নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মেয়েটি আমার সামনে চুপচাপ বসে ছিল । আপন মনে বিয়ারের ক্যান শেষ করে যাচ্ছিলো একের পর এক । আমি জানি মেয়েটি কিছু সময়ের ভেতরেই মাতাল হয়ে যাবে । তখন সে কিভাবে বাসায় যাবে সেটা নিয়ে একটু চিন্তিত বোধ করছি ।
পাবটার নাম দ্য এরিয়ানা বে । যদিও এর আশে পাশে কোন উপসাগর নেই । কেবল উপসাগর কেন দুর দুরান্তে সামান্য একটা পুকুর পর্যন্ত নেই । এই এলাকাতে পানির বেশ সমস্যা । সরকারকে রীতিমত হিমশিত খেতে হয় পানির সরবারহ ঠিক রাখতে । গরম কালে সেটা আরও কষ্টকর হয়ে পড়ে । লোকালয় থেকে একটু দুরেই এই পাবটা । হাইওয়ের পাশে । মূলত রাস্তায় চলচল করতে থাকা গাড়ি গুলো এখানে থামে তেল নেওয়ার জন্য । এই পাবের সাথেই একটা তেলের পাম্প রয়েছে । রাতের বেলা ট্রাক ড্রাইভাররা এখনে থামে । খাওয়া দাওয়া করে, কেউ কেউ আবার বিয়ার টেনে উপরের ঘুপটির মত ছোট কামড়াতে রাতটা কাটিয়ে দেয় । সকালে আবার নিজ গন্তব্যের দিকে রওয়ানা দেয় । সব থেকের কাছের লোকালিটিটাও এখান থেকে মোটামুটি ১০ মাইল দুরে ।
এখানে আসতে হলে গাড়ি হাকিয়েই আসতে হবে । মেয়েটিও তাই এসেছে এখানে ।
আমি আর থাকতে না পেরে বললাম, আর খাবেন না দয়া করে । বাসায় যাবেন কিভাবে?
-সেটা নিয়ে আপনার চিন্তা করতে হবে না ।
মেয়েটি আমার দিকে না তাকিয়েই উত্তর দিল । আমি হাত তুলে আত্মসমর্পনের ভঙ্গিতে বললাম, আমি জানি তবুও আপনার মত একজন সুন্দরী মেয়ের বিপদের সম্ভবনা দেখে চুপ থাকতে পারলাম না । তাই বললাম আর কি !
মেয়েটি এবার আমার দিকে তাকালো । তারপর বলল, ফ্ল্যার্ট করছেন?
-করলে কী সমস্যা বলুন ? করতেই তো পারি !
-কোন লাভ নেই ।
-কেন? এঙ্গেইজড? আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আপনি সিঙ্গেল ।
-কেন এমনটা মনে হল আপনার?
-কারণ যদি আপনি এঙ্গেইজ হতেন তাহলে এই সময়ে এই পাবে বসে একা একা বিয়ার খেতেন না । মানে বুঝতেই পারছেন । এটা আসলে আপনার মত মেয়েদের স্থান ন। আপনার বিয়ার খেতে ইচ্ছে হতেই পারে শহরে অনেক বার রয়েছে । সেখানে গিয়েই খাওয়া যেত । না করে আপনি এতো দুর এখানে এসে একটার পর একটা ক্যান শেষ করছেন । আমার মনে হচ্ছে আপনার মনে কোন দুঃখ রয়েছে । কিংবা বলা যায় এই পাবকে কেন্দ্র করে কোন স্মৃতি রয়েছে । আরও হতে পারে আজকে কোন বিশেষ দিন !
এতো গুলো কথা একসাথে বলে আমি চুপ করলাম । মেয়েটা আমার দিকে সরু চোখে তাকিয়ে রইলো কিছু সময় । তারপর বলল, এতো কথা কিসের ভিত্তিতে আপনি বললেন?
-কোন কিছুর ভিত্তিতে না । কেবল অনুমান ! আর কিছু না ।
-কেবলই অনুমান?
-জ্বী জ্বী ! একদম অনুমান । দয়া করে অন্য কিছু ভাববেন না । আসলে সত্যি কথা হচ্ছে আমার এক বন্ধুর সাথে আমার এই পাবে দেখা হয়েছিলো । সে আর এখানে নেই । বছরের একটা সময়ে আমি এখানে আসি । কিছু সময় একা একা বসে থাকি । তার কথা মনে করি । আমার কেন যেন মনে হল আপনার অভিজ্ঞতাও এই রকম । এই জন্য বললাম । আর কিছু না !
