নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ওয়েট মেশিনটার দিকে মায়ার মনটা খারাপ হয়ে গেল । ৮৯ কেজি দুইশ গ্রাম । এর মানে হচ্ছে গত এক মাসের পরিশ্রমে মাত্র নয়শ গ্রাম কমেছে ! মন খারাপ নিয়ে বসে পড়লো সে ! মায়ার কিছু ভাল লাগছে না । ডাক্তারের কাছে যাওয়া বৃথা মনে হচ্ছে । অবশ্য এর আগেও এমনটা হয়েছে । ওজন কমাতে নিউট্রিশনিস্টের কাছে যাওয়া ওর এই প্রথম না । আগেও বেশ কয়েকবারই গিয়েছে কিন্তু কোন কাজ হয় নি । মায়ার ওজন মোটেও কমে নি । বরং আরও বেড়েছে কোন কোন ক্ষেত্রে ।
তখন ব্যাপার গুলো অন্য রকম ছিল । নিজের ওজন নিয়ে খুব একটা চিন্তিত ছিল না সে । কিন্তু এখন ব্যাপারটা মোটেও আগের মত নেই ।আগে সে সিঙ্গেল ছিল কিন্তু এখন বিবাহিত । ইমনের সাথে কোথাও বাইরে বের হতে পারে না লজ্জার কারণে । ইমন দেখতে কী সুন্দর । ইমনের পাশে ওকে কেমন যেন লাগে । নিজের কাছে এতো খারাপ লাগে ওর । মনে হয় যেন সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে দিতে !
তখনই কলিংবেল বেজে উঠলো । মায়া ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সবে মাত্র বিকেল পাঁচটা ! ইমনের অফিস থেকে আসতে আসতে সাতটা বাজে । এখন আবার কে এল । ধীর পায়ে দরজার কাছে এগিয়ে গিয়ে কী হোলে চোখ রাখলো । ইমনকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে একটু অবাকই হল । দ্রুত দরজা খুলে দিল । ইমন ওর দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বলল, ঘুমিয়ে পড়েছিলে নাকি?
মায়া সেই প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বলল, তুমি এতো জ্বলদি । শরীর ভালো আছে তো !
-না ঠিক আছি । আসলে শশুর মশাইয়ের অফিসে চাকরি করার এই এক সুবিধা । একটু আগে আগে বের হলেও সমস্যা নেই ।
মায়া এই কথা শুনে কি খুশি হওয়া উচিৎ নাকি দুঃখিত হওয়া উচিৎ সেটা মায়া বুঝতে পারলো না । ইমনের দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি গোসল করবে? পানি গরম দিবো?
-নাহ ! পরে করবো গোসল । এই প্যাকেট টা নাও । তোমার জন্য !
মায়া তখনই দেখতে পেল ইনের হাতে একটা প্যাকেট । সেটা মায়ার হাতে দিয়ে সে শোবার ঘরের দিকে চলে গেল । মায়া প্যাকেট টা খুলতেই অনেক গুলো চকলেট বের হয়ে এল । এতো আনন্দ লাগলো ওর । কিন্তু সাথে সাথে আবার মন খারাপ হয়ে গেল । চকলেট ওর খুব বেশি পছন্দ । ওর শরীর ভারী হওয়ার পেছনে বেশি চকলেট খাওয়া অন্যতম কারণ । কিন্তু বিয়ের পর থেকে ও একদম চকলেট খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে । আজকে চকলেট গুলো দেখে খুব ইচ্ছে করছে খেতে কিন্তু খুব ভাল করেই জানে যে নয়শ গ্রাম ওজন কমেছে সেটা আবার বেড়ে যাবে ।
ইমনকে ফিরে আসতে দেখলো একটু পরে । খানিকটা অবাক হয়েই দেখলো এরই ভেতরে ইমন পোশাক বদলে দুই কাপ কফিও বানিয়ে নিয়ে এসেছে । অবশ্য ফ্লাক্সে পানি গরমই ছিল । কফির কাপটা টি টেবিলের সামনে রাখতে রাখতে ইমন বলল, গিগট পছন্দ হয় নি?
-হয়েছে। কিন্তু এই চকলেট খেলে আবার মোটা হয়ে যাবো !
-তো !
-মানে? মোটা হে বাজে দেখায় ! তোমার পাশে কেমন যেন লাগে !
