নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভারত এবং শ্রীলংঙ্কাকে পৃথক করেছে পক প্রনালী । এটি বঙ্গোপসাগর এবং মান্নার উপসাগরকে যুক্ত করেছে একসাথে । এই প্রনালী ৪০ মাইল থেকে ৮৫ মাইল পর্যন্ত প্রশস্থ । তবে পর্যাপ্ত গভীরতার অভাবে এটি বড় জাহাজ চলাচলের জন্য একটু ঝুকিপূর্ণ । যদিও এই প্রনালী দিয়ে জেলে নৌকা এবং ছোটখাটো বানিজ্যিক জাহাজ চলাচল করে তবে বড় বড় জাহাজ পুরো শ্রীলংঙ্কা ঘুরেই । ১৮৬০ সালের দিকে ব্রিটিশ সরকার এই প্রনালী দিয়ে প্রথম গভীর সমুদ্রপথ খননের প্রস্তাব রাখলেও সেটা বেশি দুর এগোয় নি । ২০০৫ সালে ভারত সরকার এই প্রনালীর ভেতর দিয়ে সেতু সমুদ্রম প্রজেক্টের ঘোষণা দিলে দেশ জুড়ে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা হয় ! অনেক যাচাই বাছাইয়ের পরে যখন ২০১৩ সালে ভারত সরকার এই প্রজেক্ট এগিয়ে নিয়ে যেতে চায় তখন পুরোদেশ জুড়ে তীব্র প্রতিবাদ শুরু হয় । শেষ পর্যন্ত তা গড়ায় হাইকোর্ট পর্যন্ত । এবং প্রজেক্টের উপরে স্থাগিতাদেশ আসে ।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে বর্তমান জাহাজ চলাচলের রুট এবং সেতুসমুদ্রম হলে নতুন রুট । বর্তমান রুট থেকে সেটা আরও সহজ হত, অতিক্রান্ত দুরুত্ব কমে যেত । তারপরেও এর বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ বিভিন্ন হিন্দু সংগঠন তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলো । এর পেছনে রয়েছে একটাই কারণ । এটার সাথে তার ধর্মীয় আবেগ জড়িত । এই স্থানেই রয়েছে রামায়নে বর্ণিত রামা সেতু বা রাম সেতু । হিন্দু ধর্মালম্বিদের বিশ্বাস এই প্রজেক্ট তৈরি হলে রামসেতুর অনেক অংশ ধ্বংশ হয়ে যাবে । যদিও ভারত সরকার তখন প্রমান করেন যে এটা প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি হওয়া একটা সেতু, এর সাথে রামায়নের কোন সম্পর্কে নেই কিন্তু তাতেও জনগনকে শান্ত করা যায় নি । প্রজেক্ট আর সামনে এগোতে পারে নি । পরবর্তিতে সরকার বদল হলে মোদী সরকার ঘোষনা দেয় যে তারা এমন কিছু করবে যাতে রামসেতুর ঐতিহ্য নষ্ট হয় ।
রামসেতু কিংবা এডামস ব্রিজের ইতিহাস কেবল ভৌগলিক দিক দিয়েই নয়, রাজনৈতিক, ধর্মীয় দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ । যে কয়টি প্রাচীন স্থাপনার কথা আমরা প্রাচীন মিথোলজিতে খুজে পাই তার ভেতরে রামসেতু অন্যতম । ধারণা করা হয় ভারত এবং শ্রীলংঙ্কা সংযোগকারী এই সেতুটি তৈরি হয়েছিলো আজ থেকে সাত হাজার কিংবা তারও অনেক আগে । এখন এই সেতু কি মানুষ্য দ্বারা নির্মিত নাকি প্রাকৃতিক ভাবেই তৈরি হয়েছিলো সেটা নিয়ে আজও বিতর্ক সৃষ্টি হয়ে আছে । হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসীদের কাছে এটি আসলে তৈরি করেছিলেন শ্রীরাম তার বানর সেনার সাহায্যে অন্য দিকে বৈজ্ঞানিক তথ্যে অনেকে বলেন রামসেতু তৈরি হয়েছিল প্রাকৃতিক ভাবে । সেই বিতর্কের শেষ না হলেও আসুন আমরা এই সেতু সম্পর্কে আরও কিছু জানার চেষ্টা করি ।
