![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সেই বিকালে আমি তার দুয়ারে টোকা দেই। তিনি কাজের লোক না পাঠিয়ে নিজে এসেই আমাকে ভিতরে নিয়ে যান। তার পরনে ছিল সোনালি রঙের সুতোয় কাজ করা সবুজ রেশমি পোশাক। হাতে ছিল পিতাভ রঙের বালা যা থেকে মাঝে মাঝেই টুং টাং শব্দ হচ্ছিল; সেই বিকেলে উনি এক মুহূর্তের জন্যেও তার হাত নাড়ানো বন্ধ করেন নি।
আমি তাকে অনুসরণ করে একটা দেখিয়ে দেয়া চাদর বিছানো আসনে গিয়ে বসলাম, তিনিও পাশেই আরেকটি কুশন নিয়ে বসলেন। সাথে সাথেই কিছু খাবার দিতে তার কাজের লোককে ইশারা করলেন; আর থালা ভরা খেজুর চলে আসল। সাথে একটা পাত্রে উটের দুধ। আমি দুই একটা খেজুর খেলাম; সাথে কিছুটা উটের দুধ। উটের দুধ খেয়ে আমার অনেক তৃপ্ত লাগলো, হয়ত আমি তৃষ্ণার্ত ছিলাম।
আর ছিল নীরবতা। আমি তাকিয়ে তার ঘরের কার্পেটটা দেখছিলাম, বিশাল কার্পেট, পুরো ঘর ছাড়িয়ে বারান্দায়ও চলে গেছে। আমার মনে হয় আমি জীবনেও এতো বড় কার্পেট চোখে দেখিনি। এমনকি সিরিয়াতেও না। কার্পেটে এতো সূক্ষ্ম আর সুন্দর কারুকাজ ছিল, যে, আমার মনে হচ্ছিল আমি একটি বাগানে বসে আছি।
আমি একটু অবাক হয়েছিলাম।
আর উনি আমার তাকানো দেখেই হয়ত হাসছিলেন। আমি তাকাতেই আরও বেশি করে হাসা শুরু করলেন। আমি একটু অপ্রতিভ হয়ে গেলাম, তখন উনি হাসি থামালেন।
- আমি দুঃখিত, এভাবে হাসার জন্য, আমি অনেক দিনই এভাবে হাসিনি।
- না, কোন সমস্যা নেই।
উনি আমার দিকে তাকালেন। তার মাথা নোয়ালেন। তার ডান কপালে কিছু চুল এসে পড়ল, এই ক্ষণেই আমার একটু নার্ভাস বোধ হচ্ছিল। আমি নিজেকে শক্ত করে ফেললাম। উনি আমাকে আমার পরিবার সম্বন্ধে ও অন্যান্য বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করা শুরু করলেন, যদিও আমার পরিচয় সম্পর্কে তিনি সম্যক জানেন। হয়ত তিনি আমাকে সহজ করার চেষ্টা করছেন। আমার নিজের জন্ম আর শিশুকাল সম্পর্কে আমাকে যা যা বলা হত আমি তার সবই তাকে বললাম।
আমার জন্মের আগেই আমার বাবা মারা যান, তখনকার নিয়ম অনুযায়ী আমাকে মরুভূমিতে ধাত্রীদের কাছে পাঠানো হয়, যেন আমি স্বাস্থ্যবান হই। কিন্তু আমার দুধ্মা ছিলেন অনেক বেশি গরিব, তারপরেও তিনি আমাকে সবার চেয়ে বেশীই ভালোবাসতেন। এমন কি তার নিজের সন্তানদের চেয়েও বেশী, যদিও তার কাছ থেকে এতো বেশী ভালবাসা দাবি করা আমার অনুচিত।
অন্য সব বাচ্চাদের মতন আমার মাথাও ন্যাড়া করে দেয়া হয় আমার জন্মের পর, সেই কাটা চুলের সমপরিমাণ স্বর্ণ গরীব দুঃখীদের মাঝে দিয়ে দেয়া হয়। আমি জানিনা হালিমা ওখান থেকে কিছু সোনা পেয়েছিল কিনা, তবে আমার মাথায় অন্য বাচ্চাদের তুলনায় অনেক ঝাঁকড়া চুল ছিল এখন যেমন আছে।
আমি থামলাম, আমি ওনাকে এতো কথা কেন বলছি? আজকেই তার সাথে আমার প্রথম দেখা, আজকেই এতো কথা বলার কোন মানে নাই। উনি ওনার মাথা আবার নোয়ালেন। তার চোখের পাপড়ি যথেষ্ট ঘন ও গভীর। উনি বল্লেন
- আমি যখন ছোট ছিলাম তখন তোমার বাবাকে জানতাম; তাঁকে দেখেছি, উনি অত্যন্ত সুদর্শন ছিলেন, তখন মনে হয় মক্কায় এতো সুন্দর কোন পুরুষ ছিল না ...তুমি ওনার কাছ থেকে কিছু পেয়েছ উত্তরাধিকারে?
