| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একজন অচেনা লেখক
পিতৃপ্রদত্ত নাম মেহেদী হাসান শামীম হলেও,আমি চাই মানুষ আমার নাম বা চেহারা থেকে না চিনুক..…। চিনুক আমার লেখায়।লোকে যেন না বলে ওই ছেলেটা বংশ ভাল বা দেখতে ভাল।আমি চাই লোকে বলুক,ওই ছেলেটা খুব সুন্দর লেখে। সৃষ্টি কর্তা আমায় সে সুযোগ দিয়েছে কিনা জানিনা।দোয়া করবেন। আমার ফেসবুক আইডি লিংক- facebook.com/
ইদানিং শামসুদ্দিন নওয়াব লোকটা পাঠক সমাজে আলোচিত ব্যক্তি।সবাই তাকে 'তিন গোয়েন্দা সিরিজের ধ্বংসকারী' হিসেবেই জানেন।তাদের জন্যই এই লেখাটা সাজালাম।একটু বড়-ই…তবে আশা করি ধৈর্য্য সহকারে পড়বেন।
গত কাল রাতে 'বই লাভারস পোলাপাইনজ' গ্রুপে মুনিয়া নামক একজন আপুর স্মৃতিকথা পড়লাম।খুব সুন্দর একটা লেখা ছিল সেটা।শামসুদ্দিন নওয়াব যে একমাত্র কোন ব্যক্তির নাম নয়…বিভিন্ন সময় বিভিন্ন লেখক এই ছদ্মনাম ব্যবহার করে বই লিখে থাকেন,সেটাই বলেছিলেন উনি।
একইভাবে রাতুল খানের কথা বলব এখানে,সেও 'বই লাভারস পোলাপাইন' গ্রুপে তিন গোয়েন্দার দুরাবস্থা নিয়ে পোস্ট করেছিল।যাই হোক,এই লেখাটা লেখতে গিয়ে আমি তাদের কাছ থেকেই অনুপ্রানিত হয়েছি,তাই দুজনকেই কৃতঞ্জতা জানিয়ে আজকে আলোচনা শুরু করলাম-
শুরুতেই দুটো বাহ্যিক লাইন লিখছি…গতকাল সারাদিন শামসুদ্দিন নওয়াব(একাধিক হলেও আপাতত এই নামেই ডাকব) রচিত 'বিশ্বের আশ্চর্যতম রহস্য' নিয়ে লেখা 'বারমুডা ট্রায়াংগল' বইটা পড়লাম।আসল কথা হল তিন গোয়েন্দার লেখক আর বারমুডা ট্রায়াংগলের লেখক এক মানুষ নন!
আবার প্রসঙ্গে ফিরে আসি…সাইবার স্পেসে বাস করা প্রতিটি সেবা পাঠকই উইকিপিডিয়ায় 'মাসুদ রানা' বা 'তিন গোয়েন্দা' লিখে সার্চ দেবেনই,আর অন্যান্য গুলো তো আছেই।এভাবেই আমরা সকলেই প্রায় জানি যে শামসুদ্দিন নওয়াব হচ্ছে আসলে কাজিদার ছদ্মনাম।
এবার একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি…কাজিদার ব্যপারে এসব জ্ঞান কিন্তু আমি উইকিপিডিয়া থেকে সংগ্রহ করিনি…বছর দেড়েক আগে কালের খেয়াতে রাহাত খানের একটা লেখা ছাপা হয়েছিল,কাজিদা ও মাসুদ রানা কে নিয়ে লেখা ছিল ওটা।সেখানে রাহাত খানের একটা লাইন ছিল এরকম,'আমাদের দুজনের বয়সের ফারাক ছিল তিন বছর,তা সত্ত্বেও আমরা যেন হরিহর হয়ে উঠেছিলাম।আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেলের(ভার্সিটির) সবাই তখন তাকে 'নওয়াব' ভাই বলে ডাকতাম।'
তখন আমার তিন গোয়েন্দার সকল বই কমপ্লিট।শামসুদ্দিন নওয়াব এর চৌদ্দ পুরুষ উদ্ধার করতে গিয়ে যে কার উদ্ধার করছি সেইটা বুঝতে পেরে কান গরম হয়ে যায় লজ্জায়।তখনকার ভাবনা ছিল এইরকম,'কাজিদার মতন একজন মাষ্টারমাইন্ড পারসন ওই ফালতু লেখাগুলো লিখেছে!'
খোঁজ নেয়ার তাগিদ অনুভব করলাম।
প্রবেশ করলাম সাইবার জগতে…তখনো ফেসবুক একাউন্ট খুলিনি।উইকিপিডিয়া পর্যাপ্ত তথ্য পেলাম না…প্রবেশ করলাম ফেসবুকে।বুঝলাম এখানে আমাকে ধৈর্য্য ধরতে হবে।তাও মানলাম,সকল ব্লগেও খোঁজাখুজি চালালাম।এই ১ বছরে যতটুকু বুঝলাম,তার চেয়ে সাইবার ওয়ার্ল্ড এর বাইরেই বেশি ধারনা পেলাম।একসময় নিজে নিজেই উন্মুক্ত করলাম রহস্যের দড়জা!
