নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

www.oputanvir.com

অপু তানভীর

আমার চোখে ঠোঁটে মুখে তুমি লেগে আছো

অপু তানভীর › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ আবন্তিকে ভালোবাসি....

১৪ ই জানুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১২:৪২



আমি ঠিক ঠিক জানতাম আবন্তি এবার আমার কাছে আসবেই । এতোদিন যা আমি করতে পারি নি, সবুজ নামের ঐ গাধাটা ঠিক ঠিক করে দিয়েছে আমার হয়ে । যখনই সে চড়টা আমার গালে মেরেছিলো তখনই আমি খেয়াল করেছিলাম । আবন্তির দিকেই আমি তখন তাকিয়ে ছিলাম একভাবে । ওর চোখের পাতা কেমন যেন কেঁপে উঠলো । আমার দিকেই এক ভাবে তাকিয়ে রইলো কিছু সময় । এবং তারপরেই সেখানে আমি আমার জন্য একটা অনুভূতি দেখতে পেলাম । এতোদিন যেই অনুভূতির জন্য আমি বারবার ওর সামনে ফিরে গিয়েছি সেটাই আজকে প্রথমবারের মত দেখতে পেলাম ওর চোখে !

ক্লাস শেষ করে আমি যখন বের হচ্ছিলাম, আবন্তিকে দেখতে পেলাম ক্লাস রুমের সামনেই দাড়িয়ে রয়েছে । আমি জানতাম ও আসবেই তবে এতো জলদি আসবে ভাবি নি । আবন্তি আমার দিকে তাকিয়ে বলল, অপু একটু কথা ছিল !
আমার সাথে মিমি ছিল । সে আবন্তিকে দেখেই রেগে গেল । বলল, বাহ মাইর খাইয়ে এখন কথা ! তো এবার নিজের হাত দিয়ে মারতে চান আপু !
আমি মিমিকে থামালাম ! বললাম, চুপ থাক তো।
তারপর আবন্তির দিকে তাকিয়ে বলল, বল !

আবন্তি আমার দুই ব্যাচ সিনিয়ার । ইউনিভার্সিটিতে বড় ক্লাসের আপু ভাইয়াদের সব সময় আপনি করেই বলতে হয় । আমরা সবাই তাই বলি । তবে আবন্তির ব্যাপার আলাদা । আমি ওকে তুমি করেই বলি !
আবন্তি বলল, এখানে না । ক্যান্টিনে ....
আমি বললাম, ক্যান্টিনে তোমার বন্ধুরা আছে । তোমার সাথে আমাকে দেখলে আবার মারবে !
-না না না ! আর কিছু বলবে না । বিশ্বাস কর আমি কখনও চাই নি ওরা এমন করুক !

তাকিয়ে দেখলাম মিমি রাগে ফুলছে । কেবল মিমিই না আমাদের ক্লাসের বেশ কয়েকজন রাগ করে আছে । আমার গায়ে অন্য ক্লাসের কেউ হাত দেওয়াটা তারা মোটেই পছন্দ করে নি । হোক তারা বড় ক্লাসের । কী হয়েছে তাতে ! আমি ওদের শান্ত থাকতে বলেছি । বলেছি যে সময় সুযোগ সব আসবে !

আমি বললাম, কফি বারে চল । এখন তো ক্লাস ছুটি । যাবে?
-চল !

আবন্তি কোন কথা না বলে রাজি হয়ে গেল । আমি মিমির দিকে তাকিয়ে একটু হাসলাম । ও আমার হাসার অর্থ বুঝতে পারলো কিনা কে জানে ! আমি আবন্তির সাথে সাথে হাটতে লাগলাম !