-এই জন্যই সকালে উঠে এতো পরিশ্রম করছো?
কথা বলেই ইমন সোজা তাকালো মায়ার চোখের দিকে । মায়ার মনে হল যে ইমনের চোখের কোনে একটা অপরাধবোধের চিহ্ন দেখতে পেল । কফিতে একটা চুমুক দিয়ে ইমন ওর মুখোমুখি বসলো । তারপর বলল, আমি জানি তুমি জানো যে আমি তোমাকে কেন বিয়ে করেছি ! জানো না?
মায়া ঠিক বুঝতে পারলো না ইমন আসলে কি বলতে চাইছে ।
ইমন আবার বলল, তোমার বাবা অফিসে চাকরির বদলে তোমাকে বিয়ে করেছি । তোমাকে পছন্দ করে না । এটাই তো ভাবো তুমি । তাই না?
মায়া বলল, আমি কি তাই বলেছি?
-না । তবে এটা সত্য ।
ইমন কিছু সময় নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো । তারপর মায়ার দিকে আবার ফিরে তাকালো । বলল, জানো মায়া আমার জন্য পৃথিবীতে কখনও আলাদা করে কিছু করে নি । কিছু না । অবশ্য তাদের দোষ দেই কিভাবে ! আমার ভেতরে আসলে কিছু নেই । কেবল এই সুন্দর চেহারার ব্যাপারটা আছে যা উপরওয়ালা দিয়েছে । আর কিছু নেই আমার ভেতরে । কিচ্ছু না । পড়াশুনাতে ভালো ছিলাম না । স্মার্টও না তেমন একটা । বাপের টাকাও নেই । মেয়েরা হয়তো কিছুদিন পাত্তা দিয়েছে তবে সরে গেছে একটু পরেই ।
মায়া কিছুই বুঝতে পারছে না ইমন কেন এই কথা গুলো বলছে । ইমন আবার বলল, তোমাকে বিয়ে করার কারণ সত্যিই ছিল তোমার বাবার ঐ চাকরি । কিন্তু কয়েক দিন ধরে আমার একটু আগে ঘুম ভেঙ্গে যেত সকালে । ঘুম থেকে উঠে দেখতাম যে তুমি পাশে নেই । ভাবলাম হয়তো রান্না ঘরে । কিন্তু হঠাৎ করে তোমার অস্ফুটে চিৎকার পেয়ে সচকিত হয়ে পাশের গিয়ে হাজির হলাম । তুমি তখন ব্যাথা সামলাতে ব্যস্ত । একটু পরেই বুঝতে পারি যে ব্যায়াম করছিলো । ব্যাথা পেয়েছো । আড়াল থেকে দেখতে লাগলাম তোমার কাজ । ব্যাথা সামলে আবারও ব্যায়াম করতে ব্যস্ত । ঘাম ছিলে জোড়ে নিঃশ্বাস নিচ্ছিলে । একটু চিকন হতে ! আমার পাশে যেন তোমাকে ভাল মানায় ! আমাকে যেন লজ্জিত হতে না হয় !
মায়া চুপ করে রইলো । দেখতে পেল ইমনের চোখের কোনে এক বিন্দু অশ্রু চিকচিক করছে । ইমন বলল, জানো মায়া এরপর এই কয়েকদিন আমি শান্তিমত ঘুমাতেই পারি নি । একটা মেয়ে আমার জন্য কষ্ট করছে, পছন্দের খাবার খাচ্ছে না, না খেয়ে থাকতে, যে পরিশ্রম পারছে না তবুও করে যাচ্ছে ! আমার জন্য যাতে আমার চোখে তাকে ভাল লাগে । এই অনুভূতি আমার জন্য নতুন একদম নতুন ! আমি কেবল অনুভব করতে পারছি যে আমি তোমাকে আমার মাথার ভেতর বের করতে পারছি না । বারবার তোমার ঐ পরিশ্রান্ত মুখ আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছে । আমি শান্তি পাচ্ছি না । কিছুতেই শান্তি পাচ্ছি না ।
মায়া একদম চুপ হয়ে তাকিয়ে রইলো ইমনের দিকে । ইমনের চোখ দিয়ে তখন এক বিন্দ্রু অশ্রু গড়িয়ে পড়েছে । মায়া এক ভাবে সেই অশ্রুর দিকে তাকিয়ে রয়েছে । মায়া আরও একটু এগিয়ে বসলো ইমনের । তারপর ইমনের হাতটা ধরে বলল, তুমি নিজেকে কেন দোষী ভাবছো? বিয়ের ব্যাপারটা আসলে কারো হাত নেই । তোমার আমার জুটি উপর থেকে ঠিক করা । উছিলা যাই হোক না কেন ! আর কে বললে যে তোমার কোন গুণ নেই ! আসুক দেখি বলতে ! একেবারে মাথা ফাটিয়ে দেব !
