![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কোনটা বাস্তব, কোনটা কল্পনা, কোনটা আলো, কোনটা হতাশা, কোনটা ছায়া, কোনটা মরিচিকা......। অচেনা হিমালয়ের জগতে সব মিলে-মিশে একাকার......!!
******* জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলিঃ জহির রায়হান *******
-----------------------------------------------------------
"জহির রায়হান তো এক বিখ্যাত সাংবাদিক আছিলো, বুঝলা? ফিল্মও ভি বানাইত। একাত্তর সালে গণ্ডগোলের সময় আওয়ামী লিগ নেতারা যখন পলায়া গিয়া কলকাতায় খারাপ পাড়ায় আকাম কুকাম করতেছিলো, তখন এই ব্যাটা হেইডি ভিডু কইরা একটা ফিল্মই বানায়া ফেললো। হের কাছে আরও তথ্য আছিলো, ফাঁস কইরা দিতে চাইছিলো। হ্যাঁর লাইগাই তো শেখ মুজিবে দেশে ফিরাই তারে গুম কইরা ফেললো। আহারে, বড় ভালো লোক আছিলো।"
কিংবা,
"এই যে আজ কিছু লোক গোলাম আজম সাহেব, নিজামী সাহেবদের বিরুদ্ধে একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যার মত জঘন্যতম অভিযোগ এনে অপপ্রচার চালায়, আসল সত্যটা জানলে তো এদের পেট খারাপ হয়ে যাবে। আসল সত্যটা হচ্ছে, একাত্তরের গণ্ডগোলের সময় আসলে ভারতীয় সেনারা মুক্তিযোদ্ধার ছদ্মবেশে খুন, ধর্ষণ করে পাকিস্তানী সেনাদের উপর দোষ চাপিয়েছিল। শুধু তাই নয়, যুদ্ধের পর দেশে ফিরে যাবার সময় তারা সবকিছু লুটপাট করে নিয়ে গেছে। জহির রায়হান এসব জানতেন। তার কাছে সব প্রমাণ ছিলো। আর সেগুলো ফাঁস করে দিতে চেয়েছিলেন বলেই শেখ মুজিবের নির্দেশে “র” এর এজেন্টরা তাকে গুম করে ফেলে। নইলে স্বাধীন দেশে একটা জলজ্যান্ত মানুষ কিভাবে গুম হয়ে যাবেন?"
...
প্রথম প্যারাটা ক্লাস নাইনে পড়ার সময় হামিদ স্যার “সময়ের প্রয়োজনে” পড়াতে গিয়ে বলেছিলেন। আর দ্বিতীয় প্যারাটা ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় “কিশোর কণ্ঠ” পাঠচক্রে শিবিরের এক সফেদ সৌম্য চেহারার শুয়োরের মুখে শোনা।
অনেকদিন পর্যন্ত কথাগুলো আমাকে তাড়িয়ে বেড়িয়েছিলো। তারপর একদিন “সময়ের প্রয়োজনে” গল্পটা পড়লাম। অনেকক্ষণ চুপচাপ বইটা জড়িয়ে ধরে বসেছিলাম সেদিন। চোখের পানিতে পাতাগুলো ভিজে একাকার হয়ে গিয়েছিলো। তারপর থেকে কতোবার যে গল্পটা পড়েছি, ইয়ত্তা নেই। মুসলিম বাজার বধ্যভূমিটার উপর বিশালকায় মসজিদটা কিংবা পাশেই ওই সাদা পানির পাম্পটা...! কতদিন গিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকেছি, নিজেও জানি না। জহিরের কথা মনে পড়তো... ওই যে হালকা গড়নের সদা হাস্যেজ্জ্বল মানুষটা, পকেটে মাত্র ছয় আনা নিয়ে একটা রঙিন সিনেমা বানিয়ে ফেলতো যেই বিস্ময়কর জাদুকর... সেই জহির রায়হানের কথা...!
...