বড় আপুদের প্রেমে পড়া নতুন কিছু নয় । বলতে গেলে প্রতিটি ছেলেই জীবনে কোন এক সময় নিজের থেকে বয়সে কোন মেয়ের প্রেমে ঠিকই পড়ে । কিন্তু লোক লজ্জার ভয়ে সেটা কখনই সামনে আসে না । আমিও ঠিক একই ভাবে আবন্তির প্রেমে পড়লাম । মেয়েটা আমার থেকে দুই ব্যাচ সিনিয়র ! প্রথমে ভেবেছিলাম এই প্রেমে কিছুতেই বেশি দিন টিকবে না । তবে অবাক হয়ে খেয়াল করলাম যে আবন্তিকে কোন ভাবেই মাথার ভেতর থেকে বের করতে পারছি না । একটা সময় মনে হল যে ওকে বের করা সম্ভব না কোন ভাবে ।
তাই একদিন সাহস করে আমি আবন্তিকে মনের কথা বলেই দিলাম । প্রথম দিন সে সরাসরি না করে দিল । বলল যেন এসব কথা বার্তা আর না বলি । তবে আমি পেছনে লেগেই রইলাম । সে আমাকে পাত্তা দিল না ।
কিন্তু গতদিন ওর বন্ধু সবুজের কাছে ধরা পরলাম । সম্ভবত সে আমাকে অনেক আগে থেকেই নোটিশ করেছে । আজকে সুযোগ পেয়ে আমাকে ধরলো । আবন্তি সাথেই ছিল । সে চুপচাপ দেখছিলো । আমার কলার চেপে ধরে একটু ধমক দিল । আমি অবশ্য খুব একটা গা করলাম না । আমি তাকিয়ে ছিলাম আবন্তির দিকে । তারপর সবুজ আমাকে চড় মারলো । একটু যে ব্যাথা লাগে নি সেটা বলবো না । তবে আবন্তির চোখের চাহনী দেখে সেটুকু ভুলে গেলাম !

কফির পেয়ালা সামনে নিয়ে চুপচাপ আবন্তি বসে আছে । আমি তাকিয়ে রয়েছি ওর দিকে । আবন্তির ঠোঁট দুটো আমার কাছে সব থেকে বেশি আকর্ষনীয় মনে হয় । একটা মেয়ের ঠোঁট ঠিক যেই টুকু হলে একেবারে পার্ফেক্ট হয় ঠিক সেই ভাবেই এই ঠোঁট উপরওয়ালা বানিয়েছে । পুরুও না আবার পাতলাও না । লালচে আভা এমনিতেই রয়েছে । লিপস্টিপের পরিমান একদমই নেই ।
আজকে ওর পরনের পোশাকও আমার একদম পছন্দের । নীল রংয়ের কামিজের সাদা লেগিংস । সাথে সাদা ওড়ণা । চুল অর্ধেক বাঁধা অর্ধেক খোলা । হাতে দেখলাম মেহেদী দেওয়া । নতুন করে দেওয়া হয়েছে ।
আমার জন্য কি?

হতে পারে ! কারণ ফেসবুকের মেসেজ আমি ওকে নিজের পছন্দের কথা বলেছিলাম । সেটা সে সীন করেছে । তার মানে আমার পছন্দের ব্যাপারটা সে জানে !

আমি বললাম, কিছু বলবে না?
আবন্তি একটা জোড়ে দম নিল । তারপর বলল, আমি কালকের জন্য খুব সরি !
-তুমি তো কিছু কর নি ।
-না । আমিই করেছি । আসলে সবুজকে তোমার ব্যাপারে বলা আমার মোটেই উচিৎ হয় নি । আমি সত্যিই বলছি আমার মোটেও এই ধারণা ছিল না যে ও তোমাকে এই ভাবে মেরে বসবে !


বাংলা সিনেমা তে এই রকম সীন খুব থাকে । নায়ককে নায়িকা মাইর খাওয়ায় কিংবা নায়ক নায়িকার জন্য আহত হয় তখন তাদের ভেতরে প্রেম শুরু হয় । এই ঘটনা নিয়ে যতই হাসাহাসি করি না কেন বাস্তবে এই ঘটনা খুব বেশি হয় । আপনার চোখের সামনে যখন কেউ আপনার কারণে আহত হবে, কষ্ট হবে তখন খুব স্বাভাবিক ভাবে আপনার মনে তার জন্য একটা মায়া জন্ম নেবে । নেবেই । আবন্তির বেলাতেও ঠিক একই ঘটনা ঘটেছে । এখন দেখার বিষয় যে আমি এই মায়াকে অন্য কোন দিনে নিয়ে যেতে পারি কি না !

