নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অর্ক

অহরিত

কিছু বলার নেই।

অহরিত › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভাই হারানো একজন মানুষের আরেক না দেখা ভাইয়ের দুঃসময়ে পাশে থাকার একটি আহবান...

৩০ শে অক্টোবর, ২০০৯ রাত ১:৩৭

আজ থেকে ২৯ বছর আগের কথা।একটি সুখী দম্পতির গল্প দিয়ে শুরু করি।গল্পটা শুরু একটি ছোট্ট ক্লিনিকে।সেই ছোট্ট হাসপাতালে আমার আম্মু আর আব্বুজান তাদের প্রথম সন্তানের আনন্দে আত্নহারা।আমার বড় ভাই,আমার ওই একমাত্র ভাই সেদিন দুনিয়াতে আসেন।দাদু-নানু সবাই হাসপাতালে মিস্টি বিতরণ করে চলছেন।আমার দাদাজান ভাইয়ার কানে আযান দেয়,এখানে সেখানে অস্থির হয়ে হাঁটাহাঁটি করেন আর দোয়া পড়ে ফুঁ দেন কিছুক্ষণ পরপর।আমার সেজমামা তখন সদ্য সাইকেল কিনেছেন।সেই সাইকেল নিয়ে সে ছুটতে ছুটতে সবাইকে জানান,তার প্রথম ভাগিনার কথা।আমার দাদী সব কিছু পরীক্ষা করে দেখেন বাচ্চার।এরপর তৃপ্ত হয়ে বলেন "মাশাল্লাহ নাতি তার মায়ের মত হইছে।সন্তানের মুখ মায়ের মত হইলে সে হয় পরম সৌভাগ্যবান।"



সেদিনই আম্মু রাত্রে হঠাৎ করে ঘুম থেকে উঠে দেখে,আমার ছোট্ট ভাইটি অস্থির হয়ে নড়াচড়া করছে।খুব জোরে কাঁদতেও পারছেনা।আম্মু ভয়ে চিৎকার শুরু করে।সবাই ছুটে আসে।ডাক্তার-নার্স ধরে নিয়ে আসা হয়।বারবার মুর্ছা যায় আমার মা।ডাক্তার সবাইকে জানায় অক্সিজেন লাগবে,কিন্তু তাদের কাছে এই মুহূর্তে অক্সিজেন সিলিন্ডার নেই।দ্রুত জোগাড় করতে হবে।আমার বাবা পাগলের মত ছুটে যান।সারা রাত্রি জাগ্রত আমার দাদু নানু ক্লিনিকের ডাক্তারদের বকাঝকা করতে একবার নিচে যান,আবার উপরে ছুটে আসেন ভাইয়ার অবস্থা দেখতে।



ভোরের আযান দেওয়ার আগে আমার ভাইয়া দুনিয়া ছেড়ে চলে যান।আমার শক্ত দাদুর চোখে কেউ পানি দেখেনি সহজে।সেদিন দাদু চোখ ভরা জল নিয়ে ভাইয়ার নিথর দেহের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো আর আমার হতভম্ব বাবার দিকে তাকিয়ে বলছিলো,"আমার নাতি কই?"আমি জানিনা সেদিন পৃথিবীর সবচেয়ে শোকার্ত ওই পরিবারের কান্নার শব্দ আযানের পবিত্র আওয়াজকে ছাপিয়ে গিয়েছিলো কিনা,কিন্তু আমি জানি সেই কষ্টের অনুভূতি সর্বশক্তিমানের দরবারে একটু হলেও গুঞ্জন তুলেছিলো।



আব্বু-আম্মু ভাইয়া চলে যাওয়ার পর অনেকদিন স্বাভাবিক ছিলেননা।প্রথম সন্তান হারানোর যে শোক তা কি কখনো কেউ ভুলতে পারে?আমার বাবা যখন ভাইয়ার নিথর দেহকে দাফন করতে নিয়ে যাচ্ছিলেন,ওই ভার কিভাবে সহ্য করেছিলেন তাও আমি জানিনা।আমার নানু আমার আম্মুকে সান্তনা দিতেন।আমার আব্বা গভীর রাতে বাথরুমে যেয়ে চোখের পানি ফেলতেন।দাদু আব্বুর দিকে অপলক চোখে তাকিয়ে চুপ করে কি যেন ভাবতেন।আর আমার মা...উনি কিছুই বলতেন না।ফ্যাল ফ্যাল করে তার বানানো কাঁথার দিকে,ছোট্ট উলে বোনা গরম কাপড়ের দিকে তাকিয়ে থাকতেন।কবরে দাফন করার পর আবার বাবার কাছে যখন জিজ্ঞেস করা হয় সাইনবোর্ডে কি নাম লিখা হবে ছেলের,আমার বাবা তখন দাদুর দিকে তাকিয়ে থাকেন শুধু।



