![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সাহিত্য পড়ি, সাহিত্য নিয়ে পড়ছি। পড়তে ভালোই লাগে।
মানুষ আর সমাজ নিয়ে কিছু কথা। আমি এমন অনেক লোককে চিনি যারা নামাজ পড়ে না, রোজা রাখে না এমনকি ইসলামের কোন নিয়ম সে মানে না শুধুমাত্র আল্লাহ কে বিশ্বাস করা ছাড়া। তারা এমন কোন খারাপ কাজই বাদ রাখে না যা তারা করে না, তবু তারা ইসলামের ভক্ত। কেউ তার ধর্মের বিরুদ্ধাচারণ করলে এক কোপে মুন্ডু ফেলতে এক সেকেন্ডও দেরী করবে না, ভাববে না সে ভুল করছে না ঠিক করছে। আমি এমন অনেক লোককে চিনি যারা ইসলাম মানে না, মানুষ সৃষ্ট ধর্মের ধার ধারে না, শুধুমাত্র মানুষ বোঝে, মানুষের মূল্য বোঝে, মানুষিক উৎকর্ষের সাধনা করে, সাধনা করার চেষ্টায় লিপ্ত থাকে। তারা জীবন দিতে প্রস্তুত কিন্তু কোন অমানবিক, অমানষিক, অসামাজিক কর্ম করে না।
উপরের এই দুই শ্রেনীর মানুষের মধ্যে শিক্ষিত আছে যেমন অশিক্ষিতও আছে। তাদের শিক্ষার ভেদাভেদ আছে। নিজের ভাল সবাই চায়, কিন্তু সবার ভাল, সমাজের ভাল, দেশের ভাল, বিশ্বের ভাল খুব অল্প মানুষই চায়। বাজারের সবচেয়ে ভাল জিনিসটা খুবই দামী, কেননা তা খুব কমই পাওয়া যায়। সমাজ যারা বদলায়, (একদিনে তা বদলায় না) তারা সংখ্যায় খুব কমই হয়। কিন্তু তারাই সমাজ বদলায়, আলোর পথে নিয়ে আসে। ইতিহাসের পাতায় নাম লেখায়। যারা অশিক্ষিত তাদের কথা বাদ, তারাতো জানেই না, বোঝেই না কোনটা ভাল, আর বিশেষ করে সবার ভাল। কিন্তু যারা তথাকথিত শিক্ষিত, তারা কূপমুন্ডুক, কাপুরুষ, ভীরু। তারা যারা ভয় পায় সত্যের আলোকে, যারা ঘরের ভিতরে আজীবন থাকতে চায় আধারে শান্তিতে, সূর্য়কে যারা না দেখে অস্বীকার করে, তারা আর যাই করুক সামনে এগোতে চায় না, পারে না, সেই সাহস, বীরত্ব তাদের নেই। তারা পিছুতে থাকবে, আর সবাইকে পিছনে টানবে।
কিছু কিছু লোক আবার বুঝতে পারে তাদের ভুল পথ, কিন্তু লেজ তাদের ততক্ষণে কাটা গিয়েছে, তা্ই এখন ফন্দিতে থাকে কিভাবে বাকীদের লেজ কাটা যায়। কারো কারো অভ্যাস হয়ে যায় এভাবেই, আর পেছোতে পেছোতে লেজ বাকা হয়ে যায়। পরে শত ঘৃত মর্দনেও সোজা হয়ে ওঠে না।
তাই বলে তো সমাজ পেছোয় না, এগিয়ে যায়। যখন, যেখানে যেভাবে প্রয়োজন সেভাবেই এগোয়। হয়তো রক্তপাত, হয়তো বা নীরবে।
মানুষের ধর্মই (প্রাকৃতিক ধর্ম) ভাল থাকতে চাওয়া, তা সে যেভাবেই হোক না কেন। যারা ধর্ম (মানুষসৃষ্ট) মানে, মেনে চলে, মানাতে চায় তারাও যেমন ভালটাই চায়, তেমনি আজকে যারা ধর্ম(মানুষসৃষ্ট) মানে না, মেনে চলে না, মানাতে চায়ও না তারাও সবার ভালটাই চায়।
