নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রিপেনডিলের ব্লগ

কাঁচাপাকা রাস্তার ঠিক মাঝামাঝি, সাইকেলে বসে ছিল নৌকার মাঝি।

রিপেনডিল

ফেবু লিঙ্কঃ https://www.facebook.com/propen লেখকের অনুমতি ব্যতীত এই ব্লগের কোন লেখা অন্য কোথাও ব্যবহার করবেন না।

রিপেনডিল › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমরা কেন অলস হই?!

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:২৩

আমি নিজে খুব অলস প্রকৃতির মানুষ এমনকি এই লেখাটা লেখার সময়েও অনেক আলসেমি লাগছে! আমি জানি এই লেখাটিও অনেকে আলসেমি করে পড়বেন না, ধুর এত বড় লেখা কে পড়ে! পৃথিবীতে খুব কম মানুষই আছে যারা কখনো অলস হয়নি! প্রশ্ন হচ্ছে আমরা কেন অলস হই, এটা কি কোন রোগ







অলস মানুষদের জন্য বিজ্ঞানীরা খুজে খুজে একটা চমৎকার অজুহাত বের করে ফেলেছেন! কয়েকজন নিউরোসায়েন্টিস্ট ২৫ জন মানুষের উপরে একটা মজার পরীক্ষা করে দেখিয়েছেন আমরা আসলে অলস না, আমাদের ব্রেইন মাঝে মাঝে অলস হয়ে যায়, এটা তার স্বভাব! তারা দেখিয়েছেন মস্তিষ্কের দুইটি অংশে ডোপামিন (মস্তিষ্কের সংকেত আদান প্রদানের অন্যতম প্রধান রাসায়নিক পদার্থ) এর পরিমাণ এর উপর মানুষের কর্মঠ হওয়া কিংবা অলস হওয়া নির্ভর করে! পরীক্ষাটি মোটামুটি সহজই ছিল। এই ২৫জনকে তারা বেশ কয়েকটি কাজ দিয়েছিলেন, প্রতিটি কাজ শেষ করলে টাকা দেয়া হত এবং টাকার পরিমানও আলাদাভাবে ভাগ করা ছিল, কষ্টসাধ্য কাজের জন্য, ঝুকিপূর্ন কাজের জন্য বেশি টাকা এভাবে। নির্দিষ্ট সময় শেষ হবার পরে দেখা গেল যারা কঠিন কাজগুলো বেছে নিয়েছিলেন তাদের মস্তিষ্কের একটি বিশেষ স্থানে ডোপামিন এর পরিমান বেশি।

দেখা গেছে কর্মঠ ব্যাক্তিদের প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্সে (এই অংশ খুব কাঠখোট্টা, কাজ কাম ছাড়া কিছু বোঝে না) ডোপামিন এর পরিমান বেশি থাকে আর অলস ব্যাক্তিদের বেশি থাকে লিম্বিক সিস্টেমে (এই যায়গাটা মানুষের বেসিক সারভাইবাল ইনস্টিংক্ট, অনুভুতি, ভয়, ঝুকি ইত্যাদি নিয়ন্ত্রন করে)!



ইভোলিউশন এর দিক থেকে চিন্তা করলে বলা যায়, লিম্বিক সিস্টেমটা একেবারে পুরাতন তাই পুরো মস্তিষ্কের উপরে এর প্রভাব/মাতবরি বেশি, আর প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স সে তুলনায় একেবারে শিশু, তাই প্রভাব খাটাতে এর যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। তাই প্রিফন্টারল কর্টেক্স যখন বলে অনেক কাজ বাকি এখন এইটা শেষ করতে হবে অবশ্যই, তখন লিম্বিক বাবাজি বলে এই কাজে ঝুকি আছে, এই কাজ করলে শরীরের কষ্ট হবে, তার চেয়ে ব্যাটা ল্যাপ্টপ কোলের উপরে নিয়ে একটা একশন সিনেমা ছাড়, আমি দেখে তোরে আনন্দ দেই! এই হল শুরু!



এভাবে প্রভাব খাটানোর দ্বন্দে লিম্বিক সিস্টেম প্রাধান্য পেতে পেতে মানুষকে অলস থেকে অলসতর করে ফেলে। অনেক কাজ জমা পড়ে থাকে, তখন লিম্বিক ব্যাটা আবারো বলে এত কাজ বাকি, এই কাজ শেষ করতে পারবি না, তার চেয়ে একটা ঘুম দে। এভাবে নিজের উপর কনফিডেন্স কমতে থাকে, রাগ হতে থাকে, হতাশা গ্রাস করতে থাকে। এটা প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্সকে আরো দমিয়ে রাখে, ঝুকি নিতে, উদ্যোমী হতে বাধা দেয়, সুতরাং অলসতা চক্রাকারে বাড়তেই থাকে বাড়তেই থাকে। অনেকটা ড্রাগ এডিক্টদের মত, একবার চক্রে ঢুকলে শরীর এটাকে এডাপ্ট করে নেয় তখন এটাই হয়ে যায় শরীরের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।



ভয়াবহ ব্যাপার! তাহলে এর থেকে বাচার উপায় কি?