আম্মুকে মাঝে মাঝে জিজ্ঞেস করি ভাইয়া দেখতে কেমন হয়েছিলো।তখন আম্মুজান কোথায় যেন হারিয়ে যান।কিছুক্ষন পর বলেন,"আমার ছেলেটা হইছিলো পুরো আমার মত।কত বড় বড় চোখ।কিন্তু মনে হয় একটূ খাটো হতো।"আর কিছু আম্মু কখনো বলেন না।ভাইয়ার কোন স্মৃতি নেই আমাদের কাছে।আম্মুর কাছে সে আজ শুধুই এক দেবশিশু যে সবাইকে মজা দেখিয়ে ভেগে গেছে।সবাই যার যার মত ব্যস্ত।মাত্র কয়েক ঘন্টার জন্য আসা সেই বড় বড় আঁখির ছোট্ট শিশুটির কথা কার ভাবার সময় আছে?আমি শুধু মাঝে মাঝে চিন্তা করে আনন্দ পাই,ভাইয়া যদি বেঁচে থাকতো তাহলে কি কি হতো?মনে মনে বলি, "ভাইয়া তুমি যেখানেই থাকো,মঙ্গলময় যেন তাঁর রহমতের বারিধারায় সর্বদা তোমাকে সিক্ত করে রাখেন।"



প্রার্থনা করি যেন কোন পিতাকে তার নিজের মৃত সন্তানের বোঝা কাঁধে তুলতে না হয়,কোন মমতাময়ী মা যেন চোখের সামনে তার ছোট্ট সদ্য জন্ম হওয়া শিশুটির কষ্ট পেয়ে মৃত্যু না দেখেন।

********************************************************************

আজকে আমার লিখার উদ্দেশ্য কাউকে কোন দুঃখ মনে করিয়ে দেয়া নয়।অথবা নিজের দুঃখ জানানোও নয়।আমি আজ লিখছি একজন মানুষের জন্য।মানুষটির নাম শাম্মা।প্রশ্ন করতে পারেন,শাম্মা ভাই আমার কে?এর উত্তর হলো, উনি আপনার যা হোন আমারও তা হোন।আমি উনাকে কখনো দেখিনি,কখনো উনার সাথে কথা বলিনি।সত্যি বললে, ফারহান ভাই একটি পোস্টে উনার কথা বলার পর আমি এই মানুষটির কথা জানি।আমি জানতে পারি জানতে পারি কাঁচাপাকা চুলের মানুষটি একজন পুরকৌশলী।বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা এই মানুষটি অনেক প্রকৌশলীর মত দেশ ত্যাগ না করে দেশেই পড়ে ছিলেন।উনার কাছে দীক্ষা নিয়ে অনেকেই দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকৌশল বিদ্যা পড়ার সুযোগ পেয়েছেন এটাও নিশ্চিত বলতে পারি।যে কোচিং সেন্টারে উনি শিক্ষক ছিলেন,আমি সেখানে বেশ কিছুদিন ক্লাস করেছিলাম।হয়তো উনার ক্লাসও পেয়েছি।এইটুকুই শুধু চেনা জানা যা হলেও হতে পারে।



আজকে আমি এই সাদাসিদে হাস্যমুখী মানুষটির জীবনের বর্তমান দুঃসহ সময়ের কথা বলবো।এই মানুষটি গত ২১ অক্টোবর মালিবাগের কাছে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন।হাস্যমুখী মানুষটিরে হাসি মুছে গিয়েছে কিনা জানিনা,কিন্তু মানুষটি আজ তার একটি পা হারাতে বসেছে।তার ডান পাটি ভেঙ্গে হয়েছে তিন টুকরো।