সেবা থেকে প্রকাশিত জুল ভার্নের বইগুলোর অনুবাদকের নাম শামসুদ্দিন নওয়াব।জুল ভার্নের ভলিউম কিনে পড়তে শুরু করি।প্রথমদিকে কিছুই টের পাইনি।যখন টের পেলাম,হা হয়ে গেলাম।তিন গোয়েন্দার শামসু'র লেখার সাথে জুল ভার্নের অনুবাদকের লেখার কোন মিলই নাই।মিল বলতে এখানে শব্দ চয়ন,বাক্য সাজানো ইত্যাদিকে বোঝাচ্ছি।আমার আগের একটা নোটে লিখেছিলাম রকিবদা ও শামসু'র লেখার বৈশিস্ট্য নিয়ে।প্রতিটি লেখকের লেখার ভঙ্গিমা আলাদা।যদিও সেবা পরিবারের সকলেই জার্নালিজম স্টাইলে লিখেন,তবুও খানিকটা পার্থক্য থাকেই।
ছোট্ট একটা উদাহরন দিই-
রকিবদা তিন গোয়েন্দাতে লিখতেন এভাবে-" কিশোর বলল,'..…..…' "
শামসু'র তিগোতে লিখত এভাবে-" '..…..…',বলল কিশোর "
এই দুই লাইনে আপাতদৃস্টিতে কিছুই বোঝা যায় না,তাই না?
…আসলে এই দুইলাইনেই এমন কিছু আছে যার কারনে আমরা রকিবদাকে পুজো করি আর শামসু'রে থুতু মারি।
তাছাড়া.…শুধু কি এই দুই লাইন?আরও বহু উদাহরন আমার মাথাতেই আছে এই মুহুর্তে।কিন্তু এতো লেখার টাইম নাই।
তো যা বলছিলাম,জুল ভার্নের অনুবাদকের লেখাতেও এইরকম কিছু অমিল খুঁজে পেলাম 'তিন গোয়েন্দার ধ্বংশকারী'র সাথে।এ থেকে কি প্রমানিত হয়?
তেমন কিছুই না…আসলে প্রমান হবার জন্য একটা সুত্র মাত্র।কেউ যদি মরিয়া হয়ে তর্ক জুড়ে দেয় যে,শামসু আসল লোক,তাহলে তার হাতে মূলা ধরিয়ে দিতে পারবেন!
আগেই বলেছি বারমুডা ট্রায়াঙ্গল পড়ার কথা…পড়ে আমি আভিভূত হয়ে গেলেম।এতো সুন্দর একটা লেখা লিখল কে?
পড়তে পড়তে একটা লাইন দেখে সমস্ত ইন্দ্রিয় সজাগ হয়ে গেল আমার।কি ছিল সেটা?
"মাঝ রাত।ডেকের নিচে নিজের কেবিনে ঘুমাচ্ছিল জো।হঠাৎ গায়ে পানির ঝাপটা লাগতেই ধড়মড় করে উঠে বসল সে।(বারমুডা ট্রায়াঙ্গল;১০৩ পৃষ্ঠা)"
ঘুমাচ্ছিল কথাটিই প্রথমে দৃস্টি আকর্ষন করে আমার।পরিচিত একজন লেখকের ছায়া দেখতে পেলাম যেন।দ্রুত আগের পাতা গুলো পড়ে ফেললাম,চমকে উঠলাম।কত কিছু বাদ পড়ে গেছে।বুঝে গেলাম কার লেখার সাথে মিল আছে লেখাটার।
ইফতেখার আমিন!
উনার পূর্বের অনুবাদকৃত বইয়ের লেখার সাথে মিলিয়ে আশ্চর্য হলাম।
এবার একটু প্রশ্নোত্তর পর্ব চালাই কেমন?
১।আসলে শামসুদ্দিন নওয়াব কে?
--সেবার সব লেখকই।যখন যার ছদ্মনাম ব্যবহারের প্রয়জন হয়,এই নামটা কাজিদার অনুমতি নিয়ে ইউজ করে তারা।
২।কে কোন লেখক বুঝব কিভাবে?
--যারা নিয়মিত ওয়েষ্টার্ন পড়ে তারা সহজেই বুঝতে পারবেন।কাজী শাহনূর হোসেন,মায়্মুর হোসেন আরও যে কেউ লিখতে পারেন!
৩।কিন্তু যতদূর জানি তারা খুব ভাল লেখে।বিশেষত ওয়েষ্টার্ন গুলা তো ফাটাফাটি।তাহলে তিন গোয়েন্দা গুলা এতো বাজে হয় কেন?
--হুহ,শাহনূরদা,মায়মূরদা তিন গোয়েন্দা লিখেছে এই কথা আপনাকে কোন ছাগলে বলছে?তিন গোয়েন্দার বাইরের কয়েকজন রাইটার লিখে।আসলে তারাও এমনকি জানেন যে তাদের লেখা ভাল না,তাই শামসুদ্দিন নওয়াব নামটাকে ঢাল হিসেবে ইউজ করেন!
এবার…জট লাগতে পারে এমন কিছু ব্যাপার খোলসা করে দিই-
মায়মূরদা,শাহমূরদা তিন গোয়েন্দা না লিখলেও অন্য বই লিখতে বাধা কোথায়!ইফতেখার আমিনের কথাই ধরা যাক,তিনি তো আর তিন গোয়েন্দা লিখেন না।বরং 'বারমুডা ট্রায়াঙ্গল' লিখলেন।তেমনিভাবে তারাও অনুবাদের কাজগুলা করেন।
আশা করি পরিস্কার বুঝেছেন।তবুও যদি কারও সন্দেহ থাকে কমেন্টে বলতে পারেন।
ধন্যবাদ!
©somewhere in net ltd.