ইমন হেসে ফেলল । ওর চোখে তখনও অশ্রু খেলা করছে । মায়া আবারও কিছু সময় সেই দিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইলো । ইমন বলল, আজ থেকে আর ওয়ার্কআউট করতে হবে না । না খেয়ে তো থাকাই যাবে না । প্রতিদিন ভোরে আমরা দুজন এক সাথে হাটতে বের হব । রাতে খাবার পরে হাটবো এক সাথে । আর খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে একটু সাবধান হবে । লাইক তেল জাতীয় খাবার কম খাবো আমরা. ব্যাস । আর কোন বাড়তি পরিশ্রম না । ঠিক আছে ?
মায়া একটু হেসে বলল, ওকে ! তোমার যদি মটু বউ নিয়ে সমস্যা না থাকে আমার তো কোন সমস্যা নেই ।
পরিশিষ্টঃ
এরপর থেকে প্রতিদিন ভোর বেলা ওরা দুজন হাটতে বের হত । প্রতিদিন সকালবেলা এক সাথে শুরু হত ওদের । মায়ার এতো চমৎকার লাগতো । রাতের বেলাতেও একই ভাবে দুজন হাটতো এক সাথে । মাত্র ছয় মাসের ভেতরে মায়ার শরীর কমে গেল । না একেবারে স্লিম হয়ে গেল না সে তবে আগের সেই স্থুলতাও ছিল না ।
নিউট্রিশনিস্টের কাছে গিয়েছিলো । সেও নিজেও খানিকটা অবাক হয়েছিলো । কোন ব্যাখ্যা দিতে পারে নি । কোন কিছু সাজেস্টও করে নি । বলেছে যেমন ভাবে চলছে তেমনই চলুক । হয়তো সামনে আরও কমে যাবে । আসলে মনের সাথে মানুষের দেহের একটা বিরাট সংযোগ রয়েছে । মানসিক শান্তি অনেক বড় একটা ব্যাপার । মানসিক শান্তির কারণে শরীরের অনেক সমস্যা এমনিতেই গায়েব হয়ে যায় অন্য দিকে মনের শান্তি না থাকলে সেরা স্বাস্থ্য সেবার পরেও শরীর খারাপ হয় । মায়ার যা রয়েছে তা হচ্ছে মনের শান্তি । এই যে ও যেমন আছে তেমন ভাবেই ইমন ওকে ভালোবাসতে এই শান্তির থেকে বড় কিছু আসলে আর কিছু নেই ।
এই সব আসলে গল্পে ভাল হয় । বাস্তবে এই সব হয় না । তবুও ভাবতে ভাল লাগে ।
গল্পটি নিজেস্ব ব্লগে আগে প্রকাশিত হয়েছে
১০ ই জুলাই, ২০২১ দুপুর ২:৪৩
অপু তানভীর বলেছেন: বাস্তবে আসলেই এই সব হয় না । আমি আমার জীবন থেকে একটা জিনিস কেবল ভাল করে বুঝেছি যে মানুষ এখন আর শুরু ভালোবাসা দিয়ে চিন্তা করে না । এই ভালোবাসার সাথে যুক্ত থাকে অর্থ বিত্ত চেহারা দৈহিক সৌন্দর্য্য ক্ষতি । এসব যুক্ত হলেই কেবল একজন মানুষ ভালোবাসার যোগ্য বলে বিবেচিত হয় ।
২| ১০ ই জুলাই, ২০২১ বিকাল ৩:২৩
শায়মা বলেছেন: আমার ওজন আজকাল প্রতিদিন ১ কেজি করে বাড়ে।
নাচানাচি বন হয়েছে। এখন আবার শুরু করলে বিল্ডিং ভেঙ্গে যায় যদি সেই ভয়ে আর নাঁচিও না ।
আস্তে ধীরে হাঁটি যেন বিল্ডিং না বুঝে ......