এক সময় আবন্তি হঠাৎ বলল, তুমি যেটা চাচ্ছো সেটা মোটেও সম্ভব না । এটা কি তুমি বুঝছো না?
-কেন সম্ভব না শুনি? কেবল আমি তোমার থেকে দুই বছরের ছোট বলে?
-এটা আমাদের সমাজে অনেক বড় একটা ব্যাপার ।
-ব্যাপার মনে করলেই ব্যাপার । না করলে নাই ।
-আমার পক্ষে সম্ভব না এটা । কোন ভাবেই না।

আমি একভাবে কিছু সময় ওর চোখের দিকে তাকিয়ে রইলাম । আবন্তি কিছু সময় আমার দিকে তাকিয়ে থেকে চোখ সরিয়ে নিল । আমি এবার একটু সাহস দেখালাম । একটা হাত ওর হাতের উপর রাখলাম । মনে একটা ভয় ছিল যে ও হয়তো হাত সরিয়ে নিবে । তবে নিল না । সম্ভবত এখনও সেই অপরাধবোধ থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারছে না । আমি বললাম, আচ্ছা একটা প্রশ্নের উত্তর দাও। সত্যি সত্যিই উত্তর দিবে । ধর আমি তোমার সমান বয়সে কিংবা তোমার থেকে বড় । এখন আমি এতোদিন যা যা করেছি, এসব করলাম । তখন কি আমাকে রিজেক্ট করে দিতে ? যদি তখনও আমাকে রিজেক্ট করে দিতে তাহলে সেটা বল । বিশ্বাস কর আজকের পর তোমার সামনে আসবো না আমি । বল !

আবন্তি আমার দিকে তাকালো । গভীর চোখে । ওর চোখ আমাকে বলে দিল সব । এবার আমি নিজের চেয়ার ছেড়ে ওর পাশে গিয়ে বসলাম । তারপর আবার ওর হাত ধরলাম । ও কোন বাঁধা দিল না । আমি বললাম, আবন্তি আমি আমার উত্তর পেয়ে গেছি । তোমাকে কিছু বলতে হবে না । তবে আজকের পর থেকে তোমাকে আর বিরক্ত করবো না । তোমার সামনে যাবো না । আমার কারণে তোমাকে আর অস্বস্তিতে পড়তে হবে না । তবে এটা মনে রেখো তোমার পরে আমার জীবনে আর কোন মেয়ে আসবে না । আই প্রমিস ইউ দ্যাট !

তারপর সব থেকে ভয়ংকর কাজটা করলাম । সাহস আমার কোথা থেকে এল আমি নিজেও জানি না । আলতো করে আমি ওর কপালে চুমু খেলাম । তারপর উঠে চলে এলাম । হেটে আসার সময়ে অনুভব করছিলাম যে আমার খানিকটা কষ্ট হচ্ছে । তবে নিজের মনের কাছে কেন জানি মনে হচ্ছে আবন্তি আমার কাছে আসবেই আসবে !

এক সপ্তাহ কেটে গেল । এই এক সপ্তাহে আমি একবারের জন্যও ওর সামনে গেলাম না । তিনবার দেখা হল যদিও তবে মাথা নিচু করে চলে গেলাম । এক সময় মনে হল যে আবন্তি বুঝি আর আসবেই না । তবে সে এল । ঠিক এক সপ্তাহ পরেই । সেদিনও ক্লাস শেষ করে বের হয়ে দেখি সে ক্লাসের সামনে দাড়িয়েছে । আমি বের হতেই আমার সামনে এল । তারপর কিছু না বলে আমার হাত ধরে আমাকে বাইরে নিয়ে এল । আমি ভেবেছিলাম যে ও হয়তো আমাকে রেস্টুরেন্টে নিয়ে যাবে কিন্তু সেখানে নিয়ে গেল না । সোজা সিএনজিতে তুলল। যাত্রার পুরো সময়টা সে একটা কথাও বলল না । কেবল আমার হাত ধরে রইলো ।

