নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বহু যাযাবর লক্ষ্যবিহীন, আমার রয়েছে পণ\nরঙের খনি যেখানে দেখেছি, রাঙিয়ে নিয়েছি মন।

অপ্রত্যাশিত হিমু

অপ্রত্যাশিত হিমু › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিশাল কলেবরের উপন্যাস মাধুকরী ।

০৩ রা অক্টোবর, ২০২০ সকাল ১১:১২


ছবি : google

আমি তখন কলেজে পড়ি। কয়েকটি লাইব্রেরির নিয়মিত সদস্য। একদিন বইয়ের গাড়ি থেকে বই বাছছি, হঠাৎ চোখে পড়লো একটি বই
মলাট নেই প্রথম পাতা ছেঁড়াখোঁড়া। কিন্ত কেমন যেন আপন আপন। দ্বিতীয় পাতায় সেই প্রিয় নাম ‘পৃথু।
লোকে যাকে বলে ‘পাগলা গোসসা'। আমার চোখ দিয়ে জল পড়ছে পৃথুকে ছেড়ে কী করে এতদিন দূরে ছিলাম?

বইয়ের গল্প – বিশাল কলেবরের উপন্যাস মাধুকরী ।
আছে প্রেম, আছে বন্ধুত্ব, আছে ঘৃনা, আছে জয়, পরাজয়, প্রতিশোধ ও শিকড়ের সন্ধানে ছুটে চলা রহস্যময় জীবন। পাতায় পাতায় মধ্যপ্রদেশের জঙ্গলের অদ্ভুত সুন্দর বর্ণনা । জঙ্গল আর জঙ্গলের মানুষের বন্ধুত্ব যা সাধারণ মানুষের বোঝার অনেক বাইরে । ছোট ছোট বহু চরিত্রের আনাগোনা বই জুড়ে। শামীম, সাবির মিঞা, দিঘা পাঁড়ে। যাদের কাছে বসলেই পৃথুর মন ভালো করা অনুভূতি হয়। আর তাদের সাথে থাকে নিজের শিকড় খুঁজতে যাওয়া ঠুঁঠা বাইগা। যে কিনা তার হারানো গ্রামকে খুঁজে ফিরতে বার বার জঙ্গলে চলে যায়। সত্যিকার অর্থে প্রতিটি মানুষই তো তার শেকড়ের সন্ধান করে চলেছে
অবিরত। ইঞ্জিনিয়ার পৃথুর রয়েছে সুন্দরী স্ত্রী রুষা, বাল্য প্রেম
কুর্চি। পাওয়া আর না পাওয়ার দোলায় কুর্চিকে দেখতে চলে যায় পৃথু। কেমন যেন মন কাঁদে। ওর কোন বিপদ হয়নি তো? কতো মুখই তো সামনে আসে আজীবন
মনের মাঝে কুর্চির মতো সরল মমতা মাখা পবিত্র আরেকখানি মুখ জীবনে উঁকি আর দিলো কই?

মূল চরিত্রের মাঝে আছে রাম ভক্ত হনুমানের মতো মোটর মেকানিক ভুচু। পৃথুদার চেলা । কিন্তু ভুল মানুষের প্রেমে পড়ে ভুচুর জীবন এক অদ্ভুত টানাপোড়েনে জড়িয়ে যায়।

