নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন প্রথম ক্লাস শুরু হয়, সেটা ছিল এপ্রিল মাস । অবশ্য সেইবার ঢাকার পহেলা বৈশাখ উৎযাপন, মানে রমনার বটমূলে যাওয়া হয় নি । তখন আসলে কারো সাথেই পরিচয় হয় নি। ভয়ে ভয়ে ক্লাসে গিয়ে এককোনায় চুপচাপ বসে থাকি । ক্লাস শেষ করে সোজা বাসায় চলে আসি । মূলত এই ছিল প্রথম কয়েক মাসের ঢাকার জীবন । তবে পরের বছর অনেকের সাথেই পরিচয় হয়ে গেল । তাদেরই একজন সাথে মিলে ঠিক করলাম যে সেবার রমনাতে গিয়ে হাজির হব সকাল বেলা ।
আমার অবশ্য বরাবরই সকালের সকল প্রোগ্রামই অপছন্দের । সকাল হচ্ছে ঘুমের সময় । ষেই সময়ে থাকতে হবে বিছানাতে ! এই সময়ে বাইরে আসলে কি ! তবে সেইবার রমনার বটমূলে যাওয়ার আগ্রহের কমতি ছিল না । প্রথমবারের মত যাবো রমনার বটমূলে । গিয়ে গান শুনবো । এতোদিন এই গান এই অনুষ্ঠান আমি টিভিতে দেখে এসেছি । টিভির পর্দায় সব কিছুই খুব আকর্ষনীয় মনে হয় । আমারও মনে হয়েছিলো যে সরাসরি দেখলে সম্ভবত আরও বেশি ভাল লাগবে ।
যথারীতি হাজির হলাম পহেলা বৈশাখের দিন শাহবাগে । মোহাম্মাদপুর থেকে যে সব বাস শাহবাগ হয়ে মতিঝিল যায় সে সব বাস থেমে গেল কাটাবনে । আজকে এই রুটের বাস গুলো আর সামনে যাবে না । এখান থেকে আবার ফিরে যাবে । নেমে পড়লাম বাস থেকে । তারপর হাটা দিলাম শাহবাগের উদ্দেশ্যে । দেখতে পেলাম আরও অনেক মানুষ আমার সাথে হেটে যাচ্ছে শাহবাগের দিকে । যখন শাহবাগ এসে পৌছালাম তখন আমার মনে হল যেন আমি এক মানুষের মহাসমুদ্রে এসে পৌছিয়েছে । যেদিকেই তাকাই সেদিকেই কেবল মানুষ আর মানুষ । বুড়ো জোয়ান শিশু সব ধরণের মানুষ । আমি আসলে তখনও ঢাকার এই ভীড়ের সাথে অভ্যস্ত হতে পারি নি । আমি রাস্তার একটা ডিভাইডারের উপর দাড়িয়ে কিছু সময় এদিক ওদিক তাকিয়ে কোন দিকে ভীড় কম সেটা বোঝার চেষ্টা করলাম । এদিকে সেই বন্ধুকে কয়েকবার ফোন দেওয়ার চেষ্টা করলাম কিন্তু কল যাচ্ছে না । কিংবা কল ঢুকলেও কথা শোনা যাচ্ছে না । অনেক কয়বার চেষ্টার পরে বন্ধুর সাথে যোগাযোগ করতে পারলাম । তাকে বলতে পারলাম যে কোথায় আছি । সে এসে যোগ দিল আমার সাথে । দুজনে এবার এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম । কোথায় যাবো কী করবো এটা ভাবছি ।
আসলে যা ভেবে এসেছিলাম তার কিছুই মনে হচ্ছে না । ভেবেছিলাম যে খুব ভাল লাগবে বুঝি । মানে টিভিতে দেখে যেমন মনে হয় তেমন কিছুই মনে হল না । প্রচন্দ গরম সেই সাথে মানুষের ভীড় । এই অভিজ্ঞতার কারণে তারপর থেকে আর কখনই এই স্থানে আমি যাই নি । এর থেকে নিজের বিছানাতে ঘুমিয়ে থাকাটাই আমার কাছে বেশি উপাদেয় মনে হয়েছে ।
