নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

www.oputanvir.com

অপু তানভীর

আমার চোখে ঠোঁটে মুখে তুমি লেগে আছো

অপু তানভীর › বিস্তারিত পোস্টঃ

শৈশব স্মৃতিঃ ঝুমঝুমপুরের বিডিআর ক্যাম্প, তন্দুল আর মাসকলাইয়ের ডাল

০১ লা ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১১:৩০



সকালবেলা আমার পছন্দের নাস্তা হচ্ছে তন্দুল রুটির সাথে বুটের ডাল । করোনার আগে পর্যন্ত সকালের নাস্তায় প্রায় প্রতিদিনই তন্দুল থাকতো । কিন্তু করোনার পরে তন্দুল খাওয়া বন্ধ । জাকের হোটেল এখন আর তন্দুল বানায় না । করোনার পরে তার কাস্টমার কমে গেছে অনেক । এখন তন্দুল বানাতে যে পরিমান গ্যাস পোড়ে সেই পরিমান বিক্রি হয় না । এই জন্য তন্দুল বন্ধ । ইচ্ছে অবশ্য বাগদাদে গিয়ে খেয়ে আসা যায় কিন্তু সকালে এতো দুরে যেতে ইচ্ছে করে না ।

আজ সকাল থেকেই এই তন্দুলের কথা মাথার ভেতরে ঘুর পাক কাচ্ছে । তন্দুল রুটি আমার পছন্দ সেই ছোট বেলা থেকে । এতো ছোট বেলা থেকে যে তখন আমি জানতামও না এই রুটির নাম তন্দুল । জন্মের পর থেকে প্রায় ৮/৯ বছর আমার কেটেছে যশোরের ঝুমঝুমপুরে । বাবা সেখানকার বিডিআর (বর্তমান বিজিবি) ক্যাম্পের ফুড কন্ট্রাক্টর ছিলেন । আমাদের বাসা ছিল একেবারে ক্যাম্পের কাছে । ক্যাম্পের গেট থেকে দুই মিনিটের পথা । রাস্তার এই পাড় আর ঐপাড় । বাবা খুব সকালেই ক্যাম্পে গিয়ে হাজির হতে । কারণ তখন বাজার থেকে মাল পত্র আসতো এই সময়টা তার ব্যস্ত সময় কাটতো। ক্যাম্পের বিল্ডিংয়ের একটা অংশে ছিল বাবার অফিস । একটা ঘরে ছিল তার হিসাব পত্র করার জায়গা অন্য আরেকটা বিশাল রুম ছিল স্টোর রুম । এই রুমে মূলত থাকতো চাল ডাল তেল দুধ আর সব চেয়ে পছন্দের চিনি । মূলত আমি স্কুল থেকে ফিরে প্রায় প্রতিদিন সেখানে যেতাম । আমাকে সবাই চিনতো বিধায় কোন সমস্যা ছিল না । আমি ঘুরে ঘুরে সবার আগে যেতাম চিনির বস্তার কাছে । সেখান থেকে এক মুঠ চিনি হাতে নিয়ে মুখে ভরতাম । এই অভ্যাস আমার অনেক দিন ।

তবে যেদিন ছুটির দিন গুলোতে কিংবা যেদিন স্কুলে যেতাম না সেই দিনে আমি ঘুম থেকে উঠে চলে যেতাম বাবার ক্যাম্পে । এই সকাল বেলা বিডিআরদের কাছ থেকে বাবা এবং তার স্টাফদের জন্য আসতো তন্দুল রুটি আর মাসকলাইয়ের সাথে সবজি মিশ্রিত ডাল । রুটি গুলো ছিল লাল আটা দিয়ে বানানো । এক সাথে প্রায় ২০০ লোকের রুটি বানানো হত প্রতিদিন । চারপাঁচ জন মিলে আটা বেলতো কেবল পানি দিয়ে । স্টোর রুম থেকে আটা নিয়ে যাওয়া হত । কোন প্রকার চালা হত না । লাল লাল ভূসির মত কিছু থাকতো সেই আটার সাথে । শক্ত হত রুটি । আর যেহেতু জুলার আগুনে তৈরি হত, এক সাথে অনেক রুটি তৈরি হত তাই প্রায়ই রুটির কিছটা অংশ পোড়া থাকতো । আর ডাল টা কী এক অদ্ভুত স্বাধ । এই দুইয়ের মিশ্রন মিলে একটা চমৎকার স্বাদের সকালের নাস্তা হত ।
যশোর থেকে চলে আসার পরে বর্তমান হোমটাউনেও একই কাজ করে আবার আব্বা । এই ক্যাম্পে কয়েকদিন গিয়ে আমি হাজির হয়েছিলাম সকালে । অদ্ভুত ভাবে এই ক্যাম্পের রুটির স্বাদও একই রকম । তবে সেইটা অনেক কমে গেল । একটু বড় হয়ে গেছি । সকালের ঘুম তখন বেশি প্রিয় মনে হত রুটি খাওয়ার থেকে ।
বাসার এই রুটি বানানোর চেষ্টা করা হয়েছে । কিন্তু স্বাদে তার ধারে কাছেও যায় নি । আর তাছাড়া আমি জীবনে অনেক জায়গাতে সকালের নাস্তা খেয়েছি । বান্দরবান থেকে শুরু করে এদিকে সিলেট ওদিকে রাজশাহী । কিন্তু সেই যে পোড়া আর শক্ত আর সবজি ডালের স্বাদ আমি আর কোথাও পাই নি । এমন স্বাদ বুঝি আর পাওয়া যাবে না ।

