নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বর্তমান সময়
মেঝের দিকে তাকিয়েই আমার কেবল মনে হল আজকে আমার খবর আছে । শুধু খবর না রাত আটটার বাংলার সংবাদ এবং সেটা প্রচারিত হবে ইংরেজিতে । মেঝের উপরে তৃষার পছন্দের লাল রংয়ের মগটা পড়ে আছে । মাঝখান দিয়ে ভেঙ্গে টুকরো হয়ে গেছে ।
তৃষাকে দেখলাম দরজা দিয়ে ঢুকতে । শব্দ বেশ ভালই হয়েছে । সেটা শুনেই এসে হাজির হয়েছে । আমার চোখ অনুসরন করেই ওর মেঝেতে পড়ে থাকা ভাঙ্গা মগটার দিকে তাকালো । আমি বললাম
-দেখো আমি একদম খেয়াল করি নি । পানি নিতে গিয়ে পড়ে গেছে !
আমি জানি এসব কাজ হবে না । আমি মানুষিক ভাবে ঝাড়ি শোনার জন্য প্রস্তুতি নিলাম । আমাকে এখন শুনতে হবে আমি কি কি কাজ পারি না, আমি কোন কাজ কোন দিন করি নি, আমি কেন এই সংসারে আছি আর কেনই বা তৃষা আমাকে বিয়ে করেছে । কিন্তু কয়েক মুহুর্ত কেটে গেলেও লক্ষ্য করলাম তৃষা নিজের স্থান থেকে নড়ে নি । কেবল একভাবে তাকিয়ে আছে মগটার দিকে । আমাদের বাসাতে আরও নানান ধরনের মগ থাকলেও তৃষা কেবল এই মগটাতেও কফি খায় । আর আমি আজকে সেই মগটাই ভেঙ্গে ফেলেছি ।
তারপর আমাকে অবাক করে দিয়ে ধীর পায়ে এগিয়ে এল পড়ে থাকা মগটার দিকে । হাত দিয়ে ভাঙ্গা টুকরো গুলো তুলতে লাগলো । আমি সত্যিই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম তৃষার দিকে । এই আচরণ তৃষার সাথে যায়ই না । হঠাৎ ও এমন আচরণ করলো ?
আমার সামনে আর থাকলো না । ভাঙ্গা টুকোরো নিয়ে ভেতরের দিকে চলে গেল । আমি আসলেই ঠিক বুঝতে পারছিলাম না । এরকম অকাজ আমি মাঝে মাঝেই করি । কোন কোন সময় ইচ্ছে করে আবার কোন কোন সময়ে দুর্ঘটনা ঘটে যায় । দুই বেলাতেই আমার উপর ঝড় বয়ে যায় । অবশ্য সেটা সমস্যা না । আমি সেই ঝড় ঠেকাতে পারি খুব ভাল ভাবেই । কিন্তু আজকে কি হয়ে গেল ?
তৃষা তো এমন আচরণ করে না কখনও । তাহলে এমন আচরণ কেন করলো ?
আমি বাসার ঘরে বেশ খানিকটা সময় পায়চারি করতে লাগলাম । ভাবতে লাগলাম এরপর আমার কি করনীয় । সম্ভবত তৃষা বড় ধরনের যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে । এই জন্য ঘরের ভেতরে চলে গেছে । আমি টিভি চালু করে ভাবতে লাগলাম ওর কোন কথার কি জবাব দিব । যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে লাগলাম ।
কিন্তু ঘন্টা পার হয়ে যাওয়ার পরেও যখন তৃষা রুম থেকে বের হল না তখন আমি খানিকটা চিন্তিতই হয়ে গেলাম । খানিকটা দ্বিধা নিয়ে শোবার ঘরে ঢুকলাম । লাইট অফ করা । বুঝতে পারছি না কি করবো । একটু ভয় ভয়েই লাইট টা অন করলাম । দেখলাম তৃষা জানলার দিকে মুখে শুয়ে আছে । বিছানার পাশের বক্স টেবিলে সেই ভাঙ্গা মগটা রাখা ।
আমি পাশ ফিরে তৃষার দিকে যেতেই অবাক হয়ে গেলাম । ওর চোখে পানি !