মেয়েটার মুখের পেশী দেখলাম এবার একটু শান্ত হল না । বিয়ার ক্যানে আরেকটা চুমুক দিয়ে মেয়েটা আমার দিকে বলল, আপনার আর আমার গল্প অনেকটা একই রকম । আসলেই আমিও আপনার মত এখানে এসেছি কিছু স্মৃতির কথা মনে করতে । আজকে প্রায় চার বছর এই দিনে এখানেই আসি ।
-আচ্ছা । গল্পটা কী বলা যায়?
মেয়েটা বলল, আসলে গল্পের তেমন কিছু নেই । আমার বাবা আসলে ছিল একজন ছোটখাটো ব্যবসায়ী । ব্যবসার কাজে একবার তাকে সামনের রাস্তা দিয়ে যেতে হয়েছিলো । আমিও সেবার তার সাথে ছিলাম । এখানে থেমেছিলাম তেল নেওয়ার জন্য । কিছু খেয়ে নেওয়ার জন্য আমি ঢুকলাম এখানে । তখনই একটা ছেলের সাথে আমার চোখাচোখি হল । আপনার মত লেদার জ্যাকেট পরা । হাতে গ্লোভস ! সামনে একটা হেলমেট । বুঝলাম পাবের বাইরে যে বাইকটা দাড়িয়ে থাকতে দেখেছি ওটা আসলে তার । চোখাচোখি হল আমাদের । তারপর কি যে হল আমি নিজেও জানি না । যখন আবারও আমরা গাড়ি নিয়ে পথে নামলাম লক্ষ্য করছিলাম যে একটা বাইক আমাদের ফলো করছিলো । কে ফলো করছিলো সেটা নিশ্চয়ই বলে দিতে হবে না । আমার বিরক্ত লাগার পরিবর্তবে কেন জানি ভাল লাগলো বেশ । পরদিন কাজ শেষ করে আবারও আমরা একই পাবে ফিরে এলাম । এই পুরোটা সময় সেই ছেলেটা আমাদের পেছনে লেগে ছিল । পাবে ফেরৎ এসেও তাকে দেখতে পেলাম । আমার দিকে কেমন চোখে তাকিয়ে ছিল সে । যাওয়ার সময়ে আমি কৌশলে আমার মোবাইল নম্বরটা তার টেবিলে দিয়ে গেলাম ।
-তারপর?
-তারপর আর কী ! ফোন কথা বার্তা । এখানেই আমাদের আবার দেখা হল । এভাবে চলল বেশ কিছু দিন ।
-কোথায় সে এখন?
-জানি না ।
-মানে কি ? জানেন না বলতে?
-জানি না বলতে জানি না । একদিন সে গায়েব হয়ে গেল । তার বাসার ঠিকানা আমি জানতাম । সেখানে গিয়ে দেখি সব কিছু আগের মত রয়েছে কেবল সে নেই । আরও কত খুজলাম । আমার বাবাকে বললাম । বাবাও খোজ লাগালো কিন্তু ছেলেটা যেন একেবারে গায়েব হয়ে গেছে । ও একটা একটা ফুড প্রোসেসিং ফ্যাক্টরিতে কাজ করতো । সেখানে নাইটডিউটি শেষ করে রাত দুইটার দিকে বাইক নিয়ে বাসার উদ্দেশ্য রওয়ানা দিয়েছিলো । বাসায় পোছাতে আধাঘন্টার মত লাগার কথা তার । কিন্তু তারপর আর পৌছায় নি সে । সেখান থেকে তাকে বের হতে অনেকেই দেখেছে কিন্তু বাসায় সে পৌছায় নি । কোথায় গেছে কেউ জানে না ।
আমি কি বলবো চুপ খুজে পেলাম না । মেয়েটি বলল, আপনার কাহিনী কি একই রকম ?
-একই রকম ! এখানে তার সাথে দেখা । তারপর একদিন আর দেখা হল না আমাদের । আমি আসি এখানে মাঝে মাঝে । এই পরিচিত চেয়ার টেবিল গুলো দেখি । তাকে মনে করার চেষ্টা করি ।
মেয়েটা হাসলো । আমি বললাম, মিস আরিয়ানা জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না । কারো জন্য নিজেকে আটকে রাখা ঠিক না । আপনার উচিৎ মুভ অন করা !
লাইনটা বলার পরেই আমি আমার ভুল বুঝতে পারলাম । আরিয়ানাও সেটা ধরতে পারলো সাথে সাথেই । তার মুখ শক্ত হয়ে গেল। কঠিন কন্ঠে বলল, কে আপনি? আমার নাম জানলেন কিভাবে?
আমি খানিকটা হাসার চেষ্টা করলাম । তারপর বলল, আরে আপনিই তো বললেন?
