নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছবি উৎস
তখন স্কুলে পড়ি । তবে ঠিক কোন ক্লাসে পড়ি সেটা মনে নেই । নিচের ক্লাসেই পড়ি । একটা ছেড়া বই আমার হাতে এল । বইটা ছিল আমার এক চাচাতো বোনের । প্রথম কয়েকটা পৃষ্ঠা ছিল না বইটার । বইটার নাম ছিল বোতল ভুত । সেই বইটা পড়ে যে আমার অনুভুতি কেমন ছিল সেটা এখন আর আমার মনে নেই । এই বোতল ভুত বইটা আমার হুময়ূন আহমেদের পড়া প্রথম বই । তখনও আমার ঠিক বই পড়ার অভ্যাস হয়ে ওঠে নি । তখন বয়স ছিল কম আর হাতের কাছে বই পত্রও ছিল কম ।
এরপর জেলা পাবলিক লাইব্রেরিতে ভর্তি হয়ে গেলাম । তখন আর কিনে বই পড়তে হত না । মাসিক মাত্র ১০ টাকা দিয়ে বই পড়তে পারতাম । প্রথম দিকে অবশ্য সেবার বই বেশি পড়া হত । কিশোর ক্লাসিক আর ভুতের বই । বইয়ের লিস্ট করা খাতা থাকতো । আমরা সেই লিস্ট দেখে বই চাইতাম । আমাদের বই এনে দেওয়া হত ।
আমার পছন্দের বইয়ের কথা লাইব্রেরিয়ান জানতো । একদিন সে আমাকে আরেকটা ভুতের বই নিয়ে এসে দিল । সেটা হচ্ছে কুটু মিয়া । এটা ভুতের বই । বইটা পড়ে ভুতের গল্পের থেকেও লেখকের লেখার ধরনের প্রেমে পড়লাম । তখন যদিও তার নাম জানতাম ঠিকই । জনপ্রিয়তায় সে তুঙ্গে । বিশেষ করে তার নাটক গুলো তো খুবই জনপ্রিয় তখন । আমি এরপর খাতা খুজে তার লেখা বই গুলো নেওয়া শুরু করলাম । প্রতিটা বই পড়ি আর নিজের ভেতরে একটা একটা করে ধাক্কা খাই । ক্লাস টেনে পড়ার আগেই মোটামুটি সেই সময়ে প্রকাশিত সব বই আমার পড়া শেষ ।
প্রতিটা বই পড়তাম । হঠাৎ পড়ার মাঝে হেসে উঠতাম । আমার বাড়ির লোকজন মনে করতো আমি পাগল হয়ে গেছি । এমন একা একা কেন হাসি । আবার পড়তে পড়তে কখন যে চোখ ভিজে উঠতো সেটা টেরও পেতাম না । এমন করেই প্রতিটা বই পড়া শেষ হত । প্রতিটা বই পড়া শেষ করে বুকের মাঝে কী এক অদ্ভুত অনুভূতি হত সেটা কোন ভাবেই ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না । তার লেখা মানেই অন্য কিছু । অন্য রকম অনুভূতি । আমার জীবনের সেটা সময় গুলো আমি কাটিয়েছি তার বই পড়ে ।
তার লেখা সব কিছু আমার পড়া । কেবল একটা উপন্যাস আমি পড়ি নি । সেটা আজও পড়ি নি আমি । যদিও বইটা আমার কাছে । এখন কেবল মনে হয় বইটা পড়লেই তো শেষ হয়ে যাবে । আর তো নতুন বই আসবে না তার । একটা বই থাকুক না পড়া ।
আজকে ১৯শে জুলাই । ঠিক এমন একটা দিনে সেই সংবাদটা আসে আমার কাছে। সেবার আমি গ্রামে এসেছিলাম । রাত একটা কী দুইটার দিকে হঠাৎ আমার ফোনে ফোন । ঘুম কাতুর চোখে ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখি আমার স্টুডেন্ট ফোন দিয়েছে । ফোন ধরতেই সে বলল, স্যার হুমায়ূন আহমেদ মারা গেছে ।
আমি প্রথমে ঠিক বুঝতে পারলাম না । ঘুমের রেস তখনও কাটে নি । বললাম কী বললে?