ও কাঁদছে ।
আমি জলদি করে ওর কাছে গিয়ে বললাম
-কি হয়েছে ? এমন কি হল ?
-কিছু না ।
-আরে বাবা বলবা তো ! এমন কেন কর ?
তৃষা কোন কথা বলল না । আমি আবার বললাম
-আচ্ছা আমি আগামীকাল ঠিক এই রকম একটা মগ কিনে এনে দিব । একদম একই রকম দেখতে । একটুও হেরফের হবে না ।
তৃষা তবুও কোন কথা বলল না । আমি বললাম
-আশ্চর্য সামান্য একটা মগের জন্য কেউ এভাবে কাঁদে !
-সামান্য !
আমি একটু বিশ্মিত হলাম । তৃষা বলল
-এটা মোটেই সামান্য না ।
-কি এমন বিশেষ্যত্ব আছে এই মগে ?
তৃষা বলতে গিয়ে থেমে গেল । দেখলাম ওর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে । আমি এবার ওকে জড়িয়েই ধরলাম । তারপর বললাম
-আমাকে বল ? কি এমন বিশেষ্যত্ব আছে এই মগে ? আমি কালকেই কিনে এনে দিবো তো বাবা ! এমন করে কাঁদে না !
তৃষার ফোঁফানির আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম । কাঁদতে কাঁদতেই তৃষা বলল
-এটা তুমি আমার প্রথম উপহার ছিল আমার জন্য । মনে নেই সেই প্রথম দিকে ? আমি কফি খাই বলে তুমি এটা আমাকে কিনে দিয়েছিলে ?
আমার বুকের মাঝে কেমন করে হুহু করে উঠলো । তৃষা বলল
-এরকম হাজারটা মগ কেনা যাবে কিন্তু সেটা তোমার প্রথম উপহার তো হবে না ! আর ফিরে পাবো আমি ?
আমি কি করবো ঠিক খুজে পেলাম না । বারবার মনে হতে লাগলো আরেকটু সাবধান হলে কি এমন ক্ষতি হত ! আরেকটু সাবধান হলে তৃষার চোখে এভাবে পানি দেখতে হত না । আমি জীবনে সব কিছু দেখতে পারি কিন্তু তৃষার চোখে পানি কিছুতেই দেখতে পারি না । আর যখন সেই চোখের পানি কারন আমি নিজে তখন আমি নিজেকে কিভাবে বুঝ দিব ! কিভাবে ?
এমন কোন উপায় যদি থাকতো এই ঘটনাটা ফেরৎ আনার ! এমন একটা ঘটনা !
অতীত
প্রেমিকাকে উপহার দেওয়াটা একটা বিরক্তির কাজ । কথাটা ভুল হল । উপহার দেওয়াটা বিরক্তিকর কাজ না, কি উপহার দেব সেটা নির্বাচন করাটা বিরক্তিকর । আর আমার জন্য সেটা হচ্ছে মহা বিরক্তিকর কাজ ! আমার জিনিস পত্র পছন্দ করার ব্যাপার বদনাম আছে । আমি যখন শপিং করতে যাই তখন এক দোকানে ঢুকি, সামনে যা পাই তা নিয়েই বেরিয়ে আসি । পছন্দ করাটা আমাকে দিয়ে ঠিক হয় না । এই জন্য আমার জিনিস আগে আমার বন্ধুরা পছন্দ করে কিনে দিত এখন তৃষা কিনে দেয় । আমি কেবল তাদের পেছন পেছন ঘুরি আর বিল দেই।
এখন তৃষাকে কি গিফট দিব সেটা নিয়ে দুদিন খুব বিরক্তিতে কাটলো । কিছুতেই খুজে পাচ্ছি না । শেষে বন্ধু লিজাকে বললাম কি দেওয়া যায় । লিজাই বলল যে যেহেতু তৃষা কফি খায় নিয়মিত তাই শুরুটা হোক কফির মগ দিয়ে । কিন্তু এখানে এসে পরলাম আরেক বিপদে ! কি রংয়ের মগ দেব সেটা বুঝতে পারছিলাম না । মনে হচ্ছিলো সব নিয়ে যাই । আরেকবার লিজাকে ফোন দিবো কি না ভাবছি তখনই লাল রংয়ের মগটার দিকে চোখ গেল । চিন্তা ভাবনা না করে লাল রংয়ের মগটা হাত দিলাম ।
তখনই একটা অবাক হওয়ার মত ঘটনা ঘটলো । আমার কাছে মনে হল চারিদিকে যেন সব কিছু থেমে গেছে । কেউ নড়ছে না । আমি যখন দোকানটাতে আসি তখন বেশ কয়েকজন ছিল । আমার পাশেই একজন মগ দেখছিলো । আমি তাকিয়ে দেখি সে স্থির হয়ে গেছে । কেবল সেই নয়, দোকানের সবাই স্থির হয়ে গেছে । কাচের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখি সব কিছু থেমে গেছে । কেবল আমি সচল আছি !