- হা, একটা দাস, ৫টা উট আর কিছু ভেড়া
- এইটুকুই?
- এটাই অ...নেক
উনি আমার হাতের উপর নিজের হাত রেখে আমাকে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করলেন
- আমাকে ক্ষমা করো, আমি তোমাকে কোন আঘাত দিতে চাইনি
- আমাকে আঘাত? আমি বুঝতে পারলাম না।
আমার কথায় ওনার আবার হাসি পেল, কিন্তু উনি নিজেকে সামলে নিলেন।
- এর পর কি হল? তুমি তোমার মায়ের সাথে থাকতে শুরু করলে?
- হা, ৬ বছর বয়স পর্যন্ত আমি মায়ের সাথেই থেকেছি। এর পর উনি ইয়াথ্রিবে মারা যান হাটের দিন।
- তার নাম কি ছিল?
- আমিনা
- ওয়াহিবের মেয়ে?
- ঠিক খেয়াল নেই
- তোমার কি তার কথা মনে পরে?
- না
হুট করে খেয়াল হল, না বলাটা সঠিক না, তাই নিজেকে শুধরে নিলাম
- হা, না এবং হা, মাঝে মাঝে
- সেটাই স্বাভাবিক
এখন তার গলা অনেক গম্ভীর মনে হল, উনি তার হাতের বালাগুলির পাথর গুনছিলেন, মাথা নিচু করে, তখনই খেয়াল করলাম, তার কানেও একটা স্বর্ণের দুল
- তোমার মা মারা যাওয়ার পর তুমি কার কাছে গেলে?
- আমার দাদার কাছে, আব্দুল মুত্তালিব, তখন তার বয়স আশির মতন, কিন্তু আমাদের মধ্যে ছিল অনেক গভীর সম্পর্ক, আন্তরিকতা আর দোস্তি। আমি তার সব কিছু খুব ভাল ভাবে মনে করতে পারি; কিন্তু এর পর উনিও দুনিয়া ছেরে চলে যান।
- হুম
- জি
- এর পর কে তোমাকে নিলো?
- আমার অভিভাবক, আমার আব্দুল মানাফ চাচা
- ওই যে যাকে সবাই আবু তালিব বলে? আমি উনাকে চিনি।
- উনি খুব ভাল আর সম্মানিত। কিন্তু তার নিজেরই এক বিশাল পরিবার রয়েছে আর তার আয় সামান্যই। আমার যখন ৮ কি ৯ বছর বয়স তখন আমি তার সাথে মালামাল নিয়ে দূরদেশে যেতাম। এর পরে উনি ওনার সমস্ত বড় চালানের সাথেই আমাকে সঙ্গে নিতেন। উনি বহরের প্রধান থাকতেন আর আমাকে শেখাতেন কিভাবে কেনা বেচা করতে হয়। আমি সহনশীলতা আর ধৈর্য এই দুইটা জিনিস আমার চাচার কাছেই শিখেছি।
- তোমার মনে কি কৌতূহল হচ্ছে আমি তোমাকে কেন ডেকে এনেছি?
- জি, অবশ্যই
- তুমি জানো আমি কে?
- আপনার নাম খাদিজা, আপনি খুওালিদের মেয়ে; আমি আপনার সাথে পরিচিত হতে পেরে সম্মানিত বোধ করছি।
- সত্যি?