আপনি যত যাই করেন না কেন, লিম্বিক সিস্টেম এবং প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স ঝগড়া করবেই, কিন্তু আপনি এদের দাস নন! সুতরাং ব্রেইন আমাকে অলস করেছে এই অযুহাত দিয়ে লাভ নেই, বরং আপনি ব্রেইনকে অলস করেছেন এটা হতে পারে।



প্রথমে আপনি এক সপ্তাহ নিজেকে পর্যবেক্ষন করুন, নোট লিখে রাখুন, কোন কোন কাজে আপনি কতটুকু সময় দিলেন এক সপ্তাহে। এরপর আরেকটি নোট লিখুন কোন কোন কাজে আপনার কতটুকু সময় দেয়া উচিত ছিল এই সপ্তাহে। পার্থক্য কতটুকু দেখুন, এখানেই স্পষ্ট হবে আপমি মস্তিষ্কের কোন অংশে কতটুকু ডোপামিন ঢেলেছেন। এবার আগামী সপ্তাহের কাজ আপনি তারিখ অনুসারে সাজান। কোন তারিখে কি কাজ করবেন সেটা লিস্ট করুন, চেষ্টা করুন কাজগুলো করার। সপ্তাহান্তে আবার মেলান দুই লিস্টের পার্থক্য কতটুকু।



এটা তো গেল পরের কথা, এই মুহুর্তে কি করা যায়। খাতা কলম নিয়ে বসুন, লিখুন এই মুহুর্তে আপনি কোন কাজটা হয়নি বলে চিন্তিত? মনে না আসলে ঘরেই চোখ বোলান, আপনার ঘর আবর্জনার স্তুপ হয়ে আছে কিনা, ঘরের কোন কাজ বাকি আছে কিনা, আপনার কাপড়্গুলো আয়রন করা আছে কিনা এইসব কাজকে এই মুহুর্তের লিস্টে ঢোকান। এরপর লিখুন এই মুহুর্তে আমি এই কাজটা করতে পারি, কাজের নাম লিখুন এবং কাজটা শুরু করুন যত আলসেমিই লাগুক না কেন।



আপনার ব্রেইনে কিছু কথা সেট হয়ে আছে, এগুলো প্রতিস্থাপন করুন, যেমনঃ

"আমাকে এটা করতে হবে" প্রতিস্থাপন করুন "আমি এটা করতে পারি" দিয়ে

"আমাকে অবশ্যই এটা শেষ করতে হবে" প্রতিস্থাপন করুন "কখন আমি এটা শুরু করব" দিয়ে

"কাজটা অনেক বড় এবং জরুরী" প্রতিস্থাপন করুন "আপাতত একটা ছোট স্টেপ দিয়ে শুরু করতে পারি" দিয়ে

"আমাকে অবশ্যই নিখুত হতে হবে" প্রতিস্থাপন করুন "আমাকে নিখুতভাবে মানুষ হতে হবে" দিয়ে

"আমার খেলাধুলা করার সময় নাই" প্রতিস্থাপন করুন "কাজ শেষ করে খেলাধুলার সময় বের করতে হবে" দিয়ে।



কিছু ভুল, আত্নসমালোচনা এসব গ্রহন করার মানসিকতা নিয়েও কাজ চালিয়ে যেতে হবে, বাদ দেয়া যাবে না। একটা কাজ না করার পেছনে গত সপ্তাহে যে অজুহাত দিয়েছিলেন এই সপ্তাহে সেই অযুহাতকে বর্জন করুন।



শরীরের নাম মহাশয়, যাহা সহাইবেন তাহা সয়। সুতরাং লিম্বিক বাবাজিকেও এইভাবে সহাইতে হবে। দুই ধরনের লিস্ট করে আপনি যদি নিজের উন্নতি পরিমাপ করতে পারেন তাহলে অভিনন্দন আপনি প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্সে বেশি ডোপামিন ঢেলে মানুষ হতে চলেছেন!

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:০১

হাসান মাহমুদ তানভীর বলেছেন: শরীরের নাম মহাশয়, যাহা সহাইবেন তাহা সয় .......... 100% সত্য কথা

অনুপ্রেরণা দায়ক লেখার জন্য ধন্যবাদ।

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৫১

রিপেনডিল বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ :)

২| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:১২

িসরাজ উদদীন বলেছেন: ভা্ল লাগলো .।.।।

১৮ ই নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:৫২

রিপেনডিল বলেছেন: ধন্যবাদ :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.