নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আগের পর্ব
আট
মেজর হাবিব আজ বেশ কয়েক দিন পর নিজের বিছানা থেকে উঠে বাইরে বেরিয়েছে । এতো দিন শুয়ে থাকতে থাকতে গা যেন মরিচা পড়ে গেছে । যদিও ডাক্তার আরও কয়েকটা দিন সম্পূর্ন রেস্ট নিতে বলেছে তবুও হাবিব মনে করে যে যথেষ্ঠ হয়েছে । তা ছাড়া তার অসমাপ্ত কাজ টা করার জন্য যে মরিয়া হয়ে উঠেছে । আজ পর্যন্ত সে কোন কাজ অসম্পূর্ন রাখে নি সেখানে এই কাজ টা এখন পর্যন্ত জীবনের এক মাত্র ব্যর্থ মিশন । সেটা সম্পূর্ন না করা পর্যন্ত তার কোন শান্তি নেই ।
তাছাড়া আজকে সেই বিশেষ মানুষটার কাছ থেকেও ফোন এসেছে । ফোনটা পাওয়ার পর থেকেই মেজর হাবিব যেন শরীরের অন্য রকম একটা উত্তেজনা অনুভব করছে । কাজটা শেষ করার তাগিত অনুভব করছে । এতো দিন বিছানায় শুয়ে শুয়েই সে সব কাজের আপডেট পেত ফারিয়ার কাছ থেকে । আজ থেকে নিজে নামতে হবে মাঠে । পরিস্থিতি এমন যে কোন শক্ত প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে তাকে নামতে হবে যার কাছে এরই মধ্যে একবার পরাজিত হয়েছে ।
মেজর হাবিব নিজের বুকের ঠিক উপরে হাত বুলালেন । ঠিক এই স্থানেই আগন্তুকের গুলিটা লেগেছিল । আর ইঞ্চি খানেক নিচে লাগলে হয়তো তার আর বেঁচে থাকাই হত না । কপাল গুনে বেঁচে আছে । আর ভাগ্য যখন সাহায্য করেছে মেজর হাবিবের বিশ্বাস বাকিটাও সে ঠিকই পার করে ফেলবে ।
মেজর হাবিবের ফোনটা বেজে উঠলো । মোবাইল স্ক্রিনে ফারিয়ার নাম্বারটা দেখে একটা মুচকি হাসি দেখা গেল তার চেহারায় । মেয়েটা অনেক দিন বাঁচবে মনে হচ্ছে । একটু আগেই ওর কথা ভাবছিলো !
-হ্যালো মাই ডিয়ার !
-জাফর আঙ্কেল আপনাকে ফোন করেছিল । কথা হয়েছে
-হ্যা ।
-তবে । সব কথা মুখে বলা সম্ভব না । আমাদের দেখা হওয়া দরকার । আপনি কি প্রস্তুত মানে সুস্থ ?
-সুস্থ তো হতেই হবে । তোমাদের হাতে কাজ দিয়ে তো আর ভরশা করা যায় না ।
-আপনার কাছ থেকেও খুব যে আশাবাদী তাও কিন্তু না । ফলাফল আমরা দেখতেই পাচ্ছি । আমাদের হয়তো এতো ঝামেলার দরকারই হত না যদি.....
খোঁচাটা একটু হজম করতেই হল মেজর হাবিবকে, কিছু করার নেই । মুখের ভাবটা বিকৃত করে এক দলা থুথু ফেলল বাইরে । মনে মনে বলল শালী তো কেবল একটাবার বাগে পেয়ে নেই । এতো তেজ কোথা থেকে আসে বের করবো ।
ফারিয়া বলল
-যে আলোচনা টা আপনার আঙ্কেলের সাথে হওয়ার কথা ছিল সেটা আমার সাথে হবে । চাচার উপর পুলিশ নজর রাখছে ।
-তার কাছে পুলিশ পৌছালো কিভাবে ?
-আমাদের একজন মুখ খুলেছে । চাচার কোম্পানীর নাম বলেছে ।
-তাই নাকি ? সো স্যাড । এমপ্লোয়ী নির্বাচনে তোমাদের আরও সতর্ক হওয়া উচিৎ ।
-ঠিক আছে সেইটা আপনাকে চিন্তা করতে হবে না । আমাদের দেখা কোথায় এবং কখন হবে ?