ভারতের দক্ষিণ পূর্ব অঞ্চলে রামশ্বর দ্বীপ আর শ্রীলংঙ্কার উত্তর পশ্চিমে মান্নার দ্বীপ । এই দুই দ্বীপের মাঝে রয়েছে প্রায় ৩০ মাইল দীর্ঘ সংযোগ সেতু । যদিও এটি এখন আর সমূদ্রে পৃষ্ঠে ভাসমান নয় তবে তবে এক সময়ে যে এটা সমুদ্রের উপরেই ছিল । পায়ে হেটেই এই সেতু পার করা যেত। বর্তমানে পানির নিচে এই চুনাপাথরের তৈরি পথটুকুর গভীরতা কোন কোন স্থানে খুবই কম । কোন কোন স্থানে এর গভীরতা ৩০ ফুট থেকে শুরু করে মাত্র তিন ফুট ।
রামসেতুর কথা সর্ব প্রথম যে বইতে খুজে পাওয়া যায় সেটি হচ্ছে বাল্মীকি রচিত রামায়ন গ্রন্থে । পার্সিয়ান ভূপর্যটক খোরদাদবেহের বই ''দ্য বুকস অব রোডস এন্ড কিংডমস'' এ এই রামসেতুর কথা উল্লেখ রয়েছে । বইটি আনুমানিক ৮৫০ বা ৯১২ সালের দিকে লেখা হয়েছিলো । বইতে সেতুরটির নাম দেওয়া হয়েছিলো ''সমুদ্রসেতু'' । পরিব্রাজক মার্কোপোলো তার ভ্রমন কাহিনীতে এটাকে সেতুবন্ধ রামেশ্বরম বলে উল্লেখ করেছেন । তিনি এই সেতুটির নাম আদম সেতুও বলেছেন তার বইতে । ১৯৯২ সালে প্রকাশিত এনসাইক্লোপিডিয়া অব হিন্দু ওয়ার্ল্ড থেকে জানা যায় যে এই সেতুটি পঞ্চদশ শতাব্দী পর্যন্ত সমুদদ্রের উপরে দৃশ্যমান ছিল । তখন পায়ে হেটে এটার উপর দিয়ে যাওয়া আসা করা যেত । কিন্তু ১৪৮০ সালের দিকে এক প্রলয়ংঙ্কারী ঘর্ণিঝড়ে সেতুটি ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং সমুদ্রের তলে ডুবে যায় । ১৮০২/০৪ সালে একজন ব্রিটিশ মানচিত্রবিদ তার মানচিত্রে এই সেতুটিকে এডামস ব্রিজ নামে চিহ্নিত করেন । তখন থেকেই মুলত এই সেতুটি এডামস ব্রিজ হিসাবে বিশ্বের কাছে পরিচিতি পায় ।
হিন্দু পুরাণে এই সেতুর কথা উল্লেখ রয়েছে । সেখানের কাহিনীটি-
লঙ্কান রাজা রাবন যখন সীতাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে শ্রীলঙ্কায় নিয়ে যায় তখন রাম তার ভাই লক্ষ্মণ এবং বানর সেনাকে নিয়ে সীতাকে উদ্ধারের লক্ষ্যে শ্রীলংঙ্কার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয় । কিন্তু রামেশ্বেরের কাছে এসে তাদের থামতে হয় । তাদের সামনে বাঁধা হয়ে দাড়ায় সমুদ্র । শ্রী রাম তখন সমুদ্র দেবতার উদ্দেশ্যে তপস্যা করেন যাতে তিনি সমুদ্রের মাঝ দিয়ে যাওয়ার পথ করে দেয় । কিন্তু তিন দিনেও সমুদ্র দেবতার দেখা না পাওয়ার