১০ ই জুলাই, ২০২১ বিকাল ৪:০৮
অপু তানভীর বলেছেন: নাচানাচি বন্ধ করা মোটেই উচিৎ হয় নাই । এই কাজ চালিয়ে যাওয়া উচিৎ সব সময় । বেশি ভয় লাগলে পদ্মাসেতুর উপরে গিয়ে নাঁচতে হবে । সেইটা মোটেও ভেঙ্গে পড়বে না আশা করি !
৩| ১০ ই জুলাই, ২০২১ বিকাল ৪:৩৩
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: অপু ভাই, মন ভাল করা একটি গল্প।
আসলে একটুখানি ত্যাগ ও সমঝোতা আমাদের জীবনের গতিথ যে কতটা বদলে দিতে পারে,বদলে দিতে পারে আমাদের আশ-পাশ - তা আমরা কেউ বুঝতে চাইনা।
আর যারাই এই সামান্য একটু কাজ (ত্যাগ ও সমঝোতা ,যদিও আপাতদৃষ্টিতে তা খুব কঠিন মনে হয়) করে তাদের জীবনই ভরে উঠে সুখ-সাফল্যে ।
১০ ই জুলাই, ২০২১ রাত ৮:০৫
অপু তানভীর বলেছেন: তা ঠিক।
কিন্তু এই ত্যাগ সমঝোতা আসতে হয় নিজের ভেতর থেকে আপনা আপনি । জোর করে না । কিন্তু আমাদের সমাজের বেশির ভাগ ত্যাগ আর সমঝোতা হয় বাধ্য হয় স্ব ইচ্ছেতে নয় । তাই জীবন গল্পের মত সুন্দর হয় না !
৪| ১০ ই জুলাই, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:০৫
কুশন বলেছেন: দুর্বল গল্প। পড়ে আরাম পাওয়া গেলো না।
আপনাকে আরো দক্ষ হতে হবে। প্রচুর পড়তে হবে।
১০ ই জুলাই, ২০২১ রাত ৮:০৫
অপু তানভীর বলেছেন: আচ্ছা
৫| ১০ ই জুলাই, ২০২১ রাত ৮:১০
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: সুন্দর গল্প। পৃথিবীর সকল দম্পতি যদি এই গল্পের দম্পতির মত হতো তাহলে কতই না ভালো হতো। সাধারনত বলা হয়ে থাকে যে পুরুষদের নিজের বউ ছাড়া অন্য সকলের বউকে ভালো লাগে। এই ব্যাপারটার একটা সুষ্ঠু সমাধান প্রয়োজন সুন্দর দাম্পত্য জীবনের জন্য। বিয়ের পরে প্রেমিক-প্রেমিকা আর প্রেমিক-প্রেমিকা থাকে না তারা হয়ে যান স্বামী-স্ত্রী। ভুপেন হাজারিকার গানে আছে যে
প্রেমহীন ভালোবাসা বেসে বেসে ভেঙ্গেছি সুখের ঘর .........
দাম্পত্য জীবনে প্রেমকে অব্যাহত রাখতে হবে যেটা মনে হয় আমাদের সমাজে ঘাটতি আছে।
১১ ই জুলাই, ২০২১ বিকাল ৪:৩০
অপু তানভীর বলেছেন: এটা খুবই সত্যি কথা । পুরুষের নিজের বউ বাদ দিয়ে অন্য সবার বউ ভাল লাগে । বিয়ের পর আসলে অনেক কিছুর পরিবর্তন হয় । কোন কিছুই আগের মত আর থাকে না । স্বামী স্ত্রীর মাঝে ভালবাসা কমে গিয়ে সেখানে বড় হয়ে ওঠে দা্য়িত্ব ।
৬| ১০ ই জুলাই, ২০২১ রাত ৯:৩৩
জটিল ভাই বলেছেন:
গপ্পো গপ্পের মতোই লাগলো। অসাধারণ!
১১ ই জুলাই, ২০২১ বিকাল ৪:৩০
অপু তানভীর বলেছেন: বাস্তবে আসলে এসবের কিছুই হয় না । বাস্তব এই জন্য গল্পের মত সুন্দর হয় না ।
©somewhere in net ltd.
১| ১০ ই জুলাই, ২০২১ দুপুর ২:৩৩
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: গল্পটি ভালো হয়েছে, চমৎকার হয়েছে।
কথা সত্য, এইবস শুধু গল্পেই সম্ভব, বাস্তবে হয় না।