সিএনজি থামলো ওর বাসার সামনে । আবন্তির বাসা আমি চিনি। ওর পিছু পিছু বেশ কয়েকবার এসেছি । আমাকে কেন যে বাসায় নিয়ে এল সেটা আমি নিজেও জানি না । আমাকে খুব স্বাভাবিক ভাবে ওর মায়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল বন্ধু হিসাবে । অনেকটা ক্লাসমেট কে বাসায় নিয়ে এসেছে । বিকেলের নাস্তা খেলাম এক সাথে । ওর মাকে খুব আন্তরিক মনে হল আমার কাছে । আমি একটা ছেলে হয়ে তার মেয়ের বন্ধু হিসাবে বাসায় এসেছি এটা তার কাছে খুব স্বাভাবিক একটা ব্যাপার ।

এরপরেই আমাকে আবন্তি ওর ঘরে নিয়ে এল । তারপরই আমাকে অবাক করে দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলো । এতো শক্ত করে যেন কোন ভাবেই আমাকে ছেড়ে দিবে না। জড়িয়ে ধরা অবস্থাতেই আমার ঠোঁটে চুমু খেল সে । গভীর এক চুমু । আমি জীবনে এই ঠোঁটের স্বাদ ভুলতে পারবো কিনা মনে নেই ।
তারপর আবারও আমাকে জড়িয়ে ধরেই থাকলো । এক সময়ে বলল, তুমি জানো এই সাতটা দিন আমি কিভাবে কাটিয়েছি । বারবার কেবল আমার মনে হয়েছে যে আমার জীবনে কি যেন নেই । পুরো রাত জেগে থাকতাম । এক ফোঁটা ঘুম আসতো না । কেবল তোমার ছবি সামনে ভাসতো । তোমার প্রোফাইলে গিয়ে বসে থাকতাম ।

ব্যস আমাদের প্রেম শুরু হয়ে গেল । এবং ব্যাপারটা মোটেও গোপন থাকলো না । ক্যাম্পাসের বলতে গেলে সবাই জেনে গেল । আমরা ক্যাম্পাসের ভেতরেই গল্প করতাম । বসে থাকতাম । আমার বন্ধুদের সাথে আবন্তির মিল শুরু হল । ও আমাদের গ্রুপের সাথে মিশতে শুরু করলো । সব কিছু চলতে লাগলো বেশ ভালো ভাবেই । কিন্তু আবারও ঝামেলা বাঁধালো সেই সবুজ সাহেব ।

সেদিন ক্যাম্পাস থেকে বের হতে যাবো তখনই আমার সামনে এসে দাড়ালো সে । আজকে আবন্তির ক্লাস ছিল না । তার মানে এই সবুজ সাহেবের নেই । সে আমার সাথে দেখা করতে এসেছে । আমার সামনে দাড়িয়ে বলল, আবন্তির সাথে যেন তোকে আর না দেখি !
আমি খুব স্বাভাবিক ভাবে বললাম, কেন ?
-আবার কেন বলিস ? মানা করেছি মানে যাবি না ।
আমি বললাম, কিন্তু আবন্তির তো কোন সমস্যা নেই । সে তো আমার সাথে থাকতে পছন্দ করে !
-শ্লার বাই%^$ । এতো বড় সাহস তোর.....।

এই বলে সে আমার কলার চেপে ধরলো । এবং একটা ঘুসি মারতে গেল ।

সবুজ সাহেব আমার থেকে বয়সে বড় হলেও আমার থেকে তার শরীরের গঠন বড় না । বলা চলে লম্বার তার সামন হলেও তার থেকে শরীর স্বাস্থ্য আমার ভাল । সেদিন আমি কিছু বলি নি কারণ দোষ আমার ছিল । আজকে কেন জান সহ্য করলাম না । ঘুসিটা এক হাত দিয়ে ঠেকালাম । তারপর অন্য হাত দিয়ে তার চোয়াল বরাবর একটা ঘুসি মেরে দিলাম । আর মারতে হল না । একটাতেই যথেষ্ঠ । মাটিতে পড়ে গেল সে !
আমি তার দিকে তাকিয়ে বলল, সেদিন আমার ভুল ছিল । আমি কিছু বলি নি । কিন্তু আজকে আমার দোষ নেই । আপনি বড় ভাই তাতে কিছু যায় আসে না । আরেকবার মারতে আসবে হাত ভেঙ্গে দিবো ।