প্রশ্ন হতেই পারে ভাল কোনটা? সেটা তো যার যার নিজের নিজস্ব ব্যাপার। তবে এই নিজের টুকু বোঝার সামথ্য সবার থাকে না। তারা অন্যের কাছে শুনতে চায়, যায়। সেজন্যই বলি মজবুত শিক্ষা দরকার।টাকা দিয়ে কেনা সার্টিফিকেট নয়, দামী স্কুলে পড়ুয়া ছাত্রের গোল্ডেন এ+ নয়, রাশিরাশি টাকা দিয়ে কেন নোটবুক, কোচিং, প্রাইভেট টিউটর উচ্ছৃত শিক্ষা নয়। চাই বুনিয়াদি শিক্ষা। ভেতরের তাগিদওয়ালা শিক্ষা, শিক্ষিত হবার বাসনা থেকে শিক্ষা। ভালভাবে বোঝার, ভাল কিছুর করার মত শিক্ষা। প্রমথ চৌধুরীর কথাটা মনে আছে! সুশিক্ষিত মাত্রেই স্বশিক্ষিত নয়, কিন্তু স্বশিক্ষিত মাত্রেই সুশিক্ষিত।
অভাব আর অনটনে অন্ন চিন্তা করতেই আমাদের দিন শেষ হয়, অন্য চিন্তা, মানে জগত, সৃষ্টি, সৃষ্টি রহস্য এসব নিয়ে ভাববার অবকাশ কোথায়! ধর্মের আহাজারী বা বাড়াবাড়ি তা শুধু আমাদের মত উন্নয়নশীল নামক অভাবী দেশেই চোখে পড়ার মত। যারা প্রতিষ্ঠিত তারা সে সব ভালটাই করে তা নয়, কিন্তু অন্তত ধর্মের জন্য ধর্মযুদ্ধ ঘোষণা করে না। তাদের করার জন্য আরও অনেক কিছু আছে। এবং সেটা এমনকি প্রয়োজনে ধর্ম বিক্রি করে হলেও। প্রাচীন গ্রীসেই কেন যে সব বুদ্ধিজীবী জন্মাতে গেলেন বলতে পারেন? কেননা, সভ্যতার বিকাশটা সেখান থেকে শুরু। বিকাশটা কেন ওখানে শুরু? গ্রীসে তিন শ্রেণী মানুষ বাস করত। রাজকীয় মানুষ, সাধারণ মানুষ এবং দাস। তো, আগেরকার দুই শ্রেণীর মানুষদের জন্য কোন কায়িক শ্রম ছিল না, ছিল না খাওয়া-পড়ার কোন চিন্তা। তাদের খাওয়া পড়ার জন্য চিন্তা করার লোক ছিল দাসরা। আর তারা অবসরে আলস্যে চিন্তা শুরু করলো মানুষের ভিতরকার কথা, দর্শন, বিজ্ঞান, ধর্ম, গণিতশাস্ত্র, জ্যতিষশাস্ত্র ইত্যাদি। তারা যে সবাই এই ধরণের চিন্তা করত তা বলছি না। কিন্তু সুযোগ তাদের ছিল, আর কিছু লোক সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েছিল। দেখুন না নিজের চারপাশে তাকিয়ে, যাদের অবসর আছে, তাদের রুচি আছে, মূল্যবোধ আছে, ভাবনাও আছে। তারা কিছু করতেও চায় আবার করেও। সবাই যে ভালটাই করে তা নয়। কিন্তু সুযোগটা বড় কথা, সুযোগটা তো থাকা চাই। সারাদিন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে হাড়ভাঙ্গা খাটুনী খেটে রাতে নিশ্চই “তারা কেন জ্বলে” বা “আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী” কেউ পরবে না। আশা করাটা অন্যায় বৈকি। একদম চরমে সেই পৌছায়- হয় ভগবান নয়তো শয়তান। দুটোই অলীক। অবাস্তব। যেখানে চরম বা পরম বলে কিছু নেই, সেখানে পৌছানোও সম্ভব নয়।
সত্য যে সবসময় ভাল তাও না, কিন্তু সত্য সত্যই। আর সবাই সত্যটাই জানতে চায়। আবার এই সত্য যে সকল সময়ে, সকল যুগে অবিচল থাকবে তাও না। সত্য রুপ বদলায়। আজকে যা সত্য, আগামী তা মিথ্যে প্রমাণিত হতে পারে। এখন এই যুগসন্ধিক্ষণে বা সত্য মিথেতে রুপান্তরিত হওয়ারকালে কারো যদি সত্যকে মিথ্যে মানতে কষ্ট হয়, অসুবিধা হয়,
ঘোর লাগে তবে সেটা তার ব্যর্থতা, এখানেও সত্য সত্যই। আর এই সত্যটা প্রতিষ্ঠিত করে অল্পকিছু মানুষ, সমাজের এগিয়ে থাকা মানুষ, যারা সত্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার অনেককাল পরেও মানুষের স্মৃতিতে, ইতিহাসে রয়ে যায়।
©somewhere in net ltd.