-আমি আপনাকে আমার নাম বলি নি । এতোটাও মাতাল হই নি আমি । কে আপনি ? আমার পিছু নিয়েছেন কেন?
আমি কিছু সময় চুপ করে থেকে বললাম, আসলে আমি আপনার ব্যাপারে অনেক কিছুই জানি । আসলে ....
আরিয়ানা উঠে দাড়ালো । তারপর কোন কথা না বলে কাউন্টারে বিল দিয়ে বের হয়ে গেল । আমি দরজার কাছ পর্যন্ত গেলাম । দেখলাম আরিয়ানা গাড়িতে উঠে পড়েছে । উইন্ডশীল্ডের কাঁচ দিয়ে আমার দিকে কিছু সময় তাকিয়ে রইলো । তারপর গাড়ি নিয়ে বের হয়ে গেল । আমি আবারও ফিরে এলাম নিজের টেবিলে ।
খানিকটা অপরাধবোধ আমাকে পেয়ে বসলো । সেটা মন থেকে দুর করতে চাইলাম বটে কিন্তু খুব একটা কাজ হল না । প্রতিবার যখন আমি এই কাজটা করি তখন আমার এই অপরাধবোধটা ফিরে আসে । কিন্তু সেটা খুব বেশি সময় স্থায়ী হয় না । মাহতিমের বেলাতে এই অনুভূতিটা এখনও রয়ে গেছে । বিশেষ করে আরিয়ানার প্রতি তার ভালোবাসার অনুভূতিটা আমাকে এই অপরাধটাকে কিছুতেই ভুলতে দিচ্ছে না ।
আমার জন্ম আজ থেকে প্রায় হাজার বছর আগে । হাজার বছর ধরে আমি জীবিত রয়েছি । এক সর্প দেবতাকে নিশ্চিত মরনের হাত থেকে রক্ষা করার কারণে সে আমাকে একটা আশ্চর্য একটা গাছ উপহার দিয়েছিলো । সেই গাছের ফলের ভেতরে ছিল আশ্চর্য এক ক্ষমতা । আমি সেই ফল যখনই খেতাম তখনই আমার আয়ু বৃদ্ধি পেত । এই ভাবেই আমি এতো গুলো বছর জীবিত আছি । কিন্তু একটা সমস্যা ছিল তাতে । গাছে কখনই এমনি এমনি ফল ধরতো না । ফল ধরার জন্য আমাকে সেই গাছকে একজন মানুষ দিতে হত ।
গাছটা ছিল একটা জীবনশক্তি প্রতিস্থাপনকারী গাছ । আমি যে যে মানুষকে মেরে গাছকে দিতাম, গাছটা সেই মানুষের জীবনী শক্তি শুষে নিয়ে একটা ফল তৈরি করতো । আমি যখন সেই ফল খেতাম তখন সেই মানুষটার জীবনীশক্তি আমার ভেতরে চলে আসতো । এভাবেই অন্যের জীবনী শক্তি নিয়ে আমি এতো গুলো বছর বেঁচে আছি ।
তবে এই জীবনী শক্তির সাথে সাথে সেই মানুষটার স্মৃতি অনুভূতি আর জ্ঞানও আমার ভেতরে চলে আসতো । আমি এভাবে অনেক কিছু জানি । দিনের পর দিন অনেক জ্ঞানী হয়েছি । অন্যের অনুভূতি গুলোকে নিয়ন্ত্রনে এনেছি । কিন্তু মাহতিম ছেলেটার অনুভূতিটা মাঝে মাঝেই মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে । তখন আমি আরিয়ানার কাছে ছুটে যাই । ওকে দুর থেকে দেখি । মনের ভেতরে শান্তি লাগে । সেই সাথে একটা অপরাধবোধও জেগে ওঠে মনে !
আমি পাব থেকে বের হয়ে গেলাম । বাইকটা নিয়ে সোজা নিজের বাড়ির দিকে রওয়ানা দিলাম । আরিয়ানার কথা আর ভাবা যাবে না । তাহলে মনের ভেতরে কেবল অপরাধবোধই কাজ করবে । জীবনে বেঁচে থাকাটাই সব থেকে বড় কথা । আর কোন কথা নেই । এমন আপন চিন্তায় মগ্ন ছিলাম তখনই ঘটনা ঘটলো । একটা কার গাড়ি পেছন থেকে এসে আমাকে ধাক্কা দিল জোরে । আমি ছিটকে পড়লাম রাস্তার উপরে । মাথাটা এতো তীব্র ভাবে আঘাত করলো যে আমি সেটা ফাঁটার আওয়াজ শুনতে পেলাম । কয়েক মুহুর্তের ভেতরে আমার সকল চেতনা হারিয়ে গেল ।
কত সময়ে আমি জ্ঞান ফিরে ফেলাম সেটা আমি জানি না । দেখলাম গাড়ির হেড লাইটের আলোতে আরিয়ানা হেটে আসছে । তার পেছনে একটা মানুষকে দেখতে পেলাম । তাকে দেখার সাথে সাথেই আমার আত্মারাম কেঁপে উঠলো ।
আরিয়ানা আমার দিকে তাকিয়ে রইলো ঘৃণা ভরা চোখে । তার পেছনে দাড়ালো লোকটা আরিয়ানা কে উদ্দেশ্য করে বলল, তোমাকে ধন্যবাদ । অনেক দিন পর বেটাকে পেয়েছি । এতোবার আমাকে ফাঁকি দিয়েছে । এইবার আর পারবে না !
