নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দুই বছর আগে এই ফেব্রুয়ারি মাসে যোগী-যোতলং সামিটের উদ্দেশ্যে আমরা হাজির হয়েছিলাম বান্দরবানে । তবে সেইবার একটি পাহাড়ে উঠেই আমাদের ফিরে যেতে হয়েছিল । এর মাঝে দেশের আরও কয়েকটা পাহাড়ে উঠলেও মনের ভেতরে অন্য পাহাড়ে ওঠার যে একটা স্পিহা কাজ করছিলো সেটা কোন ভাবেই দুরে করতে পারছিলাম না । এই বছর ঠিক একই সময়ে হাজির হলাম বান্দরবানে । উদ্দেশ্য যোগী হাফংয়ের চুড়ায় উঠতেই হবে । যোতলং এতো জরুরী না কারণ ওটা আগের বার উঠেছি । মূল লক্ষ্যই ছিল যোগী হাফং ! যোগী হাফং থেকে ফেরার পরে যদি শরীরের অবস্থা ভাল থাকে তাহলে যোতলংয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে । এমনটাই ছিল মুল পরিকল্পনা ।
ভ্রমন বর্ণনা দেওয়ার আগে পাহাড় গুলোর সম্পর্কে কয়েকটা তথ্য জানিয়ে রাখি । বাংলাদেশে মোদকরেঞ্জের পাহাড় গুলোর উচ্চতা সব থেকে বেশি । এই মোদকরেঞ্জের পাহাড় গুলো মায়ানমার বাংলাদেশের বর্ডারে অবস্থিত এবং এগুলোই বাংলাদেশকে মায়ানমার থেকে পৃথক করেছে । এই মোদকরেঞ্জের একটি পর্বত হচ্ছে জোগী হাফং । এটাকে কংদুক নামেও ডাকা হয় । এটা বাংলাদেশের ৪র্থ সর্বোচ্চ পাহাড় । এর উচ্চতা ৩২২২ ফুট । অন্য দিকে এই রেঞ্জের আরেকটি পর্বত হচ্ছে যোতলং । এটি বাংলাদেশের ২য় সর্বোচ্চ পাহাড় । এটার উচ্চতার ৩৩৩৫ ফুট । এদের মাঝে আরেকটা পর্বত চুড়ার নাম হচ্ছে আয়ান ত্লং। এটি যোতলং থেকে জোগীর দিকে যাওয়ার মাঝে পড়ে ।
নিচের ছবির দিকে তাকালে বুঝতে পারবেন ।
বিশ তারিখ রাতে আমাদের বাস রওয়ানা দিল রান্দরানের উদ্দেশ্যে । অন্যান্য গাড়িগুলো সাধারণত যায় সরাসরি বান্দরবান শহরে । সেখান থেকে থানচি গিয়ে হাজির হয় । তবে আমরা যে ট্যুর গ্রুপের সাথে যাচ্ছিলাম তারা সরাসরি বান্দরবান না গিয়ে চকরিয়াতে বাস থেকে নেমে পড়লো । বাসটা ছিল কক্সবাজারগামী বাস । আমরা চকরিয়া থেকে নেমে সেখান থেকে হাফবডি চাঁদের গাড়িতে করে হাজির হলাম আলীকদম উপজেলাতে । সেখান থেকে সকালের নাস্তা শেষ করে থানচির জন্য রওয়ানা দিলাম ।
দুপুরের আগেই আমরা থানচি গিয়ে হাজির হলাম । ঢাকা থেকে আমরা মোট ৫জন রওয়ানা দিয়েছিলাম । আমাদের টিমের আরেকজন সদস্য আমাদের সাথে যোগ দিয়েছিলো থানচি থেকে । আমাদের পুরো যাত্রা পথের একটা ম্যাপ নিচে দেওয়া হল ।
যথাযত ভাবে সব ফর্ম পূরণ করে আমরা থাচনি হতে রেমাক্রির উদ্দেশ্য রওয়ানা দিলাম নৌকাতে করে । এই নৌকা গুলো বেশ সরু । নৌকা গুলোর এমন সরু হওয়ার কারণ হচ্ছে রেমাক্রি যাওয়ার পথে একটা স্থানে বেশ বড় বড় কিছু পাথর আছে । সেই পাথরের ভেতর দিয়ে নৌকাগুলোকে নিয়ে যেতে হয় । নৌকা যত মোটা হবে এই পাথরের ভেতর দিয়ে নিয়ে যাওয়া ততই কষ্টকর হবে । একটা নৌকাতে সর্বোচ্চ ৫/৬জন করে যেতে পারে ।
নদীর পানি এখন অনেক কম । শীতকালে পানি কম থাকে । বেশির ভাগ স্থানেই আমরা নিচের পাথর দেখতে পারছিলাম । এবং আমাদের নৌকার সাথে সেই পাথরের ঘষা লাগছিলো প্রতি মুহুর্তেই । এইবার এই যাত্রা পথে আমি বেশি ছবি তুলি নি । তার থেকে বরং দুই পাশের দৃশ্য উপভোগ করছিলাম একভাবে । মাঝে এমন একটা স্থানে এসে হাজির হলাম যেখানে পানি কমে গেছে একেবারে । এখানে নৌকাতে বসে করে যাওয়া সম্ভব না । আমরা নেমে গেলাম । মাঝি সেটা ঠেকে উপরে নিয়ে যেতে থাকলো ।
