নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সেদিন অন্ধকার ছিল
আমার আত্মাটা কি দেখে চমকে উঠছিল।
জ্ঞান ফেরার পর কিছু মানুষকে দেখলাম আমার দেহ মাটির ঘরে রেখে যাচ্ছে।
বড্ড অসহায় লাগছিল তখন।চোখ ফেটে কান্না আসছিল।শরীরটা নিথর। এক গাদা মাটির নীচে চাপা পড়ে আছে।সন্ধে নামছিল গোরের পাশ থেকে কেউ একজন আমাকে দেখে চমকে গেল।যেমনি আমি চমকে ছিলাম।এখন সে ও আমি বন্ধু।আধার রাতে দু'জনে চমকে দেই দু-একজন কে।
শায়লাকে নাকি ডাইনি বিদ্যেয় ধরেছে।সবার পেটের বাচ্চা খেয়ে ফেলছে। খুব অসহায় লাগছে ওকে।কি করবে ওর কোন দোষ নেই।ইচ্ছে হলে মরেও যেতে পারবে না।ডাইনি বিদ্যে কাউকে দিতে হবে।নইলে মরবে না।
আজ রাতে আসছিল আমার গোরের পাশে।চমকে দিতে চাচ্ছিলাম কিন্তু পারলাম না।খুব মায়া লাগছিল ওর জন্য।বিকেলে ওর বান্ধবী অসুস্থ হয়ে পড়ছে।সাত মাসের গর্ভবতী ছিল।ভর দুপুরে আসছিল ঘাটে।শায়লার জানালা দিয়ে ঘাট দেখা যায়।
হঠাৎ চোখ যায় মালার দিকে।কিন্তু একি! ও বান্ধবীর পেটের বাচ্চাটার দিক থেকে চোঁখ ফেরাতে পারছেনা।হাজারো চেষ্টা করেও পারলনা।চোঁখের দৃষ্টি ধীরে ধীরে তীক্ষ্ণ হতে লাগল।মালা চিৎকার করে অজ্ঞান হয়ে গেল।রক্তপাত হচ্ছিল ওর নীচ দিয়ে।
কারো বুঝতে বাকি রইলনা এটা ডাইনি শায়লার কাজ।মালার মা এসে এক বিকেল শুধু অভিশাপ দিয়ে গেল।গ্রামের মানুষ ভয়ে ওর দিকে তাকায় না।মাতব্বরের নির্দেশে ওঝা এসে প্রচন্ড মন্ত্র-তাবিজ দিয়ে ঝেড়ে দিয়ে গেছে মালাকে।
কাল ওর ওপর ঝাড় ফুক চলবে।এত কষ্টের পরেও মরবেনা ও।না মরার কষ্টই ওকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।আমার গোরের পাশে বসে কাঁদছে।অভিযোগ দিচ্ছে।কাজল চোখটা এখন ভয়ংকয় হয়ে গেছে।কালো মসৃণ চুল গুলো কেমন ঝাকড়া আর লালচে হয়ে আছে।কেমন বিভৎস সুন্দর লাগছে ওকে।ওর কান্নায় এখন মায়াবী সূর নেই।কেমন ব্যাঘ্র কণ্ঠে কান্না করছে ও।
আমার এখন এগুলোই ভাল লাগছে কিন্ত কেনো।আমিতো এগুলো পছন্দ করতাম না।ওর মসৃণ কালো কেশ,মায়াবী কন্ঠের গান আর কাজল কালো চোখ পছন্দ করতাম।দু'দিনেই রুচির এত তফাৎ কেমন অদ্ভুত লাগছে নিজের কাছে।মরে গেলে মানুষের রুচি পাল্টে যায় সব কিছু উল্টো হয়ে যায়।ভাল মানুষগুলো খারাপ হয় আর খারাপেরা ভাল হয়।
আমি কি সত্যিই মরে গেছি। নাহ একবার শায়লাকে জিজ্ঞেস করে দেখি।কিন্ত হায়! ও আমার কথা শুনছে না কেনো।ও আমার দিকে তাকালোও না।কেনো ও কি আমায় ভালবাসেনা।নাহ! এ জীবন আর রাখবো না।ওহ! আমার তো জীবন-ই নেই।তাহলে এত কষ্ট হচ্ছে কেনো আমার।
