![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পিতৃপ্রদত্ত নাম মেহেদী হাসান শামীম হলেও,আমি চাই মানুষ আমার নাম বা চেহারা থেকে না চিনুক..…। চিনুক আমার লেখায়।লোকে যেন না বলে ওই ছেলেটা বংশ ভাল বা দেখতে ভাল।আমি চাই লোকে বলুক,ওই ছেলেটা খুব সুন্দর লেখে। সৃষ্টি কর্তা আমায় সে সুযোগ দিয়েছে কিনা জানিনা।দোয়া করবেন। আমার ফেসবুক আইডি লিংক- facebook.com/
এক
রাস্তা ধরে হাটছি তো হাটছি।অনেক দূর পর্যন্ত কোন মানুষ-জন চোখে পড়ছে না।আর পড়বেই বা কিভাবে।এত শীতে এখনও অনেকেই লেপ কাথার নিচে।অবশ্য যারা দিনমজুরের কাজ করে তাদের উঠতে হয়েছে! মুসাও এখনও কম্বলের তলায়।চারদিন আগে ঢাকায় এসেছিলাম।প্রতিবারের মত এবারও মামার বাসায় উঠেছিলাম।আমরা যাওয়ার তৃতীয় দিনই মামা চলে এসেছেন এখানে আমাদের দুজনকে সহ বাসার অন্যদেরকে নিয়ে।রবিন তার মা বাবার সঙ্গে আয়ারল্যান্ডে গেছে।
বাড়ী থেকে বেশ খানিকটা চলে এসেছি,এখন না গেলেই নয়।ফিরে এলাম।বাড়ীর চৌকাঠ পেরোতেই আগন্তুকের দিকে চোখ পড়ল।
লোকটা গ্রামের মোঁড়ল! আমাকে ভেতরে ঢুকতে দেখে মামা বলে উঠলেন,'এই তো এসে গেছে কিশোর্ִ।কথাটা শুনে মামী আমাকে খেতে ডাক দিলেন।আমি ভেতরে ঢুকে দেখলাম মুসা আয়েশ করে পিঠা খাচ্ছে।আমি মৃদু হাসলাম।একটু পরেই চেয়ার টানার শব্দ শোনা গেল।তারমানে লোকটা চলে যাচ্ছে।গপগপ করে খাবার গিলছে মুসা।'তোমার জন্য একটা সুখবর আছে,'কোনমতে বলল মুসা।বাকি কথাগুলো হল খুবই অস্পষ্ট।তবে যেটুকু বলল তাতেই আমার বুকে কাপুনি উঠে গেল।পেয়ে গেছি রহস্য!
দুই..…
এই মুহুর্তে ভ্যানের উপর রয়েছি ।মামার কাছ থেকে জেনেছি,মোঁড়ল লোকটার ম্যানেজার,জোনাব আলী খুন হয়েছেন।স্রেফ ডাকাতি বলে ক্ষান্ত হয়েছেন,পুলিসের অফিসাররা।কিন্তু আমি এত সহজ বলে ভাবছি না ।পুলিসরা তো কত কথাই বলে,তাই বলে কি অপরাধ থেমে থাকে নাকি!কথায় কথায় জেনে নিয়েছি কার কার সাথে লোকটার বিরোধ ছিল।
জোনাব আলির সাথে কার শত্রুতা আমি জানি না,তবে কাজটা আমার শত্রুরাও করতে পারে,' ইতস্তত করে বৃদ্ধ জানালেন।
ভাবনায় পড়ে গেলাম।একজন মোঁড়লের প্রচুর শত্রু থাকা স্বাভাবিক।এদের মধ্যে থেকে অপরাধী খুঁজে বের করা অসম্ভব।
মুসা কে দেখে মনে হল বেশ মুডে আছে।গতকাল মুসাকে নিয়ে মেলায় গিয়েছিলাম।গ্রামে কিছুদিন অন্তর অন্তর মেলা হয়।হঠাৎ একটা সম্ভাবনা উকি দিল মনের মধ্যে।বৃদ্ধের দিকে মুখ ঘুরিয়ে প্রশ্ন করলাম,'মেলার আগে কি অমন ঘটনা ঘটেছে?মেলার লোকদের সাথে আপনার কোন ঝামেলা হয়েছিলো?'