পর শ্রীরাম রেখে যায় । শ্রীরাম নিজের ধনুকের অগ্নিবানে সমুদ্রকে শুকিয়ে দিতে উদ্যত হলে সমুদ্রদেবতা হাজির হয় এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে । পরে সমুদ্রদেবতা বলে এই সমুদ্রের উপর দিয়ে একটা পাথরের সেতু তৈরি করতে । তাকে যখন বলা হয় যে এই উত্তাল সমুদ্রে পাথর দিয়ে কিভাবে সেতু তৈরি করা সম্ভব তখন সমুদ্রদেবতা বলে যে প্রভু রামের সব কিছুই সম্ভব ।
শ্রী রামের সেই বানর সেটার ভেতরে বিশ্বকর্মার ছেলে নল ও নীল ছিল । ছোট বেলাতে তারা প্রায়ই মুনি ঋষিদের তপস্যার পাথর ছুড়ে বিরক্ত করত । তখন এক ঋষি তাদের অভিষাপ দিয়েছিলো যে তাদের ছোড়া পাথর পানিতে ডুববে না । এই শাপই এখানে আশির্বাদ হিসাবে কাজ করে । নল কর্তৃক সমুদ্রে ছুড়ে দেওয়া পাথর ডুবে যায় না । এই কারণে অনেকে রাম সেতুকে নল সেতুও বলে থাকে । বানর সেনার দল একের পর এক পাথর এনে হাজির করে । নল ও লীন সেই পাথরে শ্রীরামের নাম লিখে তা সমুদ্রে নিক্ষেপ করে । মাত্র ৫ দিনেই সেতু তৈরি হয়ে যায় । শ্রী রাম তার সেনা সমেত শ্রীলংঙ্কায় গিয়ে হাজির হয় । তারপর রাবনকে পরাজিত করে সীতাকে নিয়ে একই পথে ফিরে আসে । এরপর কথিত আছে যে ফেরার পর শ্রীরাম এই সেতু ধনুকের বানে ধ্বংশ করে দেন । তবে এটা নিয়ে বির্তক রয়েছে ।
এই গেল হিন্দু পূরানে উল্লেখকৃত রাম সেতুর কথা । এছাড়া রাম সেতুর কথা আমাদের ধর্মেও সাথেও খানিকটা জড়িত । যদিও এই কথা কোন হাদিস কিংবা কোরআনে পাওয়া যায় না । বলা যায় মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত গল্প । বেহেস্ত থেকে বিতারিত হয়ে আদম (আঃ) এই শ্রীলংঙ্কাতেই পতিত হয় । তিনি ছিলেন দীর্ঘদেহী । সে পাহাড়ের উপরে তিনি পতিত হন সেখানে তার পায়ের ছাপ পড়ে । এতো উপর থেকে পতিত হওয়ার কারণে সেখানে পায়ের ছাপটা পড়ে । এই পায়ের ছাপটা বর্তমানে এডামসপিক নামে পরিচিত । তবে এটাতেও রয়েছে বিতর্ক । হিন্দুরা মনে করেন এটা তাদের শ্রী হনুমানের পায়ের ছাপ অন্যদিকে বোদ্ধরা মনে করে এটা গৌতমবুদ্ধের পায়ের ছাপ । যাই হোক এই শ্রীলংঙ্কায় পতিত হওয়ার পরে যখন আদম (আঃ) বিবি হাওয়ার কাছে যান তখন সমুদ্র পার করা ছাড়া তার কোন উপায় ছিল না । এখান থেকেই বলা হয় যে আদম (আঃ) প্রথম এই সেতু পার হয়ে ভারতে আসেন । কেউ কেউ বলেন সেখানে সেতুটি আগে থেকেই ছিল আবার কেউ কেউ বলেন বিশাল দেহী আদম (আঃ) নিজেই পাথর বহন করে এখানে একটা সেতু তৈরি করেন । এই কাহিনী গুলোর কোন রেফারেসন্স পাওয়া যায় না । মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত গল্প থেকে শত শত বছর ধরে চলে আসছে ।