ও চলে গেছে। মালা এখনো অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে।সবাই শায়লার বাড়ির সম্মুখে হাজির হয়েছে।ওঝা আর তার দু'জন শাগরেদও এসেছে।মরিচ পোড়া দেয়া হয়েছে।আমার কেমন যেন লাগল।মনে হল আবার মরে যাবো।কিছুই বুঝতে পারছি না।মরিচ পোড়ায় এত কষ্ট লাগছে কেনো।তিনদিন আগেও তো নিজে সাকাল বেলা পোড়া মরিচ দিয়ে ভাত খেলাম।ওকি শায়লা চিৎকার পাড়ছে কেনো। তবে ও কি মরে গেছে! পোড়া মরিচ দিয়ে তো ও-ই আমাকে খাইয়ে দিয়েছিল।তাহলে গ্রামবাসী ওকে দেখতে পাচ্ছে কি করে।
হঠাৎ করেই ওঝা হাক ছাড়ল, ডাইনি এখনি তার বিদ্যে অন্যের উপর দিবে।সবাই ওর চোখের আড়ালে চলে যাও।মন্ত্র পড়ে ওঝা আগুনের মশালের উপর কি যেন ছুড়ে মারছে আর আকাশ বাতাস কাপিয়ে শায়লা চিৎকার করতেছে।আমার হাসি পাচ্ছে ওর অবস্থা দেখে।আমিতো ওর দুঃখে কান্না করতাম কিন্ত আজ এত হাসি পাচ্ছে কেনো।ওহ! আমিতো ভূত হয়ে গেছি।ভূতেরা কষ্ট পেলে কান্না করে আর আনন্দে হাসে।
মাতব্বরের নাতনি শিলা কলপাতার ফোকর দিয়ে ডাইনির মৃত্যু যন্ত্রনা দেখছে।ওর মায়া হচ্ছে।মালা ওঝার পাশে এখনো। ওর হুশ ফিরেছে ওঝা দেখেনি।মিটিমিটি চোখে শায়লার দিকে তাকিয়ে আছে।শায়লা আবছা চোখে শিলাকে দেখছে।ও এখনি বেচে যাবে, ওর বিদ্যে শিলার দেহে দিয়ে দিবে।ওঝা এক হাক দিয়ে আবারো কি যেন আগুনে দিল।আকাশ বাতাস কাপিয়ে শায়লা চিৎকার করে উঠল।ধীরে ধীরে ও ঢলে পড়তে লাগল।ওঝা আবারো মন্ত্র ঝাড়ল।কিন্তু শায়লা নিথর হয়ে আছে।
শায়লা এখন আমার দিকে আসছে।গ্রাম বাসী হইচই করে আনন্দে আটখানা হয়ে উঠছে।শায়লার লাশ পড়ে আছে মাটিতে।সমস্ত কলরবের মাঝে মালা গোঙ্গাচ্ছে।কেউ খেয়াল করছেনা।কেমন অদ্ভুত সে গোঙ্গানি।শায়লার মত বিভৎস।আমি শায়লার দিকে আগাচ্ছি। ভূতে হয়েও তবে পেলাম ওকে।কান্না আসতেছে আমার।গোরের কাছাকাছি আসতেই শায়লা কেমন জানি উপরের দিকে তাকিয়ে রইল।কিছুক্ষণ পরে দেখলাম ও আমার দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে উপরে চলে যাচ্ছিল স্বর্গের সিড়ি বেয়ে।
০২ রা নভেম্বর, ২০২০ সকাল ৭:২০
অধীতি বলেছেন: ঢেউ দেখে আতঙ্কিত মনকে প্রশান্ত করতে মাঝে মাঝে উদ্ভট চিন্তাভাবনা দরকার।
২| ০২ রা নভেম্বর, ২০২০ সকাল ৭:২৫
চাঁদগাজী বলেছেন:
আমি জানি না, এগুলো সাহিত্য হিসেবে টিকবে কিনা; যেমন, আমি ব্লগে এগুলো পড়ি না, বাইরে এগুলোর জন্য আমি ১ মিনিটও সময় দিই না; আজকাল, ব্লগে যলেখা না আসায়, আপনার এই লেখাটা পড়লাম।
০২ রা নভেম্বর, ২০২০ সকাল ৭:৩৪
অধীতি বলেছেন: আমার গল্প কবিতা ভালোলাগে, আবার বর্তমান প্রেক্ষাপট নিয়ে প্রবন্ধগুলোও ভালো লাগে। ব্লগে যে গল্প কবিতা লিখি সেটা নিজের আত্মতৃপ্তির জন্য।আপনার কঠিন সমালোচনাগুলো কখনো গায়ে বিধেনা কারণ আমি জানি আমি কি লিখছি।আমার লেখা তখনই সাহিত্য হিসেবে টিকবে যখন সেটা বর্তমানকে ধারণ করবে। এই গল্পটা কেবল হাত চালু রাখার জন্য।