দেখলাম আমার কিছু বন্ধুবান্ধব এগিয়ে এসেছে । সবুজ ততক্ষনে উঠে দাড়িয়েছে । তার সাথে থাকা বন্ধু বান্ধবরা হতভম্ভ হয়ে দাড়িয়ে আছে । সম্ভবত তারা ভাবতে পারে নি যে আমি ঘুসি মেরে বসবো ! তবে তারা আর ঝামেলা করলো না । কারণ পেছনে বেশ কয়েকজন এসে দাড়িয়েছে আমার !

ঘটনা জানা জানি হতে দেরি হল না । আবন্তির কাছেও পৌছে গেল । সে তো ফোন করে আমাকে সেই ঝাড়ি । পরদিন ক্যাম্পাসে গিয়েই বুঝলাম অবস্থা ভাল না । কিছু একটা ঝামেলা হবে । নাইম আমার কাছে এসে বলল, তুই কেন এসেছিস আজকে । ঝামেলা হতে পারে
আমি বললাম, আমার কারণে হয়েছে আমি সামলাবো !

দুইটা ক্লাস শেষ হতেই দেখলাম অপরিচিত বেশ কয়েকজন আমাদের ক্লাসে এসে আমাকে ডেকে নিয়ে গেল । এবং অবাক হয়ে দেখলাম আমার সাথে বলতে গেলে সবাই বের হয়ে গেল । আমার পেছন পেছন আসতে লাগলো । মানা করা স্বত্ত্বেও কেউ কান দিলো না সে দিকে ।

কাঠাল তলায় দেখলাম আমাদের ক্যাম্পাসের ছাত্র নেতা বসে রয়েছে । এক পাশে আমি সবুজ সাহেবকে দেখতে পেলাম । আমি গিয়ে দাড়ালাম সামনে । নেতা সাহেব আমার দিকে তাকিয়ে বলল, তুমিই অপু?
-জি ভাইয়া !
-বেয়াদবি কেন করেছো?
-ভাইয়া আমি কয়েকটা কথা বলি ! তারপর আপনি যা বলবেন তাই হবে !
-তোর আবার কি কথা রে !
পাশ থেকে একজন বলে উঠলো । নেতা সাহেব হাত উঠিয়ে তাকে থামিয়ে দিল । তারপর বলল, বল কি বলবে !

আমি একটা বড় দম নিলাম । তারপর বললাম, সব কিছু শুরু আবন্তিকে নিয়ে । কয়েক মাস আগে আমি আবন্তিকে বেশ বিরক্তই করেছি । এই কথা আবন্তি সবুজ সাহেব জানায় । এবং সে আমাকে তখন চড় মারে । আমি সেই দিন একটা কথা বলি নি । কারণ দোষ আমার ছিল । নিরবে শাস্তি মাথা পেতে নিয়েছি ।
নেতা বলল, তারপর?
-তারপর আবন্তির সাথে আমার একটা ভাল সম্পর্ক তৈরি হয় ! সে আমার সাথে আমার বন্ধুদের সাথে সময় কাটাতে শুরু করলো । নিজের ইচ্ছেতেই । গতদিন সবুজ সাহেব আবারও আমার পথ আটকে ধরে এবং বলে যে আমি যেন আবন্তির কাছ থেকে দুরে থাকি ! আমি তো আবন্তিকে মোটেই বিরক্তি করছি না । বরং সে আমার সাথে থাকতে পছন্দ করছে । এখন আপনি বলুন ভাই আবন্তি আমার সাথে মিশছে, তার ভাল লাগছে, আমারও ভাল সময় যাচ্ছে এটা কোন অন্যায় হয়েছে !
নেতা বলল, আবন্তি তোমার থেকে বয়সে বড় !
-ভাইয়া আপনি এই যুগেও এই বয়স নিয়ে বলছেন ! আপনি আধুনিক যুগের আধুনিক ছাত্র নেতা । আপনাকে আমরা ফলো করি । আপনিই তোমাদের শিখিয়েছেন যে বন্ধুত্বের ব্যাপারে বয়স আসলে কোন ব্যাপার না ! মনের মিলটাই বড় !