রাম সেতুর নির্মান নিয়ে আজও বিতর্ক চলে আসছে । একদল মনে করে যে রাম সেতু পুরোটাই প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি হয়েছে । অন্যদল মনে করে যে প্রাকৃতিক ভাবে নয়, এটা মানুষ দ্বারা তৈরি করা হয়েছে । মানুষ দ্বারা তৈরি মানে এই না যে শ্রীরামই সেটা তৈরি করেছে তবে অন্য কোন প্রাচীন মানুষের দল সেটা তৈরি করেছে । বিশেষ করে সেতুর গঠনে খুজে পাওয়া চুনাপাথর সেটাই নির্দেশ করে । রাম সেতুতে সে চুনাপাথর পাওয়া গিয়েছে সেটা মূলত আগ্নেয়গীরির লাভা ঠান্ডা ও জমে তৈরি হয় । এই চুনাপাথরের ভেতরে ফাপা থাকে তাই সেগুলো পানিতে ভাসতেও পারে । এই রামসেতুর আশে পাশে এমন কোন আগ্নেয়গীরির সন্ধান পাওয়া যায় না । তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে এই যে চুনাপাথর সেগুলো এখানে কিভাবে এল? কোন মানুষ কি এগুলো বহন করে নিয়ে এসেছে । কারণ প্রাকৃতিক ভাবে যদি সেতুটি তৈরি হত তাহলে সেখানে এই ধরণের পাথর থাকার কথা ছিল না । এই কথা আমেরিকান বিজ্ঞানীরা পর্যন্ত স্বীকার করে নিয়েছেন যে রামসেতুর আশে পাশের প্রকৃতি এবং সেতুর প্রকৃতির ভেতরে পার্থক্য বিদ্যমান। এই সেতুর নিচে কিংবা আশে পাশের যে ধরনের পাথর কিংবা ভূমি নিদর্শন রয়েছে সেটা এই সেতুর উপরে থাকা পাথরের সাথে মেলে না । এছাড়া জিয়োগ্রাফিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার প্রাক্তন ডিরেক্টর এস বাদ্রিনারায়ন বলেন যে চুনাপাথরের নিচে বালির আস্তরন টা নির্দেশ করে যে এই সেতু আসলে প্রাকৃতিক ভাবে তৈরিকৃত নয় । তার মনে এভাবে বালির উপরে কোন ভাবেই পাথর কিংবা কোরাল জন্মাতে পারে না যদি না বাইরে তা এনে বসিয়ে দেওয়া হয় ।
রাম সেতুর প্রকৃত বয়স নিয়েও রয়েছে বিতর্ক । শ্রীলংঙ্কার প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের মতে সেতুর বয়স প্রায় এক লক্ষ থেকে দুই লক্ষ বছর হতে পারে । আবার ভারতের তামিলনাড়ুর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকগন মনে করেন যে সেতুটির বয়স সাড়ে তিন হাজার বছর । তবে কার্বন ডেটিং পরীক্ষায় কিছু চমকপ্রদ তথ্য পাওয়া গেছে । রাম সেতুর বিভিন্ন স্থানের পাথর পরীক্ষা করে বিভিন্ন সময়ের নির্দেশ পাওয়া গেছে । যেমন কোন স্থানের পাথরের বয়স ৭ হাজার বছর আবার কোন স্থানের পাথরের বয়স ১৮ হাজার বছর । কিন্তু সব থেকে বিস্ময়কর তথ্য হচ্ছে এই সাত হাজার বছর পুরানো পাথরের নিচে যে বালির আস্তরণ রয়েছে সেই বালির বয়স কিন্তু চার হাজার বছর বলে উল্লেখ পাওয়া যায় । এখানেই গবেষকরা কোন উত্তর খুজে পান না । কিভাবে চুনা পাথরের নিচে বালির আস্তরণের বয়স পাথরের বয়স থেকে কম হল !