তারপর আমার মুখে কাছে এসে বসলো । বলল, তুমি তো জানো মৃত্যুকে কেউ কোন দিন ধোকা দিতে পারে না । আমি চলে এসেছি দেখো ।
আমি কোন মতে বলার চেষ্টা করলাম কিন্তু আমার মুখ দিয়ে কোন কথা বের হল না । আমার শরীরে কোন চেতনা নেই । আমি যেন সব অনুভূতি হারিয়ে ফেলেছি ।
সে বলল, তুমি যখন অন্যের জীবনটা কে চুরি করছো তখন তার সব কিছু তোমার সাথে যুক্ত হয়ে যাচ্ছে সেই সাথে তার মৃত্যুর দিনটাও । আজকে মাহতিমের মৃত্যুর কথা ছিল । তুমি যেহেতু তার জীবন নিয়ে বেঁচে আছো তাই এই মৃত্যু তোমার জন্য । এখন যদি তুমি তোমার ঐগাছের কাছে পৌছাতে পারো তাহলে হয়তো আবারও আমাকে ফাঁকি দিতে পারবে কিন্তু এইবার আর হবে না । তোমার হাতে আর সময় নেই ।
আমিও জানি আমার হাতে আমার হাতে আর সময় নেই । অন্ধকারের দিকে তাকালাম । দেখলাম সেই অন্ধকারের মাঝ দিয়ে একটা তীব্র আলোর ঝলকানী এগিয়ে আসছে আমার দিকে । আমি সেদিকে একভাবে তাকিয়ে রইলাম ।
এই তাহলে শেষ সময় ।
এই তাহলে মৃত্যু !
এই গল্পটার আইডিয়া এসেছে টেল অব নাইল টেল ড্রামা থেকে । সেখান থেকেই এই লাইফ ট্রির কথাটা জানতে পারি । যে গাছের ফল খেয়ে অন্যের জীবনী শক্তি নিজের ভেতরে আনা যায় । সেখান থেকেই এই গল্পের উৎপত্তি ! picture source
২| ২৪ শে আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১:৩৯
রানার ব্লগ বলেছেন: পথ হারিয়ে ফেলেছি !!!
২৪ শে আগস্ট, ২০২১ বিকাল ৩:৫৯
অপু তানভীর বলেছেন: পথে ফিরে আসুন ।
৩| ২৪ শে আগস্ট, ২০২১ রাত ৯:২৭
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: গল্পটা চমৎকার হয়েছে।
২৫ শে আগস্ট, ২০২১ সকাল ১১:৫৩
অপু তানভীর বলেছেন: গল্প ভাল লেগেছে জেনে ভাল লাগলো ।
৪| ২৪ শে আগস্ট, ২০২১ রাত ৯:২৯
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: চাঁদগাজী বলেছেন: গল্প কই? এটাকে মৌলিক গল্প বলে মনে হচ্ছে না।
অপু তানভীর পরিষ্কার লিখে দিয়েছেন- "এই গল্পটার আইডিয়া এসেছে টেল অব নাইল টেল ড্রামা থেকে । "
তারপরও আমনার এই মন্তব্যের মানে কি?
২৫ শে আগস্ট, ২০২১ সকাল ১১:৫৫
অপু তানভীর বলেছেন: মানসিক ভাবে সুস্থ কারো কাছে আপনি কোন লজিক্যাল প্রশ্ন করতে পারেন কিংবা তার সাথে কথোপথন চালিয়ে যেতে পারেন । মানসিক বিকারগ্রস্থ কারো কাছে কোন প্রশ্ন করাটা অনুচিত । আপনিও এই পদ্ধতি অবলম্বন করুন।
(মরারেটর সাহেব না আবার এই মন্তব্য মুছে দেয়)
©somewhere in net ltd.
১| ২৪ শে আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১:৩৩
চাঁদগাজী বলেছেন:
গল্প কই? এটাকে মৌলিক গল্প বলে মনে হচ্ছে না।