এখনও অবশ্য আমার বাবা সেই একই কাজ করে কিন্তু এখন আর আগের মত ক্যাম্পে ঢোকা উপায় নেই । কেবল মাত্র যারা যারা আমার বাবার হয়ে কাজ করে কেবল তাদের ঢোকার অনুমূতি আছে ভেতরে । আগের মত আর যাকে তাকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেয় না । বিডিআর বিদ্রোহের পরে পুরো ক্যাম্প একেবারে সীল করে দেওয়া হয়েছে । আগে ক্যান্ট্রাক্টরের ছেলে হিসাবে গেট দিয়ে আমাদের ঢুকতে দিতো ভেতরে, এখন বাইরের কাউকে ভেতরে ঢুকতে দেয় না ।

আজকে সকালে নাস্তা খাওয়ার সময় হঠাৎ করেই আমার সেই তন্দুল রুটি আর ডালের কথা মনে পড়লো । সেই সাথে ছোট বেলার কথা মনে পড়লো । জীবনের চমৎকার একটা সময় কেটেছে যশোরের ঝুমঝুমপুরে। তারপর ঝুমঝুমপুরের সাথে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেল একেবারে । বাবা কাজের কারণে সেখানে গেলেও আমাদের আর যাওয়া হল না । বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে একবার গিয়ে হাজির হয়েছিলাম আবার ঝুমঝুমপুরে । কিন্তু সেখানে গিয়ে আমি সেই ঝুমঝুমপুর আর চিনতে পারি নি একদম । একেবারে সেটা বদলে গেছে । আমি অবশ্য আমার সেই পুরানো ঝুমঝুমপুরটাকে মনে রেখেছি । আমার শৈশবেের ঝুমঝুমপুর।


Picture source

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১১:৪৯

শূন্য সারমর্ম বলেছেন:

তন্দুল রুটি কি এখনো ঝুমঝুমপুরের মত মজা পান?

০১ লা ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১১:৫৬

অপু তানভীর বলেছেন: নাহ ! সেই স্বাদ আর কোথাও পাই নি ।
তবে একদিন আবারও ইচ্ছে আছে যে কোন ভাবে বিজিবি ক্যাম্পের সেই তন্দুল খেয়ে দেখার । দেখার ইচ্ছে যে স্বাদ কি আগের মত আছে কিনা !!

২| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:৫৪

জুল ভার্ন বলেছেন: আপনার পছন্দের সাথে আমার কিছুটা মিল আছে। আমি তন্দুর রুটীর সাথে মুগডাল-খাসীর মাংস পছন্দ করি।

০২ রা ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:০৬

অপু তানভীর বলেছেন: মাংস তো পছন্দই তবে এখন আর গরু কিংবা খাসীর মাংস খাওয়ার উপায় নেই । রেড মিট খাওয়ার উপর ডাক্তারী নিষেধ আছে । তাই চাইলেও খেতে পারি না ।

৩| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৩:৫৫

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: তন্দুর রুটি শেষ পর্যন্ত খেতে পারি না । চাপা ব্যথা হয়ে যায়। এখনকার হোটের পরোটারও একই অবস্থা। আগে চারটা পরটা হাতে নিয়ে কিল থাপ্পড় দিয়ে সামনে হাজির করতো । কী নরম আর কী মজা ছিল।

০২ রা ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১০:৩১

অপু তানভীর বলেছেন: তন্দুল রুটি যত শক্ত আর হয় আমার কাছে তত মজা লাগে । আমি অবশ্য খুব বেশি খাইনা সকালের নাস্তায় । দুইটা নিলেও অর্ধেক রয়ে যায় । এখন সেটা পাওয়া যায় না বলে তেল ছাড়া পরোটা চলে ।

৪| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:০৬

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: আহা!! ছোট বেলার স্মৃতিময় যায়গা গুলিতে স্বপ্নের ছোঁয়া লেগে থাকে।

০২ রা ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১০:৩২

অপু তানভীর বলেছেন: মাঝে মাঝে পুরানো দিনের কথা মনে পড়ে । বড় হয়ে বড় অন্যায় হয়েছে । আজীবন ছোট থাকার একটা সিস্টেম থাকলে ভাল হত !

৫| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১১:৪২

সোহানী বলেছেন: স্মৃতি মানেই ভালোলাগা।

তবে ছবি আপুর মতো আমারো একই কথা এরকম শক্ত তন্দুর খেয়ে দাঁত ভাঙ্গতে রাজি না............হাহাহাহা

শুনো, আমি এখন দারুন তন্দুর বানাতে পারি। খুব সহজ...। তুমি ট্রাই করো বাসায় হয়ে যাবে।

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১২:১২

অপু তানভীর বলেছেন: নাহ এই তন্দুল সেই তন্দুলের মত হবে না । সেটা ছিল অন্য রকম ! দেখা যাক ভাগ্যে আবার কোন দিন জুটে নাকি !

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.