২০১৭ সালে ডিসকভারির সায়েন্স চ্যানেল আদম সেতু নিয়ে আলোচনা হয় । সেখানেও স্যাটেলাইন দিয়ে পানির নিচে পাথরের সারি দেখানো হয় । তারা সেতুর আশে পাশের সকল প্রকৃতি পরীক্ষা করে দেখেন যে সেতু এবং সেতুর আশে পাশের পাথরের প্রকৃতি এক নয় । তারা এও বলেন যে এটা প্রকৃতিক ভাবে তৈরি এমনটা মনে হয় না ।
আর্কিওলজিস্ট চেলসি রোজ বলেন যে এডামব্রিজের পাথর গুলো লাইমস্টোন । ওগুলো কোন ভাবেই সমুদ্রিক পাথক নয় । এটা নিশ্চিত যে এর ভেতরে অবশ্যই কোন কিন্তু আছে ।
ভারতের স্পেস রিসার্স সেন্টার রিমোর্ট সেনসিং টেকনোলজি ব্যবহার করে সেতু সম্পর্কে বলেছে যে রাম সেতুটি ১০৩ টি প্যাচ রিফ দ্বারা তৈরি হয়েছে । তবে এটা সর্বজন স্বীকৃতনয় । নানান গবেষকগন সেতু সম্পর্কে নানান রকম মত দিয়েছেন । প্রকৃতিক ভাবে সেতু তৈরি হওয়ার পেছনে প্রধানত দুইটা থিউরী সব থেকে বেশি জনপ্রিয় । প্রথমটা হচ্ছে প্রকৃতিক ভাবে কোন স্থান উচু হয়ে যেতে পারে । ধারণা হয় যে সমুদ্রের নিচের কোন ভূমিকম্প কিংবা অন্য যে কোন প্রকৃতিক কারণে সেতুর এই স্থানটা উচু হয়ে গিয়েছিলো তারপর বছরের পর বছর নানান দিক থেকে পাথর বালি এসে জমা হয়ে সেতুটি এভাবে তৈরি করেছে । এভাবে বালি জমা হয়ে এসে পথ তৈরি হওয়াটা মোটেও কোন অস্বাভাবিক ব্যাপার নয় । এখানে বলা হয়েছে যে রাম সেতুর এই অঞ্চলে দুটো ভিন্ন স্রোত দুই দিক থেকে প্রবাহিত হচ্ছে । একটি মান্নারের দিকে অন্যটি পক প্রনালীর দিকে । এই ভিন্ন স্রোতই মুলত দায়ী এই ব্রিজ তৈরির ক্ষেত্রে। অন্য আরেকটা থিউরী হচ্ছে যখন শ্রীলংঙ্কা ভারতের মুল ভুখণ্ড থেকে আলাদা হয়ে যায় তখনই এই সেতুর স্থানটা এমন ভাবে তৈরি হয়ে যায় । সেটাই বছরের পর বছর টিকে থাকে । আরও নানান জনের নানান রকম মতবাদ রয়েছে । এদের ভেতরে একটি হচ্ছে ব্লক ফল্টিং । যদিও ব্লক ফল্টিং টা সাধারণত পাহাড় তৈরির ক্ষেত্রেই বেশি ব্যবহৃত হয় ! তবে এই ক্ষেত্রেও সেটা তৈরি হতে পারে বলে মনে করেন অনেকে । এছাড়া সেডিমেনটেশনের কথা আগেই বলেছি । এক স্থানের বালি পলি অন্য স্থানে ভেসে গিয়ে চর তৈরি করে । এভাবেই হয়তো সেতু তৈরি হয়েছে । এছাড়া রয়েছে ম্যান্টেল প্লুম একটিভিটি (mantle plume উচ্চারণটা ঠিক লিখলাম কিনা কে জানে) । ম্যান্টেল প্লুম একটিভিটিটা হচ্ছে মাটির গভীরে কোন পাথর খন্ড যে কোন কারণ গরম হয়ে উপরে উঠে আসে এমন একটা উচু শেইপ তৈরি করতে পারে । যদিও ম্যান্টেল প্লুম থিউরিটা আগ্নেওগিরির সাথে বেশি মানান সই ।
অনেকেই রাম সেতু মানুষ্য সৃষ্টির পেছনেও অনেক যুক্তি তুলে ধরেছেন । নিচের ইুটিউব ভিডিওতে একটা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা তুলে ধরা হয়েছে যদিও সেটা হিন্দু দৃষ্টিকোন থেকে করা । যদি ধর্মের দিকটা বাদও দেই তারপরেও এই ভিডিওতে দেখানো হয়েছে মানুষ দ্বারা এই সেতু তৈরি করাটা মোটেও অসম্ভব কিছু না । ভিডিওটা দেখতে পারেন আপনারাও ।