হাতের কাছে যা আছে, তাই দিয়ে সিনেমা বানাবো - এই ছিল মানুষটার মন্ত্র। অসম্ভব প্রতিভাধর ছিলেন। যা চাইতেন, নিখুঁত দক্ষতায় সেটা নামিয়েও আনতেন।
১৯৫৭ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে “জাগো হুয়া সাভেরা” দিয়ে চলচ্চিত্রে পা রাখা সেই ছেলেটা তারপরের ১৩ বছর উপহার দিয়ে যান 'সোনার কাজল' (১৯৬২), 'কাঁচের দেয়াল' (১৯৬৩), 'সঙ্গম' (উর্দু : ১৯৬৪), 'বাহানা' (১৯৬৫), 'বেহুলা' (১৯৬৬), 'আনোয়ারা' (১৯৬৭), আর 'জীবন থেকে নেয়া' (১৯৭০)’-এর মতো অসামান্য সব চলচ্চিত্র।
অমিত প্রতিভার স্বাক্ষর হয়ে এই সময়েই একে একে প্রকাশিত হয় তার 'শেষ বিকেলের মেয়ে', 'আরেক ফাগুন', 'বরফ গলা নদী', 'আর কত দিন'-এর মত কালজয়ী সব উপন্যাস; সূর্যগ্রহণ (১৩৬২ বাংলা), তৃষ্ণা (১৯৬২), একুশে ফেব্রুয়ারি (১৯৭০), কয়েকটি মৃত্যু-এর মত অভূতপূর্ব গল্পগ্রন্থ। ৭০-এর শেষদিকে তার উপন্যাস “আর কত দিন”-এর ইংরেজি ভাষান্তরিত চলচ্চিত্র “লেট দেয়ার বি লাইট”-এর কাজে হাত দেন জহির। কিন্তু একাত্তরের সেই অভূতপূর্ব বিভীষিকা থামিয়ে দেয় সব...।
...
একাত্তর জহিরের জীবনকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলো এক বিচিত্র সমীকরণের সামনে। ৫২’র ভাষা আন্দোলনের ১৪৪ ধারা ভাঙ্গা প্রথম ১০ জনের একজন ক্র্যাক জহির রায়হান একাত্তরের পুরোটা সময় প্রাণ হাতে করে ছুটে বেড়িয়েছেন রক্তাক্ত বাঙলার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। সামান্য কিছু যন্ত্রপাতি আর আদ্দিকালের একটা ক্যামেরা সম্বল করে বানিয়েছেন গণহত্যার উপর নির্মিত পৃথিবীর ইতিহাসের অবিসংবাদী সেরা পাঁচটি ডকুমেন্টরির একটি - “স্টপ জেনোসাইড” (লেখকের নিজস্ব মতামত)। তুলে ধরেছিলেন পাকিস্তানী শুয়োরদের বর্বরতা আর নৃশংসতার এক অনবদ্য উপাখ্যান।
“বার্থ অফ আ নেশন” ছিল তার সৃষ্টি, বাবুল চৌধুরীর 'ইনোসেন্ট মিলিয়ন' আর আলমগীর কবীরের 'লিবারেশন ফাইটারস'-এর পেছনের কুশীলবও ছিলেন তিনি। একাত্তরের রক্তাক্ত জন্ম ইতিহাসের অসংখ্য অধ্যায়ের খবর জানা ছিলো তার। তাই দেশে ফেরার পর যখন বুদ্ধিজীবি হত্যা ও গণহত্যার তথ্য অনুসন্ধান এবং ঘাতকদের ধরার জন্য একটি কমিশন গঠন করলেন, তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে একটুও দেরি করেনি আলবদরের শুয়োরগুলো।
...
এ বি এম খালেক মজুমদার ছিলো একাত্তরের কুখ্যাত আলবদর কমান্ডার। জহির রায়হানের বড় ভাই শহীদুল্লাহ কায়সারকে কালো কাপড়ে চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে যাবার সময় তাকে চিনে ফেলেছিলেন শহীদুল্লাহ কায়সারের স্ত্রী পান্না কায়সার। সেই মুহূর্তের বর্ণনা দিয়ে পান্না বলেছিলেন, "যখন ওকে (শহীদুল্লাহ কায়সার) অন্ধকার ঘর থেকে টান দিয়ে আমার সঙ্গে বারান্দায় নিয়ে এলো, পেছন থেকে ওর হাতটা ধরে আমিও বারান্দায় গেলাম। গিয়ে তাড়াতাড়ি সুইচটা অন করে দিলাম। সব আলো হয়ে গেলো। সবার মুখে মুখোশ। আমার ননদ পাশ থেকে দৌড়ে এলো। ও তখন সন্তানসম্ভবা। উপায়ান্তর না পেয়ে একজনের মুখের কাপড়টা টান দিয়ে খুলে ফেললো। সে-ই ছিলো খালেক মজুমদার (এ বি এম খালেক মজুমদার)।"
...