-দাড়াও জানাচ্ছি ।
মেজর হাবিব আর শামিম জাফর ঠিক এক লাইনের লোক না । বলতে গেলে মেজর হাবিব যেখানে অস্ত্র ছাড়া কথা বলে না সেখানে শামীম জাফর কাজ করে পরিকল্পনা মাফিক । মেজর হাবিবের নিজস্ব বাহিনী আছে অন্য দিকে শামিম জাফর কাজ করে ভাড়াটে লোক দিয়ে । বলা চলে কাজ শেষ তার দরকারও শেষ সেই লোক গুলোর কাছ থেকে । ঠিক যেখানে যেমন লোক দরকার জায়গামত টাকা ঢেলে কাজ হাসিল করে ।
ঠিক তিন মাস আগে শামীম জাফরের কাছে একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন আসে । একজন অপরিচিত মানুষ তার সাথে দেখা করে কিছু কাগজ পত্র ভর্তি খাম দিয়ে যায় । সেখানেই বলা হয় তাদের কি করতে হবে । কি প্রকারে প্লানিং পরিকল্পনা করতে হবে । এবং যেহেতু কাজটা খুব বেশি গোপনীয় তাই লোকবলের জন্য মেজর হাবিবকে মেনশন করা হয় । তারপর থেকেই দুজন একসাথে কাজ করছে । যদিও শামীম জাফরের এই কাজটা ঠিক পছন্দ না । সে নিজের মত কাজ করতে পছন্দ করে । অন্য কারো খবরদারী তার পছন্দ না । কিন্তু যার কাছ থেকে তার আদেশ অমান্য করার কোন উপায় নেই ।
###
নিকিতা তখনও ভেবে যাচ্ছে রাফায়েলের কথা । ওর মনটা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে । এক ভাগ বলছে আসলে রাফায়েলই হচ্ছে আগন্তুক আর অন্য ভাগ বলছে রাফায়েল নয় অন্য কেউ । যদি রাফায়েলই হবে তাহলে কেন ও এলো না গতদিন । ওকে এভাবে বিপদের ভেতরে ফেলে রেখে দিল । তখন যদি ঐ পুলিশ অফিসার না থাকতো তাহলে কি হত ভাবতেই নিকিতার গা শিউরে যাচ্ছে । এবার আসুক ফোন । আর কথাই বলবে না ।
এর আগে ঐ পুলিশ অফিসার কে যতটা বিরক্তিকর ভেবেছিল আসলে ততখানি বিরক্ত লাগছে না । কদিন থেকে ওদের বাসার আসে পাশেই দেখছে পুলিশ অফিসার মাশরুফ কে । বেশ কয়েকবার দেখাও হয়েছে । অন্য সময় হলে হয়তো বিরক্ত হত কিন্তু এখন মাশরুফ দেখে নিকিতা কিছুটা শ্রদ্ধা মিশ্রিত হাসি হেসেছে । হাজার হলেও মানুষ সেদিন না থাকলে ও হয়তো আজকে এখানে থাকতো না !
###
-ঠিকানা পেয়েছো ?
-হুম ।
-সময় মত চলে এস । এখানে অন্য কেউ আসতে পারবে না । কেবল তোমার জন্য সব কিছু উন্মুক্ত ! বুঝেছো মাই ডিয়ার !
ফারিয়া এই পামে বিন্দু মাত্র গনে না গিয়ে বলল
-আচ্ছা । আর একটা কথা ।
-বল । রাফায়েল চৌধুরীর কি করবে ? আমার লোকজন ওকে কিছুতেই ট্রেস করতে পারছে না ।
-রাফায়েল ।
মুচকি হাসলো মেজর হাবিব । তারপর বলল
-ওকে তোমার চিন্তা করতে হবে না । ওর ব্যাপার টা আমি দেখছি !
ফারিয়াকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ফোন রেখে দিল ।
নয়
-স্যার আরেকবার চিন্তা করে দেখবেন কি ? এখন পরিস্থিতি খুব বেশি ভাল না । আপনার যাওয়া টা কি খুব বেশি জরুরী ?