সত্যিই কি রাম সেতু প্রকৃতিক কোন খেয়ালেই তৈরি হয়েছিলো? নাকি প্রাচীন কোন ঐশ্বরিক শক্তশালী মানুষ কিংবা মানুষের দল এই রামসেতু তৈরি করেছিল ? কিভাবে লাইমস্টোম গুলো এই বালির উপরে এসে হাজির হল? এই সব প্রশ্নের সঠিক উত্তর হয় সামনের কোন বছরে জানা যাবে । আমাদের সেই উত্তরের জন্য অপেক্ষা করতে হবে ! তবে একটা কথা কোন ভাবেই অস্বীকার করার উপায় নেই যে রামসেতু ভারতীয় মানুষের সংস্কৃতির সাথে জড়িয়ে রয়েছে । যুগযুগ ধরে চলে আসা ধর্মীয় বিশ্বাস আর সংস্কৃতি আমাদের জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ন অংশ হয়ে আছে এবং সেটা তেমন ভাবেই টিকে থাকবে ।
রাম সেতু নিয়ে লিখতে চেয়েছিলাম এমনিতেই । মুলত এই বছরে Ram Setu নিয়ে একটা মুভি মুক্তি পেয়েছে । সেই মুভিটা দেখার পরেই মনে হল এটা নিয়ে কিছু লেখা যায় । তারপরই ফিচার প্রতিযোগিতা শুরু হল । অল্প লেখা ছিল আগেই পরে, বাকি টুকু লিখে শেষ করলাম ।
এই পোস্টটা লিখতে নিচের আর্টিকেল গুলো পড়েছি ।
Adam's Bridge
রামায়ণ, রামসেতু ও তার পাথর রহস্য
The myth and mystery behind Ram Setu
Ram Setu Bridge
রাম সেতু পরিচিতি
রামসেতুঃ বিজ্ঞান ও রামায়ণ
EXPLAINED: Is Ram Setu Bridge Man-Made Or Natural?
রাম সেতুর অজানা ইতিহাস
ছবি সুত্র
pic source 01
pic source 02
pic source 03
ফিচারঃ জানা -অজানা (বিবিধ)
১৪ ই নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:২৭
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ ।
মুভিটা দেখতে পারেন !
২| ১৪ ই নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:৩৬
জুন বলেছেন: আপনার লেখা পড়ে রামেশ্বরম ভ্রমণের স্মৃতি মনে পরলো। এই রামেশ্বরম সেতুটি যে পাথর দিয়ে তৈরি তা একটি ঘরের ভেতর পর্যটকদের দেখাচ্ছিল। কিন্ত সেখানে মুসলমানদের প্রবেশ নিষেধ। কিন্ত আমাদের মুসলিম গাইড ম্যানেজ করে আমাদের ভেতরে নিয়ে যায়৷ সেখানে একটা লোক একটা পাথর হাতে নিয়ে সামনে রাখা পানির পাত্রে ফেলছিল, পাথরটি ভাসছিল। আমরা ভালো করে দেখলাম সেটা ছিল অনেক ছিদ্র সহ একটি পাথর যাকে স্পঞ্জ/ প্রবাল বলে।
এই রামেশ্বরম এর দক্ষিণ পুর্ব দিকের সমুদ্র তীর ঘেষা এক বর্ধিষ্ণু জনপদ যা ধানুষকোডি বা কুরি নামে পরিচিত, কিন্তু ১৯২২ সালের এক ভয়ংকর সাইক্লোনে পুরো জনপদ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। আমরা সেই অপরূপ সুন্দর বীচ ধানুষকুরি গিয়েছিলাম যার থেকে মাত্র ২২ কিমি দূরে শ্রীলঙ্কার তালাইমান্নার। সেখানেই ছিল এই রামেশ্বরম বা এডামস ব্রীজ যা এখন পানির নীচে অপু তানভীর।
আপনার সুন্দর লেখায় ভালো লাগা রইলো।
১৫ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ১২:৫২
অপু তানভীর বলেছেন: আপনার সেই সময়ের স্মৃতি পড়ে আমারও বেশ লাগলো । নিজ চোখে ভ্রমনের উপরে আসলে অন্য আর কিছু হয়ই না । আমার একটা সময়ে ইন্ডিয়াতে যাওয়ার ইচ্ছে রয়েছে । এই সব কিছু দেখে আসার ইচ্ছে । দুনিয়ার আসলে আর কোথাও আমার যাওয়ার ইচ্ছে নেই কেবল ইন্ডিয়া আর নেপাল ছাড়া । একদিন হয়তো যাওয়া যাবে আবার হয়তো না ।
ভাল থাকুন সব সময় আর বেশি বেশি ভ্রমন করুণ ।
৩| ১৪ ই নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:৫১
অঙ্গনা বলেছেন: গুড ফিচার ।
১৫ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ১২:৫২
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ ।
ক্লাসি হয়েছে একেবারে ?