তবে তার মানে এটা না যে যারা এই উৎসবে যোগ দিয়ে সেখানে গিয়ে হাজির হচ্ছে তাদের ব্যাপারে আমার নেগেটিভ মনভাব । কেউ যদি নিজ ইচ্ছে এই ভিড় সহ্য করে আনন্দ খুজে নিতে পারে তাহলে সেটাও খারাপ নয় মোটেই । নিজের ইচ্ছে মানুষ যা ইচ্ছে করতে পারে যত সময় না তা অন্যের ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়ায় ।
এইবারও বৈশাখ উৎযাপন হবে । যদিও এটা রোজার মাস । তবে আমি ঠিক ঠিক জানি যে অনেকই রমনার বটমূলে গিয়া হাজির হবে। সেটা তারা করবে নিজ ইচ্ছেতেই । কিন্তু ধরেন এমন যদি হয় আপনাকে বলা হল আপনি সেই রমনার বটমূলে যেতে বাধ্য ! সকালবেলা সেখানে যাওয়াটা মেন্ডাটরি তাহলে কেমন হবে?
কয়েকদিন ধরে কী পরিমান গরম পড়েছে সেটা আপনারা যারা ঢাকাতে থাকেন তারা ভাল ভাবেই বুঝতে পারছেন । গরমের এই রোজাতে যাতে কষ্ট না হয় তাই একেবারে শুরু থেকে ছুটি দিয়ে হয়েছে । এমনটাই কয়েক বছর ধরে চলে আসছে । কিন্তু এবার DSHE থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে প্রতিটি মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যেন পহেলা বৈশাখ পালন করা হয় । এবং এই বৈশাখ পালনের জন্য ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে র্যালি যেন করানো হয় । আমি আসলে ব্যাপারটা কল্পনা করার চেষ্টা করছি । আগামী শুক্রবার বাচ্চাদের দিয়ে এই র্যালি করানোর দৃশ্যটা কেমন হতে পারে !
মানুষ যা নিজের ইচ্ছেতে উৎযাপন করতে চায় তাকে সেটা করতে দেওয়া হোক । কিন্তু কাউকে ইচ্ছের বিরুদ্ধে নির্দেশ দিয়ে এই উৎসবে যোগ দেওয়া থেকে বিরত রাখা হয় । আনন্দ উৎসব কখনই জোর করে, নির্দেশ দিয়ে কিংবা আইন করে টিকিয়ে রাখা যায় না । পহেলা বৈশাখ বাংলার মানুষ পালন করে এসেছে নিজ ইচ্ছেতেই । এই ঐতিহ্য অনেক পুরানো । মানুষ এটা সব সময় পালন করে । সেটা করতে দেওয়া হোক তাদের নিজের ইচ্ছেতে । যে এটা পালন করতে চায় তাকে যেন কেউ বাঁধা দিতে না পারে সেটা নিশ্চিত করা হোক ঠিক একই ভাবে যে এটা পালন করতে না চায় তাকে যেন জোর জবরদস্তি না করা হয় সেই দিকেও নজর দেওয়া উচিৎ । মানুষ চাপিয়ে দেওয়া জিনিস পছন্দ করে না, তা যেটা যত মহান ব্যাপারই হোক না কেন ! এই ব্যাপারটা কর্তৃপক্ষের মনে রাখা উচিৎ ।
News link
১৪ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১:০২
অপু তানভীর বলেছেন: আপনে এই গরমের ভেতরে আপনার ছেলে মেয়েদের পাঠায়েন ।
এই গরমে ছেলেমেয়েদের দিয়ে র্যালি করানো মানে হচ্ছে তাদের উপর নির্যাতন করা ! আর কিছু না ।
২| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৩ সকাল ১০:৩৭