এই মানুষটি আমার পড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়।এই মানুষটি আমার কোন আত্নীয়ও নয়।আমি জানি,উনি একজন মানুষ।আপনার আমার মত সাধারণ একটা বাঙ্গালী।সকালে উঠে হাই তুলে দাঁত মাজেন,বাংলাদেশের ক্রিকেট খেলা হলে সব কাজ-চাকরী ফেলে টিভির সামনে বসে বলেন "মার সাকিব"।কিন্তু আর মাত্র কিছুদিন পর হয়তো এই সুন্দর দিনগুলো উনার কাছে আসবেনা।হয়তো উনি নিথর দেহ নিয়ে বসে থাকবেন ঘরের এক কোণে।আনন্দ উল্লাসে মুখর হওয়ার আগে খেয়াল করবেন, তার একটি পা নড়ছেনা।রাস্তা ঘাটে স্ক্র্যাচ নিয়ে হাটবেন,কেউ কেউ করুণার দৃষ্টি নিয়ে তাকাবেন,মুখে বলবেন "আহারে!"।



আমাদের এই ছোট্ট ব্লগ পরিবারের আমি একজন খুব পুরোনো নই এমন একজন সদস্য।আমি এই ব্লগটিতে সক্রিয়ভাবে আছি হয়তো বছরখানেক হবে।কত রকম কত কিছু দেখলাম।মানুষের কুৎসিত রুপটা জানার সাথে সাথে অদ্ভুতভাবে এটা বুঝতে শুরু করলাম,যে যাই বলুক ৭১ এ জন্ম নেয়া এই শিশু দেশটিতে কিছু অসাধারণ আত্না শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছেন।আমি এই পবিত্র মানুষগুলোকে ব্লগে পেয়ে যারপরোনাই আনন্দিত।তাদের পবিত্রতার সন্ধান পাই যখন উপমা,নাহিদার জন্য একসাথে সবাই এগিয়ে আসেন।শ্রদ্ধেয় মনজুরুল ভাই,জ্বীনের বাদশা ভাই সবাই এটা সেটা নানান পরিকল্পনা হাতে নেন।তাদের মত মানুষগুলোর জন্য আজকে আমার এই লেখা।



যেদিন নাহিদার মৃত্যুর খবর জানতে পাই,নিজেকে অনেক ক্ষুদ্র মনে হয়েছিলো।আমার মনে হয়েছিলো,আমি কি আরো সাহায্য করতে পারতাম না?নিজেকে অনেক ছোট লেগেছিলো বিশ্বাস করেন।মৃত্যু সংবাদের ব্লগটি দেখে আমি বেশ কিছুক্ষণ নিথর হয়ে বসে থাকা ছাড়া আর কিছুই করতে পারিনি।তাই আজকে যখন শাম্মা ভাইয়ের জন্য অর্থ সাহায্য দরকার,তখন আমি কেন চুপ করে বসে থাকবো?আজ যখন ফারহান ভাই আমাকে ফেসবুকে জিজ্ঞেস করলেন, "শাম্মা ভাইয়ের জন্য কিছু জোগাড় হলো"...আমি তখন খুব লজ্জিত বোধ করেছি।তখন মনে হয়েছে আমার ক্ষমতায় যা আছে তাই না হয় করি।ফারহান ভাই "একজন বড়ভাইকে বাঁচাতে সাহায্য চাই" এই শিরোনামে দুদিন আগে পোস্ট দিয়েছিলেন।লিখাটা হয়তো সবার চোখে আসেনি।তাই আমি আবার আপনাদের কাছে বিনীত অনুরোধ করবো, একবার লিখাটি পড়ুন।