আহমেদ আসাদের উদ্দিগ্ন হওয়ার কারন টা প্রেসিডেন্ট আজিজুল রহমান খান ঠিকই ধরতে পারছেন । উনি আহমেদ আসাদ কে অভয় দিয়ে বলল
-এতো ভয় কেন পাচ্ছো ? এতো দিন যখন কিছু হয় নি সামনেও কিছু হবে না ! এতো ভয় পেলে কি চলে ?
আহমেদ আসাদের ভয় না পেয়ে কোন উপায় নেই । ইন্টেলিজেন্সের পাক্কা খবর যে প্রেসিডেন্টের উপর হামলা হবেই । বলা চলে গত তিন মাস ধরে এটা নিয়ে প্রেসিডেন্টের উপর দ্বিতীয় হামলা হতে যাচ্ছে । কিন্তু প্রেসিডেন্ট কিছুতেই এই জনসভা বাতিল করার পক্ষপাতি নন । অবশ্য তিনি যে বাতিল করতে চান না এটার পেছনেও যথেষ্ঠ কারন আছে ।
স্বাধীনতার শুরু থেকেই দেশের এই শহরটা এক প্রকার অবহেলিত হয়ে আছে । রাজধানীর এতো কাছে থেকেও শহরটার দিকে অন্য কোন কোন সরকার একটুও নজর দেন নি একটি বিশেষ কারনে । কিন্তু সবাই এই নিরাপত্তার অযুহাত দিয়ে এলাকাটা এড়িয়ে গেছে । কিন্তু আজিজুল রহমান খান সবার মত দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারেন না ! তাই তিনি যখন একবার মনস্থির করেছেন তাখন সেখানে যাবেনই ।
শহর থেকে মোটামুটি ৭০ মাইল দুরে অবস্থিত এলাকা টা । শহরটার ঠিক কাছেই একটা আর্মি বেজ ক্যাম্প আছে । রাজধানী থেকে সরাসরি হেলিকাপ্টারে ঐ আর্মি ক্যাম্পেই নামবেন প্রেসিডেন্ট ! তারপরপ সেখান থেকে গাড়িতে করে আরও মাইল পাঁচেক !
সমস্যা এই পাঁচ মাইল নিয়ে ! এই পাঁচ মাইল জায়গাতে কোন ভাবেই সম্পূর্ন নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব নয় । উচু নিচু পাহাড়ী এলাকার মাঝ দিয়ে রাস্তা । কিছু জায়গায় আবার বনাঞ্চলও আছে । যদি হামলা হয় তাহলে এই পাঁচ মাইলের ভিতরেই হবে । যদিও এরই ভিতরে সিকিউরিটি টিম বেশ কয়েকবার এই পাঁচ মাইল কে কয়েকবার সার্চ করেছে তবুও আহমেদ আসাদের কেন জানি মনে ঠিক শান্তি লাগছে না !
###
প্রেসিডেন্টের গাড়ি বের হওয়ার সাথে সাথেই নিকিতার ফোনে ফোন এসে হাজির ! নাম্বার টা দেখেই নিকিতার মনে একটু আনন্দ আর একটু দ্বিধা কাজ করে উঠলো ! ফোন করেছে রাফায়েল চৌধুরী !
-হ্যালো !
-কি ব্যাপর ? আপনার দেখি কোন খোজ নেই !
-একটু ব্যস্ত ছিলাম !
-আমার মেইল টা দেখেন নি ?
-সমসয় হয় নি ! আসলে !!
ওপাশ থেকে কন্ঠ টা যেন একটু কাঁপছে । একটু যেন দ্বিধা ! নিকিতা অবশ্য এসব আমলে নিলো না ! কেবল বলল
-বুঝলাম !
-আসলে আমি বলতে চাচ্ছিলাম যে আজকে কি দেখা করা যাবে একটু ?
-আজকে ?
-হুম !
-কিন্তু একটু সমস্যা আছে যে !
-কি সমস্যা ?
-আসলে আব্বু বাইরে গেছে । আমাকে শক্ত করে বলে গেছে যেন আমি বাইরে না বের হই !