এই পথে আমরা হাটছিলাম ।
একটা দোকান
নদীতে ভাসিয়ে বাশ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে
একটা হাঁস
এই দোকান থেকে আবারও আমাদের নৌকাতে যাত্রা শুরু হয় । এরপরে মাঝে পড়লো সেই বড় বড় পাথর গুলো । এদের একটার নাম রানী পাথর একটার নাম রাজা পাথর আরেকটার নাম বড় পাথর ।
প্রায় আড়াই ঘন্টার নৌযাত্রা শেষ করে আমরা পৌছালাম রেমাক্রিতে । এবার আমাদের এখান থেকে হাটতে হবে ।
আমাদের মুল বেজ পয়েন্ট হবে দলিয়ান পাড়া । রেমাক্রি থেকে দলিয়ান পাড়ার যেতে ঘন্টা দুয়েক সময় লাগে । আমরা রেমাক্রি থেকে হাটা শুরু করলাম । পেছনের ব্যাগটা সবারই একটু ভারী ছিল তাই আমাদের সবারই হাটার গতি একটু ধীর ছিল । যাত্রা পথে দুইবার থামলাম । তারপর আবারও হাটা দিলাম । মাঝে একটা পাড়াতে বসে চাও খেলাম সবাই ।
বিকেল পাঁচ দিকে আমরা পৌছালাম দলিয়ান পাড়াতে । এটাই মূলত আমাদের রাতের থাকার জায়গা । আমরা এখান থেকেই আমাদের পাহাড়ের মুল ট্রেকিং শুরু করবো আগামীকাল ।
গোসল করে রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমি অতিদ্রুত শুয়ে পড়লাম । ঘড়িতে সময় ছিল তখন রাত সাড়ে আটটা । ঢাকাতে আমরা তো এই সময়ে ঘুমানোর কথা কল্পনাই করতে পারি না । তবে কেবল আমরাই নই পুরো গ্রামই এই সময়ের ভেতরেই আলো বন্ধ করে শুয়ে পড়েছে ।
দলিয়ান পাড়া নিয়ে কয়েকটা কথা না বললেই নয় । আমি বান্দরবানের বেশ কয়েকটা পাড়াতে থেকেছি । তার ভেতরে দলিয়ান পাড়া সব থেকে পরিস্কার পাড়া আর চমৎকার সাজানো গোছানো পাড়া । পরিস্কার ওয়াশরুম আর পানির ব্যবস্থাও চমৎকার । অন্য সব পাড়াতেই শুকর থাকে যা সব সময় ওয়াশরুমের আসে পাশে ঘোরাফেরা করে । কিন্তু এখানে আমরা সেই জিনিস দেখা পাই নি ।
বাকিটা আগামীতে লেখা যাবে ।
২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১২:০০
অপু তানভীর বলেছেন: আরো ভাল কিছু ছবি আছে যদিও সেগুলো আমার কম দামী ক্যামেরাতে তোলা না । ছবি গুলো এখনও হাতে আসে নি ।
নাম গুলো এমন কারণ এগুলো ওদের ভাষা অনুযায়ী দেওয়া হয়েছে । এই কারণে একটু কষ্টকরই বটে মনে রাখা !
২| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:১৪
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
- রেমাক্রি হয়ে নাফাখুম পর্যন্ত আমি গিয়েছিলাম।
- দ্বিতী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:৩৮
অপু তানভীর বলেছেন: রেমাক্রি থেকে নাফাখুম যাওয়ার পথেই দলিয়ান পাড়ায় যাওয়ার পথ পড়ে ।
দ্বিতীয় পর্ব লেখা শেষ হলেই পোস্ট করবো আশা করি ।
৩| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৪:২১
শেরজা তপন বলেছেন: আপনার লেখা পড়ে এখনই ফেলে ছুটে যেতে ইচ্ছে করছে ওখানটায়।
চমৎকার ভ্রমন-বান্ধব এলাকা!
আচ্ছা আপনি কিছু একটা কি মিস করে যাচ্ছেন রিমাক্রী যাবার পথে ওই নৌকার পিছনে যে হালটার মত থাকে তার সামনে একটা ছোট্ট পাখা আর হাঙরের ফিনের মত একটা লোহার টুকরো মনে পড়ছে ব্যাপারটা? চমৎকার একটা জিনিস এই প্রথম আমি দেখলাম এভাবে খুব অল্প পানিতে পাথরের মধ্যে কেউ নৌকা চালায়।
বাকিটুকু শোনার অপেক্ষায় রইলাম...