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: একটা বিষয়ে একমত, কিছু কিছু অনুষ্ঠান টিভিতে যতখানি উপভোগ করা যায়, সশরীরে ততখানি উপভোগ করা যায় না। আমি ১৯৮৪ সালে ঢাকায় আসি। ১লা বোশেখে আমি সশরীরে উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠান উপভোগ করেছি বাংলা একাডেমীর বটতলায় বিকালের অনুষ্ঠান, শিল্পকলা একাডেমীর সন্ধ্যার অনুষ্ঠান (যেটা পাবলিকের জন্য উন্মুক্ত থাকে)। তখন রমনার বটমূলে কোনো অনুষ্ঠান হতো বলে মনে হয় না, কারণ, প্রতিদিন সকালেই আমি হোস্টেলের পেপার থেকে দেখে নিতাম ঐদিনের সাংস্কৃতিক ইভেন্ট কী কী আছে, কোথায় আছে, এবং সেগুলো দেখতে যেতাম।
২০০৪ বা ২০০৫ সালে রমনার বৈশাখী উদ্যাপন দেখতে যাই বিকালে। ভিড়ের ঠেলায় স্ত্রী, ছেলেমেয়েদের নিয়ে জান নিয়ে ফেরাই ছিল কষ্টকর, অথচ টিভির লাইভ প্রোগ্রাম দেখে কত উত্তেজিত বোধ করি।
ছোটোবেলায় চৈত্র সংক্রান্তি বা হালখাতার দিনটা ছিল আমাদের জন্য অনেক আনন্দময় একটা দিন। বিভিন্ন জায়গায় মেলা হতো, মেলায় ঘোড়দৌড়, গরুদৌড় ইত্যাদি ছিল সবচাইতে আকর্ষণীয় ইভেন্ট।
ছোটোবেলায় এবং বড়ো হয়ে কোনোদিন কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১লা বোশেখের দিন র্যালি হতে দেখি নি। র্যালি হয় ২১শে ফেব্রুয়ারির প্রভাত ফেরিতে। বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত ছিলাম, ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া শিখেছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, কোনোদিন ১লা বোশেখে কোনো র্যালি হতে দেখি নি। ১লা বোশেখ সরকারি ছুটির দিন। নিজের ইচ্ছাতে ছুটে বেড়ানোতেই আনন্দ। তবে, যেহেতু এটা ইউনেস্কোর তালিকাভুক্ত হয়েছে, সেজন্য এর গুরুত্ব বোঝানো ও বাড়ানোর জন্যই হয়ত আদেশের মাধ্যমে এ র্যালির আয়োজন করা হচ্ছে। আদেশে প্রকৃত আনন্দ আস্বাদন হয় না।
১৪ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১:০৭
অপু তানভীর বলেছেন: আমি টিভিতে দেখে যে যে অনুষ্ঠানে গিয়েছে ঢাকাতে তার প্রায় সব অনুষ্ঠানেই আমি হতাশই হয়েছে । কোনটাই টিভির মত হয় না । স্বশরীরে সেখানে গেলে সব কিছু অন্য রকম মনে হয় । স্টেডিয়ামে খেলার দেখার বেলাতেও একই রকম ।
আমি এই পাবলিক ইভেন্ট গুলোতে সব সময়ই বাসাতেই থাকার চেষ্টা করি । যদি একান্তই বাইরে বের হতে হয় তাহলে যেখানে যেখানে মানুষের ভীড় হবে সেগুলো এড়িয়ে চলি । এমন কি বইমেলাতে শুক্রশনিবার বারে না যাওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা থাকে । একবার আমি ২১ শে ফেব্রুয়ারির দিন গিয়েছিলাম বইমেলাতে । তারপর কানে ধরেছি আর কোন দিন ঐ দিনে মেলাতে যাবো না ।
পহেলা বৈখাশে স্কুল কলেজে মেলা হয় র্যালি হয় না । ইউনেস্কো মঙ্গল শোভা যাত্রাকে স্বীকৃতি দেওয়ার পর সরকার থেকে স্কুলে স্কুলে এই বেহুদা নিয়ম করছে যে ছেলেমেয়েদের বাধ্যতামূলক ভাবে এই সবে অংশগ্রহন করতে হবে !