এমন একটা কথা নেতা সাহেব সত্যিই বলেছিলো আমাদের নবীন বরণে । সেটা আমার মনে আছে ! নেতা সাহেব দেখলাম একটু নড়ে চড়ে বসলো । তারপর সবুজের দিকে তাকিয়ে বলল, আবন্তি কি তোর অভিযোগ করেছে যে অপু বিরক্ত করছে । করেছে ? আবন্তি !
নেতা ডাক শুনে দেখলাম আবন্তি বের হয়ে এল । নেতা তার দিকে তাকিয়ে বলল, অপু যা বলল সব কি সত্য ?
-জি ভাইয়া !
নেতা আবার সবুজের দিকে তাকিয়ে বলল, তাহলে তুই মাতব্বারী কেন করতে গেলি ?
সবুজের মুখে কোন কথা নেই । আমার পাশেই নাইম ছিল, সে চট করে বলল, ভাইয়া সবুজ ভাই অনেক দিন ধরে আবন্তির পেছনে ঘুরছে । পাত্তা না পেয়ে জ্বলে পুড়ে মরে যাচ্ছে !

সাথে সাথে হাসির রোল উঠলো । নেতা সাহেবও হেসে ফেলল । তারপর হাত উচু করে সবাইকে থামিয়ে দিল । তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল, তোমার সাথে অন্যায় হয়েছে আমি বুঝলাম । কিন্তু তুমিও অন্যায় করেছো । বড় ভাইয়ের গায়ে হাত দিয়েছো । তবে শুরুটা যেহেতু তুমি করো নি তোমার দোষ কম । সবুজ কে সরি বল । আর সবুজ তুইও সরি বল । জোর করে কিছু হয় না এটা তোর বোঝা উচিৎ । এরপর যেন এমন কিছু আর না হয় !

আমি খানিকটা হাসি মুখে এগিয়ে গেলাম সবুজের দিকে । টিটকারী মারকা হাসি দিয়ে বললাম, সবুজ ভাইয়া মনে কষ্ট রাখবেন না । আমি খুব সরি । সবুজ ব্যাথিত কন্ঠে আমাকে সরি বলে চলে গেল । সভা শেষ ।


পরিশিষ্ঠঃ

আবন্তি আমার পাশে বসে রয়েছে । রিক্সা চলছে নিউমার্কেটের দিকে । আবন্তি হঠাৎ বলল, সাকের ভাইকে তো খুব পাম দিলে দেখলাম । কথায় তোমার সাথে কেউ পারবে না । এই কথা দিয়েই আমাকে ঘায়েল করেছো !
আমি আকাশ থেকে পড়ার ভঙ্গি করে বললাম, আমি !! এই আমি !!
-ইস ঢং !

তারপর একটু গম্ভীর হয়ে বলল, বিয়ের ব্যাপারে কিন্তু আমি কাউকে রাজি করাতে পারবো না আগেই বলে রাখছি । তুমি রাজি করাবে !
-নো চিন্তা জানেমান ! তোমার আব্বুকে পটাতে আমার একটুও সময় লাগবে না । তোমাকে বিয়ে আমি করবোই ।
-হয়েছে ! দেখা যাবে !

রিক্সা এগিয়ে চলছে টংটাং করে । সেই আমাদের সামনের জীবনে এক সাথে থাকার স্বপ্নটাও .....