তীব্র একটা ভয় পেয়ে বসলো আমাকে । আমার মনে হল এখন থেকে আমাকে বের হতে হবে ! এখনই বের হতে হবে !
দৌড় দিতে যাবো ঠিক তখনই লোকটার দিকে আমার চোখ গেল । সাদা স্যুট পরা লোকটা দোকানের ভেতরে ঘোরাফেরা করছে। আমার দিকে চোখ পড়তেই লোকটা হাসলো । রহস্যময় হাসি !
আমার কেবল মনে হল আমার আশে পাশে যা হচ্ছে তার জন্য এই লোকটাই দায়ী । একটু আগেও লোকটা দোকানে ছিল না । আমাকে এখন এখান থেকে বের হতে হবে । পালাতে হবে !
আমার মনের কথা যেন লোকটা বুঝতে পারলো সাথে সাথেই । তারপর আমার দিকে হাসি মুখে বলল
-পালিয়ে কোথায় যাবে বল ?
লোকটা আমার মনের কথাও বুঝতে পারছে ? কে এই লোক ? আমি কোন মতে বললাম
-কে আপনি ? কি চান আমার কাছে ?
-আমি ?
হাসলো সে । তারপর বলল
-আমি কে সেটা জরুরী না । কিন্তু তুমি যেটা করতে যাচ্ছো সেটা ঠিক করছো না ?
-মানে ? আমি কি করতে যাচ্ছি ?
-এই যে লাল মগটা কিনছো । এটা ঠিক হচ্ছে না।
আমি খানিকটা সময় বিভ্রান্ত হয়ে তাকিয়ে রইলাম লোকটার দিকে । লোকটা তখন আমার কাছে চলে এসেছে । আমার মনে হল লোকটার শরীর থেকে একটা আলাদা দুত্যি বের হচ্ছে । একটু আগে যে লোকটাকে ভয় লাগছিলো সেটা এখন আর লাগছে না । মনে হচ্ছে যেন লোকটা আমার কোন ক্ষতি করবে না ।
আমি বললাম
-আপনি কি বলছেন ঠিক বুঝতে পারছি না ।
লোকটা বলল
-এই যে লাল রংয়ের মগটা কিনছো এটা ঠিক হচ্ছে না । কারন কয়েক দিন পরে এই লাল মগটাই তোমার খুব কাছের কারো মন খারাপের কারন হবে !
-আমি আসলেই কিছুতেই বুঝতে পারছি না ।
-কিছু বুঝতে হবে না। তার চেয়ে বরং এই নীল রংয়ে মগটা কিনো ! এটা মাটিতে পড়লেও ভাঙ্গবে না !
-কেন ? লালটাতে কি সমস্যা ?
-বোকা ছেলে ! তোমার কষ্ট দেখে আমি আসলাম আর তুমিই কি না তর্ক করছো ? এই জন্য মানব জাতির ভাল করতে নেই ।
-আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে ! আমি ঠিক বুঝতে পারছি না কি হচ্ছে । তবে আপনার কথা বিশ্বাস করছি ! আমি নীলটাই কিনছি ! কিন্তু বলবেন যে আপনি কে ?