পাকিস্তানীদের প্রপোগান্ডার বিরুদ্ধে জহির রায়হানের সাক্ষাতকার :
দেশে ফিরে দাদার নিখোঁজ হবার খবর পেয়ে একেবারে ভেঙ্গে পড়েন পাথর-কঠিন মানুষটি। দাদাই যে ছিলো তার সবচেয়ে বড় আপনজন! দাদা আর নেই - এটা তাকে কোনোভাবেই বিশ্বাস করানো যায়নি। উদ্ভ্রান্তের মত তিনি খুঁজতে শুরু করেন দাদাকে।
কয়েকদিনের মাথায় বুদ্ধিজীবি হত্যা ও গণহত্যার তথ্য অনুসন্ধান এবং ঘাতকদের ধরার জন্য একটি কমিশন গঠন করেন জহির। তিনিই ছিলেন এই কমিটির চেয়ারম্যান, আর সদস্য সচিব ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের বাশারত আলী। প্রতিদিন শত শত স্বজনহারা মানুষ আসতেন এই কমিটির অফিসে। জহিরের এই ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিশন প্রথমেই খালেককে গ্রেফতার করাতে সক্ষম হয়। খালেককে গ্রেফতার করাবার পর প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে জহির বলেন, বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের পেছনে থাকা সাম্প্রদায়িক মৌলবাদ শক্তির ব্যাপারে প্রায় সব তথ্ তিনি গুছিয়ে এনেছেন। এখন শুধু জাতির সামনে উন্মোচনের অপেক্ষা।
এরপর আর জহিরকে বাঁচিয়ে রাখার ঝুকি নিয়ে চায়নি নিজামি-মুজাহিদের আলবদর কিলিং স্কোয়াড...
...
হঠাৎ একদিন সকালে একটা ফোন পেলেন জহির রায়হান। সেদিন ছিলো ৩০শে জানুয়ারি। এর কয়েকদিন আগ থেকেই রফিক নামের এক ব্যক্তি জহিরকে আশ্বাস দিয়ে আসছিলো যে, শহীদুল্লাহ কায়সার বেঁচে আছেন। তাকে জীবিত পাওয়া যাবে। জহিরের চাচাতো ভাই শাহরিয়ার কবির বহুবার এই রফিককে ফ্রড এবং ধাপ্পাবাজ বলে জহিরকে বোঝাতে চাইলেও দাদার শোকে পাগল প্রায় জহির তাতে কর্ণপাত করেননি। এটাই হলো তার কাল। দাদাকে শুধু একটাবারের জন্য ফিরে পেতে পৃথিবীর সবকিছু দিতে রাজি ছিলেন জহির। সেই সুযোগটাই নিয়েছিলো শুয়োরগুলো...
রফিককে ৩০শে জানুয়ারির পর আর খুঁজেও পাওয়া যায়নি।
...
সেদিন সকালে ‘মাস্তানা’ নামে এক বিহারী নৃত্য পরিচালক জহিরকে ফোন দিয়ে জানায়, তার বড় ভাই শহীদুল্লাহ কায়সার-সহ আরও কিছু বুদ্ধিজীবীকে মিরপুরে বিহারীরা আটকে রেখেছে। যদি সেদিনের মধ্যে তিনি নিজে উপস্থিত না হন, তবে তার ভাইকে আর পাওয়া যাবে না। কিন্তু মিরপুর তো বিহারীদের দখলে! কীভাবে তিনি সেই মৃত্যুপুরীতে যাবেন?
কাকতালীয়ভাবে ঠিক সেদিনই বঙ্গবন্ধুর সামরিক সচিব মইনুল হোসেন চৌধুরী সশরীরে এসে নির্দেশ দিয়ে গিয়েছিলেন, মিরপুরের বিহারীদের কাছে থাকা অস্ত্র উদ্ধার করে মিরপুর স্বাধীন করতে। সে উদ্দেশ্যেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় বেঙ্গল রেজিমেন্ট অভিযান চালাবার সিদ্ধান্ত নেয়। এর আগ পর্যন্ত ভারতীয় সেনাবাহিনী পুরো মিরপুর ঘিরে রেখেছিলো। জহির ফোনটা রেখে বেরিয়ে গেলেন। সকালের নাস্তাটা ওভাবেই পড়ে রইলো। ওই তার বেরিয়ে যাওয়া...
...
