নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি বাঙ্গালী। বাংলা আমার অহংকার।

অচেনা হিমালয়

কোনটা বাস্তব, কোনটা কল্পনা, কোনটা আলো, কোনটা হতাশা, কোনটা ছায়া, কোনটা মরিচিকা......। অচেনা হিমালয়ের জগতে সব মিলে-মিশে একাকার......!!

অচেনা হিমালয় › বিস্তারিত পোস্টঃ

শুভ জন্মদিন ক্র্যাক প্লাটুনের মাস্টারমাইন্ড খালেদ মোশাররফ (বীর উত্তম)!!!

০১ লা নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:৫৬



শুভ জন্মদিন খালেদ মোশাররফ (বীর উত্তম)!!!
=================================
.
"৭ই নভেম্বর, ১৯৭৫। ১০ম বেঙ্গল রেজিমেন্ট। শেরে বাংলা নগর। অফিসার্স ক্যান্টিন।
.
পরোটা আর গরুর মাংস দিয়ে নাস্তা করছেন জেনারেল খালেদ মোশাররফ, লেফট্যানেন্ট কর্নেল এটিএম হায়দার এবং কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদা। এর আগে রাত ১২টার দিকে শ্রেণিহীন সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার রোমান্টিসিজম মাখা অভিলাষ বাস্তবায়নে পুরো ক্যান্টনমেন্টকে উন্মত্ত ষাঁড়ের মত খেপিয়ে তুলে খালেদের বিরুদ্ধে ক্যু করেছে জাসদের বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা; সুপরিকল্পিতভাবে খালেদকে ভারতের চর, দেশ বিক্রি করে দেওয়া দালাল হিসেবে প্রচার করে গণ্ডায় গণ্ডায় লিফলেট বিলিয়ে প্রত্যেকটা সেনার মগজে ঢুকিয়ে দিয়েছে বিচিত্র এক স্লোগান, "সেপাই সেপাই ভাই ভাই, অফিসারের রক্ত চাই"।
.
খালেদ সবই শুনেছেন। কিন্তু তার পাথুরে শান্ত মুখাবয়ব দেখে তা বোঝার উপায় নেই। মুক্তিযুদ্ধের সময় ১০ম বেঙ্গল রেজিমেন্টটা খালেদ নিজের হাতে বানিয়েছিলেন, এই রেজিমেন্টের সেনারা সবাই তার খুব আপন, খুব চেনা। এদের নিয়েই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চিন্তা ঘুরছিল হয়তো মাথায়, হঠাৎ করেই শোরগোল উঠলো বাইরে। আচমকা একজন বিপ্লবী হাবিলদার আর কয়েকজন সৈন্য নিয়ে মেজর জলিল আর মেজর আসাদ প্রবেশ করলো ক্যান্টিনে। পাশেই ১০ম বেঙ্গলের কমান্ডার কর্নেল নাজমুল হুদা, সেদিকে কোন ভ্রূক্ষেপ না করেই সেনাপ্রধানের সামনে চিৎকার করে সে বলল:
-- আমরা তোমার বিচার চাই।
পাথুরে চোয়াল বদ্ধ খালেদের গলাটা আশ্চর্যরকম শান্ত শোনাল, "ঠিক আছে, তোমরা আমার বিচার করো, আমাকে তোমাদের কমান্ডিং অফিসারের কাছে নিয়ে চলো।"
স্বয়ংক্রিয় রাইফেল বাগিয়ে হাবিলদার চিৎকার করে বললো, "আমরা এখানেই তোমার বিচার করবো।"
.
খালেদ বুঝতে পারলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী মেজরদের মতো ওদের অর্ডারটাও কমান্ডিং অফিসারের কাছ থেকে আসেনি। কমান্ডিং অফিসারদের এরকম অর্ডার দেবার দূরদর্শিতা থাকে না। দে আর স্পেসিফিক, দ্যা অর্ডার ইজ স্পেসিফিক। উদ্যত বন্দুকের সামনে একটা পলকও পড়ল না, ঠাণ্ডা চোখে ঋজু ভঙ্গিতে বসে থাকা মানুষটাকে হঠাৎ অকুতোভয় টাইগার বলে বিভ্রম হল:
-- ঠিক আছে, তোমরা এখানেই বিচার করো।
.