'হ্যাঁ,সার্কাসের মালিক নরেন বাবু,বাজীকর আনোয়ার হোসেন এদের সাথে বেশ বড় ঝামেলা হয়েছে।'
মনে মনে খুশি হলাম।সন্দেহের তালিকায় দুজন যুক্ত হল!
তিন
ভাগ্য বশতঃ যাওয়ার পথে দুইজনের সাথেই দেখা হয়ে গেল ।ভ্যানে তুলে নেওয়া হল তাদের ।গতরাতে সার্কাসে বাজীকরকে দেখতে পাইনি ।এ প্রসঙ্গ তুলতেই জানলাম যে,একটা খেলা দেখাতে গিয়ে হাতে বেকায়্দা ভাবে আঘাত পেয়েছেন।অপরদিকে নরেন বাবু পুরোপুরি পঙ্গু ক্রাচে ভর দিয়ে হাটতে হয় তাকে ।
লক্ষে পৌছে গেলাম ইতিমধ্যে ।
ডাক্তারের কাছ থেকে জানা গেল গলা টিপে খুন করা হয়েছে জোনাব আলিকে।
সেখানে আরেকজনের দেখা পাওয়া গেল।পঙ্গু ভিখারী আলাউদ্দীন ।বেচারার শরীরের নিম্নাংশের উপর নিজের কোন নিয়ন্ত্রন নেই ।হাতে ভর দিয়ে নিজেকে টেনে নিয়ে যেতে হয় তাকে ।
'তোমাকে নাকি গতকাল এদিকে দেখা গেছে?'
'জ্বী সাব,আমি গরীব মানুষ,যেখানে সেখানে রাত কাটাই।'
কথা না বাড়িয়ে সরে এলাম ।মৃতদেহের চারপাশের মাটি পরীক্ষা করলাম সন্তর্পনে।কিন্তু কি আশ্চর্য!কোথাও খুনীর কোন আলামত পাওয়া গেল না ।
ফিসফিস করে মুসা বলল,'কিশোর,ভুতের আসর হয়েছে এখানে! ওরাই মেরেছে জোনাব আলিকে,গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি!'
সঙ্গত কারনেই মুসার কথা বিশ্বাস করলাম না । কারন ইতিমধ্যে কয়েকটা বিষয় বুঝে গেছি আমি ।
'জোনাব আলি কোন কারনে এখানে বসেছিলেন । সেটা বিশ্রাম নেবার জন্য হতে পারে,আবার অন্য কারনেও পারে । তবে আততায়ী হামলা করেছে পেছন দিক থেকে,এটা নিশ্চিত । আর সমস্যা হচ্ছে এখানে আততায়ীর পায়ের ছাপ পাওয়া যায়নি । সন্দেহটা যে তিনজনের দিকেই যাচ্ছে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন সবাই!' বললাম আমি । তারপর নরেন বাবুর দিকে তাকিয়ে বললাম ,'গতকাল আপনি নিজের তাবুতে ছিলেন,এর কোন সাক্ষী আছে?'
বোদ্ধার মত মাথা এদিক ওদিক নাড়লেন তিনি ।
পরিষ্কার না হলেও,সামান্য সন্দেহ কিন্তু আপনার দিকেও যাচ্ছে । তাছারা আপনি ক্রাচে ভর দিয়ে চলাফেরা করেন । আপনি হয়ত জানতেন যে,জোনাব আলির কাছে ১০ হাজার টাকা আছে।'
পাংশু হয়ে গেল নরেন বাবুর চেহারা ।
ব্যাপারটা বেশ উপভোগ করলাম আমি । আসলে তাকে সন্দেহের তালিকা থেকে বিদায় করে দিয়েছি আগেই ।তবে শেষটা না দেখেই কিছু বলব না ।কারন আপাতদৃষ্টিতে তাকে নির্দোষ মনে হলেও,পরবর্তীতে কি ঘটবে বলা যায় না । আর অন্য দুজনকে সন্দেহ করছি প্রখর ভাবে ।
হঠাৎ করেই হাতে থাকা শেষ সুত্রটা প্রকাশ করলাম । 'এখানে পায়ের ছাপ না থাকলেও অন্য একটা জিনিস পাওয়া গেছে ।হাতের ছাপ!'