আছে রুষা, পৃথু ঘোষের সুন্দরী স্ত্রী। স্বামী স্ত্রীর অদ্ভুত এক সম্পর্কের মাঝেও সে ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, আত্মসম্মানী ,ভাবাবেগবর্জিতা আধুনিকা এক নারী। যে নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে চায়। ভুল হলেও নিজ সিদ্ধান্তকেই প্রাধান্য দেয় রুষা । তার অদ্ভুত ঔদাসীন্য কখনো পৃথুকে পরিবার থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। কখনো ভীষণ রকম কাছে টানে। রুষা সবার চোখে নিজের সন্তানদের এক আদর্শ মা। সবসময় নিজের মতো বাঁচতে চাওয়া এক স্বাধীন নারী । বাঁচার পথ ভুল কখনো হলেও যার আফসোস নেই । তারপর আসে কুর্চি,পৃথুর আজন্ম প্রেমিকা। কিছু সুন্দর সুন্দর চিঠি তাদের ভালোবাসার সাক্ষী। সমাজ, পরিবারের চাপে এক হতে না পারা এক যুগল। অথচ দুজনেই তীব্র আবেগ পুষে রাখে একে অন্যের জন্য। আজীবন বড় বাঘের মতো বাঁচতে চাওয়া পৃথু ঘোষ বড্ড আত্মসম্মানবোধ তার। কারো উপর নির্ভরশীল হতে চায়না সে। না নারী না সংসার না গৃহ না সমাজ। পাগলা গোসসা খ্যাত পৃথু একদিন বন্ধুত্বের মূল্য দিতে গিয়ে হারায় তার জীবনের একটা অংশ। বড় মূল্য গুনতে হবে তাকে এর জন্য আজীবন। কিন্তু কখনো
কখনো জীবনের চেয়ে বন্ধুত্বের মূল্য যে অনেক বেশি। নিজ ঘরে ফিরে যদি কেউ দেখে - ঘর আছে দরজা বিহীন। খটখটে জানালা আর কিছু আসবাব যদি ছেলেবেলার হারিয়ে যাওয়া বন্ধুর মতো ভেংচি কাটে
তাকে আর যাই হোক, ঘর বলা চলে না। ইচ্ছে করলে ফেরা যায় ভালোবাসার মানুষগুলোর কাছে। কিন্তু যাকে মানুষ ভালোবাসে তার কাছ থেকে কোন সাহায্য নিলে সে ভালোবাসা নোংরা হয়ে যায়।
বিচ্ছিরি এক দেনা পাওনার বিষয় হয়। সৌন্দর্য আর তাতে খুঁজে পাওয়া যায় না।

একদিন ফুলশয্যায় নরম চোখে পৃথুকে দেখে রুষা বলেছিল ' তুমি খুব সুন্দর '।
- তোমার চেয়েও?
- তোমার পা দুটি ভারী সুন্দর। এ কী! মানুষের গায়ের তিল আবার লাল হয় নাকি?
পৃথু অস্পষ্ট স্বরে বলেছিল - হয়, হয় রাজা রাজরাদের হয়। আজীবন ভালোবাসার যাচনা করা পৃথু ভাবে -'জন্ম থেকে আমৃত্যুকাল অগনিত নারী-পুরুষ -শিশুর হৃদয়ের, শরীরের দোরে-দোরে হাত পেতে ঘুরে-ঘুরে বেঁচে থাকাই মানুষের নিয়তি। এই পরিক্রমারই অন্য নাম মাধুকরী।

'আগে চারো তরফ দেখতি হ্যায়
জীনা ইস্ বীচ কিতনা মুশকিল হ্যায়
ফিরভী জাঁবাজ খেল্ লেতে হ্যাঁয়
উনকো আসান হরেক মঞ্জীল হ্যাঁয় '

পৃথু ভেবেছিল বেঁচে থাকায় যদি কোন জৌলুশ নাই
থাকে, তবে মরণে যেন একটু থাকে। যারা পারে তারা
জীবন মরণ সবখানেই পারে। একটা ভালো কিছু
গর্বের কিছু করতে গিয়ে যদি মৃত্যুই আসে আসুক না
কী এমন ক্ষতি তাতে?

এই গল্পটি শুধু একটি পৃথুর জীবন নয় এতে গাঁথা আছে একবিংশ শতাব্দীর নারী ও পুরুষের আজন্ম আখ্যান। তা হোক প্রেমের বা শান্ত, স্নিগ্ধ ভালোবাসার। যে নামেই ডাকা হোক ভালোবাসা তো ভালোবাসাই।

কোনো নাজুক মানুষের পক্ষেই আবেগ ছাড়া বাঁচা সম্ভব নয়। স্বনির্ভর হয়ে বাঁচা, স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে বাঁচা
সব মানুষের ভাগ্যেই জোটে না। ঘৃণা, ক্রোধ, বৈরিতা,
ভক্তি, শ্রদ্ধা, কাম, প্রেম সব প্রদীপের কম্পমান শিখার
মত। তাকে আলতো করে ছুঁয়ে ছুঁয়ে জীবন পার করতে হয়।

পেছন থেকে কেউ দুর্বোধ্য স্বরে তাড়া দিলেও বলতে হয় ' অতো তাড়া করো না। পথ চলতে বড় লাগে।
চলতে বড়ই লাগে।

যারা বইটি পড়েছেন তারা জানেন, এই বইয়ে না বলাও কিছু কথা আছে। যা মুখে না বললেও চলে। চোখ বন্ধ করে অনুভব করাতেই হয়তো প্রকৃত সুখ।

'আমি তোমাকে ভালোবাসি' বলার চেয়ে অনেক মিষ্টি বাক্য হচ্ছে ‘আমি তোমাকে বুঝতে পারি'

Source : priyodiary.comপ্রিয় ডায়েরি

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.