ট্যাঁরররর শব্দে গর্জে উঠলো অটোম্যাটিক। মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন খালেদ মোশাররফ। সেই খালেদ মোশাররফ, যিনি যুদ্ধক্ষেত্রে কমান্ডার হিসেবে কিংবদন্তী ছিলেন, সেক্টর কমান্ডার হয়েও যুদ্ধক্ষেত্রের পেছনে বসে যুদ্ধ পরিচালনার বদলে অস্ত্র হাতে বাঘের গর্জনে ঝাঁপিয়ে পড়তেন শত্রুর ওপর, এক হাতে সিগারেট টানতেন আর আরেক হাতে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে স্টেনগান চালাতেন, যুদ্ধ করতে করতে যুদ্ধ পরিচালনা যার নীতি ছিল...
.
সেই খালেদ মোশাররফ, যার অসম সাহসী পরিকল্পনায় পাকি জেনারেল টিক্কা খানের দম্ভ ভরে দেওয়া ঘোষণা( জুন মাসের মধ্যেই ঢাকা চট্টগ্রাম রেললাইন খুলবে,মুক্তিদের নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হবে) মাটির সাথে মিশে গিয়েছিল। সেই যুদ্ধে একশ'র উপর পাকিস্তানি সেনা বেঘোরে মরেছিল, কিন্তু পাকবাহিনী মেজর সালেক আর ক্যাপ্টেন আইন উদ্দিনদের হারাইতে পারে নাই, ওই রেললাইন আর কখনই চালু হয় নাই...
.
সেই খালেদ মোশাররফ, ৭১এর ২৩ অক্টোবর যুদ্ধক্ষেত্রে আচমকা পাকিস্তানী মর্টার শেলের আঘাতে যার মাথার বাম পাশ ক্ষতবিক্ষত হয়ে গিয়েছিল, ব্রেনের একটা বিশাল অংশ প্রায় অকেজো হয়ে কোমায় চলে যাওয়ার পরও মেডিক্যাল সায়েন্সের অবিশ্বাস্য মিরাকল হয়ে যে বেঁচে উঠেছিল আবারো, বেশ কয়েকবার অপারেশনের পরেও সেই শেলের অনেকগুলো স্প্লিন্টার যার মাথা থেকে বের করা যায় নাই...
.
সেই খালেদ মোশাররফ, ১৪-১৫ বছর বয়সী ইয়াং প্লাটুনের (ওয়াই প্লাটুন) দুর্ধর্ষ কিশোরদের যিনি দূরের সদা সতর্ক পাহারারত পাকিস্তানী আর্মির বাঙ্কার দেখিয়ে বলতেন, "যে গ্রেনেড চার্জ করে ওই বাঙ্কার ধ্বংস করবে সে আমার হাত ঘড়িটা পাবে।" সেই খালেদ, মৃত্যুর পূর্বমুহূর্তে যার ললাটে ছিল এ মাটির বীর সন্তানের জয় টিকা, মাথায় বীর উত্তমের মুকুট আর মাথার বাঁপাশে মগজের ভেতর আজীবন ধরে বয়ে বেড়ানো পাকিস্তানী গোলন্দাজ বাহিনীর মর্টার শেলের স্প্লিন্টার...
.
সেই খালেদ মোশাররফ লুটিয়ে পড়লেন। স্বাধীনতার মহান আদর্শ আর দীপ্তিমান চেতনার অনির্বাণ শিখা জ্বালিয়ে রাখতে "দ্যা লাস্ট স্ট্যান্ড" হবার অপরাধে তার বিচার করলো তারই অনুগত কিছু সেনা, মুক্তিযুদ্ধের যে মেজর জলিলকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়ে এনেছিল খালেদ, সেই খালেদের উপর রাইফেলের পুরো ম্যাগাজিন খালি করতে একবিন্দু কাঁপলো না জলিলের হাত। অর্ডারটা বরাবরের মতই এলো পর্দার ওপারের এক চাপা কণ্ঠ থেকে। রাত চারটার দিকে ফোন এলো। না, কমান্ডিং অফিসারের কাছে না, এক সামান্য মেজরের কাছে। মেজর জলিলের কাছে। কালো সানগ্লাসের আড়ালে থাকা সেই নির্দেশ দাতা চোস্ত উর্দু বলতে পারলেও তার কণ্ঠটা কখনই শুদ্ধ উচ্চারণে বাঙলা বলতে পারেনি... কখনোই না...”
.
.
.
মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে এই বঙ্গশার্দুলের জন্ম এবং মৃত্যুবার্ষিকী। আজ জন্মদিনে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সেক্টর-২ এর কমান্ডার এবং ক্র্যাক প্লাটুনের মতো দুর্ধর্ষ বাহিনীর পেছনের মাস্টারমাইন্ড এই বীর উত্তমকে অন্তরের অন্তঃস্থল হতে শ্রদ্ধাঞ্জলি!