-প্লিজ । একটু দেখেন না ! বিশেষ দরকার ! আপনাকে একটা কথা বলার ছিল !
নিকিতা রাফায়েলের কন্ঠের আকুলতা বেশ ভাল করেই বুঝতে পারলো ! মনে মনে হাসলো ! তাহলে আজকে সে আসল সত্য টা বলতে যাচ্ছে ? যেতে পারে !
-আচ্ছা ! তবে বেশি সময় কিন্তু থাকতে পারবো না ! ঠিক আছে ?
-ঠিক আছে ।
ফোনে কথা বলা অবস্থায়ই নিকিতা বুঝতে পারছিল যে অন্য একটা ফোন আসছে । স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে মাশরুফ ফোন দিচ্ছে !
-হ্যা বলুন !
-ম্যাম ! আজকে কিন্তু আপনি কোন ভাবেই বাইরে বের হবেন না ! যত কাজই থাকুক না কেন !
-আচ্ছা ঠিক আছে । আপনি এতো চিন্তা করেন না ! আচ্ছা আপনি কোথায় ?
-আমি একটু বাইরে এসেছি অফিসের কাজে !
-আচ্ছা ঠিক আছে । আমি বাইরে বের হব না !
ফোন রাখার পরেই নিকিতার মন খুশি হয়ে উঠলো । ভাগ্য ভাল যে এই অফিসার আসে পাশে থাকবে না ! এখন ওর জন্য কাজ টা আরও সহজ হয়ে যাবে ! মনে ভেতরে কেবল রাফায়েলের চিন্তায় ঘুর পাক খেতে থাকলো ! আজকে কি তাহলে সত্যি সত্যি কথা টা বলে দিবে ?সে
###
আর্মি ক্যাম্প থেকে শহরের দিকে যাওয়া পথেই প্রেসিডেন্টের গাড়ি বহরের উপর হালমা হল । হামটা হল সভা স্থল থেকে ঠিক দুমাইল দুরে ! সামনে দুটো পেছনে দুটো জিপের মাঝখানে আজিজুল রহমানের গাড়ি ছিল । আশে পাশে ছিল আর কিছু মোটর বাইক ! কিন্তু হামলা টা হল বড্ড অগোছালো ভাবে ।
হঠাৎ একটা খাদের আড়াল থেকে দুটো গাড়ি বেরিয়ে এল ! রাস্তার ঠিক মাঝেখানে দুটো গাড়ি দাড় করিয়ে রাস্তা আটকানো হল । গাড়ির ঠিক পাশে চার পাঁচ জনের একটা দল এলোপাতাড়ি গুলো করা শুরু করলো কিছুক্ষন । কোন প্রকার ভারী কোন অস্ত্র না কেবল রাইফেল আর অটোমেটিক পিস্তল দিয়েই গুলি গুলো করা হল ! কয়েকটা হাত বোমা ফাটালো তারা !
একেবারে সামনে থাকা আর্মির গাড়ি থেকে কয়েকজন সৈনিক নেমে গুলি শুরু করলেই ওরা পালিয়ে গেল !
আহমেদ আসাদকে একটু চিন্তিত দেখে প্রেসিডেন্ট বলল
-কি ব্যাপার ? তোমাকে চিন্তিত মনে হচ্ছে ? বিপদ তো কেটে গেছে মনে হয় !
-কিন্তু স্যার ! এটা আপনার কাছে খুব সাদা মাটা একটা ব্যাপার মনে হচ্ছে না ? মানে এটা কোন ধরনেই হামলা হল ! আমার কেন জানি মনে হচ্ছে এটা একটা.....।
ঠিক আধা মাইল দুরে একটা উচু ঢিবির উপর স্নাইপার রাইফেল নিয়ে শুয়ে থাকা একজন মানুষও ঠিক একই সময় একই কথা ভাবছে । এটা মূল হামলা হতে পারে না ! এটা একটা ডাইভারজেশন !
কার জন্য ?
নিজেকে কষে একটা গালী দিতে ইচ্ছে হল তার ! রাইফেল ফেলে ফোন বের করে ডায়েল ঘুরালো কাঙ্খিত নাম্বার টাতে ! মুখে কালো কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা নয়তো একটা অস্থিরতার ভাব যে ফুটে উঠেছে সেটা স্পষ্টই বোঝা যেত !