৪| ১৪ ই নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:৫৮
সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: সেতুটির পুরোটাই প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি । আর সেতুটির নাম "রাম সেতু" নয় এটির প্রকৃত নাম আদম সেতু । আদম নামের সাথে রামেশ্বেরে তৈরি বলে বলে রাম নামটি জুড়ে দিয়ে একে ধর্মীয় করণ করা হয়েছে মাত্র । যেমন , অনেক আতেল এখন হযরত মুহাম্মদ সা: এর সাথে হিন্দুদের এক কাল্পনিক চরিত্রকে তুলনা করে ধর্মীয় মিল খুঁজে বেড়ায় । আসুন বলি নাউজুবিল্লাহ্
১৫ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ১২:৫৫
অপু তানভীর বলেছেন: সেতুটি প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি হওয়ার সম্ভবনাই বেশি কিন্তু মানুষ্য সৃষ্টি হওয়ার পেছনে যে যুক্তগুলো দেখানো হয়েছে সেটাও ফেলে দেওয়ার মত না । এটা কেবল হিন্দুদের দাবী নয় । আমেরিকান কিছু গবেষকদেরও একই মত ।
আদম সেতুর নাম করন করেন একজন ইংরেজ ১৮০৪ সালের দিকে । তার আগে থেকেই এটা রামা/রামা/নল সেতু হিসাবেই পরিচিত ছিল ।
৫| ১৪ ই নভেম্বর, ২০২২ বিকাল ৩:২৩
বাংলার এয়ানা বলেছেন:
পোষ্টে ++
১৫ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ১২:৫৬
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ ।
৬| ১৪ ই নভেম্বর, ২০২২ বিকাল ৩:৪০
শূন্য সারমর্ম বলেছেন:
রামসেতুতে টাচ করে ধর্মীয় দাঙা লাগানো সম্ভব' মিথলজি থেকে ডিসকভারি সবাই চেষ্টা করছে মীমাংসায়।
১৫ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ১২:৫৯
অপু তানভীর বলেছেন: ধর্মীয় দাঙ্গা লাগানো সম্ভবনা ছিল না কারণ রাম সেতু নিয়ে হিন্দু ধর্মের লোকদের বাদ দিয়ে অন্য কোন ধর্মের লোকেদের কোন মাথা ব্যাথা নেই । এটা তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের সাথে ভারতের কিছু হিন্দু সংগঠন ও তাদের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক মানুষের বিবাদের বিষয় ছিল ।
৭| ১৪ ই নভেম্বর, ২০২২ বিকাল ৪:১২
ফুয়াদের বাপ বলেছেন: পোষ্টে প্লাস...তথ্যনির্ভর দারুন লেখনী। সাম্প্রতি অক্ষয়কুমার অভিনীত একটা মুভি দেখলাম এই সেতুকে কেন্দ্র করে বানানো। আপনার পোষ্টির তথ্যগুলো মুভির চাইতেও ভালো লাগলো।
১৫ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ১:০০
অপু তানভীর বলেছেন: মুলত মুভিটা দেখেই আমার রামসেতু নিয়ে লেখার ইচ্ছে জন্মেছিলো । কদিন থেকেই লিখছিলাম । পরে এই পোস্ট টুকু লিখলাম ।
৮| ১৪ ই নভেম্বর, ২০২২ বিকাল ৪:৩৫
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক বা ডিসকভারি চ্যানেলে রামসেতুর উপরে চমৎকার একটি প্রতিবেদন দেখেছিলাম অনেক আগে।
১৫ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ১:০১
অপু তানভীর বলেছেন: আমি ইউটিউবে খুজলাম ভিডিওটা কিন্তু পেলাম না । অল্প ছোট একটা ভিডিও আছে কেবল । পাইলে আমাকে জানিয়েন তো !