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:৪০

আহা রুবন বলেছেন: আমাদের স্বাধীনতা পরবর্তী ঘটনা প্রবাহ ধোঁয়াশাচ্ছন্ন। একেকজন একেক রকম বলেন। হয়ত একদিন সব পরিষ্কার হবে।

২| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:৫০

কলাবাগান১ বলেছেন: রাজাকার বান্ধবদের কাছে আমাদের মহান স্বাধীনতার সব ইতিহাস ই ধোঁয়াশাচ্ছন্ন মনে হয়। কয়দিন পরে বলবে যে খালেদ মোশারফ ১৯৭১ এ যুদ্ধই করে নাই।

৩| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:০৪

আততায়ী আলতাইয়ার বলেছেন: জিয়া বেইমান তাই চুপ ছিলো, মাগার সশস্ত্র বাহিনীর প্রিন্সিপল স্টাফ অফিসারের মত ডাইরেক্ট একশন পোস্ট হোল্ড করেও সেনা প্রধানের সরাসরি নির্দেশ পেয়েও ১৫ই আগস্টে খালেদ মোশারফ কেন একশানে যায় নাই?
কর্নেল ফারুখ মুক্তিযোদ্ধা কি মুক্তিযোদ্ধা না এই সংক্রান্ত কোর্ট মার্শালে খালেদ মোশারফ কেন ফারুখের হয়ে ওকালতি করতো, ১৫ই আগস্টের কিছুদিন ঢাকা থেকে
কনেল ফারুখের বদলী কেন ঠেকিয়ে ছিলো খালেদ মোশারফ?
খালেদের ক্ষমতা দখলের পর কিভাবে ফারুখ রশিদরা এরেস্ট না হয়ে নেগসিয়েশন করে জেল হত্যা করে পালিয়ে যায়?
এই সব নায়করাই(জিয়া,খালেদ,তাহের) স্বাধীনতার পরে সবচেয়ে বড় খল নায়ক।

৪| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪১

সাহসী সন্তান বলেছেন: যারা প্রকৃত বীর তারা তো এমনই হন! নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও যারা তার সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়াতে পারে, কেবল তাদের নামের শেষেই বীর শব্দটাকে সব থেকে ভাল মানায়! কিন্তু আমি একটা জিনিস ভেবে পাই না, আমাদের দেশের এমন সব গর্বিত সন্তানদের পরিশেষে এমন করুণ মৃত্যুর কারণ কি?

তথ্য গুলো শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ!

এনিওয়ে একই লেখা পোস্টের মধ্যে দুইবার করে এসেছে! অনুগ্রহ পূর্বক ঠিক করে নিয়েন!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.