কী হাস্যকর একটা ব্যাপার ! চাপিয়ে দেওয়া যে কোন কিছুই আগ্রাসন এটা কর্তৃপক্ষ কবে বুঝবে !
৩| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ১২:৪৪
কিরকুট বলেছেন: আমি যখন প্রথম স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে যাই আমারো আপনার মতো একই অভিজ্ঞতা হয়েছে। আফসোস করে এটাই বলেছিলাম এর চেয়ে বাসায় বসে খেলা দেখলেও পারতাম।
১৪ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১:০৮
অপু তানভীর বলেছেন: সত্যিই তাই । টিভিতে দেখে মনে হয় স্টেডিয়ামে খেলা দেখাটা কতই না মনরম হবে অথচ বাস্তবে তার ধারে কাছেও না ।
৪| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ১২:৫৭
অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য বলেছেন: শেষ বিকেল বা সন্ধ্যের দিকে জমে যায়। তখন তো এত গরমও থাকে না। যে যেভাবে উপভোগ করতে পারে।
১৪ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১:০৯
অপু তানভীর বলেছেন: শেষ বিকেলে তো আর অনুষ্ঠান হয় না রমনার বটমূলে । তবে সেই সময়েও মানুষ থাকে প্রচুর যা আমার পছন্দ না মোটেও । মানুষের ভীড় থাকলে আমি কোন কিছুই উপভোগ করতে পারি না ।
৫| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ১:৩৯
জটিল ভাই বলেছেন:
অনলাইনে উৎযাপন করলে কেমন হতো?
১৪ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১:১০
অপু তানভীর বলেছেন: অনলাইনে উৎযাপন আবার কেমন !
এর থেকে গরমে বাসায় শুয়ে বসে কাটানো ভাল । বাসায় পরিচিতদের দাওয়াত দেওয়া যায় কিংবা পরিচিত কারো বাসায় যাওয়া যায় ।
৬| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ২:৫৭
রাজীব নুর বলেছেন: ওকে। পড়লাম।
১৪ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১:১০
অপু তানভীর বলেছেন: ওকে
৭| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৩ বিকাল ৪:৪৬
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
- আমি আজও বৈশাখে রমনায় যাই নাই। বিয়ে করার পরে বউয়ের আবদারে একবার যাওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। সেগুন বাগিচা পর্যন্ত গিয়ে বউয়ের শখ মিটে গিয়েছে ছিলো। সেই শেষ, তারপর থেকে আজও পর্যন্ত রমনায় যাওয়ার নাম আর মুখে আনেনি।
১৪ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১:১২
অপু তানভীর বলেছেন: এটাই স্বাভাবিক । একবার যাওয়ার অভিজ্ঞতা হলে আর না যেতে চাওয়াটা স্বাভাবিক । বিশেষ করে গরম আর মানুষের ভীড় যদি অপছন্দের হয় তাহলে ও মুখো দ্বিতীয়বার হবে না কেউ ।
©somewhere in net ltd.
১| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৩ ভোর ৪:২২
হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
প্রতিটি স্কুলে আগেও বিভিন্ন র্যালি হত।
স্বাধীনতা দিবস
বিজয় দিবস।
ফেনি বা কোন জেলা মুক্ত দিবস।
২১শে ফেব্রয়ারী।
বাংলা নববর্ষ অবস্যই হওয়া উচিত।