###
-হ্যালো !
-কোথায় তুমি ?
-কোথায় তুমি মানে ? আপনিই না বললেন রাইফেলস স্কোয়ারে আসতে ?
-আমি ? কখন ?
-সরি আপনি না ! রাফায়েল বলেছে ! ওর সাথে দেখা করতে যাচ্ছি !
কিছুক্ষন নিরবতা !
-তুমি একক্ষুনি বাসায় যাও !
-কেন ?
-কোন কথা না ! একটুও দেরি না এখনই বাসায় যাও !
-কিন্তু.....
-তোমার গাড়ি কে চালাচ্ছে ? কে ? পেছনে সিকিউরিটি আছে ?
-হুম আছে পেছনের গাড়িতে ! আর একজন নতুন ড্রাইভার গাড়ি চালাচ্ছে ! নতুন জয়েন করেছে মনে হয় !
-গাড়ি থামাতে বল ! গাড়ি থেকে নামো ! এখনই নামো !
-কেন ? কি হয়েছে !
-যা বলছি করো ! এখনই
নিকিতা আগন্তুকের কথা বার্তা কিছুই বুঝতে পারছে না । কি এমন হয়ে গেল ! সকাল বেলা বাসা থেকে বের হওয়ার কোন প্রকার প্লান ছিল । ওর বাবার যে দিন বাইরে কোন প্রোগ্রাম থাকে সেদিন সাধারনত ও বাইরে বের হয় না ! কিন্তু যখন রাফায়েল কাছ থেকে যখন ফোন আসলো যে আজকে দেখা করা যাবে কি না এই বলে তখন কেন জানি আর বাসায় থাকতে মন চায়নি ! বাইরে বের হওয়ার সময় নতুন ড্রাইভার কে দেখে একটু অবাক হলেও ও তেমন কিছু একটা মনে করে নি ।
নিকিতা কিছু বুঝতে পারছে না । এদিকে ফোনের ওপাশে থাকা মানুষটার কথা ফেলতেও পারছে না !
-ড্রাইভার গাড়ি থামাও !
নতুন ড্রাইভার বলল
-জি ম্যাম ! কোথায় থামাবো ? আরেকটু সামনে গিয়ে পার্কিং দেখে থামাই ?
-আচ্ছা !
গাড়ি থামলো আরও কয়েক মিনিট পাঁচেক পরে । কিন্তু সেখানে নিকিতা নামার আগেই দুজন লোক দুদিক থেকে গাড়িতে চেপে বসলো কোন কিছু বোঝার আগেই !! ঠিক ওর পেছনে ওর সিকিউরিটির গাড়ি ছিল ! কোন রকমে ঘাড় ঘুরিয়ে নিকিতা দেখলো তিন দিক থেকে চার পাঁচ জন বন্দুকধারী গাড়িটার উপর সমানে গুলি করে চলেছে ।
দুপাশের উঠে আসা লোক দুটোর একজন ততক্ষনে নিকিতার মুখে একটা রুমাল চেপে ধরে ! সম্পূর্ন চেতনা হারানোর আগে নিকিতা কেবল ফোনের ওপাশে থেকে কেউ একজন চিৎকার শুনতে পেল । ফোনের স্পিকারে নিজের নাম টা শুনেই চেতনা হারালো !
যে জন রুমাল চেপে ধরেছিল তার পাশের জন্য ফোনটা নিয়ে গাড়ির জানলা দিয়ে ফেলে দিল । গাড়িটি ছুটে চলল শহরের শেষ মাথার দিকে !
