুযায়ী ভর্তি হোল নাইনথ্ গ্রেডে । এখানে বাপ-মায়ের দায়িত্ব হল স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেবার আর স্কুলের দায়িত্ব ছেলের মান বা মেধা অনুযায়ী পড়ানোর । এই ভাবে সেই আত্মীয় ছেলেটী স্কুলে সে নিজের নাম, ঠিকানা,হাতের লেখা প্রাকটীশ করতে করতে টেনথ,ইলেভেন্থ গ্রেডে উঠে গেল। বাড়িতেও নিজের ছেলে-মেয়েকে কোনো বাপ-মা মারধোর করতে পারবে না । ছেলে ৯-১-১ কল করলে পুলিশ বাপ-মাকে ধরে নিয়ে যাবে । ছেলে মেয়ে স্কুলে পড়তে না পারলে কোনো মার বা ধমকি নেই। মাস্টারের বিরুদ্ধে রিপোর্ট হলে মাস্টার মশাইএর চাকুরি চলে যাবে। প্রত্যেক স্কুলে দেখেছি পুলিশ মোতায়েন থাকে। অল্প-স্বল্প বদমাইসি কোরলে ওয়ার্নিং দেয় অথবা গন্ডির মধ্যে দাঁড় করিয়ে দেয় । বেশী করলে ট্রান্সফার করে অথবা পুলিশএর হাতে তুলে দিতে পারে । বাড়িতে কেউ টিউটর রাখে না অথবা এ কথা বলা যায় স্কুলে যে ভাবে যত্ন নিয়ে পড়ায় বাড়িতে বিশেষ পড়তে হয় না ।স্কুল শিক্ষার পিছনে আমেরিকা প্রচুর প্রচুর ডলার খরচ করে । শিক্ষকরা দেখেছি প্রত্যেকটা ছাত্রের পিছনে প্রচুর খাটে ।এবং খুবই ডিউটিফুল । প্রিণ্ট করা অবজেক্টিভ ধরনের কিছু ইংরাজী ও অংক বাড়ির কাজ হিসাবে দেয়। আমেরিকানদের অংকে মাথা মোটা । কম্পিউটারে ২+৩=৪ বললে তাই মেনে নেবে । দোকানে কত দাম দিলে কত ফেরৎ দেবে তাও কম্পিউটার দেখে বলবে । কালোরা বা এশিয়ানরা পড়াশুনায় বিশেষ করে অংকে এগিয়ে। সারা দিনে ৫-৬ ঘণ্টা সময়ের ভিতর ৫ পিরিয়ড হয়। প্রত্যেক পিরিয়ডের পর ১০-১৫ মিনিট খেলা। ১২টার সময় ২০-৩০ মিনিটের লাঞ্চ । ওয়ান থেকে ফিফথ গ্রেড পর্যন্ত সারা বছর একজন ক্লাশ টীচার সব সাবজেক্ট পড়ায় । প্রত্যেক স্কুল এর লাগোয়া একটা বড় পার্ক এবং রংচং করা খেলার সরঞ্জাম যেমন বার,টানেল ইত্যাদি থাকবেই । আমাদের এখানে যে সমস্ত ছেলেমেয়েরা পড়ছে দেখছি ফ্রি লাঞ্চ,ফ্রী বই,খাতা । মাঝে মাঝে বাপ-মা দের ডেকে প্রগ্রেস শোনায় । সব ব্যবস্থা ভালো আছে কিন্তু নেই শুধু কড়া শাসন এবং যা আছে তা হল বছর পার হলে উপর ক্লাশে তুলে দেওয়া । যার জন্য কিছু ছাত্র ছাড়া বাকি সব হৈ চৈ করে সারা বছর কাটায়।বারো ক্লাসে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে। জি ই ডি পাশ কোরতে ১৮ বছর পার হয়। এবার চাকুরির বয়স হয়ে গেল ।