সকলের মধ্যে অন্যরকম প্রতিক্রিয়া দেখা গেল ।
'আপনিও কিন্তু সন্দেহের তালিকায় পড়ছেন,' আনোয়ার হোসেনের দিকে তাকিয়ে বললাম আমি । লোকটার প্রতিক্রিয়া লক্ষ করছি। 'আপনার সাথে মোড়লের সম্পর্ক তেমন ভাল নয় । প্রতিশোধ নেয়ার জন্য কাজটা করতেও পারেন । তাছাড়া আপনি দড়াবাজ । হাতে ভর দিয়ে হাটা আপনার কাছে কোন ব্যাপারই না ।'
হতভম্ব হয়ে গেল বাজীকর । অদ্ভুত দৃষ্টিতে নিজের হাতের দিকে তাকালো ।
এবার ধরলাম সর্বশেষ জন,পঙ্গু ভিখারী আলাউদ্দিনকে । 'আপনিও কিন্তু হাতে ভর দিয়ে চলতে অভ্যস্ত।'
ইতিমধ্যেই জায়গাটাতে ছোটখাটো ঝগড়া বেঁধে গেছে । তিনজনই একে অপরকে দোষারোপ করছে । মুসা এগিয়ে এলো, 'কিশোর,তিন জন মিলেই খুনটা করেনি তো!'
'কে করেছে কাজটা,কিশোর?', আমার দিকে তাকিয়ে আছে মুসা।
জবাব না দিয়ে ভিখারী আলাউদ্দিনের দিকে এগিয়ে গেলাম । 'টাকার জন্য করেছেন কাজটা,তাই না?'
হতবুদ্ধি দেখালো বেচারাকে ।অবশেষে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল ,'হ,এহন আর অস্বীকার কইরা কি হইব ।খুনডা আমিই করছি ।ট্যাকার লোভে ।'
মোঁড়লের দিলে এগোলাম আমি ,'খুনী তো ধরা পড়ল ।এখন দেখবার বিষয় হচ্ছে খুনীকে আপনি কি সাজা দেবেন ।তবে আমার মতামত জানতে চাইলে বলব,তাকে ছেড়ে দেয়া হোক ।ভিখারী আলাউদ্দিন তার নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে বলে আমি মনে করি ।'
মুচকি হাসলেন মোঁড়ল ,'আমিও তোমার সাথে একমত ।'
অকুস্থলে একজন পুলিশ অফিসার ছিলেন।সবই শুনেছেন তিনি।আমার সামনে এসে বললেন ,'আপনারা যদি ছেড়ে দিতে চান তাহলে আমার কিছু বলবার নেই ।তোমার বুদ্ধির কোন তুলনা নেই ।কিন্তু কিভাবে নিশ্চিত হলে খুনি সম্পর্কে?'
'সবই বলব ।আগে বাড়ী চলুন তারপর ।'
পাঁচ
বাড়ীটা মোঁড়লের ।গ্রামের অন্যান্য বাড়ীগুলোর চেয়ে অবিশ্বাস্য রকম বিলাসবহুল ।এই মুহুর্তে বাড়ীটার সিটিংরুমে বসে আছি ।সবাই প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে ।শুরু করলাম আমি ।
'প্রথমেই বলেছি,লাশের আশেপাশে কোন পাঁয়ের ছাপ ছিল না ।খুনীর চিহ্ন বলতেমাটিতে কয়েকটা হাতের ছাপ এবং হেচড়ানোর দাগ ।প্রথমে নরেন বাবুকেই সন্দেহ করেছিলাম ।কিন্তু তিনি পংগু হলেও এক পায়ের ছাপ পড়ার কথা ।তাই বাদ দিতে হলো তাকে ।এরপর সন্দেহ করলাম বাজীকর আনোয়ার হোসেনকে ।কিন্তু তার হাত কয়েকদিন ধরে ব্যাথা ।সুতরাং তার পক্ষে কোন ভাবেই খুনটা করা সম্ভব নয় ।
'বাকি থাকল পংগু ভিখারী আলাউদ্দিন ।মনে পড়ল হেচড়ানো দাগের কথা ।তখনই বুঝে গেলাম সব ।তার দেহকে হেচড়ে নিয়ে যাওয়ার দাগ ।বুঝলাম তিনিই খুনী ।তাছাড়া তিনি রাতে ঐ জায়্গাতে ছিলেন ।'
প্রশংসার দৃষ্টিতে তাকালো পুলিস অফিসার ।'একেবারে শার্লক হোমসের মত।সত্যিই অসাধারন তোমার বুদ্ধি ।'
মুচকি হাসলাম আমি আর মুসা।
©somewhere in net ltd.