###
ফারিয়া নূশরাতের বাসা টা ঠিক শহরের প্রানকেন্দ্রে । ১৬ তলা একটা বিল্ডিংয়ে একেবারে টপ ফ্লোরে থাকে সে ! লিফ্ট যখন একেবারে টপ ফ্লোরে এসে থালমো ঠিক তখনও ফারিয়ার মনে কোন প্রকার দুষ্চিন্তা কিংবা কোন প্রকার বিপদের কোন আভাস আসে নি ।
তার জানামতে শহরের এমন লোক খুব কমই আছে যারা কিনা তার জন্য বিপদের কারন হতে পারে ।
তাছাড়া আজকে তার মন বেশ ভাল । গত এক মাস ধরে যে ব্যর্থতা তাকে তাড়া করে ফিরছিল সেটা আজকে মুছে গেছে । আজকে অন্য কোন চিন্তা তার মনে আসছে না । আজকে রাতে তার আনন্দের ঘুম আসবে ।
কিন্তু সে যদি যদি জানতো তার শোবার ঘরেরই তার জন্য কি অপেক্ষা করছে তাহলে সে শোবার ঘরের দিকে ভুলেও পা বাড়াতো না !
ফারিয়া নূশরাত নিজের শোবার ঘরে গিয়ে যখন লাইট জ্বালালো প্রথম লক্ষ্যই করলো না ঠিক বারান্দার দরজার পাশে যে ছোট চেয়ার টা পাতা আছে সেখানে একজন বসে আছে । হাতে একটা সাইলেন্সার লাগানো পিস্তল তাক করে !
-হ্যালো মিস ফারিয়া !
চরকির মত ঘুড়ে দাড়ালো সে । বেশ খানিকটা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো কালো পোষাক পরা অচেনা আগন্তুকের দিকে !
ফারিয়া কেবল অবাক বিশ্ময়ে সামনে বসা মানুষটার দিকে তাকিয়ে রইলো । তার দিকে তাক করা বন্দুকের নলটাও তার দৃষ্টি আকর্ষন করতে পারছে না । একটু আগেই আগন্তুক তার কালো কাপড়টা খুলে ফেলেছে । সেখান থেকে বেরিয়ে পরেছে তার আসল চেহারা । ফারিয়া এই চেহারা যেন কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না ।
আগন্তুক কঠিন গলায় বলল
-নিকিতাকে কোথায় রাখা হয়েছে ?
-কি ? কি বলছেন ? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না । আপনি এভাবে আমার বাসায় আসতে পারেন ...
ফারিয়া আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলো তার আগেই আগন্তুক তাকে থামিয়ে দিল । তারপর তার মোবাইলটা বের করে ওর দিকে বাড়িয়ে দিল । ফারিয়া একটু দ্বিধা গ্রস্ত হলেও হাত বাড়িয়ে ফোনটা নিল । ফোনের স্ক্রিনে একটা ছবিটা ভাসছে । ছবিটা আর কারও নয় শামীম জাফরের । ঠোট ফেঁটে রক্ত বের হয়ে আছে । চেহারাটার অবস্থাও খুব বেশি সুবিধার নয় ।
আগন্তুক বলল
-ঠিক একই কথা তোমার চাচাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম । সে আমার মন মত উত্তর দেয় নি । তার কি অবস্থা করেছি তুমি দেখতেই পাচ্ছো । ছবিতে তো কেবল মুখটা দেখা যাচ্ছে । তোমার জ্ঞাতার্থে জানাই ওনার দুই হাটুতে আমি দুটো গুলি করেছি । সেখান থেকেই আমি মেজর হাবিবের নাম এসেছে । আর মেজর লোকেশন কেবল তুমি জানো ।
-আমি কিছু জানি না ।
কথাটা বলার পরেই একটা ঘটনা ঘটলো । চোখের পলকে সামনে বসা মানুষটা উঠে এসে ফারিয়ার গাল বরাবর স্বজোরে চড় মারলো । চড়টা এতোই জোরে পড়লো যে ফারিয়া কেবল ছিটকে গিয়ে পড়লো এক পাশে ।
এতো দিন তার নির্দেশে কত মানুষের হাত পা ভাঙ্গা হয়েছে । কত মানুষকে ঠান্ডা মাথায় উপরে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে সে কিন্তু কোন দিন নিজের এরকম পরিস্থিতে পরতে হবে সেটা সে ভাবতেও পারে নি ।
মাথা তুলে ওঠার পর ব্যাথা কি পাবে ফারিয়া কেবল অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো সে আগন্তুকের দিকে । কথা বলার ভাষা যেন হারিয়ে ফেলেছে । এতো সুন্দর চেহারার একজন মানুষ তাকে এভাবে চড় মারতে পারে এটা যেন তার বিশ্বাস হচ্ছে । আগন্তুক তখন শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ফারিয়ার দিকে । তার ভয় ভয় করতে লাগলো । এতো ক্ষমতাধর হয়েও নিজেকে এই আগন্তুকের সামনে বড় বেশি অসহায় লাগলো । ফারিয়ার কেবল মনে হল সামনে বসা মানুষ টার কাছে সে আসলে বড় বেশি অসহায় !