- জি, অবশ্যই।
উনি এই জবাবে হয়ত অন্য কিছু বলতে যাচ্ছিলেন,
- তুমি আমার সম্পর্কে আর কিছু জানো?
- জি, এইটাই যা আপনার সম্পর্কে মক্কায় বলা হয়, আপনি এই শহরের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী।
- তোমাকে একটু সংশোধন করে দেই, আমি সমগ্র আরব ভূমির সবচেয়ে সমৃদ্ধশালী নারী ব্যাবসায়ি। তবে আমি ঠিক এভাবেই চেয়েছি ব্যাপারটা এমন না, আমার জন্মটাই হয়েছে এভাবে, আমার বাবা মারা যাওয়ার সময় আমার জন্য এতো এতো সম্পদ রেখে গেছেন। আমি দুইবার বিয়ে করেছি; দুইবারই বিধবা হয়েছি; আমার দুই স্বামীর প্রত্যেকেরি সন্তোষজনক অবলম্বন ছিল; আমি ওগুলিও চাইনি। এখন আমি একা, চল্লিশ বছর, আমি আমার সব ব্যাবসাগুলি দেখার চেষ্টা করি। তুমি কি বল এব্যাপারে?
-জি জনাবা
উনি হটাত উঠে দাঁড়ালেন, বেশ লম্বাই ছিলেন, আমার দিকে তাকালেন
- আমি একজন বিশ্বস্ত লোক খুঁজছি যে আমার সহকারী হিসেবে কাজ করবে, আমার ব্যাবসা পরিচালনা করবে, তুমি কি পারবে সে কাজ করতে?
- জি, অবশ্যই পারব, যদি আপনি চান
- আমি যাকে খুঁজছি সে ভীরু হবে না, সে হবে সাহসী, আমি কি বলি না বলি সেটাও সে দেখবে। তুমি আর এতিম নও, চোখ খোল
আমি মানলাম, তিনি হাসলেন।
- একটা চালান খুব তাড়াতাড়ি সিরিয়া রউনা হবে, আমি তোমাকে সেইচালানের দায়িত্ব দিতে চাই, তুমি কি প্রস্তুত?
- আপনি যদি এই মুহূর্তেই চান
- কালকে সকালে এসো, আমি বাকিদেরকে তোমার ব্যাপারে বলে রাখবনি, ভোর ভোর থাকতে চলে এসো
আমি রাজি হয়ে ফিরে আসার জন্য ঘুরে দাঁড়াচ্ছিলাম, এমন সময় তিনি আমার কনুই ধরলেন, বল্লেন
- এই চালান ঘুরে মক্কায় ফিরতে তিন মাস সময় নেবে, এটা অনেক বড় চালান; হয়ত চার মাসও লেগে যেতে পারে; আমাকে বল, কেউকি তোমার জন্য অপেক্ষা করবে?
আমি চাকরি হবার খুশিতে আটখানা,
- না, জনাবা, কেউ নেই
উনি হাসলেন
- ত তুমি এখনো এই বয়সে বিয়ে করনি?
- জি না, জনাবা, করিনি
- তাহলে কি নিশ্চয় কেউ তোমার মনের মধ্যে থাকবে?
- না, ঠিক সেটা না, আমি আমার চাচাতো বোনকে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমার চাচা আবু তালিব রাজি হন নি,
- কিন্তু কেন?
- কারণ আমি অনেক গরীব
- আহ, হতভাগ্য.
বাকি অংশটা এখানে
১৮ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৩:৪৯
লধশ বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ
২| ১৮ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৩:০৫
রাজীব নুর বলেছেন: পড়ে আরাম পাওয়া গেল না।
বিরক্ত লাগলো। স্যরি।
১৮ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৩:৫২
লধশ বলেছেন: আচ্ছা, ঠিক আছে।
©somewhere in net ltd.
১|
১৮ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ২:০৯
নেওয়াজ আলি বলেছেন: সুকোমল ভাবনার অনন্যসাধারণ লেখা। শুভেচ্ছা । দোয়া রইলো l