৩| ০২ রা নভেম্বর, ২০২০ সকাল ৭:৩৫
অধীতি বলেছেন: আপনার সমালোচনাগুলো আপনার স্থান থেকে যথেষ্ট ঠিক আছে।
৪| ০২ রা নভেম্বর, ২০২০ সকাল ৭:৩৯
চাঁদগাজী বলেছেন:
সঠিক, 'বর্তামন'কে যদি পাঠকের জীবনের সাথে মিলিয়ে চিত্রায়িত করা যায়, সেটা মানুষের মন জয় করতে সক্ষম হয়।
০২ রা নভেম্বর, ২০২০ সকাল ৮:১৩
অধীতি বলেছেন: জ্বি ধন্যবাদ
৫| ০২ রা নভেম্বর, ২০২০ সকাল ৮:১০
নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: চীনাদের কথা ভাবুন,এই উত্তেজনার মধ্যে ওরা নবী মুহাম্মদ ( সাঃ) এর ছবি রাষ্ট্রিয় টিভিতে দেখিয়েছে।ওরা চায়টা কি।
০২ রা নভেম্বর, ২০২০ সকাল ৮:১৭
অধীতি বলেছেন: ভাবতে থাকুন কি করা যায়। বিশ্বের সবগুলো পরাশক্তি যদি এভাবে মেতে উঠে কি করবেন। ফ্রান্সের পন্য বয়কট করাতে কিছু আসেনি কারণ টোটাল গ্যাস ছাড়া আর তেমন কিছু আমরা ব্যবহার করিনা। এবার চীনা পন্যও বয়কট করুন দেখা যাক কতদূর হিম্মৎ।
৬| ০২ রা নভেম্বর, ২০২০ সকাল ৮:১৫
নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: অনেক আগে এমন ঘটনার কথা শুনেছি।বর্তমানে মনে হয় এসব কুসংস্কার নেই।
০২ রা নভেম্বর, ২০২০ সকাল ৮:১৮
অধীতি বলেছেন: এখনও আছে তবে ততটা নয়।
৭| ০২ রা নভেম্বর, ২০২০ সকাল ৯:৪৫
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
খুবই চমৎকার পোস্ট স্যার।
০২ রা নভেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:৪১
অধীতি বলেছেন: ধন্যবাদ
৮| ০২ রা নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:১৫
রাজীব নুর বলেছেন: শায়লার জন্য মায়া লাগছে।
০২ রা নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:১০
অধীতি বলেছেন: আমারো
৯| ০২ রা নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:২৬
নেওয়াজ আলি বলেছেন: গ্রাম বাংলায় এমন হাজারো শায়লা আছে। ভালো লিখেছেন।
০২ রা নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:৪২
অধীতি বলেছেন: হ্যাঁ এখন যদিও কমেছে।
১০| ০২ রা নভেম্বর, ২০২০ রাত ৮:১১
পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: উপস্থাপনটা অভিনব লাগলো। ++
এমন আরও চাই মানে গল্পের।
পোস্টে লাইক।
শুভকামনা জানবেন।
০২ রা নভেম্বর, ২০২০ রাত ১০:৫১
অধীতি বলেছেন: হাতে খড়ি চলছে। আপনার উৎসাহের জন্য নিরন্তর শুভ কামনা রইলো। আমার প্রথম গল্প Click This Link পড়ার অনুরোধ রইলো।
©somewhere in net ltd.
১| ০২ রা নভেম্বর, ২০২০ সকাল ৭:১৭
চাঁদগাজী বলেছেন:
চারিপাশে জীবনের সফেন ঢেউ, এসব ভাবনা কেন আসে মাথায়?