গল্পটা গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে লেখা এবং পূর্বে নিজেস্ব সাইটে প্রকাশিত
picyure source

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +১১/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৪:২৮

জুল ভার্ন বলেছেন: চমৎকার গল্প! +

১৬ ই জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ১১:৪৪

অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই

২| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৫:২০

জুন বলেছেন: সুন্দর ছোট গল্পে ভালো লাগা রইলো অপু।

১৬ ই জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ১১:৪৫

অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ আপু ।

৩| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:১৬

মনিরা সুলতানা বলেছেন: কোন অঘটন তোমার গল্পে বাদ আছে #:-S
ভালোলাগা দিলাম।

১৬ ই জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ১১:৪৫

অপু তানভীর বলেছেন: আমার জীবনে এই লক্ষ্য । বাদ যাবে না কোন ঘটনা ! সবার সাথে একবার করে প্রেম হবেই হবে ! ;)

৪| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১০:১৮

তানীম আব্দুল্লাহ্ বলেছেন: প্রেম ভালবাসা ছাড়া জীবন অর্থহীন ।

১৬ ই জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ১১:৪৬

অপু তানভীর বলেছেন: সত্যিই তাই । প্রেম ছাড়া জীবন স্বাদহীন ।

৫| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১০:২৬

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: বেশ ভালো লিখেছেন।

১৬ ই জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ১১:৪৮

অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ । ভাল লেগেছে জেনে আমারও ভাল লাগলো ।

৬| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১২:২৪

সেডরিক বলেছেন: ভালো লিখেছেন। তবে মিষ্টি ১ চামচ বেশি হয়ে গেছে। :#)

১৬ ই জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ১১:৪৯

অপু তানভীর বলেছেন: একটু মিষ্টি বেশি হয়েছে সেটা আমিও বুঝতে পারছি । অবশ্য আমার গল্পে সব সময় মিষ্টি একটু বেশিই থাকে । বাস্তবে এতো ঝামেলা ভর্তি তাই মিষ্টি একটু চলে আসে আপনা আপনি ।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ

৭| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ১১:১৫

রোকসানা লেইস বলেছেন: যার নয়নে যারে লাগে ভালো তার উপরে আর কি আছে।

১৬ ই জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ১১:৫২

অপু তানভীর বলেছেন: জগতে এর থেকে সত্য কথা আর নেই কিছু !

নয়ন যারে ভাল লাগে তার উপরে আর কিছু নাই । কেউ নাই ।

৮| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১১:৩৫

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:



ক্লাসে জুনিয়ররা অনেক সময় সিনিয়র ক্লাসের আপুদের প্রেমে পড়ে। বাস্তব গল্প। অনেক সময় আরো কয়েক ধাপ বেশীও হয়ে যায়। কোনো কোনো বেআক্কেল ছাত্র শিক্ষিকার প্রেমেও পড়ে। গল্প খুব ভালো হয়েছে।

আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

১৬ ই জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ১১:৫৩

অপু তানভীর বলেছেন: বড় আপু কিংবা টিচারের প্রেমে পড়া ছেলেদের মাঝে অবধারিত একটা ব্যাপার । জীবনে এক বার না একবার এটা হবেই । কিন্তু সেই প্রেম বাস্তবে রূপ নেয় না । গল্প বলেই হয়তো নিয়েছে ।

ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য !

৯| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ১০:১৭

আহমেদ জী এস বলেছেন: অপু তানভীর,




গত বছরের ফেব্রুয়ারীতে চলতে শুরু করা রিক্সাটি নিউমার্কেট ছাড়িয়ে কতো দূর গেছে? আর একসাথে থাকার স্বপ্নটা কি কাজী অফিস পর্যন্ত পৌঁছেছে ?

ছোট্টর ভেতরে ভালো হয়েছে গল্পটা।

১৮ ই জানুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১২:১৫

অপু তানভীর বলেছেন: বাস্তবে আসলে রিক্সায় বেশি দুর যায় না । কিছু দুর গিয়েই রিক্সা থেকে যায় নয়তো পেছন থেকে ট্রাক এসে ধাক্কা দিয়ে চলে যায় । তবে গল্পে হয় অনেক কিছুই । গল্পে রিক্সা ঠিকই চলে যায় কাজী অফিস পর্যন্ত !

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আহমেদ জী এস ভাই .....

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.