২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১০:৫০
অপু তানভীর বলেছেন: আপনি এই এমন বিশেষ হাল আগে দেখে নি? রেমাক্রি যাওয়া পথে এই ধরনের হাল ছাড়া উপায় নেই । এটা আসলে এই অল্প পানিতে যেতে সাহায্য করে । নয়তো গতানুগতিক হাল দিয়ে এই অল্প পানিটে নৌকা চালানো সম্ভবই না ।
বাকি টুকু লিখে শেষ করে ফেলবো আশা করি ।
৪| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ৯:১৯
দারাশিকো বলেছেন: গুড। কখনও যাইনি ওইদিকে। কবে যাবো পাহাড়ে, আহারে আহারে ..
২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১০:৫১
অপু তানভীর বলেছেন: একবার ঘুরে আসতে পারেন । সময়টা ভাল যাবে আশা করি যদি পাহাড় পছন্দ করে থাকেন !
৫| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:৩৩
রেজাউল৮৮ বলেছেন: আপ্নাকে কয়েকদিন না দেখে ভাবলাম গলুর মালিক কি থানা পুলিশ কর্ল নাকি?
গ্রুপে না যেয়ে একা একা যাওয়া সম্ভব? ঐ খানে দলছুটরা একত্র হয়ে ভ্রমনে কর্তে দেখেছেন? এখন হাতে কিছুটা সময় ছিল, কিন্তু গ্রুপ জোগার কর্তে পার্ব না
২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ৭:২৩
অপু তানভীর বলেছেন: চার দিন একেবারে নেটওয়ার্রকের বাইরে ছিলাম। সামান্য মোবাইলে কলও করার উপায় ছিল না, নেটে আসা তো দুরের কথা !
আমারও মনে হচ্ছিলো যে হয়তো আপনার এমন কিছুই মনে হবে ।
আমি যেখানে গিয়েছিলাম সেখানে দলছুটেরা এক হয়ে কিছু করাটা অস্বাভাবিক । যেমন এই ট্রিপে ঐ পাড়াতে কেবল আমাদের গ্রুপটাই ছিল । এই দিকে মানুষ আসে একেবারে কম ।
হ্যা আপনি চাইলে একা একাই এই জার্নি করতে পারবেন । থানচি রেমাক্রি পর্যন্ত একাই যাওয়া যাবে কারো সাহায্য ছাড়াই । থানচি গিয়ে আমি আপনি গাইড ঠিক করবেন । সেখান থেকে একজন গাইড নিয়ে আপনি হাজির হতে পারবেন । তবে এতে প্রচর খরচ পড়বে আপনার । আমারও এই একা একা যাওয়ার বেশ ইচ্ছে কিন্তু এতো টাকা লাগে যে যাওয়ার উপায় নেই । তবে আগে থেকে দলিয়ান পাড়ার গাইডের সাথে যোগাযোগ করলে ব্যাপারটা সহজ হয়ে যায় ।
৬| ২০ শে মার্চ, ২০২৩ বিকাল ৪:৪৭
দারাশিকো বলেছেন: সবগুলো পোস্ট পড়ে নিলাম। আর্মি বিজিবির চোখ এড়িয়ে চলার কারণটা কি? ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা চলতেছে সেটা?
২১ শে মার্চ, ২০২৩ দুপুর ১২:১১
অপু তানভীর বলেছেন: বান্দরবানের খুবই লিমিটেড কিছু স্থানে টুরিস্টদের যাওয়ার অনুমূতি আছে । দলিয়ান পাড়াতে যদিও থাকতে কোন নিষেধ নেই তবে এই পাড়ার সামনে যাওয়ার কোন অনুমুতি নেই । কোনদিনই ছিল না । আমাদের দেখতে পেলেই ওরা ফিরিয়ে দিতো ।
৭| ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ৮:৫১
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: বাহ! চমৎকার এই ভ্রমণ লেখাটি চোখ এড়িয়ে গেছে। ওজনের কারণে আর ফিটনেসের অভাবে আমার বান্দরবান বা দেশের অন্য কোন জায়গায় ট্রেকিং করার সৌভাগ্য হয় নাই। আপনার লেখা পড়ে মনে মনে কিছুটা যাত্রা করেছিলাম।
১৮ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ২:২০
অপু তানভীর বলেছেন: নিজ দেশের এই ট্রেকিং গুলো করে ফেলা দরকার সবার আগে । ওজন কোন ব্যাপার না । প্রথমে কল কষ্টের গুলোতে উঠবেন পরে কঠিন গুলোতে । নিয়মিত হাটার অভ্যাস করলে যে কেউ পারবে।
©somewhere in net ltd.
১| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১১:৪১
জুল ভার্ন বলেছেন: ভ্রমণ কাহিনী ভালো লেগেছে। আরও ভালো লেগেছে সুন্দর ছবিগুলো। তবে যোগী-যোতলং-আয়ানত্লং নামটা মনে রাখা কষ্টসাধ্যই বটে!