মিরপুর বিহারী এবং পাকিস্তানী সেনাদের দখলে থাকায় সেখানে সিভিলিয়ানদের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিলো। তাই চাচাতো ভাই শাহরিয়ার কবির-সহ বাকিরা আর জহিরের সাথে মিরপুরে ঢুকতে পারেননি। সেনাদের কন্টিনজেন্টে একমাত্র সিভিলিয়ান ছিলেন জহির। সেনারা বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয়ে ছড়িয়ে পরে পুরো মিরপুরে। এর মধ্যে মিরপুর সাড়ে ১১নম্বর ধরে ১২ নম্বর সেকশনের দিকে যে দলটি গিয়েছিলো, তাতে ছিলেন জহির। দলটিতে ছিলো প্রায় ৪৫-৫০ জন সেনা।
গাড়িগুলো মিরপুর সাড়ে ১১ হতে ধীরে ধীরে মিরপুর ১২'র দিকে এগিয়ে যেতে যেতে সাদা পানির ট্যাংকটার সামনে এসে থামে। হঠাৎই সকাল এগারোটার দিকে আচমকা কয়েকশো বিহারী এবং সাদা পোশাকের ছদ্মবেশে থাকা পাকিস্তানী সেনারা ভারী অস্ত্র এবং ড্যাগার কিরিচ নিয়ে আল্লাহু আকবর স্লোগান দিতে দিতে এই দলটির উপর হামলা করে।
প্রথম ব্রাশফায়ারেই লুটিয়ে পড়েন জহির। একটু পর বিহারীগুলো প্রচণ্ড আক্রোশে, জানোয়ারের হিংস্রতায় কুপিয়ে, খুঁচিয়ে, গুলি করে হত্যা করে প্রায় সবাইকে। তারপর কোপাতে কোপাতে লাশগুলো টেনে নিয়ে যায় মুসলিম বাজারের নুরী মসজিদের পেছনের ডোবার দিকে। বাঙলা ইতিহাসের সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রকারের খণ্ডবিখণ্ড দেহ পড়ে থাকে কচুরিপানা ভরা এক মজা ডোবায়...।
...
২৮ টা বছর ওরা জহিরের মৃত্যু নিয়ে মিথ্যাচার করেছে। একটা মিথ্যা একশবার বললে ধ্রুব সত্যের মত শোনায়। ২৮ টা বছর ধরে ওরা সত্যপুত্র যুধিষ্ঠির হয়ে শুনিয়েছেঃ
"একাত্তরে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী, রাজাকার, আল-বদরেরা কোনো গণহত্যা চালায়নি, "মুক্তিযোদ্ধা" নাম ধরে সব করেছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। আওয়ামী লীগ নেতারা কলকাতার বেশ্যালয়ে ফুর্তি করেছে একাত্তরের নয় মাস, এই সকল তথ্য আর প্রমান জহির রায়হানের কাছে ছিলো, তাই শেখ মুজিবের নির্দেশে “র” তাকে গুম করে ফেলে।"
২৮ টা বছর নিজামি-মুজাহিদ আর গোলাম আজমের মত পাকিস্তানী শুয়োরগুলো সভ্যতার এই জঘন্যতম মিথ্যাচার করে গেছে বিরামহীন, একটা দেশের জন্ম পরিচয়কে মুছে ফেলতে চেয়েছে নিকৃষ্টতম ষড়যন্ত্রে...
...
তারপরই এলো ১৯৯৯ সাল।
১৯৯৯ সালে মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের মুসলিম বাজারে আবিষ্কৃত নূরী মসজিদ সম্প্রসারণ কাজ চলবার সময় শ্রমিকেরা মাটির সামান্য নিচে কংক্রিটের স্লাব দিয়ে মুড়ে দেওয়া একটা কুয়ো পায়। নির্মাণ শ্রমিকরা কৌতূহলবশত স্লাবটা ভেঙ্গে ফেলার সাথে সাথে বেরিয়ে আসে ২৮ বছরের পুরনো নির্মম ইতিহাস। তিনটি মাথার খুলি এবং বেশ কিছু হাড়সহ কাপড়চোপড় বেরিয়ে এলে শ্রমিকেরা ভয় পেয়ে যায়। আবিষ্কৃত হয় একাত্তরের এক অকল্পনীয় নির্মমতার ইতিহাস। কমপক্ষে ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার শহীদের শেষ ঠিকানা, মুসলিম বাজার নূরী মসজিদ বধ্যভূমি…।
...