-সেটা তোমার না জানলেও চলবে ! বুঝেছো । আর এই দোকান থেকে বের হলেই তুমি আমার কথা ভূলে যাবে একদম ! আমাদের দেখা হয়ে ছিলো সেটা কোন দিন মনেও থাকবেও না !
-মানে ?
আমি হঠাৎ করেই আবিস্কার করলাম সব কিছু আবার কেমন সচল হয়ে গেছে । আরেকটু হলেই পাশের ছেলেটার সাথে আমার ধাক্কা লেগে যেত । ছেলেটা একটু বিরক্ত হয়ে তাকালো আমার দিকে । তবে আর কিছু বললাম । আমি তখনও সেই অদ্ভুদ লোকটাকে খুজছি । লোকটা কোথাও নেই । পুরো দোকান ঘুরে দেখলাম ।
মাথার ভেতরে কিছুই আসছিলো না । যখন আর কিছুই করার নেই দেখলাম তখন সেই লোকটার কথা মতই নীল রংয়ের মগটা কিনে বেরিয়ে এলাম । আর ভাবতে লাগলাম কি হল এতো সময় আমার সাথে !
সংশোধিত বর্তমান
মগটা পড়ার আওয়াজে আমি চমকে উঠেছিলাম । ঠিক মত লক্ষ্যই করি নি ! তবে আশার কথা যে মগটা ভাঙ্গে নি । কিন্তু তাতে শেষ রক্ষা হয় নি । কারন তৃষা টেবিলের কাছে এসে হাজির । তাকিয়ে আছে নীল রংয়ের কফির মগটার দিকে ।
তারপর ছো মেরে তুলে নিল । আমার দিকে অগ্নি চোখে তাকিয়ে বলল
-যদি এটা ভাঙ্গতো না আজকে তোমার খবর ছিল ! তুমি কি কোন দিন সাবধান হবে না ? কোন দিন একটু বুদ্ধি হবে না তোমার ! আশ্চর্য মানুষ এতো কান্ডজ্ঞান কেন হবে ? একটু দেখে শুনে চলবে না তুমি ? তোমাকে যে কেন আমি বিয়ে করেছি আমি নিজেই জানি না .....
বুঝলাম আজকে আমার খবর আছে । এই সংবাদ আজকে আর থামবে না !
০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১২:৩১
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ পড়ার জন্য
২| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১:৩৪
মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: এতো রস পান কোথায় অপুভাই? মনে হয় যেন টাটকা খেজুরের হাড়ি থেকে নামানো রস।
০৫ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১২:৪০
অপু তানভীর বলেছেন:
৩| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০২
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: হা হা হা
সংবাদ ভাষ্যে সেইরাম মজা
গল্পে +++
০৫ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১২:৪১
অপু তানভীর বলেছেন: বুঝা যাইতেছে সংবাদ শোনার অভিজ্ঞতা আছে
৪| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:২৬
রাজীব নুর বলেছেন: সহজ সরল সুন্দর গল্প।
০৫ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১২:৪২
অপু তানভীর বলেছেন: থেঙ্কু
৫| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১২:৪৭
Lionel Hridoy বলেছেন: valoi laglo
০৬ ই এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ২:৫৮
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ পড়ার জন্য
৬| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ২:৪৯
মনিরুল ইসলাম বাবু বলেছেন: গল্পে ++
০৬ ই এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ২:৫৯
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ
৭| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১২:৪৩
ইব্রাহীম আই কে বলেছেন: ভালো লাগলো
০৭ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৯:০৩
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ
৮| ২৩ শে জুলাই, ২০১৮ সকাল ১০:২৫
খাঁজা বাবা বলেছেন: হাহাহাহা
২৫ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ১:৪৭
অপু তানভীর বলেছেন:
©somewhere in net ltd.
১| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১২:২২
সোহাগ তানভীর সাকিব বলেছেন: প্রণয় এবং পরিণয়ের রসায়ণ সব মিলিয়ে বেশ ভালো লাগছে। খারাপ না।