পরের পর্ব
১২ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১:৪১
অপু তানভীর বলেছেন: করেন !
২| ১২ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১:৪৬
অঘটনঘটনপটীয়সী বলেছেন: খুব ইন্টারেস্টিং মোড় নিচ্ছে দেখি গল্প। তাড়াতাড়ি পরের পর্ব দেন।
১২ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ২:১১
অপু তানভীর বলেছেন: হে হে হে হে !
এর পরের পর্ব এতো জলদি দিবো না ভাবছি ! কদিন পরে !
৩| ১২ ই নভেম্বর, ২০১৪ ভোর ৫:১১
অঘটনঘটনপটীয়সী বলেছেন: দেরি হবে কেনু??
১২ ই নভেম্বর, ২০১৪ ভোর ৬:৫৯
অপু তানভীর বলেছেন: হোক না একটু দেরি....
৪| ১২ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৪৪
কলমের কালি শেষ বলেছেন: চালিয়ে যান...
১২ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:১০
অপু তানভীর বলেছেন: হুম ! দেখা যাক কতদুর যাওয়া যায় !
৫| ১২ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৩৮
সোহানী বলেছেন: আরে আবার কই নিলেন নিকিতারে..... কি যে শুরু করলেন... টেনশানের রাখার কারনে মাইনাস... আর লিখার জন্য প্লাস......
১২ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:১০
অপু তানভীর বলেছেন: এতো টেনশন নিয়েন না ! দেখা যাক কোন দিকে যাওয়া যায়
৬| ১২ ই নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৩৯
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: বেশ বেশ!!!
মনে হচ্ছে......নিকিতাকে কিডন্যাপের মজাটা ভালই টের পাবে ফারিয়া.....
চলছে চলুক
ফাটফাটি একশন ব্লগ
১২ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:১৩
অপু তানভীর বলেছেন: দেখা যাক কত দুর যায় গাড়ি
৭| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:১০
সকাল হাসান বলেছেন: কালো পোষাক পড়া আগন্তুক, কিন্তু এতগুলো পর্বেও উল্লেখ ছিল না আগন্তুক কোন মুখোশের আড়ালে ছিল কি না! যদিও সহজেই অনুমেয় মুখোশের আড়ালে ছিল, কিন্তু এইটা উল্লেখ না করায় ফাঁকা একটা রয়েই গেল!
আর গল্পটার প্রথম দিকের আকর্ষনটা আস্তে আস্তে ম্লান হচ্ছে! কারন, প্রতিবার ঘুরে ঘুরে একই কাহিনী হচ্ছে, শুধু রঙ পাল্টাচ্ছে একটু!
এমনিতে একটু ব্যতিক্রম হলেও, এই গল্পের ধাঁচ অনুযায়ী এখন ঘটনাগুলো গতানুগতিক হয়ে যাচ্ছে!
শুভ কামনা রইলো পরের পর্বের জন্য! আশা করি, হতাশ করবেন না ঐ পর্বে!
১৩ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:৪২
অপু তানভীর বলেছেন: কাহিনী শেষের দিকে ! দেখা যাক সামনে আপনাকে হতাশ করি কি না !
৮| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৪১
রায়ান ঋদ্ধ বলেছেন: পুরাই অস্থির গল্প। টানা পড়ে গেলাম। পরেরটা জন্য অপেক্ষা করে থাকা মুশকিল... কবে পাবো?
১৩ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:৩২
অপু তানভীর বলেছেন: পরের পর্ব কবে পাবেন কেডা কইবো ? কইতে পারি না !!
©somewhere in net ltd.
১| ১২ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১:৩৬
অঘটনঘটনপটীয়সী বলেছেন: পড়া শুরু করলাম