-স্যার হুমায়ূন আহমেদ মারা গেছে ।
আমি আর কোন কথা বলতে পারলাম না । চুপ করে কেবল ফোনটা রেখে দিলাম । সেদিন রাতে আমার আর ঘুম আসে নি । আমি সারা রাত শুয়ে রইলাম বটে কিন্তু ঘুম আসলো না আর । কী যে ভাবছিলাম সেটা আমি নিজেও জানি না । কেবল শূন্য চোখে তাকিয়ে ছিলাম । তখনও যেন বিশ্বাস করতে পারছিলাম না । আমার এখনও বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় এখনও ।
আমি মানুষের মৃত্যু থেকে সব সময় দুরে থাকি । মরা বাড়ি কবর স্থান জানাযা এই থেকে নিজেকে দুরে রাখি সব সময় । কিন্তু কেন জানি তার থেকে দুরে থাকি নি । থাকতে পারি নি । কয়েকদিন পরে তার লাশ এল দেশে । আমি সেখানে গিয়ে হাজির হলাম । কী এক তীব্র কষ্ট যে অনুভব হচ্ছিলো সেটা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না । এক শূন্য স্থান তৈরি হয়েছিলো । আমার জীবনের একটা ইচ্ছে ছিল কোন একদিন তার সাথে দেখা হবে । তার অটোগ্রাম নিবো । এমনিতে আমার অটোগ্রাফের প্রতি কোন ফ্যাসিনেশন নেই । কিন্তু তার কথা আলাদা ছিল । তার সাথে এভাবে দেখা হবে কোন দিন ভাবি নি । যদিও তার মুখ সেদিন দেখি নি । দেখতে পারি নি ।
সে এখনও সেই একই ভাবে উজ্জ্বল হয়ে আছে স্মৃতিতে । তার লেখা এখনও আগের মতই আমাকে আনন্দ দেয় মনকে সিক্ত করে ।
প্রিয় হুমায়ূন আহমেদ, আপনার সাথে দেখা হল না । আপনার অটোগ্রাফ নেওয়া হল না । আপনাকে বলা হল না আপনার লেখা আমার জীবনকে কতখানি প্রভাবিত করেছে, আমাকে কিভাবে পরিবর্তন করেছে ! আপনাকে বলা হল না ! আপনি বড় দ্রুত চলে গেলেন । অনেক দ্রুত চলে গেলেন !
২০ শে জুলাই, ২০২১ বিকাল ৩:১৮
অপু তানভীর বলেছেন: তাঁর লেখা আমি সব সময় মিস করি । প্রতিবছর অনেক বই আমার পড়া হয় কিন্তু তারপরও আমার কেবল মনে হয় আরও একজনের নতুন লেখা কিছু পড়তে পারলে ভাল হত, মনের ভেতরে একটা পূর্নতা আসতো । এই অভাববোধটা কোন দিন পূরণ হওয়ার নয় !
লিখতে গিয়ে বানানটা চেক করি নি । ঠিক করে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ ।
২| ২০ শে জুলাই, ২০২১ রাত ১২:০৫
আমারে স্যার ডাকবা বলেছেন: আপনি লিখেছেন তিনি বড় দ্রুত চলে গেছেন। এইটা কি বয়সের কারনে বললেন? নাকি সাহিত্যকর্মের সংখ্যার বিচারে? আমার মনে হয় লেখক হিসেবে হুমায়ূন আহমেদের আরো কম লেখা উচিৎ ছিলো। বেশি বেশি লিখতে গিয়ে শেষ দিকে আর মান ধরে রাখতে পারেন নাই, সস্তা এবং গৎবাধা লেখা লিখেছেন। তখন তিনি যাই লিখেন, সেটাই হিট। প্রকাশকদের চাপেই হোক বা অর্থের কারনেই হোক, শেষ দিকে কিছু বাল ছাল লেখা লিখে গেছেন।
তবে তার বেশ কিছু সৃষ্টি আছে, যেগুলো পড়ে অনুভব করেছি, লেখার চরিত্রকে চোখের সামনে দেখেছি। অসাধারন সেই লেখা গুলোর কারনেই তার লেখার প্রতি আগ্রহ তৈরী হয়েছে।
তার লেখার ভঙ্গিমা ভালো ছিলো, হুমায়ূন আহমেদ এর চেয়ে ভালো এবং বড় সাহিত্যিক আসবেন এতে কোন সন্দেহ নাই, তবে তার মতো করে সহজ ভাষায় আকর্ষনীয়ভাবে লেখার মত লেখক হয়তো খুব কম পাওয়া যাবে।
২০ শে জুলাই, ২০২১ বিকাল ৩:১৯
অপু তানভীর বলেছেন: অনেকের কাছে অনেক রকম মনে হতে পারে । গৎবাধা কিংবা বাজারু কিন্তু আমার কাছে তাঁর লেখা সব সময়ই অন্য রকম মনে হয়েছে । আমি তাঁর লেখা পড়ে শান্তি পেয়েছি সব সময় !