পরের দিন সংবাদ মাধ্যমে ব্যাপারটা প্রকাশিত হলে সাড়া পড়ে যায় শহীদদের স্বজনদের মাঝে। খবরটা পৌঁছে যায় বাবার খোঁজে পাগলপ্রায় পুত্র অনল রায়হানের কাছেও। তৎকালীন ভোরের কাগজের রিপোর্টার (বর্তমানে ডেইলি স্টারে কর্মরত) জুলফিকার আলি মানিক এই খবরটি কাভার করছিলেন। অনলের সাথে কথা বলবার পর তিনি জোরে সোরে অনুসন্ধান শুরু করলেন। সম্মিলিত অনুসন্ধানে পাওয়া গেল ৩০ শে জানুয়ারির সেই যুদ্ধে উপস্থিত থাকা এক সেনা সদস্যের। আমির হোসেন নামের এই সৈন্য সেদিনের সেই দুঃস্বপ্নের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন,
"আমাদের সাথে যে সাংবাদিক ছিলেন, তিনি কালো মতো একটা প্যান্ট পরেছিলেন। সাদা জামা এবং তার ওপর হলুদ রঙের সোয়েটার ছিলো তার গায়ে। আমাদের উপর যখন হামলা হয়, তখন দেখলাম তিনি বুকে হাত চেপে ধরে ওখানে একটা দেয়াল ছিলো, তার গায়ে পড়ে গেলেন। দেখলাম, ওনার কাপড় রক্তে ভেসে যাচ্ছে। তারপর আমি কিছুদূরে একটা গাছের পেছনে আশ্রয় নিয়ে দেখি, কয়েকশো বিহারী ড্যাগার আর কিরিচ নিয়ে আল্লাহু আকবর স্লোগান দিতে দিতে এগিয়ে আসলো। তারপর তারা মাটিতে পড়ে থাকা দেহগুলো কোপাতে কোপাতে টেনে পানির ট্যাংকের পশ্চিম দিকে টেনে নিয়ে গেল। তারপর আর আমি সেই লাশগুলোকে খুজে পাইনি।"
...
১৯৯৯ সালের ১লা সেপ্টেম্বর জুলফিকার আলি মানিকের প্রতিবেদন ‘’নিখোঁজ নন, গুলিতে শহীদ হয়েছিলেন জহির রায়হান’’ হইচই ফেলে দেয় সর্বত্র। এদিকে একই বছরের ১৩ আগস্ট সাপ্তাহিক ২০০০-এ (বর্ষ ২ সংখ্যা ১৪) বাবার নিখোঁজ রহস্য উন্মোচন করে প্রকাশিত হয় জহির রায়হানের পুত্র অনল রায়হানের প্রচ্ছদ প্রতিবেদন "বাবার অস্থির সন্ধানে"...।
...
তিনি যদি থাকতেন তাহলে আমাদের চলচ্চিত্রকে আরো অনেক অনেক উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারতেন। আমাদের সাহিত্যকে করতে পারতেন আরো সমৃদ্ধ। দুর্ভাগ্য এই জাতির, দুর্ভাগ্য এই দেশের, বড়ই অসময়েই আমরা তাকে হারিয়েছি। এই দুঃখ, শোক, আজীবন এই জাতি বয়ে বেড়াবে।
আজকে এই মহান মানুষটির জন্মদিন...
শুভ জন্মদিন জহির রায়হান।
...
শহীদুল্লাহ কায়সার, আলতাফ মাহমুদ, জহির রায়হানদের অপেক্ষায় মহাকাল। কোথায় ওরা? কোথায়?
...
তথ্যসূত্রঃ
১। ডেথ অফ আ জিনিয়াসঃ Click This Link
২। জামাতে মওদুদীর খালেক মজুমদারঃ এ ঘাতককে চিনে রাখুনঃ Click This Link
৩। জহির রায়হানঃ হারিয়ে যাওয়া এক সুর্যসন্তানঃ http://sovyota.com/?p=1094
৪। জহির রায়হান : অন্তর্ধান বিষয়ে ১৯৭২ সালের একটি লেখাঃ Click This Link
৫। লেট দেয়ার বি লাইটঃ http://www.sachalayatan.com/node/40657
১৯ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ৯:২২
অচেনা হিমালয় বলেছেন: ধন্যবাদ
২| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ৯:৩০
সাহসী সন্তান বলেছেন: জহির রায়হান আমার খুবই প্রিয় একজন লেখক! আমি পেস্টের পুরো অংশটা এখনো পড়ি নাই! পরে সময় করে ভাল ভাবে পড়বো বলে পোস্টটা বুর্কমার্ক করে রাখলাম! তবে আপনাকে ধন্যবাদ প্রিয় লেখককে নিয়ে লেখার জন্য!
শুভ কামনা জানবেন!
২০ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১২:৪৭
অচেনা হিমালয় বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ
৩| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১০:১৪
গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: আমার পাশের গ্রামের মানুষ , আল্লাহ উনাকে জান্নাত নসিব করুন ।
©somewhere in net ltd.
১|
১৯ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ৯:০৬
প্রামানিক বলেছেন: জহির রায়হানের নিখোঁজ হওয়ার অনেক তথ্য জানা হলো। ধন্যবাদ