যিনি আমার লিখাটি এখন পড়ছেন তাকে একবার অনুরোধ করবো নিজের পা গুলোর দিকে তাকাতে।অনুভব করুন তো,এই পা গুলোর একটিও যদি হারিয়ে যায় তখন সেই অসহায় পঙ্গুত্ব নিয়ে বেঁচে থাকার কথা।এই মানুষটি হয়তো আপনার কেউ নয়,আবার এই মানুষটি হয়তো আপনার আমার চোখের সামনে একদিন গটগট করে হেঁটে চলা হঠাৎ চোখে পড়া মানুষটি।আমাদের এই ব্যস্ত দুনিয়ায় কেউ কারো কথা ভাবিনা,নিজেকে নিয়ে সদা ব্যস্ত আমরা কখনো হয়তো নিজেকে জিজ্ঞেসটাও করিনা কেমন আছি আমরা।আমার এই লিখাটি ওই মানুষগুলোর ব্যস্ত জীবনের অল্প কিছু মুহূর্ত চাওয়ার জন্য লিখা।আপনি শাম্মা ভাইকে তার পঙ্গুত্ব থেকে বাচাতে পারবেন কিনা এটা চিন্তা নাহয় নাই করুন,একবার কি ওই না দেখা মানুষটির অসহায় মুখটি ভাবতে পারবেন?পারবেন কি হাসপাতালে পড়ে থাকা শাম্মা ভাই আর তার পরিবারের দুঃসহ চিত্রটি কল্পনা করতে?শেষবার ভাবুনতো,আল্লাহ না করুক যদি আপনার এমনটি হতো তবে নিজের নিঃসহায় অবস্থার আশাহীন ভবিষ্যতটি কেমন হতো?



কতজন কতটাকা দিলে কত টাকা হবে আমি জানিনা।আমি জানি শাম্মা ভাইকে পঙ্গুত্বের অসহায় আগামী থেকে বাঁচাতে আমরা যে যাই পারি তাই নিয়ে যদি এগিয়ে আসতে পারি তবেই আবার এই মানুষটি নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে।একজন,অন্ততঃ একজন মানুষও যদি আমার এই লিখাটি পড়ে তার জন্য এগিয়ে আসতে রাজী হোন,তাহলে পোস্টটির উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়েছে।সেই একজন বা বহুজনকে আবারো অনুরোধ এই লিখাটিপড়ুন।কিভাবে এই ভাইকে সাহায্য করা যায় তা বিস্তারিত লিখা আছে ওই পোস্টে।আপনি সাহায্য করুন আর না করুন এই সাদাসিদে মানুষটির কথা,তার অসহায় মুখটির কথা চিন্তা করুন যা আপনার আমার আশায় তাকিয়ে আছে হাসপাতালের করিডোরে।



আপনাদের সুবিধার জন্য আমি আরেকবার উনাকে অর্থ সাহায্য পাঠানোর ঠিকানাটি জানিয়ে দিয়ে রাখছিঃ



Kazi Reshad Islam

A/C no- 101-102-12687

Eastern Bank Ltd

Dhanmondi Branch, Dhaka-1205

Mobile no - +880 1819 202020

মেইল-- [email protected]






[বহুদিন আগে এভাবেই আরেকজন হবু স্থপতির মায়ের চিকিৎসার জন্য ক্লাস ডায়াসে দাঁড়িয়ে সবাইকে আহবান জানিয়েছিলাম "মাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসুন"।জবাবে একজন জিজ্ঞেস করেছিলো,আমার কমিশন কত।এর পর থেকে আর কখনো কাউকে কারো সাহায্যের জন্য আবেদন জানাইনি।ভেবেছিলাম আর কখনোই এসবে নিজেকে জড়াবোনা।আজকে হঠাৎ করে কেন যেন শাম্মা ভাইয়ের দুর্ঘটনার কথা মনে করে নিজের পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নেওয়া ভাইটির কথা মনে হলো।আমার ভাইটি হয়তো শাম্মা ভাইয়ের বয়সী হতো।তাই সবকিছু ভুলে শাম্মা ভাইয়ের মত তরতাজা যুবককে নিষ্ঠুর পৃথিবীর নোংরা রূপদর্শন থেকে মুক্তি দিতে একটি সাহায্য পোস্ট লিখে ফেললাম।কেউ সাহায্য পোস্টে বিরক্ত হলে তার জন্য বলছি,আমার প্রতি আরো বেশি বিরক্তি প্রদর্শন করুন,কিন্তু এই মানুষটির জীবনটা নষ্ট হতে দিয়েন না।]

মন্তব্য ২ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:৪৪

নিশ্চুপ নিরবতা বলেছেন: প্লিজ লিন্ক দেখেন। Click This Link

২| ২৫ শে মার্চ, ২০১০ সকাল ৯:০৭

রিসাত বলেছেন: Arekta minus dilam... valobasha nen...

Rule 1: nobody should be killed
Rule 2: manush kurbani deya haram

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.