৩| ২০ শে জুলাই, ২০২১ রাত ২:০২
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: উনার লেখায় আলাদা এক জাদু ছিলো।
জাদু ছিলো তার হাতদেয়া সমস্ত মাধ্যমেই।
২০ শে জুলাই, ২০২১ বিকাল ৩:১৯
অপু তানভীর বলেছেন: একদম ঠিক বলেছেন । এই জাদু আমি আজও অন্য কোন লেখকের মধ্যে পাই নি । হয়তো পাবোও না কোন দিন !
৪| ২০ শে জুলাই, ২০২১ সকাল ১০:৩৯
ভুয়া মফিজ বলেছেন: হৃদয় ছুয়ে যাওয়া একটা লেখা লিখেছেন। হুমায়ুন আহমেদ আমার কাছে একটা আবেগের নাম। উনার কারনেই জাতির একটা বড় অংশ বইমুখী হয়েছিল। উনাকে নিয়ে একটা লেখা পোষ্ট করেছিলাম গত বছর। দেখেছিলেন? লিঙ্ক দিলাম, সময় করে একসময় দেখতে পারেনview this link
২০ শে জুলাই, ২০২১ বিকাল ৩:২০
অপু তানভীর বলেছেন: সত্যিই তাই । এই এমন এক আবেগ যাকে একবার পেয়েছে সে আর কোন দিন বের হতে পারবে না । আমিও তাই । কোন দিন বের হওয়ার নয় !
৫| ২০ শে জুলাই, ২০২১ দুপুর ১২:৪৩
মাসউদুর রহমান রাজন বলেছেন: সম্ভবত হুমায়ুন আহমেদ একমাত্র লেখক, যার লেখা মাঝখান থেকে পড়লেও মজা লাগে এবং কমুনিকেট করা যায়। আপনার পোস্ট ভালো লাগছে।
হুমায়ুন আহমেদ যেদিন মৃত্যুবরণ করেন, সেদিন সকালে চট্টগ্রামে আমরা কয়েক তরুণ মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম তার ‘১৯৭১’ নাটকটি মঞ্চে নিয়ে আসবো। সে বছরই তার জন্মদিনে শিল্পকলার মঞ্চে আমরা নাটকটি মঞ্চস্থ করেছিলাম।
২০ শে জুলাই, ২০২১ বিকাল ৩:২৩
অপু তানভীর বলেছেন: তার লেখাই এমন ছিল । লেখা যেন আমার সাথে কথা বলতো । অনেক লেখকের লেখার রস খুজে বের করতে হয় পাঠককেই কিন্তু তার লেখার রস উপচে পড়ার মত । কষ্ট করে খুজে বের করতে হত না ।
মঞ্চ নাটকের কথা শুনে ভাল লাগলো ।
©somewhere in net ltd.
১| ১৯ শে জুলাই, ২০২১ রাত ১১:৪৩
পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী উপন্যাসিক তথা কথাশিল্পীকে। কষ্টের লেখনী।++ সত্যিই যেন উনি বড্ড তাড়াতাড়ি চলে গেলেন।