৯| ১৪ ই নভেম্বর, ২০২২ বিকাল ৪:৫৯
শায়মা বলেছেন: ভেরী নাইস ভাইয়ু!
১৫ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ১:০২
অপু তানভীর বলেছেন: থেঙ্কু আপু ।
১০| ১৪ ই নভেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:১০
আহমেদ জী এস বলেছেন: অপু তানভীর,
বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সাজানো চমৎকার একটা পোস্ট।
যতো কিছুই লোকে বলুক, স্যাটেলাইটের তোলা ছবিতে মূল ভুখন্ডের সাথে এর "এ্যালাইনমেন্ট" দেখে আমার তো মনে হয়, এটা প্রাকৃতিক যেটা ভারত ভুখন্ড থেকে শ্রীলঙ্কা আলাদা হয়ে যাবার সময় তৈরী হয়েছে।
১৫ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ১:০৪
অপু তানভীর বলেছেন: এটার সম্ভবনাই আসলে সব থেকে বেশি । ভুখন্ড আলাদা হয়ে যাওয়ার সময়ে সী লেভেলও নিচে ছিল বলেই গবেষকরা ধারণা করেছে । আর যখনই সী লেভেল উপরে উঠেছে তখন সেতুটা ডুবে গেছে । তবে লাইমস্টোন গুলো কিভাবে এল এটা একটা রহস্যের ব্যাপার ।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ । আপনার ফিচার পড়ার অপেক্ষায় রইলাম !
১১| ১৪ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ১০:২২
ভুয়া মফিজ বলেছেন: লেখা ভালো হইছে, তবে পুরাটা পড়ি নাই। ভরসা আছে যে, আপনের লেখা অতি উত্তমই হইবে। সেইজন্য লাইক দিলাম। একজন অপব্লগার হিসাবে এই অধিকার নিশ্চয়ই আমার আছে। কি কন?
১৫ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ১:০৬
অপু তানভীর বলেছেন: ব্যস্তাতা কমায়া একটা ফিচার লিখে ফেলেন তো দেখি । কতদিন একটা যুতসই ফিচার পোস্ট করেন না সেই হিসাব আছে ? আর দেরি করবেন না । এই উইকেন্ডে অন্য সব কাজ কর্ম বাদ দিয়ে একটা পোস্ট লিখে ফেলুন জলদি জলদি !
আর জগতে অপব্লগার হিসাবে আমাদের সব কিছুই অধিকার আছে । আমাদের এতো ক্লাসি হওয়ার কোন টেনশন নাই । মনে যা চাইবে তাই করা যাইবে !
১২| ২৬ শে নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:১৯
কল্পদ্রুম বলেছেন: শ্রীলংকা এবং ভারতের গবেষকদের হিসেব করা বয়সের পার্থক্য তো অনেক। সাড়ে তিন হাজার বছর বয়স ধরলেও, ঐ সময়ে এরকম কষ্টসাধ্য পায়ে চলা পথ তৈরি করে কী লাভ ছিলো সেটাই ভাবছি। অতীতের কত গোপন গল্প যে সমুদ্র ধারণ করে আছে!
২৭ শে নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:০৫
অপু তানভীর বলেছেন: আমাদের প্রচলিত বিশ্বাস মতে সেই সময় বড় যে কোন ধরনের কনস্ট্রাকশন করতে যে পরিমান টেকনিক্যাল জ্ঞান থাকা দরকার সেই সময়ে তা ছিল না কিন্তু তারপরেও দেখেন অতীতের কত রহস্য আমাদের চোখের সামনে আছে ।
১৩| ২৬ শে নভেম্বর, ২০২২ বিকাল ৪:২৯
সৈয়দ মোজাদ্দাদ আল হাসানাত বলেছেন: অনেক তথ্যবহুল লেখা, ভালো লাগলো। এক নিঃস্বাসে পুরোটাই পড়লাম। আমার জানাই ছিল না এরকম কোন সেতু আছে ।
২৭ শে নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:০৬
অপু তানভীর বলেছেন: আরও কত কি যে আছে তার কোন ঠিক নেই ।
©somewhere in net ltd.
১| ১৪ ই নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:০৬
জুল ভার্ন বলেছেন: গুড পোস্ট। +