আর একটা ব্যাপার আমরা জানি যে আমেরিকায় আইন বা আইনি শাসন সবার ঊপরে । কয়েকদিন আগে আমার এক আত্মীয় গাড়ী কিনবে তাই এক কার-ডিলারের কাছে গিয়েছিলাম । লোকটির বাড়ী লেবাননে। নাম নাবিল আহমেদ । লোকটির সংগে অনেক বিষয়ে কথা হল ।কতদিন আমেরিকায় আছেন -এই প্রসঙ্গে যা বলল তা’আমি শুনে তাজ্জব । আহমদ আগে এই Car-শপের কর্মচারি ছিল। মালিক ছিল একজন ইহুদি । ১০|১৫ বছর আগে নাকি প্যালেসটাইন এর সঙ্গে লেবাননের সংঘর্ষ হয়। আহমদের কথায় রাজনৈতিক এই ঘটনার জের হিসাবে সেই দোকানের ইহুদি মালিক গুলিভরা পিস্তল নিয়ে আমাকে তাড়া করল মারবার জন্য । মালিক ধরা পড়ে গিয়েছিল। বিচারে মালিকের ১৫ বছরের জেল হল। এখন তার দোকানের পুরাপুরি মালিক এখন আমি ।সেই ইহুদি জেল থেকে চেয়েছিল মিউচুয়াল করার জন্য। নাবিল তার জন্য চেয়েছে ৫০ লাখ ডলার যা সেই মালিকের ক্ষমতার মধ্যে এখন নেই । ধন্যবাদ দিচ্ছি বিচারক ও বিচার-ব্যবস্থাকে । প্রমানিত হলে অপরাধীর কোনো ছাড় নেই অর্থ দিয়ে বা প্রভাব খাটিয়ে বাঁচা যাবে না ।
আমেরিকাতে সরকারী ছুটির দিন খুব কম । ৫-৬টা উৎসব । একত্রিশে অক্টোবর রাতে যে উৎসব হয় তা’ হল হলউইন । একমাস আগে থেকে২৫০গ্রাম থেকে ১০-২০ কিলো ওজনের কুমড়ো বিক্রি হচ্ছে ।কুমড়ো গুলো কেটে কেটে ভুত তৈরী করে বাড়ীর সামনে সাজানো থাকে । এ দিন রাত্রে ভুতুড়ে ফিল্ম দেখা,অদ্ভুত অদ্ভুত পোষাক পরে ঘোরা আর নিজেদের বাড়িকে ভুতুড়ে পরিবেশ বানানোতে হলউইন এর মজা ।পুর্বপুরুষদের আত্মারা এই দিন আসে বলে এদের বিশ্বাস । এরপর নভেম্বর এর চতুর্থ বৃহস্পতিবার হল থ্যাংকসগিভিং ডে । কেউ কেউ টার্কি ডে বলে । ফসল কাটার পর ধন্যবাদ থেকে এই উৎসব শুরু হয়েছিল।১৬২১ খৃষ্টাব্দে ভার্জিনিয়াতে প্লাইমাউথের নয়া বাসিন্দারা নেটিভ আমেরিকানদের কাছ থেকে চাষ শিখে প্রথম ফসল কাটা উৎসব পালন করে ছিল । এ দিন ভাল মন্দ খাওয়া ********
২| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১১ বিকাল ৩:৫৪
পাখা বলেছেন: +++
৩| ০৫ ই আগস্ট, ২০১১ বিকাল ৩:৩৬
এম নূরুজজামান বলেছেন: আমার কি সৌভাগ্য সামুতে এত দিন পর একটা মন্তব্য পেলাম। ধন্য পাখা,ধন্য সামু
৪| ০৭ ই আগস্ট, ২০১১ রাত ১১:৪৪
একাকী বালক বলেছেন: ভাল লাগল। প্লাস।
০৮ ই আগস্ট, ২০১১ সকাল ১০:৫৩
এম নূরুজজামান বলেছেন: আপনার ভাল লেগেছে জেনে আমার ও ভাল লাগল
©somewhere in net ltd.
১|
১৭ ই জুন, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:২৫
এম নূরুজজামান বলেছেন: পড়ে ভাল লাগলে পরের অংশ প্রকাশিত হবে